নিষ্ক্রিয় বিএনপিঃ রাজনৈতিক বিতর্কে সেনাবাহিনী by সিরাজুর রহমান
মহাজন এসেছিল পাওনা টাকা আদায় করতে। খাতক বলল, তার হাতে টাকা নেই। তাহলে কবে দেবে টাকাÑ জানতে চাইল মহাজন।
খাতক বলল, তা বলতে পারব না, কাল আর পরশু বাদ দিয়ে তরশু দিন আসবেন, তখন বলে দেবো টাকা কবে দিতে পারব, নাকি পারব না।
সাম্প্রতিক কালে বিএনিপর কোনো কোনো নেতার উক্তি অবশ্যই এই উপমাটার সঙ্গে
হুবহু মিলে যাবে। পত্রিকায় পড়ছিলাম, ১৯ জানুয়ারি শহীদ রাষ্ট্রপতি
জিয়াউর রহমানের ৭৬তম জন্মদিন উদ্যাপন আর ১৮ দলের কিছু কর্মসূচির কারণে
বিএনপি তাদের ‘ভারপ্রাপ্ত’ মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের
কারামুক্তির জন্য কোনো কর্মসূচি দিতে পারছে না। তবে ২৫ জানুয়ারির পর
দলনেত্রী খালেদা জিয়া (সম্ভবত স্ট্যান্ডিং কমিটির সঙ্গে) আলোচনা করে সে
কর্মসূচি ঠিক করবেন।
ঘোষণাটায় দায়সারা গোছের মনোভাব লক্ষ করেছেন কি? স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষক আর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়ার জন্মদিন অবশ্যই যথোপযুক্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে উদযাপন করা উচিত। অন্য কোনো কর্মসূচি যাতে তাতে বাধার সৃষ্টি করতে না পারে সে দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। বিএনপি ১৮ দলের জোটের অন্তর্ভুক্ত, সুতরাং সে জোটের কর্মসূচির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কর্মসূচি দেয়াও অনুচিত হবে। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মুক্ত করার কর্মসূচি সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত ২৫ জানুয়ারির আগে কেন নেয়া যাবে না সে প্রশ্ন সাধারণ বুদ্ধিকে আহত করবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিগত দু-তিন বছর প্রমাণ করেছেন যে, অত্যন্ত সফল আর গতিশীল নেতা তিনি। শীর্ষ নেতাদের অনেকের ভূমিকাই যখন ল্যাংচানো বলে মনে হয়েছে, তখন তিনি অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে গণতন্ত্রের আন্দোলন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলন পরিচালনা করেছেন। তাকে গ্রেফতার ও কারাবন্দী করার পর থেকে আন্দোলন যেভাবে ঝিমিয়ে পড়েছে বলে মনে হয়, তার থেকেই প্রমাণ হয়ে যাবে কত শক্তিশালী নেতা তিনি।
একের পর এক সাজানো মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মামলাগুলো যে সাজানো ছিল, যেকোনো শিশুও তা বুঝতে পারবে। হাইকোর্টে তিনি জামিন পাচ্ছেন কিন্তু ছাড়া পাচ্ছেন না। জামিন লাভের পরও জেলগেটে নতুন নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তাকে। তার পরেও নাকি নতুন নতুন ভুয়া মামলা যোগ হয়েছে তালিকায়। কোনো আদালতের যদি সামান্যতম বিবেকবুদ্ধিও থাকে তাহলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আমলমগীর অবশ্যই সেসব মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। কিন্তু যেভাবে একের পর এক মামলা সাজানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে, তাতে মনে হতে বাধ্য যে তিনি কারামুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন, রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যান, এই ব্যর্থ ও অপদার্থ সরকারের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সংগঠিত করেন, সরকার সেটা চায় না।
আরো কিছু কারণ আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এবং নিজের তত্ত্বাবধানে একটা নীলনকশার নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবার ক্ষমতা পাওয়া শেখ হাসিনার অত্যন্ত স্বচ্ছ লক্ষ্য। তিনি প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, বয়স ৫৭ বছর হলে তিনি ছোট বোন শেখ রেহানার হাতে দলীয় নেতৃত্ব (এবং প্রধানমন্ত্রিত্ব) হস্তান্তর করে রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন। সেটা বেশ কয়েক বছর আগের কথা। আর অন্য অজস্র প্রতিশ্রুতির মতো সে প্রতিশ্রুতিও তিনি ভঙ্গ করেছেন। স্পষ্টতই রেহানার উচ্চাভিলাষ এবং দলের ভেতরের সমালোচনা শান্ত করাই তখন তার উদ্দেশ্য ছিল। দেশের মানুষ এখন আওয়ামী লীগের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মোটামুটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও যে নৌকাডুবি ঘটবে, দলের অস্তিত্ব লোপ পাবে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্যরাও সেটা বুঝে গেছেন। শুনেছি উদ্ভট কথাবার্তা ও কাজের দরুন দলের ভেতর অনেকে নেত্রীকে অন্য রকম শব্দে বর্ণনা করেন। নীলনকশার নির্বাচন পর্যন্তও সমালোচকদের মুখ বন্ধ রাখা তার জন্য একান্ত প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রীর নতুন চাল
