সারা দেশে আবারও শিবিরের তাণ্ডব-ঢাকা, রাজশাহী, গাইবান্ধা ও রাজবাড়ীতে ঝটিকা মিছিল, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
ঝটিকা মিছিল ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে আবারও পুরনো সেই মারমুখী চেহারায় রাজপথে দেখা গেছে ছাত্রশিবিরকে। কিছুদিন নীরব থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার শিবিরকর্মীদের বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে মাঠে নামতে এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে।
এদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিবিরকর্মীরা তাণ্ডব চালায়। রাজধানীর ফকিরাপুল ও শ্যামলীর ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫ শিবির নেতা-কর্মী আহত হয়। রাজশাহীতে শিবির ক্যাডাররা পুলিশের ওপর হাতবোমা ছুড়ে মারে। পরপর বেশ কয়েকটি হাতবোমা বিস্ফোরণের ফলে আতঙ্ক দেখা দেয়। গাইবান্ধায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা জামায়াত-শিবিরের স্থানীয় কার্যালয় আগুনে পুড়িয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। রাজবাড়ীতে ছাত্রশিবির একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। অবশ্য খবর পেয়ে পুলিশ আসার আগেই তারা পালিয়ে যায়। পুলিশ রাজবাড়ী বাজারে অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে আটক করে।
রাজধানী : পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ফকিরাপুল এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিবিরের শতাধিক নেতা-কর্মী হঠাৎ একটি মিছিল বের করে। এ সময় তারা ছয়-সাতটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ১২টি গুলি ও পাঁচটি টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ফকিরাপুল পুলিশ বক্সের সামনে পুলিশের সঙ্গে শিবিরের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন শিবিরের সাহিত্য সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত, ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিতর্ক সম্পাদক মাসুদুর রহমান, মহানগর (পূর্ব) সভাপতি রাশেদুল হাসান রানাসহ শিবিরের কয়েক শ নেতা-কর্মী। তাদের দাবি, সারা দেশে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও যৌন হয়রানির প্রতিবাদে তারা এ মিছিল বের করে।
মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আসাদুজ্জামান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, হঠাৎ একটি মিছিল নিয়ে শিবিরের শতাধিক নেতা-কর্মী গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। পুলিশ তাতে বাধা দিলে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ১০ থেকে ১২টি গুলি ও পাঁচটি টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে শিবিরের ছয় কর্মীকে আটক করা হয়।
এদিকে শেরে বাংলানগর থানা পুলিশ জানায়, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্যামলী বাসস্টপেজসংলগ্ন একটি গলি থেকে শিবিরের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার নেতৃত্বে কয়েক শ কর্মী একটি মিছিল বের করে। শ্যামলী মোড়ের কাছাকাছি এলে পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা শুরু করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিবিরকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ কয়েকটি টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে শেরে বাংলানগর থানার এএসআই মোবারক হোসেন ও আরো দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। শিবিরকর্মীদের মধ্যে অন্তত ১৫ জনের আহত হওয়ার দাবি জানিয়েছে কর্মীরা।
রাজশাহী : পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবিতে সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী কলেজের সামনে থেকে ঝটিকা মিছিল বের করে শিবিরকর্মীরা। মিছিলটি নগরীর সোনাদিঘি মোড় এলাকায় অবস্থিত সার্ভে ইনস্টিটিউটের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এরপর তারা সেখানে রাস্তায় ইটপাটকেল ভেঙে টায়ার জ্বালিয়ে অবস্থান নেয় এবং পরপর বেশ কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হলে তাদের লক্ষ্য করে শিবির ক্যাডাররা কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর পুলিশের ধাওয়া খেয়ে এক পর্যায়ে শিবির ক্যাডাররা গলিতে ঢুকে আত্মগোপন করে।
নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নিয়েই শিবির ক্যাডাররা ওই স্থানে জমায়েত হয়েছিল।
গাইবান্ধা : পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জামায়াতের আটক নেতাদের মুক্তির দাবি ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের প্রতিবাদে গতকাল সকাল ১১টার দিকে শহরের হকার্স মার্কেট এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রশিবির। মিছিলটি শহরের দাস বেকারি মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিবিরের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পুলিশের তাড়া খেয়ে মিছিলকারীরা রেলস্টেশন এলাকায় যায়।
