চীনের আফ্রিকা দখল, নৌ সিল্ক রুটে ঘাম ছুটছে যুক্তরাষ্ট্রের
‘হর্ন
অব আফ্রিকা’ খ্যাত এলাকায় আধিপত্য বাড়ানোর কাজ করছে চীন। এরই মধ্যে
জিবুতিতে নিজেদের প্রথম বিদেশি ঘাঁটি স্থাপন করেছে দেশটি। আফ্রিকায় প্রভাব
বাড়ানো ও নৌ সিল্ক রুট নিয়ে বেইজিংয়ের এ মহড়ায় ঘাম ছুটে যাচ্ছে
যুক্তরাষ্ট্রের। মার্কিন আইনপ্রণেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, জিবুতি
নিজেকে ধীরে ধীরে চীনের কাছে উপহার হিসেবে তুলে দিচ্ছে। মঙ্গলবার বন্দর
নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের হাউস আর্মস সার্ভিসেস কমিটির
শুনানিতে জেনারেল থমাস ওয়ালদাউসার হুশিয়ারি করে বলেন, ‘চীন জিবুতি বন্দরটির
দখলে নিলে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা কঠিন সমস্যার মুখোমুখি পড়বে।’ বর্তমানে
বন্দরটির ২৩.৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি
চীনা মার্সেন্টস পোর্ট হোল্ডিংস। আফ্রিকা ‘দখলের’ নীতি হিসেবে সেখানে
অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পও হাতে নিয়েছে চীন। পাশাপাশি সামরিক ও শান্তি মিশন
প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত করছে দেশটি। ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন পলিসি
রিলেশনসের রিপোর্ট অনুসারে, আফ্রিকার সঙ্গে শান্তি ও নিরাপত্তার সম্পর্ক
গড়া চীনের পররাষ্ট্রনীতির সুস্পষ্ট অংশ। ২০১৫ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি
জিনপিং আফ্রিকায় শান্তি মিশনে ৮ হাজার সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দেন, যা বিশ্বের
৫০ দেশের মোট ৪০ হাজার সৈন্যের এক-পঞ্চমাংশ। এছাড়া অফ্রিকান ইউনিয়নের
সামরিক খাতে ১০ কোটি ডলার ও আফ্রিকার জন্য জাতিসংঘ শান্তি ও উন্নয়ন ফান্ডে
১০০ কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। আফ্রিকা মহাদেশজুড়ে ব্লু হেলমেট
মিশনে চীনের আড়াই হাজার সৈন্য ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে, এর মধ্যে দক্ষিণ
সুদানে ১,০৫১, লিবিয়ায় ৬৬৬ ও মালিতে ৪০২ জন। সিএনএন জানায়, বর্তমানের
জিবুতি সরকার চীনের বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল।
সেন্টার ফর পলিসি ডেভেলপমেন্ট
২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুসারে, অবকাঠামো খাতে চীন এরই মধ্যে ১৪০ কোটি ডলার
বিনিয়োগ করেছে, যা জিবুতির মোট জিডিপির ৭৫ শতাংশ। জিবুতির অবস্থানগত কারণে
সেখানে চীনের নৌঘাঁটি গড়ায় উদ্বিগ্ন ভারত। জিবুতির অবস্থান ভারত মহাসাগরের
উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে। বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও শ্রীলংকাকে সঙ্গে নিয়ে চীনের
সামরিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তোলার যে ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ বা মুক্তোর
মালা নামে পরিচিত পরিকল্পনা আছে, জিবুতি এখন চীনের নতুন আরেক ‘স্ট্রিং অব
পার্লস’। এখানে চীনের প্রথম বৈদেশিক নৌঘাঁটি জিবুতিতে স্থাপন করার কারণ হল
কৌশলগতভাবে দেশটির অবস্থান। এটি লোহিত সাগর হয়ে সুয়েজ খালে প্রবেশদ্বারের
কাছেই। যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের পরে তারা ঘাঁটি গাড়ে। জিবুতি বন্দরে
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালি ও জাপানের প্রবেশের অধিকার রয়েছে।
মার্কিন ঘাঁটি ক্যাম্প লেমোনিয়েরে দেশটির বিশেষ বাহিনীর সেনাসহ অন্তত ৪
হাজার সৈন্য সেখানে রয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান
রোড’ মহাপরিকল্পনার আওতায় রয়েছে ৬০টি দেশের সঙ্গে চীনের মূল ভূখণ্ডকে
সংযুক্ত করা। চীন সড়ক রুটের পাশাপাশি একটি মেরিটাইম তথা নৌ সিল্ক রোডের
মহাপরিকল্পনাও প্রণয়ন করেছে। এই সামুদ্রিক সিল্ক রোডের মাধ্যমে একদিকে
আফ্রিকার জিবুতি, মোমবাসা (কেনিয়া) বন্দরের সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব
এশিয়ার শ্রীলংকা, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, মিয়ানমার, বাংলাদেশকেও সংযুক্ত
করতে চায় চীন। এ রুটে ভারতকে সংযুক্ত না করায় এ অঞ্চলে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র
অক্ষ গড়ে উঠছে, যা চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবুও
চীনের এ প্রক্রিয়াকে সামাল দিতে রীতিমতো ঘাম ছুটে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের।
No comments