হাসিনা এখন নতুন চাল চেলেছেন। শোনা যাচ্ছে ‘কিচেন পার্লামেন্টে’ আবার সংবিধান সংশোধন করা হবে, একটানা প্রধানমন্ত্রিত্ব দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ করা হবে। এমন আভাসও দেয়া হচ্ছে যে, বর্তমান মেয়াদের পর তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রধানমন্ত্রিত্ব শেষ হলে রেহানাকে দুই মেয়াদের জন্য এবং তারপর প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আরো দুই মেয়াদের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্ব দিয়ে মুজিবের বংশ আর আওয়ামী লীগের শাসন দৃশ্যমান ভবিষ্যতের জন্য সুরক্ষিত করাই নতুন পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। ভগ্নিবিরোধ আর আওয়ামী লীগের গৃহযুদ্ধ এতে বন্ধ হবে কি না তা নিশ্চিত নয় কিন্তু দেশবাসী গভীর সন্দেহ ও অবিশ্বাসের সঙ্গে লক্ষ করবে এ পরিকল্পনায় সাধারণ মানুষ, এমনকি আওয়ামী লীগ সদস্যদের মতামতও ধর্তব্যে রাখা হচ্ছে না। জনসাধারণের ভোটাধিকারের কোনো ভূমিকা এই নীলনকশায় নেই।
সম্ভব হলে এপ্রিল কিংবা মে মাসেই সরকারের পরিচালনায় নির্বাচন করে ফেলাই বর্তমান শেখ হাসিনার পরিকল্পনা বলে মনে হয়। বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীসহ উল্লেখযোগ্য দলগুলো সম্ভবত সে নির্বাচন বর্জন করবে। কিন্তু সেসব দলের সদস্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইতে পারেন। হাসিনা চান যে বিএনপি প্রমুখ বিরোধী দলগুলোর উল্লেখযোগ্য ও প্রভাবশালী নেতাদের জেলে আটক রাখা হোক, যাতে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারেন। কোনো কারণে এপ্রিল-মেতে নির্বাচন দেওয়া সম্ভব না হলেও দ্রুত আদালতে বিচার করে এদের নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে যে নতুন নতুন মামলা সাজানো হচ্ছে, এই হচ্ছে তার রহস্য। এত মামলা তার বিরুদ্ধে জমেছে যে, সেসব মামলা দ্রুত আদালতেও সুরাহা করতে নির্বাচনের পর পর্যন্ত লেগে যাবে অর্থাৎ তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। বিএনপির শত শত নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানোরও এই হচ্ছে উদ্দেশ্য। আর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে তো শত শত ধর্মানুরাগী রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে যাদের কারো কারো হয়তো ১৯৭১ সালে জন্মও হয়নি।
কিছু কিছু কানাঘুষা হচ্ছে যে, বিএনপির ভেতরে এমন কেউ কেউ আছেন যারা প্রধান নির্বাহী কর্মাকর্তা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মুক্ত করার আন্দোলনে তেমন উৎসাহী নন। সেটা হয়তো অস্বাভাবিক নয়। অন্য কানাঘুষাটা একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। সেটা হচ্ছে সরকার বিএনপি নেত্রী ও তার পুত্রদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলাগুলো সক্রিয় করছে খালেদা জিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যেÑ অনেকটা রশিতে টান দেবার মতো করে। কিন্তু বেগম জিয়া অবশ্যই জানেন তিনি আন্দোলন বন্ধ করে দিলেও শেখ হাসিনা তার বিরুদ্ধে আক্রমণ বন্ধ করবেন না। তাছাড়া আর একবার ক্ষমতা পেলে হাসিনা শহীদ জিয়ার বংশ এবং তার সৃষ্ট রাজনৈতিক দলটিকে রাজনীতি থেকে অবলুপ্ত করার কোনো চেষ্টারই ত্রুটি রাখবেন না।
তবু এ কথা সত্যি যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার জন্য বিএনপির আন্দোলনে ভাটা পড়েছে। তেমনি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে সরকারের নির্যাতন বন্ধ করার এবং তাকে কারামুক্ত করার জন্য বিএনপির যেমন সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল, ততটা সক্রিয় হয়নি এ দল। নেতারা জনসাধারণকে যতটা বোকা ভাবেন ততটা বোকা তারা নয়। বিএনপিকে কারা কোন পথে নিয়ে যাবার জন্য টানাহেঁচড়া করছে সেটা অনেকেরই চিন্তার বিষয়।
রুশ অস্ত্র ক্রয় বিতর্কে সেনাবাহিনীর ভূমিকা
আট হাজার কোটি অথবা বারো হাজার কোটি টাকাই হোক রুশ সমরাস্ত্র ক্রয় সম্বন্ধে বাংলাদেশের বর্তমান বিতর্ক সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। অনেক দিক ও মাত্রা আছে এ বিতর্কের। প্রথম কথা হলো এ সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের মতো সম্পূর্ণ স্বৈরতান্ত্রিক উপায়ে নিয়েছেন বলেই মনে হয়। প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় (তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের শ্বশুর) প্রবাসীকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেনও বলেছেন, রুশ অস্ত্র ক্রয়ের সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেনি, এমনকি এ বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনাও হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই যে এ সমালোচনা করেছেন তা থেকে ধরে নেয়া যেতে পারে এ সম্বন্ধে সরকারের ভেতরেও অসন্তোষ, নিদেন দ্বিমত আছে।
