বন্ধনের পেটে ২০০ কোটি টাকা
কুমিল্লার বিভিন্ন পয়েন্টে বিশাল আকারের বিলবোর্ড, স্থানীয় পত্রিকায় বাহারি বিজ্ঞাপন ও ক্যাবল অপারেটরদের মাধ্যমে ডিশ চ্যানেলে চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার ছিল বন্ধন হাউজিংয়ের প্রতারণার কৌশল। অর্ধশতাধিক শিক্ষিত যুবককে নিয়োগ দিয়ে তাদের মাধ্যমে মার্কেটিং, এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও পোস্টার লাগিয়ে অল্পদিনেই গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণই করে বন্ধন। জমজমাট প্রচারের মাধ্যমে ফ্ল্যাট-প্লট বিক্রি, ওষুধ কোম্পানি, ফুড অ্যান্ড বেভারেজসহ বেশকিছু প্রকল্পের মাধ্যমে এ কোম্পানি হাতিয়ে নেয় গ্রাহকের প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া গ্রাহকদের মাসিক হারে মুনাফা দেয়ার নামেও অর্থ হাতিয়ে নেয় বন্ধন। অনুসন্ধানে জানা যায়, কাতারপ্রবাসী হাজী সফিকুল ইসলাম কুমিল্লা নগরীতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাসের জন্য ঝাউতলা এলাকায় বন্ধন হাউজিংয়ের ‘বন্ধন প্যালেস’ প্রকল্পে একটি ফ্ল্যাট বুকিং দেন। তিনি বলেন, ১২শ’ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কেনার জন্য সাইনিং মানি হিসেবে বন্ধনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলামকে ২০১০ সালে ২০ লাখ টাকা প্রদান করি। ২ বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন শেষ করার চুক্তি ছিল। কয়েক বছর আমাদের ঝুলিয়ে রেখে সেখানে ভবন নির্মাণ শুরু করেনি। পরে ২০১৩ সালে জানতে পারি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম জায়গাটি অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। একই প্রকল্পে ফ্ল্যাট কেনার জন্য ১৮ লাখ টাকা দিয়েছিলেন মোল্লা নাজিম উদ্দিন। এছাড়া ওই ভবনে মাথা গোঁজার ঠাঁই কিনতে কাজী নুরুল ইসলামসহ আরও বেশ কয়েকজন গ্রাহক বিনিয়োগ করেন। এসব গ্রাহকের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে বন্ধন। এ কোম্পানিতে মাসিক লভ্যাংশের জন্য অর্থও জমা রেখে ভিখারি হয়েছেন অনেকে। অর্থের শোকে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়া সরকার, বদরুন নাহার ও কাতারপ্রবাসী দিলদার চৌধুরী অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। এলাকাবাসী জানায়, বন্ধন নাম দিয়ে কাগজে-কলমে বিভিন্ন কোম্পানি গঠন করে ২০০৭ সালে আলিশান অফিস নিয়ে নগরীর কালিয়াজুরী এলাকার বাসিন্দা জামায়াত নেতা নজরুল ইসলাম কার্যক্রম শুরু করেন। তার দামি গাড়ি, বডিগার্ড, পারসোনাল সেক্রেটারি, অভিজাত ফ্ল্যাট, আলিশান অফিস ছিল চোখে পড়ার মতো। এসব দেখে মানুষ মনে করত, কত হাজার কোটি টাকার মালিকই না নজরুল। এলাকার আলেম, মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রবাসীসহ এলাকার ক্লিন ইমেজের মানুষগুলোই ছিল নজরুলের টার্গেট। এসব ব্যক্তির ইমেজকে কাজে লাগিয়ে তাদের কিছু কমিশন দিয়ে সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে আমানতের নামে সে হাতিয়ে নেয় শত কোটি টাকা। ঢাকার সাভারে সুনিপুণ ফার্মা নামে ওষুধ কোম্পানি, কুমিল্লার বিসিক শিল্প নগরীতে বন্ধন ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, নগরীর রেসকোর্স এলাকার ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজায় বন্ধন হজ কাফেলা, বন্ধন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শহরতলীর হোসেনপুর, আলেখারচর ও শাসনগাছা এলাকায় বিশাল হাউজিংয়ের সাইনবোর্ড টানিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন চুক্তিতে টাকা সংগ্রহ করেন নজরুল ইসলাম। ওই সময়ে ডিপোজিট, মেয়াদি সঞ্চয়, ফ্ল্যাট ও প্লট বিক্রি করে লভ্যাংশ দেয়াসহ বিভিন্ন কৌশলে আমানত সংগ্রহ করা হয়। পরে কয়েক বছর সঠিক নিয়মে মুনাফা প্রদান করায় অনেকটা বিশ্বস্তও হয়ে উঠে বন্ধন গ্রুপ।
