হাইড্রোগ্রাফিক কমিটির চিঠি সরকারকে-সাগরে বিদেশি জরিপ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার by মেহেদী হাসান
নিজেদের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও দেশের সাগর এলাকায় বিভিন্ন সময় জরিপকাজ চালানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে। এর ফলে একদিকে যেমন বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে, অন্যদিকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য চলে যাচ্ছে বিদেশিদের হাতে।
এ বিষয়গুলো উল্লেখ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ন্যাশনাল হাইড্রোগ্রাফিক কমিটি। চিঠিতে বাংলাদেশের সাগর এলাকায় হাইড্রোগ্রাফিক জরিপসহ যেকোনো ধরনের জরিপের কাজ শুরু করার আগে ন্যাশনাল হাইড্রোগ্রাফিক কমিটির মতামত নেওয়া প্রয়োজনীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত মাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছে পাঠানো হয়েছে ওই চিঠির প্রতিলিপি। কমিটির পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দিয়ে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপকাজ চালালে খরচ কম হবে। পাশাপাশি দেশের জাতীয় নিরাপত্তাও রক্ষা পাবে।
সূত্র জানায়, ন্যাশনাল হাইড্রোগ্রাফিক কমিটির চেয়ারম্যান সহকারী নৌপ্রধান (অপারেশনস) গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ওই চিঠি পাঠান। চিঠির বিষয় ছিল 'দেশি-বিদেশি কোনো সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের জলসীমায় হাইড্রোগ্রাফিক জরিপকাজ সম্পন্নকরণ এবং ডাটা আদান-প্রদান প্রসঙ্গে'। ওই চিঠিতে বলা হয়, 'বর্তমানে আমাদের সমুদ্র এলাকায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের আওতাধীন সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্পসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের কাজ চলছে। সমুদ্রের উত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে অদূর ভবিষ্যতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ আরো অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যায়।'
চিঠিতে বলা হয়েছে, 'ওই ধরনের কাজের জন্য হাইড্রোগ্রাফিক জরিপসহ জিও-ফিজিক্যাল, জিও-মরফোলজিক্যাল ইত্যাদি ধরনের জরিপ প্রয়োজন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রায়ই সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উল্লিখিত জরিপকাজগুলো সম্পাদন করা হয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়সহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত বিদেশিদের হস্তগত হয়, যা দেশীয় স্বার্থে কাম্য নয়।'
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, জরিপ কর্মকাণ্ড ন্যাশনাল হাইড্রোগ্রাফিক কমিটির মাধ্যমে সমন্বয় করা বাঞ্ছনীয় বলে কমিটির সদস্যরা মত দিয়েছেন। তা ছাড়া হাইড্রোগ্রাফিক জরিপকাজে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রয়োজনীয় সক্ষমতা আছে। তাই এ ধরনের জরিপকাজ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের অনুমোদনক্রমে নৌবাহিনীর মাধ্যমে সম্পন্ন করা যেতে পারে বলে চিঠিতে মত দেওয়া হয়েছে। এতে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়সহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হবে বলে যুক্তি দেখানো হয়েছে।
সাবেক এক ঊর্ধ্বতন নৌ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, সাগরের পানির গভীরতা মাপার জন্য হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ চালানো হয়। এ জরিপে সাগরের পানির নিচের মাটি সম্পর্কে ও পানির গভীরতা সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র থাকে। ফলে জাহাজ চলাচলসহ সাগরের অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এ জরিপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অন্যদিকে সাগরের পানির নিচের মাটির তলায় কোনো ধরনের তেল, গ্যাস বা হাইড্রোকার্বন-জাতীয় খনিজ পদার্থ আছে কি না তা পরীক্ষা করার জন্য সাইসমিক জরিপ চালানো হয়। এ ধরনের জরিপে পানির ওপর থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শব্দতরঙ্গ পাঠানো হয়, যা পৃথিবীর বেইসে গিয়ে আঘাত করে আবার পানির ওপরে ফিরে আসে। যদি কোনো ধরনের তেল, গ্যাস-জাতীয় খনিজ পদার্থ থাকে, তাহলে তা শব্দতরঙ্গে ধরা পড়ে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী এখন পর্যন্ত সাইসমিক জরিপকাজ পরিচালনা করেনি। কারণ এ ধরনের জরিপকাজ চালানোর জন্য বিশেষ ধরনের জাহাজ, যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন, যা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নেই।
ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরো বলেন, 'হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ যেকোনো দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের জরিপকাজ চালানোর সক্ষমতা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর রয়েছে। যদি নৌবাহিনীকে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করতে না দিয়ে তা বিদেশিদের দিয়ে করানো হয়, তাহলে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘি্নত হবে। এ ধরনের জরিপের তথ্য অন্য দেশের হাতে চলে যাওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারণ এতে শত্রু জাহাজ সাগর সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবে, যা আমাদের নৌবাহিনীর জন্য কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।'
হাইড্রোগ্রাফিক জরিপকাজ নৌবাহিনীকে দিয়ে করানো সম্ভব কি না জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওসানোগ্রাফি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. কাওসার আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দিয়ে এ ধরনের জরিপকাজ করানো সম্ভব। নৌবাহিনীকে দিয়ে জরিপকাজ করালে ১০০ কোটি টাকার জরিপ ৩০ কোটি টাকা দিয়ে করানো যাবে।' সাগরের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ড. কাওসার আহমেদ বলেন, 'আমাদের যে সাগর অঞ্চল রয়েছে, সেটা ভূ-কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সাগর অঞ্চলে হাইড্রোকার্বন বা তেল, গ্যাস-জাতীয় খনিজ সম্পদের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। কারণ বঙ্গোপসাগরের যে অঞ্চলটি আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি, তার উভয় পাশে ভারত ও মিয়ানমার বড় ধরনের গ্যাস পেয়েছে। তেল-গ্যাস ছাড়াও আমাদের সাগরের পানির নিচে মাটির ওপরে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদি বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দিয়ে জরিপকাজ করানো যায়, তাহলে সাশ্রয়ের পাশাপাশি নিরাপত্তা রক্ষা করা যাবে।'
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, সাগরে জরিপকাজে নৌবাহিনীর সক্ষমতা রয়েছে। তাদের জরিপও আন্তর্জাতিক মানের। ওই বাহিনীতে জরিপকাজে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল আছে। তাই জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করলে দেশীয় সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে কাজ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তিনি বলেন, যেহেতু জরিপকাজ তদারকির জন্য একটি জাতীয় কমিটি আছে, তাই অবশ্য তাদের মতামত নিয়েই এ ধরনের কাজ হওয়া উচিত।
জানা গেছে, যে কমিটি সরকারকে ওই চিঠি পাঠিয়েছে, তার যাত্রা শুরু ২০০১ সালে। ওই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার ন্যাশনাল হাইড্রোগ্রাফিক কমিটি গঠন করে। নৌবাহিনীর সহকারী প্রধানের (অপারেশনস) নেতৃত্বে ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, জরিপ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগের প্রধান ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগের প্রধান। কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের পরিচালক।
গত মাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছে পাঠানো হয়েছে ওই চিঠির প্রতিলিপি। কমিটির পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দিয়ে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপকাজ চালালে খরচ কম হবে। পাশাপাশি দেশের জাতীয় নিরাপত্তাও রক্ষা পাবে।
সূত্র জানায়, ন্যাশনাল হাইড্রোগ্রাফিক কমিটির চেয়ারম্যান সহকারী নৌপ্রধান (অপারেশনস) গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ওই চিঠি পাঠান। চিঠির বিষয় ছিল 'দেশি-বিদেশি কোনো সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের জলসীমায় হাইড্রোগ্রাফিক জরিপকাজ সম্পন্নকরণ এবং ডাটা আদান-প্রদান প্রসঙ্গে'। ওই চিঠিতে বলা হয়, 'বর্তমানে আমাদের সমুদ্র এলাকায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের আওতাধীন সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্পসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের কাজ চলছে। সমুদ্রের উত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে অদূর ভবিষ্যতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ আরো অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যায়।'
চিঠিতে বলা হয়েছে, 'ওই ধরনের কাজের জন্য হাইড্রোগ্রাফিক জরিপসহ জিও-ফিজিক্যাল, জিও-মরফোলজিক্যাল ইত্যাদি ধরনের জরিপ প্রয়োজন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রায়ই সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উল্লিখিত জরিপকাজগুলো সম্পাদন করা হয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়সহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত বিদেশিদের হস্তগত হয়, যা দেশীয় স্বার্থে কাম্য নয়।'