প্রতিরক্ষার জন্য সমরাস্ত্র ক্রয় অথবা অন্য কোনো সিদ্ধান্তের একটা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক থাকে। বাংলাদেশের সমরাস্ত্রের চাহিদা এ যাবৎ মিটিয়েছে চীন। সে সম্বন্ধে কোনো অভিযোগ কিংবা সমালোচনা কখনো শোনা যায়নি। অন্যান্য ব্যাপারেও চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের আগে পর্যন্ত উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটছিল সে সম্পর্কের। বাংলাদেশের সাথে সড়ক ও রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, চট্টগ্রামে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ইত্যাদি প্রস্তাব চীন বাংলাদেশকে দিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে, বিশেষ করে সেতু-সড়ক ইত্যাদি অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের অবদান ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য। এমনকি যে বিশাল ইমারতটি বেহাত করে শেখ হাসিনা ‘বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্র’ নাম দিয়েছেন সেটিও ছিল বাংলাদেশের জনসাধারণের জন্য চীনের উপহার।
সমরাস্ত্র নির্মাণ শিল্পে চীন এখন আর রাশিয়ার চেয়ে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের সমরাস্ত্রের চাহিদা সে মেটাতে পারবে কি না যাচাই না করে রাশিয়া থেকে অস্ত্র ক্রয় করে শেখ হাসিনা বেইজিংকে এ ইশারাই দিলেন যে আগামী নির্বাচনে আবার ক্ষমতা পেলে তার আন্তর্জাতিক সম্পর্কে কিছু পার্শ্ব-পরিবর্তন ঘটতে পারে। একক সিদ্ধান্তে এত গুরুত্বপূর্ণ নীতি পরিবর্তন কোনো গণতান্ত্রিক দেশে তো বটেই, বর্তমান চীনেও আর নেয়া হবে বলে আশা করা যায় না। মন্ত্রিসভার অনুমোদন না নিয়ে এই অস্ত্রক্রয় চুক্তি করে শেখ হাসিনা অন্যায় করেছেন।
সমরাস্ত্র ক্রয়ের ব্যাপারে যন্ত্রাংশ (স্পেয়ার পার্টস) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা। অস্ত্রগুলোর আয়ুষ্কালজুড়ে মেরামত ইত্যাদির জন্য বহু যন্ত্রাংশ ক্রয়ের প্রয়োজন হয়। সব দেশই সাধারণত এবং যথাসম্ভব একই সূত্র থেকে সমরাস্ত্র ক্রয় করে। বিশেষ একটা কারণ আছে তার। তেমন অবস্থায় এক অস্ত্রের বাড়তি খুচরা অংশ সহজেই অন্য অস্ত্রে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু রাশিয়ায় তৈরী কামান কিংবা ক্ষেপণাস্ত্রের যন্ত্রাংশ চীন বা অন্য কোনো দেশে তৈরী সমমানের অস্ত্রে ব্যবহার করা যাবে না। এটা কত ব্যয়বহুল হতে পারে বাংলাদেশ বিমানের দুরবস্থা তার কিছু দৃষ্টান্ত। বিভিন্ন ক্ষমতাধর ব্যক্তির প্রভাবে বিমান বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশেও বিভিন্ন নির্মাতার তৈরী উড়োজাহাজ কিনেছে। সেসব জাহাজের জন্য পৃথক পৃথক স্তূপ যন্ত্রাংশ মজুদ রাখা প্রয়োজন। যন্ত্রাংশের ব্যয় তাতে বহু গুণ বেড়ে যায়। প্রায়ই দেখা যায় যন্ত্রাংশের অভাবে কোনো-না-কোনো উড়োজাহাজ দীর্ঘকাল অব্যবহার্য পড়ে থাকছে, লাখ লাখ ডলারের লোকসান হচ্ছে প্রতিদিন।
বিমান এবং যন্ত্রাংশ ক্রয়ে ও মেরামতে দুর্নীতির অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। বস্তুত সমরাস্ত্র শিল্পেও যন্ত্রাংশ ক্রয়ে দুর্নীতির সুযোগ খুবই বেশি। আরো বড় বিবেচনা এই যে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশের সমরাস্ত্র ক্রয়ের ইতিহাস সুখকর নয়। শেখ হাসিনার পূর্ববর্তী সরকারের আমলে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি মিগ ২৯ জঙ্গি বিমান কেনা হয়েছিল। ডেলিভারির পর দেখা গেল বিমানগুলো বাংলাদেশের স্বল্প পরিসরে ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। সে বিমানগুলো এখন কোথায় কি ভাবে আছে কে জানে? তবু এই ক্রয়ের সময় ব্যক্তিবিশেষ ৩০০ কোটি টাকা কমিশন খেয়েছিলেন বলে তখন অভিযোগ উঠেছিল। শুধু তা-ই নয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সে বাবদ দুর্নীতির একটি বিচারাধীন মামলা বর্তমান সরকার গদিতে এসে তুলে নিয়েছিল।
উপযোগিতা বিবেচনা করা হয়নি
যেসব অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি শেখ হাসিনা মস্কোয় করে এসেছেন, সেগুলো বাংলাদেশের উপযোগী হবে কি না, নাকি মিগ ২৯ বিমানগুলোর মতো সেসব অস্ত্রে পড়ে পড়ে জং ধরবে কে জানে? মন্ত্রিসভায় আলোচনা করে এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ না নিয়ে এত মোটা অংকের অস্ত্র ক্রয় করাকে কেউ সুবিবেচনার পরিচায়ক বলবে না এবং দুর্নীতির অভিযোগ হলে শেখ হাসিনাকেই এককভাবে তার দায়িত্ব নিতে হবে।
এই অস্ত্র ক্রয় নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক যখন জমে উঠেছে তখন সম্পূর্ণ অনভিপ্রেতভাবে সে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন সশস্ত্রবাহিনীগুলোর কয়েকজন অফিসার। গত সোমবার সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের সংবাদ বিফ্রিংয়ে তিনজন অফিসার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই আট হাজার কোটি টাকার অস্ত্র ক্রয়ে কোনো ধরনের অস্বচ্ছতা নেই। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শ করে ও তাদের মতামত নিয়ে এই ক্রয় চুক্তি করা হয়েছে।’
সরকারের কোন কোন মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শ করা হয়েছে ব্্িরফিংয়ে তার উল্লেখ নেই। তবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে যে অনুমোদন নেয়া হয়নি সেটা প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীর উক্তিতেই পরিষ্কার এবং এই তিনজন অফিসারের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত ও কাজকে বৈধতার সার্টিফিকেট দেয়ার একটা অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল। এটা বিশেষ দুঃখজনক।
