সত্যিকারের রিও by মাহফুজ রহমান

অ্যানিমেটেড ছবি রিও দেখেছ কি? ওই যে একটা ম্যাকাও পাখি থাকে, যার নাম ব্লু। আর মেয়ে পাখিটির নাম জুয়েল। বেচারা ব্লু পারে না উড়তে। একদিন দেখা হয়ে যায় জুয়েল নামের পাখিটার সঙ্গে। তারপর বন্ধুত্ব। এর মধ্যে এসে গন্ডগোল পাকায় কিছু চোরাচালানকারী। আলাদা হয়ে যায় ব্লু আর জুয়েল।
তারপর সে কী কষ্ট তাদের! বাংলাদেশেও এমন দুটি পাখির দেখা মিলেছে। একটির নাম প্রিন্স আরেকটি প্রিন্সেস। ব্লু গোল্ড ম্যাকাও প্রজাতির এই পাখি দুটি ছিল হাতিরপুলের একটি মিনি চিড়িয়াখানায়। কিন্তু ৩ জানুয়ারি থেকে তারা আলাদা থাকছে! কেন? তোমরা হয়তো অনেকেই জানো, পাখি দুটি একসঙ্গে থাকলেও এদের মালিক ছিলেন দুজন। এই দুই মালিকের ভুল-বোঝাবুঝির কারণেই আলাদা থাকতে হচ্ছে প্রিন্স ও প্রিন্সেসকে।
১৯৯৭ সালের কথা। সিঙ্গাপুর-প্রবাসী মোহাম্মদ ইকরাম সেলিম সিঙ্গাপুর থেকে একটি ব্লু গোল্ড ম্যাকাও পাখি নিয়ে আসেন তাঁর ইস্কাটনের বাসায়। এই পাখিটির নামই প্রিন্স। কিন্তু কদিন পরই বাসা বদল করার কারণে প্রিন্সকে আর নিজের কাছে রাখতে পারছিলেন না ইকরাম। ২০১০ সালে তিনি পাখিটিকে দেখভালের দায়িত্ব দেন হাতিরপুলের আবদুল ওয়াদুদকে। গত প্রায় তিন বছর ওয়াদুদের কাছেই ছিল পাখিটি। তার জন্য একটা সঙ্গীও জোগাড় করে দিয়েছিলেন ওয়াদুদ। সঙ্গীটির নাম রাখা হয় প্রিন্সেস। প্রিন্স আর প্রিন্সেসের ঘরে আসে নতুন অতিথি। মোট পাঁচটি বাচ্চা ঘরে তোলে এই পাখি-দম্পতি। দারুণ সুখের সংসার তাদের। বাচ্চাদের নিয়ে কেটে যাচ্ছিল আনন্দময় দিন। দারুণ বুদ্ধি এই পাখি দুটির। মানুষের কথা বুঝতে পারে। হ্যান্ডশেক করতে চাইলে এগিয়ে দেয় পা!
কিন্তু বছর খানেক আগে থেকেই বাধে গন্ডগোল। ওয়াদুদের কাছে প্রিন্সকে ফিরে চান ইকরাম। দাবি করেন, তাঁকে না জানিয়ে প্রিন্সের জন্য সঙ্গী জোগাড় করে দিয়ে অপরাধই করেছেন ওয়াদুদ। এদিকে ওয়াদুদও নাছোড়। কোনোভাবেই চান না পাখি দুটি আলাদা থাক। কিন্তু শেষমেশ আলাদাই হতে হলো প্রিন্স ও প্রিন্সেসকে। প্রিন্স এখন থাকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়, প্রিন্সেসের ঠিকানা ওই হাতিরপুলের মিনি চিড়িয়াখানায়। প্রিন্সকে ছেড়ে ভীষণ মনমরা প্রিন্সেস। খায় না, দায় না, করে না ডাকাডাকি!
শেষমেশ মামলাও গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। আদালত জানিয়ে দিয়েছেন, পাখিটি কার কাছে থাকবে না-থাকবে, এটা তাঁরা বলতে পারেন না! শেষ খবরে জানা গেছে, প্রিন্সের জন্য ব্যাংকক থেকে নতুন সঙ্গী নিয়ে আসছেন ইকরাম! তার মানে আলাদাই থাকতে হচ্ছে প্রিন্স ও প্রিন্সেসকে!
রিও ছবিতে কিন্তু শেষটা এমন ছিল না। সেখানে ব্লু আর জুয়েলের আবার দেখা হয়। ব্লুকে আকাশে উড়তে শেখায় জুয়েল। তারপর তাদের সুখের সংসার! অথচ আমাদের প্রিন্স আর প্রিন্সেস থাকছে একদম আলাদা! কী কষ্ট!

ম্যাকাও-বৃত্তান্ত
১৯ প্রজাতির ম্যাকাওয়ের দেখা মেলে পৃথিবীতে। তার মধ্যে একটি হলো ব্লু গোল্ড ম্যাকাও। তোতাপাখি গোত্রের এই পাখির আদি বাস দক্ষিণ আমেরিকায়। মানুষের কাছে কাছে থাকতেও পছন্দ করে এই পাখিগুলো। নকল করতে পারে মানুষের বুলি। তাই পোষা পাখি হিসেবে ব্লু গোল্ড ম্যাকাওয়ের বেশ কদর দুনিয়াজোড়া। এই পাখি লম্বায় হতে পারে ৩০-৩৪ ইঞ্চি পর্যন্ত। ম্যাকাও প্রজাতির মধ্যে এরাই সবচেয়ে লম্বু। ভীষণ খ্যাপাটে ব্লু গোল্ড ম্যাকাওয়ের ঠোঁটও ভীষণ তীক্ষ। বাসা বাঁধে মরা পামগাছে। ডিম দেয় বছরে দুই থেকে তিনটি। ২৮ দিন তা দেওয়ার পর ডিম ফুটে বেরিয়ে আসে ছানা। ভেনেজুয়েলার দক্ষিণাঞ্চল থেকে পেরু, ব্রাজিল, বলিভিয়া ও প্যারাগুয়েতে দেখা মেলে ব্লু গোল্ড ম্যাকাও পাখির। ত্রিনিদাদ ও গায়ানাতেও আছে অল্প কিছু।

No comments

Powered by Blogger.