পুলিশ সেখানে বাধা দিলে শিবিরকর্মীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে রেললাইনের পাথর নিক্ষেপ ও পাঁচ-ছয়টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এক পর্যায়ে তারা স্টেশনের প্লাটফর্মের দরজা, জানালা ও আশপাশের দোকানপাটে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিবিরকর্মীদের সংঘর্ষে শিবির, ট্রেনযাত্রী ও চার পুলিশ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
রেলস্টেশনে ভাঙচুরের জের ধরে বিক্ষুব্ধ জনতা শিবিরকর্মীদের তাড়া দিয়ে ডেভিড কম্পানিপাড়ায় অবস্থিত জামায়াত ও শিবির অফিসে হামলা চালায়। এ সময় তারা একসঙ্গে লাগোয়া জামায়াত ও শিবিরের দুটি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ঘটনার পর থেকে শহর ও শহরতলিতে দাঙ্গা পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবদুল করিম দাবি করেন, শিবিরের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা চালায়। পরে আগুন দেওয়ার ফলে আসবাবপত্র, ফাইল, কাগজপত্রসহ তাদের অফিসঘর ও হলরুম পুড়ে গেছে। জেলা শিবিরের সভাপতি ফয়সাল কবীর অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদ এবং জেলা আমিরসহ গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে তারা শহরে একটি মিছিল বের করেছিল। কিন্তু পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগের হামলায় তাদের ১৫ নেতা-কর্মী আহত হয় বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর দাবি, স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা নয়, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকর্মীরা জামায়াত-শিবিরের অফিসে আগুন দিয়েছে।
অন্যদিকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ জোয়ার্দ্দার বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা জামায়াত-শিবির কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে। গাইবান্ধা সদর থানার ওসি গোপাল চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, লাঠিসোঁটা নিয়ে উচ্ছৃঙ্খল শিবিরকর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়।
রাজবাড়ী : রাজবাড়ী জেলা শহরে গতকাল দুপুরে হঠাৎ করেই বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রশিবির। তবে পুলিশ আসার আগেই তারা পালিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ রাজবাড়ী বাজারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে ৯ জনকে আটক করে। এদের মধ্যে ছাত্রলীগকর্মীও রয়েছে বলে জানা গেছে। আটক ব্যক্তিরা জানায়, তাদের বেশির ভাগই কলেজছাত্র। রাজবাড়ী বাজারে কেনাকাটা করাসহ কলেজের পরীক্ষা শেষে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে পুলিশ তাদের আটক করেছে।
এদিকে আটককৃতদের ছাড়িয়ে নিতে রাজবাড়ী থানায় আসা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবদুস সবুর জানান, আটককৃতদের মধ্যে নিজু আহম্মেদ, আরিফুল ইসলাম শান্ত ও সাইফুল ইসলাম ছাত্রলীগের কর্মী। তারা ছাত্রলীগের সব কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়। রাজবাড়ী থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক জানান, শিবিরের মিছিল শেষে রাজবাড়ী বাজার থেকে ৯ যুবককে শিবিরকর্মী সন্দেহে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে এর মধ্যে কারা শিবিরকর্মী।
শিবিরের তাণ্ডবের ধারাবাহিকতা : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক ও বিচারাধীন দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে গত নভেম্বর মাসে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা। এ সময় ব্যাপকভাবে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি রাজধানীতে আইনমন্ত্রীর গাড়িবহরে হামলা এবং বগুড়ায় পুলিশকে রড ও লাঠি দিয়ে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। গত ৫ নভেম্বর রাজধানীর মতিঝিলে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা তাণ্ডব চালায়। এ সময় পুলিশের ওপরও তারা হামলা করে। পুলিশ ও জামায়াত-শিবিরকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ওই ঘটনায় ৩৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। এরপর ১৩ নভেম্বর ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার এলাকায় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে পুলিশসহ শতাধিক আহত হয়। ওই সংঘর্ষের সময় একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ভাঙচুর চালায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। ঘটনাস্থল থেকে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
একই দিন বিকেলে সোনারগাঁও হোটেলের সামনে শিবিরের আকস্মিক হামলায় পুলিশসহ আহত হয় অর্ধশতাধিক। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ভাঙচুর চালায় জামায়াত ও শিবিরের কর্মীরা। এতে আক্রান্ত হয় আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের গাড়িবহর। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। রাজধানী ছাড়াও ওই সময় রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বগুড়া, নোয়াখালী, কঙ্বাজার, ঝিনাইদহ, দাউদকান্দিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের হামলার শিকার হয় পুলিশ। এতে দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য মারাত্মক জখম হন।