রাজনৈতিক বিতর্কের মীমাংসা রাজনীতির অঙ্গনে হওয়াই বিধেয়। রাষ্ট্রের কোনো স্থায়ী যন্ত্র তাতে হস্তক্ষেপ করলে বিতর্ক তাকেও স্পর্শ করে। জাতীয় সেনাবাহিনীর জন্য সেটা খুবই ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে। ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন থেকে শুরু করে জেনারেল পর্যন্ত পদমর্যাদার ৫৭ জন অফিসার নিহত হওয়ার পর সেনাবাহিনীকে যেন যবনিকার অন্তরালে রাখা হয়েছে। শূন্য পদগুলোতে কাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে, নিয়োগপ্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীতে কোনো রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটেছে কি না ইত্যাদি সম্বন্ধে জনসাধারণের মধ্যে বহু সন্দেহ আর সংশয় আছে। সেনাবাহিনী একটা আমের ঝুড়ির মতো। একটা পচা আম সে ঝুঁড়িতে রাখা হলে ধীরে ধীরে সে পচন সব আমে সংক্রমিত হতে বাধ্য।
সেসব সন্দেহ আরো গভীর হচ্ছে এ কারণে যে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেই রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোর রাজনীতিকরণে উঠেপড়ে লেগেছিল। প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ কিছুই এখন আর নির্দলীয় কিংবা নিরপেক্ষ আছে বলা যাবে না। সেনাবাহিনীতে দলীয় প্রভাব বিস্তার শেখ হাসিনার পক্ষে যে স্বাভাবিক হবে সেটা তার অতীত কিছু কাজ থেকেই ধরে নেয়া যেতে পারে। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল নাসিমকে দিয়ে তিনি একটা অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিলেন। ২০০৬ সালের অক্টোবরে আওয়ামী লীগ যখন হত্যা, নৈরাজ্য আর নাশকতায় মেতে উঠেছিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তখন সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছিলেন। সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ সে অনুরোধে সাড়া না দিয়ে সাংবিধানিক দায়িত্ব লঙ্ঘন করেছেন।
অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়
তার পরেই প্রমাণ পাওয়া গেল যে আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক ভেঙে দেয়ার পেছনে সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনীর বিশেষ ভূমিকা ছিল। দুই বছর স্থায়ী বর্ণচোরা সেনাশাসনের সময় সশস্ত্রবাহিনীগুলোর বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ রাজনীতিতে অশুভ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে। অন্যতম প্রধান দল বিএনপিকে দ্বিধাবিভক্ত করার জন্য ডিজিএফআইয়ের চেষ্টার কথা এখন সবাই জানেন। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনকে বিএনপির বিরুদ্ধে প্রভাবিত করার অনেক চেষ্টা করেছে এই গোয়েন্দা বিভাগটি। বর্তমান সরকারের আমলেও ডিজিএফআই এবং অন্য সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী এনএসআইকে শাসক দলের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে বলে বহু অভিযোগ আছে। এ খবরও মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছিল যে একবারেই ৩৬ জন ছাত্রলীগ কর্মীকে এনএসআইতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক সরকার আসে আর যায়। গণতন্ত্রের এই হচ্ছে বিধান। কিন্তু সশস্ত্রবাহিনী জাতীয় এবং স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং সংবিধানের পবিত্রতা নিশ্চিত করা কর্তব্য। ইতিহাসে বহু প্রমাণ আছে সেনাবাহিনীতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার শুধু অকল্যাণই বয়ে আনে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কাজ করেন এক, মুখে বলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের কথা তিনি অবশ্যই স্বীকার করবেন না। কিন্তু তার কথা আজকাল আর সব সময় বিশ্বাসযোগ্য হয় না। তিনি নিশ্চয়ই বলবেন যে, সেনাবাহিনীতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার তার সরকারের আমলে হচ্ছে না। কিন্তু সেটা যে সত্যি হবে তার কোনো মানে নেই। বিগত চার বছরে পুলিশবাহিনীর দলীয়করণ সম্পূর্ণ হয়েছে। পুলিশ এখন আর অপরাধ ও দুষ্কৃত দমনকে প্রধান কাজ মনে করে না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দলনের কাজে এখন পুলিশকে ফুলটাইম ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের ক্যাডারগুলো আর পুলিশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে।
তবু রাজারবাগে পুলিশ প্যারেডে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন যে, পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে না এবং হবে না। কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সে প্যারেডের শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার হারুনুর রশিদকে রাষ্ট্রপতি পদক দেয়া হয়েছে ২০১১ সালের ৬ জুলাই তিনি বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে পিটিয়েছিলেন বলে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই স্বীকারোক্তি ইতরপ্রাণ ছাড়া অন্য সবাইকে ব্যথিত, পীড়িত করবে।