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, জরিপ কর্মকাণ্ড ন্যাশনাল হাইড্রোগ্রাফিক কমিটির মাধ্যমে সমন্বয় করা বাঞ্ছনীয় বলে কমিটির সদস্যরা মত দিয়েছেন। তা ছাড়া হাইড্রোগ্রাফিক জরিপকাজে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রয়োজনীয় সক্ষমতা আছে। তাই এ ধরনের জরিপকাজ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের অনুমোদনক্রমে নৌবাহিনীর মাধ্যমে সম্পন্ন করা যেতে পারে বলে চিঠিতে মত দেওয়া হয়েছে। এতে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়সহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হবে বলে যুক্তি দেখানো হয়েছে।
সাবেক এক ঊর্ধ্বতন নৌ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, সাগরের পানির গভীরতা মাপার জন্য হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ চালানো হয়। এ জরিপে সাগরের পানির নিচের মাটি সম্পর্কে ও পানির গভীরতা সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র থাকে। ফলে জাহাজ চলাচলসহ সাগরের অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এ জরিপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অন্যদিকে সাগরের পানির নিচের মাটির তলায় কোনো ধরনের তেল, গ্যাস বা হাইড্রোকার্বন-জাতীয় খনিজ পদার্থ আছে কি না তা পরীক্ষা করার জন্য সাইসমিক জরিপ চালানো হয়। এ ধরনের জরিপে পানির ওপর থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শব্দতরঙ্গ পাঠানো হয়, যা পৃথিবীর বেইসে গিয়ে আঘাত করে আবার পানির ওপরে ফিরে আসে। যদি কোনো ধরনের তেল, গ্যাস-জাতীয় খনিজ পদার্থ থাকে, তাহলে তা শব্দতরঙ্গে ধরা পড়ে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী এখন পর্যন্ত সাইসমিক জরিপকাজ পরিচালনা করেনি। কারণ এ ধরনের জরিপকাজ চালানোর জন্য বিশেষ ধরনের জাহাজ, যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন, যা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নেই।
ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরো বলেন, 'হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ যেকোনো দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের জরিপকাজ চালানোর সক্ষমতা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর রয়েছে। যদি নৌবাহিনীকে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করতে না দিয়ে তা বিদেশিদের দিয়ে করানো হয়, তাহলে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘি্নত হবে। এ ধরনের জরিপের তথ্য অন্য দেশের হাতে চলে যাওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারণ এতে শত্রু জাহাজ সাগর সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবে, যা আমাদের নৌবাহিনীর জন্য কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।'
হাইড্রোগ্রাফিক জরিপকাজ নৌবাহিনীকে দিয়ে করানো সম্ভব কি না জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওসানোগ্রাফি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. কাওসার আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দিয়ে এ ধরনের জরিপকাজ করানো সম্ভব। নৌবাহিনীকে দিয়ে জরিপকাজ করালে ১০০ কোটি টাকার জরিপ ৩০ কোটি টাকা দিয়ে করানো যাবে।' সাগরের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ড. কাওসার আহমেদ বলেন, 'আমাদের যে সাগর অঞ্চল রয়েছে, সেটা ভূ-কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সাগর অঞ্চলে হাইড্রোকার্বন বা তেল, গ্যাস-জাতীয় খনিজ সম্পদের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। কারণ বঙ্গোপসাগরের যে অঞ্চলটি আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি, তার উভয় পাশে ভারত ও মিয়ানমার বড় ধরনের গ্যাস পেয়েছে। তেল-গ্যাস ছাড়াও আমাদের সাগরের পানির নিচে মাটির ওপরে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদি বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দিয়ে জরিপকাজ করানো যায়, তাহলে সাশ্রয়ের পাশাপাশি নিরাপত্তা রক্ষা করা যাবে।'
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, সাগরে জরিপকাজে নৌবাহিনীর সক্ষমতা রয়েছে। তাদের জরিপও আন্তর্জাতিক মানের। ওই বাহিনীতে জরিপকাজে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল আছে। তাই জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করলে দেশীয় সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে কাজ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তিনি বলেন, যেহেতু জরিপকাজ তদারকির জন্য একটি জাতীয় কমিটি আছে, তাই অবশ্য তাদের মতামত নিয়েই এ ধরনের কাজ হওয়া উচিত।
জানা গেছে, যে কমিটি সরকারকে ওই চিঠি পাঠিয়েছে, তার যাত্রা শুরু ২০০১ সালে। ওই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার ন্যাশনাল হাইড্রোগ্রাফিক কমিটি গঠন করে। নৌবাহিনীর সহকারী প্রধানের (অপারেশনস) নেতৃত্বে ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, জরিপ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগের প্রধান ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগের প্রধান। কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের পরিচালক।
No comments