কাবিখার চাল চুরি
কয়েকটি
জেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প ছাড়া কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি প্রায়
দুই বছর ধরে বন্ধ। অনেকেই মনে করেন, খাদ্যশস্যের বাজারে এখন যে অস্থিরতা
চলছে, এই কর্মসূচি সচল থাকলে তা থাকত না। কাবিখার কারণে বাজারে চালের
সরবরাহ বাড়ে। এতে দাম নাগালে থাকার সুযোগ তৈরি হয়। এ বছরই আবার এই কর্মসূচি
চালু করার কথা। এর মধ্যে হঠাৎ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি অনভিপ্রেত ঘটনা
ঘটে গেল। সেখানকার ‘নবাব অটো রাইস মিল’ নামের একটি চাল প্রক্রিয়াজাতকরণ
কারখানা থেকে অবৈধভাবে মজুত করা প্রায় ৯০ মেট্রিক টন কাবিখার চাল জব্দ
করেছে র্যাব। সেখানকার শিবগঞ্জ উপজেলার একটি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের জন্য
চালগুলো বরাদ্দ ছিল। সরকারি গুদাম কর্মকর্তা, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন
কমিটির সভাপতি এবং সংশ্লিষ্ট ইউপি ওয়ার্ডের দুজন সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
মিলমালিক লাপাত্তা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ছাপ মারা বস্তা থেকে ভারতীয় একটি
ব্র্যান্ডের বস্তায় চালগুলো ভরা হচ্ছিল। আটক হওয়া সবাই দাবি করছেন, চাল
কীভাবে এখানে এল তা তাঁদের জানা নেই। এটি ভয়ানক উদ্বেগের কথা। কারণ তাঁদের
হেফাজতে চালগুলো ছিল। তাঁদের দাবি সত্য বলে ধরে নিলে এর পেছনে ‘ভূতপ্রেত’
ছাড়া আর কারও হাত আছে বলে ধারণা করা কঠিন।
এই ‘ভৌতিক’ চুরি কি শুধু
চাঁপাইনবাবগঞ্জে হচ্ছে, নাকি দেশের অন্যান্য জায়গায়ও ‘ভূতগোষ্ঠী’ সক্রিয়
আছে সেটা বের করা দরকার। সামাজিক নিরাপত্তায় বরাবরই কাবিখা ভূমিকা রেখে
এসেছে। এই কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল পল্লি অঞ্চলের মানুষের জন্য কাজের সুযোগ
সৃষ্টি এবং একই সঙ্গে অভাবগ্রস্ত এলাকাগুলোতে খাদ্যশস্যের সরবরাহ ও
প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা। এই কর্মসূচি চালুর পর থেকে নানা অনিয়মের খবর এসেছে।
তারপরও বাজারে খাদ্যশস্যের দামের ভারসাম্য বজায় রাখায় এই কর্মসূচি
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধেই গ্রামীণ রাস্তাঘাট
উন্নয়নে কাবিখার নতুন বরাদ্দ দেওয়া হবে। যেহেতু এই প্রকল্পের লক্ষ্য একই
সঙ্গে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও অন্যান্য ছোটখাটো অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং
খাদ্যশস্যের বাজারে ভারসাম্য রক্ষা, সেহেতু বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের
সঙ্গে দেখা দরকার। প্রকল্পের সাফল্য অর্জনে খাদ্য কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট
জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি বাড়ানো দরকার। কাবিখার চাল বা অন্যান্য খাদ্যশস্য
ঠিক মানুষের হাতে পৌঁছাচ্ছে কি না, সে বিষয়ে স্থানীয় জনগণ সহজে যাতে বুঝতে
পারে, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি এখন প্রায় প্রতিটি দপ্তরের
রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেভাবে ঢুকে গেছে, তাতে দুর্নীতি ঠেকাতে শুধু কর্মকর্তাদের
নজরদারির ওপর আস্থা নিয়ে বসে থাকাটা বাস্তবসম্মত নয়। সবচেয়ে বড় নজরদারি
করতে পারে জনগণ। কাবিখা কী, কোন প্রক্রিয়ায় এই কর্মসূচি পরিচালিত হয় এবং
কারা কারা এর সুবিধাভোগী—এসব বিষয় সম্পর্কে স্থানীয় জনগণের মধ্যে স্পষ্ট
ধারণা দেওয়া দরকার। মোটামুটি ধারণা থাকলেই তারা কর্মসূচির অনিয়ম ও অসংগতির
বিষয়ে সোচ্চার হতে পারে। এতে কর্মসূচি বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত লোকেরা
সতর্ক হতে বাধ্য হবেন।
No comments