এ ধরনের বিতর্কে সশস্ত্রবাহিনীগুলো, বিশেষ করে সেনাবাহিনী জড়িয়ে পড়তে পারে না। তাদের নিজেদের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থেই তাদের দলীয় রাজনীতির আবর্ত থেকে দূরে থাকতে হবে।
লন্ডন, ২৩ জানুয়ারি ২০১৩
ঘোষণাটায় দায়সারা গোছের মনোভাব লক্ষ করেছেন কি? স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষক আর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়ার জন্মদিন অবশ্যই যথোপযুক্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে উদযাপন করা উচিত। অন্য কোনো কর্মসূচি যাতে তাতে বাধার সৃষ্টি করতে না পারে সে দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। বিএনপি ১৮ দলের জোটের অন্তর্ভুক্ত, সুতরাং সে জোটের কর্মসূচির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কর্মসূচি দেয়াও অনুচিত হবে। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মুক্ত করার কর্মসূচি সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত ২৫ জানুয়ারির আগে কেন নেয়া যাবে না সে প্রশ্ন সাধারণ বুদ্ধিকে আহত করবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিগত দু-তিন বছর প্রমাণ করেছেন যে, অত্যন্ত সফল আর গতিশীল নেতা তিনি। শীর্ষ নেতাদের অনেকের ভূমিকাই যখন ল্যাংচানো বলে মনে হয়েছে, তখন তিনি অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে গণতন্ত্রের আন্দোলন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলন পরিচালনা করেছেন। তাকে গ্রেফতার ও কারাবন্দী করার পর থেকে আন্দোলন যেভাবে ঝিমিয়ে পড়েছে বলে মনে হয়, তার থেকেই প্রমাণ হয়ে যাবে কত শক্তিশালী নেতা তিনি।
একের পর এক সাজানো মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মামলাগুলো যে সাজানো ছিল, যেকোনো শিশুও তা বুঝতে পারবে। হাইকোর্টে তিনি জামিন পাচ্ছেন কিন্তু ছাড়া পাচ্ছেন না। জামিন লাভের পরও জেলগেটে নতুন নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তাকে। তার পরেও নাকি নতুন নতুন ভুয়া মামলা যোগ হয়েছে তালিকায়। কোনো আদালতের যদি সামান্যতম বিবেকবুদ্ধিও থাকে তাহলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আমলমগীর অবশ্যই সেসব মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। কিন্তু যেভাবে একের পর এক মামলা সাজানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে, তাতে মনে হতে বাধ্য যে তিনি কারামুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন, রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যান, এই ব্যর্থ ও অপদার্থ সরকারের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সংগঠিত করেন, সরকার সেটা চায় না।
আরো কিছু কারণ আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এবং নিজের তত্ত্বাবধানে একটা নীলনকশার নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবার ক্ষমতা পাওয়া শেখ হাসিনার অত্যন্ত স্বচ্ছ লক্ষ্য। তিনি প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, বয়স ৫৭ বছর হলে তিনি ছোট বোন শেখ রেহানার হাতে দলীয় নেতৃত্ব (এবং প্রধানমন্ত্রিত্ব) হস্তান্তর করে রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন। সেটা বেশ কয়েক বছর আগের কথা। আর অন্য অজস্র প্রতিশ্রুতির মতো সে প্রতিশ্রুতিও তিনি ভঙ্গ করেছেন। স্পষ্টতই রেহানার উচ্চাভিলাষ এবং দলের ভেতরের সমালোচনা শান্ত করাই তখন তার উদ্দেশ্য ছিল। দেশের মানুষ এখন আওয়ামী লীগের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মোটামুটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও যে নৌকাডুবি ঘটবে, দলের অস্তিত্ব লোপ পাবে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্যরাও সেটা বুঝে গেছেন। শুনেছি উদ্ভট কথাবার্তা ও কাজের দরুন দলের ভেতর অনেকে নেত্রীকে অন্য রকম শব্দে বর্ণনা করেন। নীলনকশার নির্বাচন পর্যন্তও সমালোচকদের মুখ বন্ধ রাখা তার জন্য একান্ত প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রীর নতুন চাল
হাসিনা এখন নতুন চাল চেলেছেন। শোনা যাচ্ছে ‘কিচেন পার্লামেন্টে’ আবার সংবিধান সংশোধন করা হবে, একটানা প্রধানমন্ত্রিত্ব দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ করা হবে। এমন আভাসও দেয়া হচ্ছে যে, বর্তমান মেয়াদের পর তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রধানমন্ত্রিত্ব শেষ হলে রেহানাকে দুই মেয়াদের জন্য এবং তারপর প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আরো দুই মেয়াদের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্ব দিয়ে মুজিবের বংশ আর আওয়ামী লীগের শাসন দৃশ্যমান ভবিষ্যতের জন্য সুরক্ষিত করাই নতুন পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। ভগ্নিবিরোধ আর আওয়ামী লীগের গৃহযুদ্ধ এতে বন্ধ হবে কি না তা নিশ্চিত নয় কিন্তু দেশবাসী গভীর সন্দেহ ও অবিশ্বাসের সঙ্গে লক্ষ করবে এ পরিকল্পনায় সাধারণ মানুষ, এমনকি আওয়ামী লীগ সদস্যদের মতামতও ধর্তব্যে রাখা হচ্ছে না। জনসাধারণের ভোটাধিকারের কোনো ভূমিকা এই নীলনকশায় নেই।
