সন্ত্রাসবাদীর সঙ্গেও কথা বলতে হবে by কফি আনান
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের স্পেকটেটর পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের ভূমিকা, আফ্রিকায় সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন।
তার নির্বাচিত অংশ ১৯৯০-এর দশকে সোমালিয়া, রুয়ান্ডা ও বসনিয়ায় শান্তিরক্ষা মিশনে জাতিসংঘের ভুলটা কী ছিল?
স্নায়ুযুদ্ধের অবসান না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদে এক ধরনের বিভক্তি ছিল। কোন কোন দেশে নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ করা উচিত, সে বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছানো সহজ ছিল না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরাপত্তা পরিষদ বিভিন্ন দেশের পরস্পরের মধ্যে সৃষ্ট সংঘাতে হস্তক্ষেপ করেছে যেখানে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো একমত হয়ে জাতিসংঘকে পর্যবেক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ১৯৯০-এর দশক শুরু হওয়ার কিছু পর থেকে আমরা কিছু অভ্যন্তরীণ সংঘাতে হস্তক্ষেপ করেছি। যেমন সোমালিয়া, রুয়ান্ডা ও (সাবেক) যুগোস্লাভিয়ার বিষয়টিও। তখন অন্য ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হয়েছিল। জাতিসংঘের অভিযানের ক্ষেত্রে তা ছিল সত্যিকার অর্থেই গুণগত ও নাটকীয় পরিবর্তন।
১৯৯৪ সালে আপনি বিভিন্ন দেশের সরকারকে রুয়ান্ডার গণহত্যা রোধে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ সেভাবে সাড়া দিচ্ছিল না। তখন আপনার কী অনুভূতি হয়েছিল?
সেটা আমার জন্য ছিল খুবই বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা। তবে আমাদের পরিস্থিতিটা বুঝতে হবে। সোমালিয়ায় জাতিসংঘের কার্যক্রম ভেস্তে যাওয়ার অল্পদিন পরই রুয়ান্ডার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম আমরা। সোমালিয়ায় মার্কিন সেনাদের হত্যা করে তাঁদের লাশ রাস্তা দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে অন্য দেশগুলো ঝুঁকি নিতে উৎসাহ বোধ করেনি।
তাহলে কোনো দেশের যুদ্ধে যাওয়ার একমাত্র কারণ জাতীয় স্বার্থ? নাকি ন্যায়-অন্যায়ের বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়?
কোনো সংঘাতে হস্তক্ষেপ করার নৈতিক সিদ্ধান্ত যেসব রাজনৈতিক নেতাকে নিতে হয়, তাঁরা প্রচণ্ড চাপে থাকেন। সব দেশই সবার আগে জিজ্ঞাসা করে, এতে আমাদের জাতীয় স্বার্থটা কী? কিন্তু তার মানে আবার এই নয় যে, যেখানে যেখানে সম্ভব সেখানেও হস্তক্ষেপ করব না।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের এই সেকেলে মডেল কবে বদলাবে বলে আপনি মনে করেন?
পরিবর্তন হওয়া উচিত। কবে হবে তা আমি বলতে পারব না। আমি মহাসচিব থাকার সময় পরিবর্তন আনার যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি লাতিন আমেরিকা বা আফ্রিকার কোনো দেশ, ভারত কিংবা জাপানকে সদস্য করতে। কিন্তু কাজ হয়নি। তবে চাপ বাড়ছে। জাতিসংঘের স্বার্থেই সংস্কার দরকার। এ দাবি চিরদিন ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।
পশ্চিমা দেশগুলো প্রথমে আল-কায়েদা, আইআরএ বা হামাসের মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলতে চায় না। কিন্তু শেষে গিয়ে ঠিকই আলোচনা করে। কেন এমন হয়?
এর কারণ দুটি। প্রথমত তারা কাউকে সন্ত্রাসবাদী হওয়ায় উৎসাহিত করতে চায় না। দ্বিতীয়ত, একটি সভ্য সমাজে তাদের কেউ স্বীকৃতি বা সম্মান দিতে চায় না। কিন্তু আপনাকে মানতে হচ্ছে তাদের বাস্তবতা। শান্তি আনতে হলে তাদের সঙ্গে বসতে হবে। আমরা উত্তর আয়ারল্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানে এটা দেখেছি। শেষ পর্যন্ত আপনাকে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে।
আপনি কি মনে করেন, ‘সন্ত্রাসবাদী’ শব্দটার অর্থের মধ্যে একটা দ্যোতনা আছে যা প্রান্তিক করে রাখার ইঙ্গিত দেয়?