গত ১৮ নভেম্বর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তিন পুলিশ সদস্যসহ ৯-১০ জন আহত হন। মারাত্মক জখম পুলিশের নায়েক সাইদুর রহমানকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছিল। একই দিন একই সময় মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় হামলার চেষ্টাকালে পুলিশ চার শিবিরকর্মীকে আটক করে।
রাজধানী : পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ফকিরাপুল এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিবিরের শতাধিক নেতা-কর্মী হঠাৎ একটি মিছিল বের করে। এ সময় তারা ছয়-সাতটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ১২টি গুলি ও পাঁচটি টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ফকিরাপুল পুলিশ বক্সের সামনে পুলিশের সঙ্গে শিবিরের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন শিবিরের সাহিত্য সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত, ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিতর্ক সম্পাদক মাসুদুর রহমান, মহানগর (পূর্ব) সভাপতি রাশেদুল হাসান রানাসহ শিবিরের কয়েক শ নেতা-কর্মী। তাদের দাবি, সারা দেশে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও যৌন হয়রানির প্রতিবাদে তারা এ মিছিল বের করে।
মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আসাদুজ্জামান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, হঠাৎ একটি মিছিল নিয়ে শিবিরের শতাধিক নেতা-কর্মী গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। পুলিশ তাতে বাধা দিলে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ১০ থেকে ১২টি গুলি ও পাঁচটি টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে শিবিরের ছয় কর্মীকে আটক করা হয়।
এদিকে শেরে বাংলানগর থানা পুলিশ জানায়, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্যামলী বাসস্টপেজসংলগ্ন একটি গলি থেকে শিবিরের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার নেতৃত্বে কয়েক শ কর্মী একটি মিছিল বের করে। শ্যামলী মোড়ের কাছাকাছি এলে পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা শুরু করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিবিরকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ কয়েকটি টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে শেরে বাংলানগর থানার এএসআই মোবারক হোসেন ও আরো দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। শিবিরকর্মীদের মধ্যে অন্তত ১৫ জনের আহত হওয়ার দাবি জানিয়েছে কর্মীরা।
রাজশাহী : পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবিতে সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী কলেজের সামনে থেকে ঝটিকা মিছিল বের করে শিবিরকর্মীরা। মিছিলটি নগরীর সোনাদিঘি মোড় এলাকায় অবস্থিত সার্ভে ইনস্টিটিউটের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এরপর তারা সেখানে রাস্তায় ইটপাটকেল ভেঙে টায়ার জ্বালিয়ে অবস্থান নেয় এবং পরপর বেশ কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হলে তাদের লক্ষ্য করে শিবির ক্যাডাররা কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর পুলিশের ধাওয়া খেয়ে এক পর্যায়ে শিবির ক্যাডাররা গলিতে ঢুকে আত্মগোপন করে।
নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নিয়েই শিবির ক্যাডাররা ওই স্থানে জমায়েত হয়েছিল।
গাইবান্ধা : পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জামায়াতের আটক নেতাদের মুক্তির দাবি ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের প্রতিবাদে গতকাল সকাল ১১টার দিকে শহরের হকার্স মার্কেট এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রশিবির। মিছিলটি শহরের দাস বেকারি মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিবিরের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পুলিশের তাড়া খেয়ে মিছিলকারীরা রেলস্টেশন এলাকায় যায়।
পুলিশ সেখানে বাধা দিলে শিবিরকর্মীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে রেললাইনের পাথর নিক্ষেপ ও পাঁচ-ছয়টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এক পর্যায়ে তারা স্টেশনের প্লাটফর্মের দরজা, জানালা ও আশপাশের দোকানপাটে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিবিরকর্মীদের সংঘর্ষে শিবির, ট্রেনযাত্রী ও চার পুলিশ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