আমানতের বিশাল অঙ্কের এসব টাকা দিয়ে নজরুল নিজের নামে ঢাকা ও কুমিল্লায় বিভিন্ন স্থানে প্লট, ফ্ল্যাট ও আবাদি জমি কিনে রাখেন। মুরাদনগর উপজেলার বৈলাবাড়ী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়ার ছেলে মাহবুবুর রহমান সবুজ অভিযোগ করে জানান, চাকরি শেষে প্রাপ্ত পেনশনের ১২ লাখ টাকা ২০১০ সালে তার বাবা জমা রাখেন বন্ধন গ্রুপে। এ টাকার মুনাফা হিসেবে মাসে ২৪ হাজার টাকায় ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু ২ বছরের মধ্যেই কোম্পানিটি দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় শোকে শেষ পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর চিকিৎসার অভাবে ২০১৬ সালে মারা যান তিনি। একই উপজেলার মাজুর গ্রামের বদরুন নাহারের স্বামী রফিকুল ইসলাম লিটন বলেন, বাড়ি বিক্রি করে ৫০ লাখ টাকা স্ত্রীর নামে আমানত রেখে ভালোভাবেই ভাড়া বাসায় জীবনযাপন করছিলাম আমরা। কিন্তু আমাদের সর্বস্ব ওই টাকা হারিয়ে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে স্ত্রী। কাতারপ্রবাসী দিলদার চৌধুরী জীবনের অর্জিত সব অর্থ বন্ধনে জমা রেখে যখন জানতে পেরেছেন, তখন কোম্পানি উধাও। শোকে কাতারেই মারা গেছেন তিনি। অর্থের অভাবে তার লাশটি দেশে আনতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। এমনটাই জানিয়েছেন দিলদারের স্বজনরা। এমন অসংখ্য মানুষকে পথে বসিয়েছে হায় হায় এ কোম্পানি। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানিয়েছেন, বন্ধন প্যালেসে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়ার নামে অর্ধশতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে নজরুল ইসলাম হাতিয়ে নিয়েছেন ২০০ কোটি টাকা। প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের তালিকায় আছেন- আমেরিকাপ্রবাসী আবদুল মোমেন, কামরু হাসান, আমির হোসেন, সৌদিপ্রবাসী অলিউল্লাহ, আবু জাহের, আবদুছ ছাত্তার প্রমুখ। নজরুলের বিরুদ্ধে প্রতারিত গ্রাহকরা ৮টি মামলা করলেও তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে। ভুক্তভোগীরা জানান, ৫ বছর ধরে নজরুল সপরিবারে ঢাকায় আত্মগোপনে থেকে বিলাসী জীবনযাপন করছে। নজরুলকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আটক করতে না পারলেও একটি সূত্র জানায়, মাঝেমধ্যে কুমিল্লার দিদার মার্কেট এলাকায় এক বন্ধুর বাসায় যাতায়াত করেন নজরুল। কুমিল্লা নগরীর আশপাশে তার নামে কেনা জমি অল্প অল্প করে বিক্রি করেন। এ টাকাও ঢাকায় নিয়ে যান। স্থানীয়রা জানান, বন্ধন গ্রুপ কিছুসংখ্যক আমানতকারীকে তাদের নগদ অর্থ না দিয়ে ১ লাখ টাকা মূল্যের জমি ১০ লাখ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে হস্তান্তরের মাধ্যমে টাকা সমন্বয় করেছে। নিরুপায় এসব গ্রাহক বাধ্য হয়ে এ জমি গ্রহণ করে কিছুটা আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পেলেও অধিকাংশ গ্রাহকই তাদের মূলধন হারিয়ে দিশেহারা। বন্ধনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় অভিযোগ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের এক সিনিয়র নেতা যুগান্তরকে জানান, নজরুল ইসলাম জামায়াতের কোনো নেতা নন, জামায়াতের একজন সমর্থক। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কুমিল্লার সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, বন্ধন গ্রুপের প্রতারণার বিষয়টি আমি লোকমুখে শুনেছি। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। কেউ অভিযোগ না করলেও পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।
