সাংঘাতিক এক গুপ্তচর
বৃটেনে
রাশিয়ার যে গুপ্তচরকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে তার কোডনাম ছিল ‘ফোর্থউইথ’।
বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬ এর কাছে তার মূল্য ছিল অপরিসীম। তিনি রাশিয়ার
অনেক সামরিক গোপন তথ্য সরবরাহ করতেন বৃটিশ গোয়েন্দাদের। তিনি এখন বৃটেনের
হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায়। রাশিয়ার এই গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপালকে নিয়ে
বৃটেন ও রাশিয়ার মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে নতুন করে উত্তেজনা। স্ক্রিপাল ও তার
মেয়ে ইউলিয়াকে গত রোববার বৃটেনের সালিসবারিতে নার্ভ গ্যাস প্রয়োগ করা হয়।
এর কারণ কি? কেন তাকে নার্ভ গ্যাস প্রয়োগ করা হলো? আর কেনইবা এ জন্য
রাশিয়ার দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তোলা হচ্ছে? এমন অসংখ্য প্রশ্ন এখন দুনিয়ার
গুপ্ত জগতে, গোয়েন্দাদের মধ্যে। বর্তমানে রাশিয়ার বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থার
নাম জিআরইউ। এ গোয়েন্দা সংস্থার অনেক মূল্যবান তথ্যভান্ডার হলেন এই ৬৬ বছর
বয়সী গুপ্তচর স্ক্রিপাল। কমপক্ষে ১০ বছর ধরে তিনি ওইসব স্পর্শকাতর তথ্য
সরবরাহ করে যাচ্ছিলেন বৃটেনের কাছে। এর মধ্যে জিআরইউ-এর পুরো টেলিফোন
ডাইরেক্টরি তিনি সরবরাহ করেছেন বৃটেনের গোয়েন্দাদের কাছে। রাশিয়ান গোয়েন্দা
তথ্য তিনি এমআই৬ এর কাছে প্রকাশ বা সরবরাহ করে যাচ্ছেন এটা জানার পর
গুপ্তচর বিনিময়ের অধীনে ২০১০ সালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বৃটেনে। প্রথমে
স্প্যানিশ গোয়েন্দা নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে তাকে আবিস্কার করে বৃটেন। ওই
স্প্যানিশ গোয়েন্দা সংস্থা পরিচালনা করতো বৃটিশ গোয়েন্দারা। মনে করা
হয়েছিল, বৃটিশদের জন্য স্ক্রিপাল ভাল কাজ করতে পারবেন। ওই সময়ে স্পেনে
রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউয়ের কর্মকর্তা ছিলেন স্ক্রিপালন। তার সঙ্গে
সাক্ষাত করলেন এমআই৬ এর একজন কর্মকর্তা। বৃটিশ ওই কর্মকর্তা নিজে স্প্যানিশ
ব্যবসায়ী সেজে তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। স্ক্রিপালের বয়স তখন ৪৪ বছর। সময়টা
১৯৯৬ সাল। সে সময়ে রাশিয়ান এই গুপ্তচর ও বৃটিশ গুপ্তচরের মধ্যে প্রথম
সাক্ষাত হয়। এরপর রাশিয়ান গুপ্তচরের শরীরে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। তিনি চলে যান
মস্কোতে। তবে ঘন ঘন তিনি স্পেন যাওয়া আসা করতেন। এ সময় এমআই৬ এর সঙ্গে তার
যোগাযোগ আরো বেড়ে যায়। তিনি হয়ে ওঠেন একজন ‘ফুলটাইম’ গুপ্তচর। রাশিয়ান
গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউ থেকে তিনি অবসরে যান ২০০০ সালে। কিন্তু সাবেক একজন