এটা একটা সাধারণ শব্দ যার একটা অর্থ আছে। তবে হ্যাঁ, একটা রাজনৈতিক গূঢ়ার্থও আছে এর। একজনের কাছে যে সন্ত্রাসবাদী আরেকজনের কাছে সে স্বাধীনতা সংগ্রামী। তবে দাবি আদায়ের জন্য সহিংসতার পথ অবলম্বন করাকে উৎসাহিত করা উচিত নয়। সমাধানের বিকল্প কৌশল খোঁজায় উৎসাহিত করতে হবে।
ভাষান্তর: দাউদ ইসলাম
স্নায়ুযুদ্ধের অবসান না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদে এক ধরনের বিভক্তি ছিল। কোন কোন দেশে নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ করা উচিত, সে বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছানো সহজ ছিল না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরাপত্তা পরিষদ বিভিন্ন দেশের পরস্পরের মধ্যে সৃষ্ট সংঘাতে হস্তক্ষেপ করেছে যেখানে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো একমত হয়ে জাতিসংঘকে পর্যবেক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ১৯৯০-এর দশক শুরু হওয়ার কিছু পর থেকে আমরা কিছু অভ্যন্তরীণ সংঘাতে হস্তক্ষেপ করেছি। যেমন সোমালিয়া, রুয়ান্ডা ও (সাবেক) যুগোস্লাভিয়ার বিষয়টিও। তখন অন্য ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হয়েছিল। জাতিসংঘের অভিযানের ক্ষেত্রে তা ছিল সত্যিকার অর্থেই গুণগত ও নাটকীয় পরিবর্তন।
১৯৯৪ সালে আপনি বিভিন্ন দেশের সরকারকে রুয়ান্ডার গণহত্যা রোধে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ সেভাবে সাড়া দিচ্ছিল না। তখন আপনার কী অনুভূতি হয়েছিল?
সেটা আমার জন্য ছিল খুবই বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা। তবে আমাদের পরিস্থিতিটা বুঝতে হবে। সোমালিয়ায় জাতিসংঘের কার্যক্রম ভেস্তে যাওয়ার অল্পদিন পরই রুয়ান্ডার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম আমরা। সোমালিয়ায় মার্কিন সেনাদের হত্যা করে তাঁদের লাশ রাস্তা দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে অন্য দেশগুলো ঝুঁকি নিতে উৎসাহ বোধ করেনি।
তাহলে কোনো দেশের যুদ্ধে যাওয়ার একমাত্র কারণ জাতীয় স্বার্থ? নাকি ন্যায়-অন্যায়ের বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়?
কোনো সংঘাতে হস্তক্ষেপ করার নৈতিক সিদ্ধান্ত যেসব রাজনৈতিক নেতাকে নিতে হয়, তাঁরা প্রচণ্ড চাপে থাকেন। সব দেশই সবার আগে জিজ্ঞাসা করে, এতে আমাদের জাতীয় স্বার্থটা কী? কিন্তু তার মানে আবার এই নয় যে, যেখানে যেখানে সম্ভব সেখানেও হস্তক্ষেপ করব না।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের এই সেকেলে মডেল কবে বদলাবে বলে আপনি মনে করেন?
পরিবর্তন হওয়া উচিত। কবে হবে তা আমি বলতে পারব না। আমি মহাসচিব থাকার সময় পরিবর্তন আনার যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি লাতিন আমেরিকা বা আফ্রিকার কোনো দেশ, ভারত কিংবা জাপানকে সদস্য করতে। কিন্তু কাজ হয়নি। তবে চাপ বাড়ছে। জাতিসংঘের স্বার্থেই সংস্কার দরকার। এ দাবি চিরদিন ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।
পশ্চিমা দেশগুলো প্রথমে আল-কায়েদা, আইআরএ বা হামাসের মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলতে চায় না। কিন্তু শেষে গিয়ে ঠিকই আলোচনা করে। কেন এমন হয়?
এর কারণ দুটি। প্রথমত তারা কাউকে সন্ত্রাসবাদী হওয়ায় উৎসাহিত করতে চায় না। দ্বিতীয়ত, একটি সভ্য সমাজে তাদের কেউ স্বীকৃতি বা সম্মান দিতে চায় না। কিন্তু আপনাকে মানতে হচ্ছে তাদের বাস্তবতা। শান্তি আনতে হলে তাদের সঙ্গে বসতে হবে। আমরা উত্তর আয়ারল্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানে এটা দেখেছি। শেষ পর্যন্ত আপনাকে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে।
আপনি কি মনে করেন, ‘সন্ত্রাসবাদী’ শব্দটার অর্থের মধ্যে একটা দ্যোতনা আছে যা প্রান্তিক করে রাখার ইঙ্গিত দেয়?
এটা একটা সাধারণ শব্দ যার একটা অর্থ আছে। তবে হ্যাঁ, একটা রাজনৈতিক গূঢ়ার্থও আছে এর। একজনের কাছে যে সন্ত্রাসবাদী আরেকজনের কাছে সে স্বাধীনতা সংগ্রামী। তবে দাবি আদায়ের জন্য সহিংসতার পথ অবলম্বন করাকে উৎসাহিত করা উচিত নয়। সমাধানের বিকল্প কৌশল খোঁজায় উৎসাহিত করতে হবে।
ভাষান্তর: দাউদ ইসলাম
No comments