কারাগারেও ইয়াবা ব্যবসা!
ইয়াবাসহ
নিষিদ্ধ মাদক ব্যবসা কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা অনুমান করা যায়
কারারক্ষী ও পুলিশের পাহারায় কারাগারে বসে খোদ হাজতির মাদক ব্যবসার খবর
থেকে। শুধু তা-ই নয়, কারাগার ওই মাদক ব্যবসায়ীর জন্য স্বর্গরাজ্যে পরিণত
হয়েছে বললেও অত্যুক্তি হবে না। বিভিন্ন সময় কারা প্রশাসন, পুলিশ থেকে শুরু
করে বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় সহায়তার অভিযোগ
উঠেছে। এবার মাদক ব্যবসায়ী এক হাজতিকে উন্নত চিকিৎসার নামে প্রথমে ঢাকা
মেডিকেল ও পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে রেখে ইয়াবা ব্যবসা চালানোর সুযোগ করে
দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কিছু কারারক্ষী এবং পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এমনকি
চিহ্নিত ওই মাদক ব্যবসায়ী হাজতির সঙ্গে অবৈধভাবে তার স্ত্রীকেও হাসপাতালে
রাখার সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, ইয়াবা-মাদকের ভয়াবহ থাবা থেকে তরুণ
সমাজকে বাঁচাতে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত। কারণ
এটি কেবল অবৈধ ইয়াবা ব্যবসার প্রশ্নই নয়, এর সঙ্গে কারা প্রশাসন ও পুলিশ
সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ও জড়িত। বারবার এ ধরনের অভিযোগ আসায় কারাগার
চিহ্নিত অপরাধীদের অপরাধের সাম্রাজ্য বিস্তার করার মাধ্যম হয়ে পড়েছে কিনা,
এমন প্রশ্ন তোলাও অযৌক্তিক হবে না। কাজেই বিভিন্ন সময় মাদক ব্যবসায়ীদের
ছেড়ে দেয়া, অভিযান চালানোর আগে গোপনে সংবাদ পৌঁছে দেয়াসহ অপরাধে সহযোগিতার
মতো জঘন্য ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই। জানা যায়, কদমতলী থানা
এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সাগরকে ১০ ফেব্র“য়ারি ২৪০ পিস ইয়াবাসহ
গ্রেফতার করার পর তাকে হাজতে পাঠান আদালত। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ
করে মাত্র ৪ দিনের মাথায় ১৪ ফেব্র“য়ারি উন্নত চিকিৎসার নামে ঢাকা মেডিকেলে
এবং সেখান থেকে ২৬ ফেব্র“য়ারি মিটফোর্ড হাসপাতালের কেবিনে চলে যায় এ মাদক
ব্যবসায়ী।
তারপর থেকে স্ত্রীকে সঙ্গে রেখে মোবাইলে চলছে তার মাদক ব্যবসা।
অথচ পালা করে কারারক্ষী ও পুলিশ সদস্যরা তাকে পাহারা দিয়ে আসছিল। কী ভয়াবহ
বিষয়, ভাবা যায়! এ ঘটনা থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হল, কিছু পুলিশ সদস্য ও
কারারক্ষী অপরাধীদের প্রতি সহানুভূতিশীল। অথচ নিরপরাধ মানুষের অন্যায়ভাবে
বছরের পর বছর জেলখাটার খবরও মাঝে মাঝে শিরোনাম হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয়,
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী, পুলিশ, এমনকি খোদ এমপির বিরুদ্ধেও ইয়াবা
ব্যবসার অভিযোগ একাধিকবার উঠলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ কারণে
কারাগারে বসেই মাদক ব্যবসা চালানোর মতো গুরুতর ঘটনা আমাদের দেখতে হয়েছে।
অথচ ইয়াবাসহ সর্বনাশা মাদকের ছোবলে বহু উচ্চবিত্ত পরিবার পর্যন্ত ধ্বংসের
মুখে পড়েছে। ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সন্তানের মাদকসেবনের মাশুল চোখের পানি
দিয়ে দিতে হচ্ছে সমাজে প্রতিষ্ঠিত অনেক বাবা-মাকে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে
এবং তরুণ প্রজন্মকে রক্ষায় মাদকের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর,
পুলিশ প্রশাসন ও কারা কর্তৃপক্ষের কঠোর ভূমিকার বিকল্প নেই। সরকারের
শীর্ষমহলকেও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায়
পরিস্থিতি যে বদলাবে না, তা বলাই বাহুল্য। মাদকের বিরুদ্ধে সর্বাÍক
প্রতিরোধ ব্যবস্থার শুরু হোক এ ঘটনায় অভিযুক্তদের কঠোর সাজার মধ্য দিয়ে।
No comments