রেলস্টেশনে ভাঙচুরের জের ধরে বিক্ষুব্ধ জনতা শিবিরকর্মীদের তাড়া দিয়ে ডেভিড কম্পানিপাড়ায় অবস্থিত জামায়াত ও শিবির অফিসে হামলা চালায়। এ সময় তারা একসঙ্গে লাগোয়া জামায়াত ও শিবিরের দুটি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ঘটনার পর থেকে শহর ও শহরতলিতে দাঙ্গা পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবদুল করিম দাবি করেন, শিবিরের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা চালায়। পরে আগুন দেওয়ার ফলে আসবাবপত্র, ফাইল, কাগজপত্রসহ তাদের অফিসঘর ও হলরুম পুড়ে গেছে। জেলা শিবিরের সভাপতি ফয়সাল কবীর অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদ এবং জেলা আমিরসহ গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে তারা শহরে একটি মিছিল বের করেছিল। কিন্তু পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগের হামলায় তাদের ১৫ নেতা-কর্মী আহত হয় বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর দাবি, স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা নয়, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকর্মীরা জামায়াত-শিবিরের অফিসে আগুন দিয়েছে।
অন্যদিকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ জোয়ার্দ্দার বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা জামায়াত-শিবির কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে। গাইবান্ধা সদর থানার ওসি গোপাল চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, লাঠিসোঁটা নিয়ে উচ্ছৃঙ্খল শিবিরকর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়।
রাজবাড়ী : রাজবাড়ী জেলা শহরে গতকাল দুপুরে হঠাৎ করেই বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রশিবির। তবে পুলিশ আসার আগেই তারা পালিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ রাজবাড়ী বাজারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে ৯ জনকে আটক করে। এদের মধ্যে ছাত্রলীগকর্মীও রয়েছে বলে জানা গেছে। আটক ব্যক্তিরা জানায়, তাদের বেশির ভাগই কলেজছাত্র। রাজবাড়ী বাজারে কেনাকাটা করাসহ কলেজের পরীক্ষা শেষে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে পুলিশ তাদের আটক করেছে।
এদিকে আটককৃতদের ছাড়িয়ে নিতে রাজবাড়ী থানায় আসা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবদুস সবুর জানান, আটককৃতদের মধ্যে নিজু আহম্মেদ, আরিফুল ইসলাম শান্ত ও সাইফুল ইসলাম ছাত্রলীগের কর্মী। তারা ছাত্রলীগের সব কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়। রাজবাড়ী থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক জানান, শিবিরের মিছিল শেষে রাজবাড়ী বাজার থেকে ৯ যুবককে শিবিরকর্মী সন্দেহে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে এর মধ্যে কারা শিবিরকর্মী।
শিবিরের তাণ্ডবের ধারাবাহিকতা : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক ও বিচারাধীন দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে গত নভেম্বর মাসে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা। এ সময় ব্যাপকভাবে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি রাজধানীতে আইনমন্ত্রীর গাড়িবহরে হামলা এবং বগুড়ায় পুলিশকে রড ও লাঠি দিয়ে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। গত ৫ নভেম্বর রাজধানীর মতিঝিলে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা তাণ্ডব চালায়। এ সময় পুলিশের ওপরও তারা হামলা করে। পুলিশ ও জামায়াত-শিবিরকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ওই ঘটনায় ৩৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। এরপর ১৩ নভেম্বর ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার এলাকায় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে পুলিশসহ শতাধিক আহত হয়। ওই সংঘর্ষের সময় একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ভাঙচুর চালায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। ঘটনাস্থল থেকে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
একই দিন বিকেলে সোনারগাঁও হোটেলের সামনে শিবিরের আকস্মিক হামলায় পুলিশসহ আহত হয় অর্ধশতাধিক। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ভাঙচুর চালায় জামায়াত ও শিবিরের কর্মীরা। এতে আক্রান্ত হয় আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের গাড়িবহর। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। রাজধানী ছাড়াও ওই সময় রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বগুড়া, নোয়াখালী, কঙ্বাজার, ঝিনাইদহ, দাউদকান্দিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের হামলার শিকার হয় পুলিশ। এতে দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য মারাত্মক জখম হন।
গত ১৮ নভেম্বর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তিন পুলিশ সদস্যসহ ৯-১০ জন আহত হন। মারাত্মক জখম পুলিশের নায়েক সাইদুর রহমানকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছিল। একই দিন একই সময় মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় হামলার চেষ্টাকালে পুলিশ চার শিবিরকর্মীকে আটক করে।
No comments