আমানতের বিশাল অঙ্কের এসব টাকা দিয়ে নজরুল নিজের নামে ঢাকা ও কুমিল্লায় বিভিন্ন স্থানে প্লট, ফ্ল্যাট ও আবাদি জমি কিনে রাখেন। মুরাদনগর উপজেলার বৈলাবাড়ী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়ার ছেলে মাহবুবুর রহমান সবুজ অভিযোগ করে জানান, চাকরি শেষে প্রাপ্ত পেনশনের ১২ লাখ টাকা ২০১০ সালে তার বাবা জমা রাখেন বন্ধন গ্রুপে। এ টাকার মুনাফা হিসেবে মাসে ২৪ হাজার টাকায় ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু ২ বছরের মধ্যেই কোম্পানিটি দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় শোকে শেষ পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর চিকিৎসার অভাবে ২০১৬ সালে মারা যান তিনি। একই উপজেলার মাজুর গ্রামের বদরুন নাহারের স্বামী রফিকুল ইসলাম লিটন বলেন, বাড়ি বিক্রি করে ৫০ লাখ টাকা স্ত্রীর নামে আমানত রেখে ভালোভাবেই ভাড়া বাসায় জীবনযাপন করছিলাম আমরা। কিন্তু আমাদের সর্বস্ব ওই টাকা হারিয়ে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে স্ত্রী। কাতারপ্রবাসী দিলদার চৌধুরী জীবনের অর্জিত সব অর্থ বন্ধনে জমা রেখে যখন জানতে পেরেছেন, তখন কোম্পানি উধাও। শোকে কাতারেই মারা গেছেন তিনি। অর্থের অভাবে তার লাশটি দেশে আনতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। এমনটাই জানিয়েছেন দিলদারের স্বজনরা। এমন অসংখ্য মানুষকে পথে বসিয়েছে হায় হায় এ কোম্পানি। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানিয়েছেন, বন্ধন প্যালেসে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়ার নামে অর্ধশতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে নজরুল ইসলাম হাতিয়ে নিয়েছেন ২০০ কোটি টাকা। প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের তালিকায় আছেন- আমেরিকাপ্রবাসী আবদুল মোমেন, কামরু হাসান, আমির হোসেন, সৌদিপ্রবাসী অলিউল্লাহ, আবু জাহের, আবদুছ ছাত্তার প্রমুখ। নজরুলের বিরুদ্ধে প্রতারিত গ্রাহকরা ৮টি মামলা করলেও তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে। ভুক্তভোগীরা জানান, ৫ বছর ধরে নজরুল সপরিবারে ঢাকায় আত্মগোপনে থেকে বিলাসী জীবনযাপন করছে। নজরুলকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আটক করতে না পারলেও একটি সূত্র জানায়, মাঝেমধ্যে কুমিল্লার দিদার মার্কেট এলাকায় এক বন্ধুর বাসায় যাতায়াত করেন নজরুল। কুমিল্লা নগরীর আশপাশে তার নামে কেনা জমি অল্প অল্প করে বিক্রি করেন। এ টাকাও ঢাকায় নিয়ে যান। স্থানীয়রা জানান, বন্ধন গ্রুপ কিছুসংখ্যক আমানতকারীকে তাদের নগদ অর্থ না দিয়ে ১ লাখ টাকা মূল্যের জমি ১০ লাখ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে হস্তান্তরের মাধ্যমে টাকা সমন্বয় করেছে। নিরুপায় এসব গ্রাহক বাধ্য হয়ে এ জমি গ্রহণ করে কিছুটা আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পেলেও অধিকাংশ গ্রাহকই তাদের মূলধন হারিয়ে দিশেহারা। বন্ধনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় অভিযোগ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের এক সিনিয়র নেতা যুগান্তরকে জানান, নজরুল ইসলাম জামায়াতের কোনো নেতা নন, জামায়াতের একজন সমর্থক। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কুমিল্লার সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, বন্ধন গ্রুপের প্রতারণার বিষয়টি আমি লোকমুখে শুনেছি। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। কেউ অভিযোগ না করলেও পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।
No comments