সম্ভব হলে এপ্রিল কিংবা মে মাসেই সরকারের পরিচালনায় নির্বাচন করে ফেলাই বর্তমান শেখ হাসিনার পরিকল্পনা বলে মনে হয়। বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীসহ উল্লেখযোগ্য দলগুলো সম্ভবত সে নির্বাচন বর্জন করবে। কিন্তু সেসব দলের সদস্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইতে পারেন। হাসিনা চান যে বিএনপি প্রমুখ বিরোধী দলগুলোর উল্লেখযোগ্য ও প্রভাবশালী নেতাদের জেলে আটক রাখা হোক, যাতে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারেন। কোনো কারণে এপ্রিল-মেতে নির্বাচন দেওয়া সম্ভব না হলেও দ্রুত আদালতে বিচার করে এদের নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে যে নতুন নতুন মামলা সাজানো হচ্ছে, এই হচ্ছে তার রহস্য। এত মামলা তার বিরুদ্ধে জমেছে যে, সেসব মামলা দ্রুত আদালতেও সুরাহা করতে নির্বাচনের পর পর্যন্ত লেগে যাবে অর্থাৎ তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। বিএনপির শত শত নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানোরও এই হচ্ছে উদ্দেশ্য। আর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে তো শত শত ধর্মানুরাগী রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে যাদের কারো কারো হয়তো ১৯৭১ সালে জন্মও হয়নি।
কিছু কিছু কানাঘুষা হচ্ছে যে, বিএনপির ভেতরে এমন কেউ কেউ আছেন যারা প্রধান নির্বাহী কর্মাকর্তা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মুক্ত করার আন্দোলনে তেমন উৎসাহী নন। সেটা হয়তো অস্বাভাবিক নয়। অন্য কানাঘুষাটা একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। সেটা হচ্ছে সরকার বিএনপি নেত্রী ও তার পুত্রদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলাগুলো সক্রিয় করছে খালেদা জিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যেÑ অনেকটা রশিতে টান দেবার মতো করে। কিন্তু বেগম জিয়া অবশ্যই জানেন তিনি আন্দোলন বন্ধ করে দিলেও শেখ হাসিনা তার বিরুদ্ধে আক্রমণ বন্ধ করবেন না। তাছাড়া আর একবার ক্ষমতা পেলে হাসিনা শহীদ জিয়ার বংশ এবং তার সৃষ্ট রাজনৈতিক দলটিকে রাজনীতি থেকে অবলুপ্ত করার কোনো চেষ্টারই ত্রুটি রাখবেন না।
তবু এ কথা সত্যি যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার জন্য বিএনপির আন্দোলনে ভাটা পড়েছে। তেমনি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে সরকারের নির্যাতন বন্ধ করার এবং তাকে কারামুক্ত করার জন্য বিএনপির যেমন সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল, ততটা সক্রিয় হয়নি এ দল। নেতারা জনসাধারণকে যতটা বোকা ভাবেন ততটা বোকা তারা নয়। বিএনপিকে কারা কোন পথে নিয়ে যাবার জন্য টানাহেঁচড়া করছে সেটা অনেকেরই চিন্তার বিষয়।
রুশ অস্ত্র ক্রয় বিতর্কে সেনাবাহিনীর ভূমিকা
আট হাজার কোটি অথবা বারো হাজার কোটি টাকাই হোক রুশ সমরাস্ত্র ক্রয় সম্বন্ধে বাংলাদেশের বর্তমান বিতর্ক সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। অনেক দিক ও মাত্রা আছে এ বিতর্কের। প্রথম কথা হলো এ সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের মতো সম্পূর্ণ স্বৈরতান্ত্রিক উপায়ে নিয়েছেন বলেই মনে হয়। প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় (তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের শ্বশুর) প্রবাসীকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেনও বলেছেন, রুশ অস্ত্র ক্রয়ের সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেনি, এমনকি এ বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনাও হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই যে এ সমালোচনা করেছেন তা থেকে ধরে নেয়া যেতে পারে এ সম্বন্ধে সরকারের ভেতরেও অসন্তোষ, নিদেন দ্বিমত আছে।
প্রতিরক্ষার জন্য সমরাস্ত্র ক্রয় অথবা অন্য কোনো সিদ্ধান্তের একটা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক থাকে। বাংলাদেশের সমরাস্ত্রের চাহিদা এ যাবৎ মিটিয়েছে চীন। সে সম্বন্ধে কোনো অভিযোগ কিংবা সমালোচনা কখনো শোনা যায়নি। অন্যান্য ব্যাপারেও চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের আগে পর্যন্ত উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটছিল সে সম্পর্কের। বাংলাদেশের সাথে সড়ক ও রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, চট্টগ্রামে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ইত্যাদি প্রস্তাব চীন বাংলাদেশকে দিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে, বিশেষ করে সেতু-সড়ক ইত্যাদি অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের অবদান ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য। এমনকি যে বিশাল ইমারতটি বেহাত করে শেখ হাসিনা ‘বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্র’ নাম দিয়েছেন সেটিও ছিল বাংলাদেশের জনসাধারণের জন্য চীনের উপহার।
