খ-কালীন পেশায় নারী by তৌফিক অপু
কিছুদিন ধরেই উৎফুল্ল নায়লা। বিবিএ শেষ করে ইন্টারনির অপেক্ষায় দিন গুনছে। হাতে কিছু সময় পড়ে রয়েছে। মাসখানেক তো হবেই। কারণ যেখান থেকে ইন্টারনি হওয়ার কথা সেখান থেকে এক মাস পরে ডাকবে বলে আশ্বস্ত করেছে।
যে কারণে ইন্টারনি করাটা কনফার্ম। আবার হাতে বেঁচে যাওয়া একমাসও অপচয় হচ্ছে না। কারণন এই এক মাস সে কাজ করার একটি সুযোগ পেয়েছে। কাজটির ব্যাপারে প্রথমে একটু দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করলেও পরবর্তীতে নায়লার মনে হয়েছে কাজটি চ্যালেঞ্জিং এবং উপভোগ্য। বাবা-মাকে বোঝাতে একটু বেগ পেতে হলেও মেয়ের যুক্তির কাছে হার মানতে হয়েছে। সবদিক মিলিয়েই পজেটিভ সিচুয়েশন ঘুরপাক খাছে নায়লাকে ঘিরে। যে কারণে উৎফুল্লের মাত্রা একটু বেশিই। পুরো একমাস সেলস্ এক্সিকিউটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বাণিজ্যমেলার একটি বহুমুখী পণ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে। নায়লার ধারণা, ক্রেতাদের কাছে পণ্যের গুণগত মান তুলে ধরে তাদের হাতে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারটি মোটেও সহজসাধ্য নয়। সেলস্ ভলিউম বাড়ানোটা অবশ্যই কৃতিত্বের ব্যাপার। কাজটিকে মোটেও ছোট করে দেখার কিছু নেই। নিজের ভেতর এক ধরনের উইনিং পাওয়ার তৈরি করেছে নায়লা। তার বিশ্বাস শক্তিই তাকে দক্ষতার সঙ্গে কাজটি সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে। সত্যিকার অর্থেই আত্মবিশ্বাস মানুষকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যায়। নিজের প্রতি আস্থা বাড়িয়ে দেয় আরও বহুগুণে। নায়লাকেও অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। যেমন ছেলেদের সঙ্গে কাজ করতে হবে, রাত করে বাড়ি ফেরাসহ অনেক কিছু। নায়লার উত্তর ছিলÑনিজের আস্থায় অবিচল থাকলে এবং সচেতনতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলে কেউ তাকে ভুল পথে ব্যবহার করতে পারবে না। বর্তমানে মেয়েরা অনেক বেশি সচেতন এবং শিক্ষিত। নিজেদের সুষ্ঠু পথে নিজেরা হাঁটতে শিখেছে। যদিও এ হাঁটার পথ একদিনে তৈরি হয়নি। এখন কাজের পথ অনেক সুগম। কর্মপরিবেশও ভাল। বাণিজ্যমেলায় সেলসে যারা রয়েছে তারা প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। পড়ার ফাঁকে চ্যালেঞ্জিং এ কাজ তারা বেছে নিয়েছে। ছেলেমেয়ে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে সমানতালে। কোম্পানিগুলোও দায়িত্ব নিচ্ছে তাদের। রাত হলে নিজস্ব ট্রান্সপোর্টে পৌঁছে দিচ্ছে বাড়ি। কর্মস্থলকে রেখেছে যথেষ্ট নিরাপদ। সম্মানিভাতাও সন্তুষ্টজনক। সবকিছু মিলিয়ে ইতিবাচক পরিবেশ। মেয়েরা কাজ কেন করবেন? আর কাজকে তো ছোট করে দেখার কিছু নেই।যে কোন কাজ থেকেই শেখার আছে। খ-কালীন পেশার সুযোগ এমনিতেই আমাদের দেশে কম। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে কাজ করা যায় এমন কোম্পানি খুবই কম। তবু যা আছে তাতে মেয়েদের দাপুটে পদক্ষেপ রয়েছে; যা সত্যিকার অর্থেই একটি দেশের জন্য মঙ্গলজনক। পার্ট টাইম সেলস, কল সেন্টার কিংবা ফ্রি-ল্যান্সিং যেটাই বলি না কেন; মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছে। বন্ধুত্বের পতাকাতলে শামিল হয়ে পরিষ্কার মন নিয়েই এখন ছেলেমেয়েরা কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার হার যতই বাড়বে ততই সুশীল হবে আমাদের সমাজ। আর মেয়েদের সুশিক্ষিত হওয়া তো আরও জরুরী। সুন্দর পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র গঠনে তাদের অবদান রাখা একান্ত প্রয়োজন। একজন শিক্ষিত মা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই বড় করে তুলবেন সন্তানকে। যে সন্তান হবে আদর্শ সন্তান। আর আদর্শ সন্তান কখনই পরিবার বা সমাজের জন্য হুমকি নয় বরং সম্পদ। তবেই এগিয়ে যাবে দেশ। খ-কালীন পেশায় নারীরা যেভাবে এগিয়ে আসছে তা দেশের উন্নয়নের শামিল। স্টুডেন্টদের জন্য খ-কালীন পেশার পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত হচ্ছে কর্মস্থলের পরিবেশ; যা সুখবরই বটে। সে ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েরা এবং এ ধারা অব্যাহত থাকবেই।
No comments