জেন্ডার সাম্য প্রতিষ্ঠায় ফ্রান্সে নতুন আইন
নারী স্বাধীনতা প্রদানের লক্ষ্যে সম্প্রতি ফ্রান্সে নতুন একটি আইন পাস করা হয়েছে। জেন্ডার সাম্য প্রতিষ্ঠায় নতুন এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইনে কর্মস্থলে নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে বিরাজমান মজুরি বৈষম্যের অবসান করা সম্ভব হবে।
পাশাপাশি ছয় বছর বয়সী শিশুদের বিদ্যালয় পাঠ্যক্রমে ‘জেন্ডার সাম্য বিষয়ক পাঠ’ অন্তর্ভুক্ত করা হবে। নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে কঠোর আইন বলবৎ করা হচ্ছে। ১৯৪৪ সালে ভোটের অধিকার পায় ফরাসী নারীরা। গর্ভপাত বৈধ করা হয় ১৯৭৫ সালে। এ সব আইন সত্ত্বেও ফরাসী নারীরা তীব্রভাবে লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার। জেন্ডার সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নতুন এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে বলে ফ্রান্সের নারী অধিকার বিষয়ক মন্ত্রী নাজাত ভেলু বলেন। তিনি নতুন এ আইনকে সাম্য প্রতিষ্ঠায় ‘তৃতীয় প্রজন্মের আইন’ বলে অভিহিত করেন। নতুন এ আইনে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধে বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দেয়া হয়। আইনের খসড়ায় মারধরের হুমকি ও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগে তিন বছর পর্যন্ত কারাদ-ের বিধান করা হয়েছে। এমনকি সম্পর্কের বিষয়ে অসম্মানের ক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গীর ওই একই রকম শাস্তির বিধান কার্যকর করার কথা বলা হয়। এছাড়াও সঙ্গীর কাছ থেকে হুমকির মুখে থাকলে বিনা পয়সায় পুলিশকে ফোন করে জানাতে পারবে নারীরা। এ আইনে নারী ও পুরুষের সমান বেতনের বিধানে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। একই পদে কর্মরত নারী-পুরুষের সমান বেতন নিশ্চিত করতে বড় বড় কোম্পানিতে পরিদর্শক দল পাঠানো হবে। পরিদর্শক দলের রিপোর্টের ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। সাম্প্রতিক এক জরিপে বলা হয়, একই ধরনের কাজে নারীরা পুরুষদের তুলনায় ২৭ শতাংশ কম মজুরি পায়। প্রতি তিনজন নারীর একজন খ-কালীন কাজ করে। কর্মক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীর সুযোগ কম। ফলে কাজ না পেয়ে বাধ্য হয়েই নারীকে এ ধরনের কাজে ঢুকতে হয়। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক নারী পেশা গ্রহণ করতে পারে না। অবসর ভাতার ক্ষেত্রেও নারীরা চরমভাবে বৈষম্যের শিকার। পুরুষদের তুলনায় নারীরা ৪০ শতাংশ অবসর ভাতা কম পায়। এছাড়াও ফ্রান্সের পার্লামেন্টে নারী প্রতিনিধিদের সংখ্যা মাত্র ২৭ শতাংশ।এ আইনে শিশুদের পাঠ্যক্রমে ‘লৈঙ্গিক সাম্য বিষয়ক পাঠ’ অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়। যা এ বছর থেকেই শুরু করা হবে বলে জানানো হয়। ছয় থেকে এগার বছর বয়সী শিশুদের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
লৈঙ্গিক সাম্যের ক্ষেত্রে ফ্রান্স পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর একটি। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ২০১২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ফ্রান্স আছে সাতান্ন নম্বরে। এ ক্ষেত্রে ব্রিটেন আছে আঠার নম্বরে। উল্লেখ্য, ভেনিজুয়েলা বা কিরগিজ প্রজাতন্ত্রের মতো দেশগুলোর চেয়েও তারা অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। নারী ও পুরুষের মজুরি সাম্য সূচকে ১৩৫টি দেশের মধ্যে ১২৯ নম্বরে আছে ফ্রান্স। তাই বিদ্যমান মজুরি বৈষম্য দূরীকরণে ও লৈঙ্গিক সাম্য প্রতিষ্ঠায় প্রণীত এ আইন বিশেষ ভূমিকা রাখবে। দেশটির সরকার এ ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করছে। এর ফলে হয়ত ফ্রান্সে নারীর প্রতি সহিংসতা অনেকটা কমানো যাবে।
ইয়াসমিন হোসেন
No comments