সমরাস্ত্র নির্মাণ শিল্পে চীন এখন আর রাশিয়ার চেয়ে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের সমরাস্ত্রের চাহিদা সে মেটাতে পারবে কি না যাচাই না করে রাশিয়া থেকে অস্ত্র ক্রয় করে শেখ হাসিনা বেইজিংকে এ ইশারাই দিলেন যে আগামী নির্বাচনে আবার ক্ষমতা পেলে তার আন্তর্জাতিক সম্পর্কে কিছু পার্শ্ব-পরিবর্তন ঘটতে পারে। একক সিদ্ধান্তে এত গুরুত্বপূর্ণ নীতি পরিবর্তন কোনো গণতান্ত্রিক দেশে তো বটেই, বর্তমান চীনেও আর নেয়া হবে বলে আশা করা যায় না। মন্ত্রিসভার অনুমোদন না নিয়ে এই অস্ত্রক্রয় চুক্তি করে শেখ হাসিনা অন্যায় করেছেন।
সমরাস্ত্র ক্রয়ের ব্যাপারে যন্ত্রাংশ (স্পেয়ার পার্টস) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা। অস্ত্রগুলোর আয়ুষ্কালজুড়ে মেরামত ইত্যাদির জন্য বহু যন্ত্রাংশ ক্রয়ের প্রয়োজন হয়। সব দেশই সাধারণত এবং যথাসম্ভব একই সূত্র থেকে সমরাস্ত্র ক্রয় করে। বিশেষ একটা কারণ আছে তার। তেমন অবস্থায় এক অস্ত্রের বাড়তি খুচরা অংশ সহজেই অন্য অস্ত্রে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু রাশিয়ায় তৈরী কামান কিংবা ক্ষেপণাস্ত্রের যন্ত্রাংশ চীন বা অন্য কোনো দেশে তৈরী সমমানের অস্ত্রে ব্যবহার করা যাবে না। এটা কত ব্যয়বহুল হতে পারে বাংলাদেশ বিমানের দুরবস্থা তার কিছু দৃষ্টান্ত। বিভিন্ন ক্ষমতাধর ব্যক্তির প্রভাবে বিমান বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশেও বিভিন্ন নির্মাতার তৈরী উড়োজাহাজ কিনেছে। সেসব জাহাজের জন্য পৃথক পৃথক স্তূপ যন্ত্রাংশ মজুদ রাখা প্রয়োজন। যন্ত্রাংশের ব্যয় তাতে বহু গুণ বেড়ে যায়। প্রায়ই দেখা যায় যন্ত্রাংশের অভাবে কোনো-না-কোনো উড়োজাহাজ দীর্ঘকাল অব্যবহার্য পড়ে থাকছে, লাখ লাখ ডলারের লোকসান হচ্ছে প্রতিদিন।
বিমান এবং যন্ত্রাংশ ক্রয়ে ও মেরামতে দুর্নীতির অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। বস্তুত সমরাস্ত্র শিল্পেও যন্ত্রাংশ ক্রয়ে দুর্নীতির সুযোগ খুবই বেশি। আরো বড় বিবেচনা এই যে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশের সমরাস্ত্র ক্রয়ের ইতিহাস সুখকর নয়। শেখ হাসিনার পূর্ববর্তী সরকারের আমলে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি মিগ ২৯ জঙ্গি বিমান কেনা হয়েছিল। ডেলিভারির পর দেখা গেল বিমানগুলো বাংলাদেশের স্বল্প পরিসরে ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। সে বিমানগুলো এখন কোথায় কি ভাবে আছে কে জানে? তবু এই ক্রয়ের সময় ব্যক্তিবিশেষ ৩০০ কোটি টাকা কমিশন খেয়েছিলেন বলে তখন অভিযোগ উঠেছিল। শুধু তা-ই নয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সে বাবদ দুর্নীতির একটি বিচারাধীন মামলা বর্তমান সরকার গদিতে এসে তুলে নিয়েছিল।
উপযোগিতা বিবেচনা করা হয়নি
যেসব অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি শেখ হাসিনা মস্কোয় করে এসেছেন, সেগুলো বাংলাদেশের উপযোগী হবে কি না, নাকি মিগ ২৯ বিমানগুলোর মতো সেসব অস্ত্রে পড়ে পড়ে জং ধরবে কে জানে? মন্ত্রিসভায় আলোচনা করে এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ না নিয়ে এত মোটা অংকের অস্ত্র ক্রয় করাকে কেউ সুবিবেচনার পরিচায়ক বলবে না এবং দুর্নীতির অভিযোগ হলে শেখ হাসিনাকেই এককভাবে তার দায়িত্ব নিতে হবে।
এই অস্ত্র ক্রয় নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক যখন জমে উঠেছে তখন সম্পূর্ণ অনভিপ্রেতভাবে সে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন সশস্ত্রবাহিনীগুলোর কয়েকজন অফিসার। গত সোমবার সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের সংবাদ বিফ্রিংয়ে তিনজন অফিসার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই আট হাজার কোটি টাকার অস্ত্র ক্রয়ে কোনো ধরনের অস্বচ্ছতা নেই। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শ করে ও তাদের মতামত নিয়ে এই ক্রয় চুক্তি করা হয়েছে।’
সরকারের কোন কোন মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শ করা হয়েছে ব্্িরফিংয়ে তার উল্লেখ নেই। তবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে যে অনুমোদন নেয়া হয়নি সেটা প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীর উক্তিতেই পরিষ্কার এবং এই তিনজন অফিসারের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত ও কাজকে বৈধতার সার্টিফিকেট দেয়ার একটা অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল। এটা বিশেষ দুঃখজনক।
