যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র-সহিংসতা- ওবামার পরিকল্পনায় কাজ হবে কি?
যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র-সহিংসতা কমিয়ে আনতে নিজের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তাঁর পরিকল্পনা অস্ত্র-সহিংসতা কমিয়ে আনতে পারবে কি না, তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে এখন বিতর্ক চলছে।
গত ডিসেম্বরে এক অস্ত্রধারী কানেটিকাটের স্যান্ডি হুক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুসহ ২৬ জনকে হত্যা করার পর অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।
ওবামা তাঁর পরিকল্পনায় যে বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়েছেন তা হলো: অস্ত্র বিক্রি নিয়ন্ত্রণ, মানসিকভাবে অসুস্থদের কাছে অস্ত্র বিক্রি না করা, বিদ্যালয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ে আরও বেশি গবেষণা। এই পরিকল্পনা প্রকাশ করার পর ওবামা নিজেও স্বীকার করেন, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র-সহিংসতা কমিয়ে আনা একটি জটিল ব্যাপার।
উইমেনস হসপিটাল অ্যান্ড হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের দারিউস মোজাফফারিয়ান বলেন, ‘অস্ত্র-সহিংসতা শুধু অস্ত্রের মালিকানা, অপরাধ বা মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয় নয়। একে সার্বিক জনস্বাস্থ্যের ইস্যু হিসেবে দেখতে হবে।’
ওবামার পরিকল্পনায় অস্ত্র ক্রেতার অতীতের সম্ভাব্য অপরাধের ঘটনা খতিয়ে দেখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান জনস হপকিনস সেন্টার ফর গান পলিসি অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার বলেন, ‘এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অস্ত্র বিক্রির আগে ক্রেতার অতীত ঘেঁটে দেখার ব্যবস্থা কার্যকর করা। এটা মানা যায় না যে অপরাধের রেকর্ড খতিয়ে না দেখেই কারও হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে।’
মার্কিন বিচার বিভাগের তথ্যমতে, অস্ত্র বিক্রির ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ক্রেতার অপরাধের ইতিহাস খতিয়ে দেখা হয় না। বিশেষ করে ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিক্রেতারা এটা বেশি করেন। তবে বোস্টনের নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সোশিওলজি ও ক্রিমিনোলজি বিষয়ের অধ্যাপক জ্যাক লেভিন বলছেন অন্য কথা। তিনি বলেন, অস্ত্র ক্রেতার অতীত খতিয়ে দেখলেও স্কুলে গুলি করে হত্যার বেশির ভাগ ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব হবে না। কারণ, ওই হত্যাকারীরা সাধারণত মা-বাবার কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে এটা ঘটায়।
অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণবিরোধীরা এ দিকটাই তাঁদের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরছেন।
ওবামা তাঁর পরিকল্পনায় অ্যাসল্ট রাইফেলের মতো ‘আক্রমণাত্মক’ অস্ত্র ও অনেক গুলি ধরে এমন বড় আকারের ম্যাগাজিন নিষিদ্ধের কথা বলেছেন। জনস হপকিনসের গবেষক ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার এখানে ওবামার সঙ্গে একমত। তিনি মনে করেন, আক্রমণাত্মক অস্ত্র ও বড় আকারের ম্যাগাজিন নিষিদ্ধ করলে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব।
অধ্যাপক জ্যাক লেভিন বলেন, মানসিকভাবে অসুস্থদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা সহায়তা দিতে হবে। এটা অস্ত্র-সহিংসতা কমাতে পারে। ওবামা দেশের আট হাজার স্কুলের মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শককে এ ব্যাপারে কাজ করার আহ্বান জানান। অস্ত্র-সহিংসতা কমাতে গণমাধ্যমের গবেষণা বাড়ানোর প্রতিও জোর দেন তিনি।
অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণের সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের (এনআরএ) ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের প্রধান রিচার্ড পিয়ারসন বলেন, ‘অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণের ফলে অনেক জায়গায় অপরাধ বেড়ে যাবে। অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ভালো মানুষের হাত খালি করা হবে, কিন্তু অপরাধীদের কাছে অস্ত্র থেকে যাবে।’
এনআরএর কেন্দ্রীয় নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েন লাপিয়ের সমালোচনার ঝড় উঠলে বলেছিলেন, মারদাঙ্গায় ভরা ভিডিও গেমস, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান অস্ত্র-সহিংসতার জন্য অনেকাংশে দায়ী। এসব অনুষ্ঠান অনেককেই অপরাধ করতে উসকে দেয়।
বাস্তবতা হলো, স্যান্ডি হুক হত্যাযজ্ঞের পরে অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র বিক্রি বেড়ে যায়। আর এই সময়ের মধ্যে এনআরএর সদস্যসংখ্যা বেড়েছে আড়াই লাখেরও ওপরে। অর্থাৎ দেশটিতে অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণবিরোধীদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে!
