মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার তদন্ত করবে শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কার
মধ্যাঞ্চলে মুসলিমদের উপর বৌদ্ধদের বর্বর হামলার তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন
প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। শনিবার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত তিন বিচারকের প্যানেল মধ্যাঞ্চলের
ক্যান্ডি শহরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির ঘটনায় তদন্ত করবেন। গত
বৃহস্পতিবার ক্যান্ডিতে মুসলিম-বৌদ্ধ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার পর চারদিনে
মসজিদসহ, মুসলিমদের ২ শতাধিক বাড়ি-ঘরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে
প্রাণহানি ঘটে অন্তত তিন মুসলিমের। বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, পুলিশের দেয়া
তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েকদিনে উত্তেজিত সিংহলি জনগণ মুসলিমদের ১১টি মসজিদ
পুরোপুরি ধ্বংস করেছে। পুলিশ বলছে, সেনা মোতায়েনের পর পরিস্থিতি বর্তমানে
নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শুরু গত রোববার। ওইদিন
ক্যান্ডির তেলেদেনিয়ায় একটি সড়ক দুর্ঘটনার জেরে বৌদ্ধ এক যুবককে পিটিয়ে
হত্যা করে একদল মুসলিম। পরের দিন শত শত সিংহলি বৌদ্ধ; যাদের অধিকাংশই
বহিরাগত, ক্যান্ডিতে তাণ্ডব চালায়। জ্বালিয়ে দেয় মুসলিমদের
ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, বাড়ি-ঘর ও মসজিদ। পুড়ে যাওয়া একটি ভবনের ভেতর থেকে ২৩
বছর বয়সী এক মুসলিম যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। সহিংসতা আরো ছড়িয়ে পড়ার
শঙ্কায় দেশটির সরকার মঙ্গলবার জরুরি অবস্থা জারি করে। সেনাবাহিনী মোতায়েনের
পাশাপাশি ক্যান্ডিতে পুলিশি কারফিউ জারি করা হয়। কলম্বো থেকে ১১৫
কিলোমিটার দূরের ক্যান্ডি জেলায় শনিবার সকাল থেকে কারফিউ প্রত্যাহার করা
হয়েছে।
তবে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে। আরো হামলার শঙ্কার
মধ্যেই দেশটির মুসলিমরা ব্যাপক সেনা সুরক্ষার মধ্যে শুক্রবার জুমআর নামাজ
আদায় করেছেন। এদিকে, শুক্রবার রাজধানী কলম্বোতে কয়েকশ বৌদ্ধ সহিংসতার
নিন্দা জানিয়ে সমাবেশ করেছেন। একই সাথে সহিংসতার হোতাদের বিরুদ্ধে কঠোর
ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। পুলিশ বলছে, সহিংসতা শুরুর পর
প্রধান উসকানিদাতাসহ প্রায় ১৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সহিংসতা শুরুর আগে
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিংহলি জাতীয়তাবাদী নেতা অমিথ উইরাসিং উসকানিমূলক
ভিডিও বার্তা পোস্ট করেছিলেন। ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমরা ক্যান্ডিতে লিফলেট
বিতরণ করছি এবং বর্তমানে দিগানায় পৌঁছেছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমরা
শহরটিতে সিংহলিদের ২০টি দোকানও পাইনি। এই শহরটি এখন মুসলিমদের। অনেক আগেই
এর বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিল।’ সিংহলি এই নেতা বলেন, ‘আমরা
সিংহলিরাই এজন্য দায়ী। দিগানা অথবা আশপাশের এলাকায় যদি কোনো সিংহলি থাকেন,
তাহলে দয়া করে চলে আসেন।’ তার এই ভিডিও ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারে ব্যাপকভাবে
ছড়িয়ে পড়ে। ক্যান্ডি জেলার প্রাণকেন্দ্র দিগানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের
আগে এভাবেই মুসলিমবিরোধী প্রচারণা চালানো হয়। দাঙ্গায় সন্দেহভাজন প্রধান
উসকানিদাতা এই সিংহলি নেতাকে বৃহস্পতিবার পুলিশি জিম্মায় নেয়া হয়েছে বলে
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
No comments