গাছ মানুষের পরম বন্ধু by মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
গাছ
নানাভাবে মানুষের উপকার করে। ফল, ফুল, কাঠ, অক্সিজেন, ছায়া- এ সবকিছুই
আমরা গাছ থেকে পাই। গাছের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। আর্থিক সুবিধার
কথাই ধরা যাক। ইন্ডিয়ান ফরেস্ট ইন্সটিটিউটের গবেষকরা ৫০ বছর বেঁচে থাকা
একটি গাছের আর্থিক সুবিধা বের করেছেন। যা হল, গাছ বায়ুদূষণ থেকে পরিবেশকে
রক্ষা করে ১০ লাখ টাকার, জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন দেয় ৫ লাখ টাকার, বৃষ্টির
অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, মাটির ক্ষয়রোধ ও উর্বরা
শক্তি বৃদ্ধি করে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, বৃক্ষে বসবাসকারী প্রাণীদের খাদ্য ও
আশ্রয় দিয়ে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, আসবাবপত্র, জ্বালানি কাঠ ও ফল সরবরাহ করে ৫
লাখ টাকার, বিভিন্ন জীবজন্তুর খাদ্য জোগান দিয়ে বাঁচায় আরও ৪০ হাজার টাকা।
৫০ বছর বেঁচে থাকা একটি বৃক্ষের আর্থিক সুবিধার মোট মূল্য দাঁড়ায় ৩৫ লাখ
৪০ হাজার টাকা। যেসব এলাকায় গাছ বেশি, সেখানে বন্যা, ঝড় তেমন ক্ষতি করতে
পারে না। গাছপালা মায়ের আঁচলের মতো মানুষকে আগলে রেখে রক্ষা করে প্রাকৃতিক
দুর্যোগ থেকে। যদি গাছ লাগিয়ে বাসাবাড়ির ছাদগুলোকে একটুখানি সবুজ করা যায়,
তাহলে শহরের তাপমাত্রা কমে আসবে। ছাদের বাগান বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে ঘরের
তাপমাত্রা প্রায় ১.৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমাতে পারে। এমনটাই পরিবেশ
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। একটা সবজির গাছ তিন মাসের জন্য তিনজনের অক্সিজেন
সরবরাহ করতে পারে। শহরগুলোতে ফাঁকা জায়গা কম। সেজন্য নতুন বাড়ির অন্তত ২৫
শতাংশ ছাদে বাগান করা উচিত। শুধু পরিবেশগত দিকই নয়, ছাদ বাগানে বাড়ির
মালিক, ভাড়াটিয়ারা আর্থিক দিক থেকেও লাভবান হতে পারেন। শখের পাশাপাশি
বাণিজ্যিক দিক মাথায় রেখে অনেকেই ছাদে বাগান করে সফলতা পেয়েছেন।
আড়াই কাঠার
বাড়ির ছাদে সবজি চাষ করে পরিবারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বছরে ৫০ হাজার
টাকা আয় করা সম্ভব। একটি দেশের মোট ভূখণ্ডের কমপক্ষে ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা
দরকার। বাংলাদেশের আছে মাত্র ১৭.৫ ভাগ। দিন দিন তা কমে আসছে। শুধু
রোহিঙ্গাদের বসবাস করতে দিয়ে ৪ হাজার একর জায়গার বনভূমি উজাড় হয়েছে। গাছের
সংখ্যা কমে যাওয়ায় আবহাওয়ার আচরণ বদলে গেছে। গরমের সময় ঠাণ্ডা, ঠাণ্ডার সময়
গরম পড়ে। কৃষি উৎপাদন হ্্রাস পেয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।
পরিবেশ-প্রকৃতি বাঁচাতে গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। স্কুল, কলেজ,
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গাছ লাগাতে উৎসাহিত করা যেতে পারে। বই পড়া
উৎসবের মতো গাছ লাগানোরও উৎসব হতে পারে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষ এ উৎসবের আয়োজন করতে পারে। চীনের চংকিং শহরের শিক্ষার্থীদের বছরে
একবার গ্রামে পাঠানো হয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থী তখন ১০০টি করে বৃক্ষরোপণ
করে। গাছ, মা, মাটির সঙ্গে তাদের সর্ম্পক উন্নত করে। বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা
বাড়ছে। দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে
বেশি। তাই প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় তো বটেই, ব্যক্তি পর্যায়েও গাছ লাগাতে
এগিয়ে আসতে হবে।
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান : পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমী
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান : পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমী
No comments