সেনা সহকর্মীর মাধ্যমে তিনি মস্কোর প্রাদেশিক সরকারে একটি চাকরি জুটিয়ে
নিতে সক্ষত হন। আর গোপনে গোপনে তথ্য পাচার করতে থাকেন এমআই৬ এর কাছে।
মালাগার কাছে তিনি কিনে ফেললেন একটি হলিডে হোম। সেখানে টানা তিনদিন তিনি
গোপন তথ্য নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রতিটি বেঠকের জন্য,
প্রতিটি ঘটনায় তিনি ৫০০০ থেকে ৬০০০ পাউন্ড পর্যন্ত অর্থ পেতেন। সেই অর্থ
জমা করতেন স্প্যানিশ একটি ব্যাংকের একাউন্টে। সূত্রগুলো বলেছেন, তার প্রথম
দিককার লক্ষ্য ছিল আর্থিক। কিন্তু আস্তে আস্তে তিনি বৃটেনের প্রতি খুব বেশি
আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তবে তাকে বৃটেনে আনার পক্ষে ছিল না এমআই৬। তারা মনে করতো
এতে ‘ফোর্থউইথ’ ও গোয়েন্দা সার্ভিসের মধ্যে যোগসূত্রে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
একবার হঠাৎ করে স্পেনে এক জরুরি বৈঠক ডাকা হলো। এ জন্য তিনি নগদ ১০০০০ ডলার
চেয়ে বসলেন। পরের দিন ওই অর্থ নিয়ে সেখানে হাজির হলেন এমআই৬ এর একজন
কর্মকর্তা। এসব কারণেই গোয়েন্দা সূত্রগুলো বিশ্বাস করছে, বৃটেনে এই
গুপ্তচরকে এ কারণেই টার্গেট করে থাকতে পারে রাশিয়া। কারণ, সোভিয়েত ইউনিয়ন
পতনের পর সব গোয়েন্দা তথ্য তিনি সরবরাহ করেছেন বৃটেনের কাছে। এই মুহূর্তে
এমআই৬ এর কমপক্ষে এক ডজন সাবেক এজেন্ট বসবাস করছেন বৃটেনে। তাদেরকে দেয়া
হচ্ছে উচ্চ মাত্রার নিরাপত্তা। তাদের নাম গোপন রাখা হয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার
প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন নিজে ছিলেন সাবেক গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির একজন
লেফটেন্যান্ট কর্নেল। তার তো এসব গুপ্তচরের নাম, পরিচয় না জানার কথা নয়।
ফলে তার শিকারে পরিণত হয়ে থাকতে পারেন স্ক্রিপাল। বলা হচ্ছে, সের্গেই
স্ক্রিপাল রাশিয়ান গোয়েন্দাবৃত্তির বিশাল তথ্যভান্ডার সরবরাহ নাও করে থাকতে
পারেন। কিন্তু এ কথা সত্য যে, রাশিয়ার সেনা গোয়েন্দা কাঠামোর সুনির্দিষ্ট
তথ্য তার দখলে ছিল। বিশেষ করে শত শত কর্মকর্তার পরিচয় ও সংশ্লিষ্ট বিষয়।
তিনি এমআই৬ এর সঙ্গে যেসব তথ্য শেয়ার করতেন তা অন্য মিত্র গোয়েন্দা সংস্থার
কাছেও চলে যেতো। এমন গোয়েন্দা সংস্থা হলো যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ। সের্গেই
স্ক্রিপাল জিআরইউ থেকে অবসরে যাওয়ার পরেও বৃটেশ গোয়েন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ
রাখতেন। এ বিষয়টি ধরা পড়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ২০০৪ সালে। তাকে ১৩
বছরের জেল দেয়া হয় ২০০৬ সালে। কিন্তু রাশিয়ার গ্লামারাস নারী গোয়েন্দা আনা
চ্যাপম্যানকে হস্তান্তরের বিনিময়ে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। আনা চ্যাপম্যানকে
যুক্তরাষ্ট্রে আটক করা হয়েছিল গুপ্তচরবৃত্তির জন্য।
No comments