রাজনৈতিক বিতর্কের মীমাংসা রাজনীতির অঙ্গনে হওয়াই বিধেয়। রাষ্ট্রের কোনো স্থায়ী যন্ত্র তাতে হস্তক্ষেপ করলে বিতর্ক তাকেও স্পর্শ করে। জাতীয় সেনাবাহিনীর জন্য সেটা খুবই ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে। ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন থেকে শুরু করে জেনারেল পর্যন্ত পদমর্যাদার ৫৭ জন অফিসার নিহত হওয়ার পর সেনাবাহিনীকে যেন যবনিকার অন্তরালে রাখা হয়েছে। শূন্য পদগুলোতে কাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে, নিয়োগপ্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীতে কোনো রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটেছে কি না ইত্যাদি সম্বন্ধে জনসাধারণের মধ্যে বহু সন্দেহ আর সংশয় আছে। সেনাবাহিনী একটা আমের ঝুড়ির মতো। একটা পচা আম সে ঝুঁড়িতে রাখা হলে ধীরে ধীরে সে পচন সব আমে সংক্রমিত হতে বাধ্য।
সেসব সন্দেহ আরো গভীর হচ্ছে এ কারণে যে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেই রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোর রাজনীতিকরণে উঠেপড়ে লেগেছিল। প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ কিছুই এখন আর নির্দলীয় কিংবা নিরপেক্ষ আছে বলা যাবে না। সেনাবাহিনীতে দলীয় প্রভাব বিস্তার শেখ হাসিনার পক্ষে যে স্বাভাবিক হবে সেটা তার অতীত কিছু কাজ থেকেই ধরে নেয়া যেতে পারে। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল নাসিমকে দিয়ে তিনি একটা অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিলেন। ২০০৬ সালের অক্টোবরে আওয়ামী লীগ যখন হত্যা, নৈরাজ্য আর নাশকতায় মেতে উঠেছিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তখন সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছিলেন। সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ সে অনুরোধে সাড়া না দিয়ে সাংবিধানিক দায়িত্ব লঙ্ঘন করেছেন।
অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়
তার পরেই প্রমাণ পাওয়া গেল যে আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক ভেঙে দেয়ার পেছনে সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনীর বিশেষ ভূমিকা ছিল। দুই বছর স্থায়ী বর্ণচোরা সেনাশাসনের সময় সশস্ত্রবাহিনীগুলোর বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ রাজনীতিতে অশুভ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে। অন্যতম প্রধান দল বিএনপিকে দ্বিধাবিভক্ত করার জন্য ডিজিএফআইয়ের চেষ্টার কথা এখন সবাই জানেন। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনকে বিএনপির বিরুদ্ধে প্রভাবিত করার অনেক চেষ্টা করেছে এই গোয়েন্দা বিভাগটি। বর্তমান সরকারের আমলেও ডিজিএফআই এবং অন্য সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী এনএসআইকে শাসক দলের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে বলে বহু অভিযোগ আছে। এ খবরও মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছিল যে একবারেই ৩৬ জন ছাত্রলীগ কর্মীকে এনএসআইতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক সরকার আসে আর যায়। গণতন্ত্রের এই হচ্ছে বিধান। কিন্তু সশস্ত্রবাহিনী জাতীয় এবং স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং সংবিধানের পবিত্রতা নিশ্চিত করা কর্তব্য। ইতিহাসে বহু প্রমাণ আছে সেনাবাহিনীতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার শুধু অকল্যাণই বয়ে আনে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কাজ করেন এক, মুখে বলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের কথা তিনি অবশ্যই স্বীকার করবেন না। কিন্তু তার কথা আজকাল আর সব সময় বিশ্বাসযোগ্য হয় না। তিনি নিশ্চয়ই বলবেন যে, সেনাবাহিনীতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার তার সরকারের আমলে হচ্ছে না। কিন্তু সেটা যে সত্যি হবে তার কোনো মানে নেই। বিগত চার বছরে পুলিশবাহিনীর দলীয়করণ সম্পূর্ণ হয়েছে। পুলিশ এখন আর অপরাধ ও দুষ্কৃত দমনকে প্রধান কাজ মনে করে না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দলনের কাজে এখন পুলিশকে ফুলটাইম ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের ক্যাডারগুলো আর পুলিশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে।
তবু রাজারবাগে পুলিশ প্যারেডে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন যে, পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে না এবং হবে না। কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সে প্যারেডের শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার হারুনুর রশিদকে রাষ্ট্রপতি পদক দেয়া হয়েছে ২০১১ সালের ৬ জুলাই তিনি বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে পিটিয়েছিলেন বলে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই স্বীকারোক্তি ইতরপ্রাণ ছাড়া অন্য সবাইকে ব্যথিত, পীড়িত করবে।
এ ধরনের বিতর্কে সশস্ত্রবাহিনীগুলো, বিশেষ করে সেনাবাহিনী জড়িয়ে পড়তে পারে না। তাদের নিজেদের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থেই তাদের দলীয় রাজনীতির আবর্ত থেকে দূরে থাকতে হবে।
লন্ডন, ২৩ জানুয়ারি ২০১৩
No comments