সরকারের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লাই ভারী

‘দিন বদলের সনদের চার বছর’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে আলোচকেরা বলেছেন, মহাজোট সরকার চার বছরে যেভাবে দেশ পরিচালনা করেছে, তাতে সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লাই ভারী বেশি।
নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার অনেক কিছুই বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বিশেষ করে পাঁচটি অগ্রাধিকারভিত্তিক খাতের মধ্যে কোনোটিতেই সরকার সফলতা দেখাতে পারেনি। তারা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো সরকারই সিন্ডিকেট ভেঙে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। যারা যখন ক্ষমতায় থাকে সিন্ডিকেটের সদস্যরা মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের মধ্য দিয়ে তাদের ম্যানেজ করে। আর এ কারণেই গ্রামে যে লাউয়ের দাম ১৫ টাকা ঢাকাবাসীকে সেই লাউ কিনে খেতে হয় ৬০ টাকায়।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেস কাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজন’ আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে তারা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। অন্যান্যের মধ্যে সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সুজন নির্বাহী সদস্য আলী ইমাম মজুমদার, রাজনীতিবিদ সরদার আমজাদ হোসেন, হুমায়ূন কবির হিরু, নুরুল কাদির, নাজিমউদ্দিন, সাংবাদিক মনির হায়দার, আবুল হাসনাত, মানবেন্দ্র দেব, সেন্ট যোসেফ স্কুলের শিক দীপক সরকার, বাহরাইন সুলতান বাহার ও শামীম আরা নীপা আলোচনায় অংশ নেন।

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গত চার বছরে সরকার কতগুলো প্রাথমিক কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজার বা জনগণের আস্থা অর্জনকারী কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারত। যেমনÑ মতাধরদের সম্পদের হিসাব প্রদান, একটি আচরণবিধি প্রণয়ন, সরকারি দলের মদদে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, দলতন্ত্র ও ফায়দাতন্ত্রের চর্চার অবসান, দুর্নীতি দমন কার্যক্রমকে জোরদারকরণ প্রভৃতি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সরকার এসব েেত্র পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ব্যাপকভাবে জনসমর্থন, বিশেষত তরুণ ও সচেতন নাগরিকদের সমর্থন হারিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি বিলুপ্তির পর থেকেই রাজনৈতিক  পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রধান বিরোধী দল ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে নির্দলীয় ও নিরপে কোনো সরকার ছাড়া আগামী নির্বাচনের তারা অংশ নেবে না। আর তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন যে নামেই হোক না কেন, একটি নিরপে সরকারের অধীনে যথাসময়ে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয়, তাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এতে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।

এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেনÑ দুঃখজনক হলেও সত্য, যে সরকার যখন মতায় থাকে তারা শুধু তাদের সফলতার কথাই বলে। আবার বিরোধী দল সরকারি দলের শুধু সমালোচনাই করে। কিন্তু সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতা দু’টিই থাকে। সরকারের সব উদ্যোগই যে সফলতার মুখ দেখবে এমনটি নয়, তারা অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আন্তরিক কি না এটিই বিবেচ্য বিষয়। তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে গ্রাম থেকে আসা সস্তা তরিতরকারি বা শাকসবজি আমাদের বেশি দামে কিনে খেতে হয়।

আলী ইমাম মজুমদার বলেন, দুর্নীতি দমনের জন্য টাকার প্রয়োজন নেই। আমি মনে করি অনেক েেত্র সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবই দিন বদলের সনদের পথে বড় অন্তরায়। তিনি বলেন, কৃষকের পণ্যে কম দামে কেনা ঠিক হবে না। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে হয়তো এমন দিন আসবে যখন কৃষক খাদ্য উৎপাদন বন্ধ করে দেবেন।

সরদার আমজাদ হোসেন বলেনÑ পদ্মা সেতু, হলমার্ক, ডেসটিনি প্রভৃতি ইস্যুতে দুদক কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। তিনি আরো বলেন, ডেসটিনির রফিকুল আমীন যে সম্পদ করেছেন, তার কোনো হিসাবও নেই। দুদকের মামলায় ডেসটিনির শীর্ষ কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করা হলেও এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের কোনো সম্ভাবনা নেই। সাংবাদিক মনির হায়দার বলেন, আমাদের রাজনীতিবিদেরা এতই বধির যে তারা কোনো কিছুই কানে নিচ্ছেন না, আমরা নিজেরাই দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে আলোচনা করছি।
       

No comments

Powered by Blogger.