মাহফুজার রহমান
ওবামা তাঁর পরিকল্পনায় যে বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়েছেন তা হলো: অস্ত্র বিক্রি নিয়ন্ত্রণ, মানসিকভাবে অসুস্থদের কাছে অস্ত্র বিক্রি না করা, বিদ্যালয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ে আরও বেশি গবেষণা। এই পরিকল্পনা প্রকাশ করার পর ওবামা নিজেও স্বীকার করেন, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র-সহিংসতা কমিয়ে আনা একটি জটিল ব্যাপার।
উইমেনস হসপিটাল অ্যান্ড হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের দারিউস মোজাফফারিয়ান বলেন, ‘অস্ত্র-সহিংসতা শুধু অস্ত্রের মালিকানা, অপরাধ বা মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয় নয়। একে সার্বিক জনস্বাস্থ্যের ইস্যু হিসেবে দেখতে হবে।’
ওবামার পরিকল্পনায় অস্ত্র ক্রেতার অতীতের সম্ভাব্য অপরাধের ঘটনা খতিয়ে দেখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান জনস হপকিনস সেন্টার ফর গান পলিসি অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার বলেন, ‘এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অস্ত্র বিক্রির আগে ক্রেতার অতীত ঘেঁটে দেখার ব্যবস্থা কার্যকর করা। এটা মানা যায় না যে অপরাধের রেকর্ড খতিয়ে না দেখেই কারও হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে।’
মার্কিন বিচার বিভাগের তথ্যমতে, অস্ত্র বিক্রির ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ক্রেতার অপরাধের ইতিহাস খতিয়ে দেখা হয় না। বিশেষ করে ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিক্রেতারা এটা বেশি করেন। তবে বোস্টনের নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সোশিওলজি ও ক্রিমিনোলজি বিষয়ের অধ্যাপক জ্যাক লেভিন বলছেন অন্য কথা। তিনি বলেন, অস্ত্র ক্রেতার অতীত খতিয়ে দেখলেও স্কুলে গুলি করে হত্যার বেশির ভাগ ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব হবে না। কারণ, ওই হত্যাকারীরা সাধারণত মা-বাবার কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে এটা ঘটায়।
অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণবিরোধীরা এ দিকটাই তাঁদের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরছেন।
ওবামা তাঁর পরিকল্পনায় অ্যাসল্ট রাইফেলের মতো ‘আক্রমণাত্মক’ অস্ত্র ও অনেক গুলি ধরে এমন বড় আকারের ম্যাগাজিন নিষিদ্ধের কথা বলেছেন। জনস হপকিনসের গবেষক ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার এখানে ওবামার সঙ্গে একমত। তিনি মনে করেন, আক্রমণাত্মক অস্ত্র ও বড় আকারের ম্যাগাজিন নিষিদ্ধ করলে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব।
অধ্যাপক জ্যাক লেভিন বলেন, মানসিকভাবে অসুস্থদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা সহায়তা দিতে হবে। এটা অস্ত্র-সহিংসতা কমাতে পারে। ওবামা দেশের আট হাজার স্কুলের মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শককে এ ব্যাপারে কাজ করার আহ্বান জানান। অস্ত্র-সহিংসতা কমাতে গণমাধ্যমের গবেষণা বাড়ানোর প্রতিও জোর দেন তিনি।
অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণের সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের (এনআরএ) ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের প্রধান রিচার্ড পিয়ারসন বলেন, ‘অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণের ফলে অনেক জায়গায় অপরাধ বেড়ে যাবে। অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ভালো মানুষের হাত খালি করা হবে, কিন্তু অপরাধীদের কাছে অস্ত্র থেকে যাবে।’
এনআরএর কেন্দ্রীয় নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েন লাপিয়ের সমালোচনার ঝড় উঠলে বলেছিলেন, মারদাঙ্গায় ভরা ভিডিও গেমস, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান অস্ত্র-সহিংসতার জন্য অনেকাংশে দায়ী। এসব অনুষ্ঠান অনেককেই অপরাধ করতে উসকে দেয়।
বাস্তবতা হলো, স্যান্ডি হুক হত্যাযজ্ঞের পরে অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র বিক্রি বেড়ে যায়। আর এই সময়ের মধ্যে এনআরএর সদস্যসংখ্যা বেড়েছে আড়াই লাখেরও ওপরে। অর্থাৎ দেশটিতে অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণবিরোধীদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে!
মাহফুজার রহমান
No comments