নূরুল আমীন ও তার ভ্রান্ত রাষ্ট্রভাষা নীতি- এমএ বার্ণিক
২২ ফেব্রুয়ারি জনতার মিছিল গিয়ে নুরুল আমীনের দৈনিক সংবাদ পত্রিকাটি সেসময় নূরুল আমীনের নির্দেশনার বাইরে কোন স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতে পারত না।
বিশেষভাবে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবির প্রতি সংবাদ কোন রকম সহযোগিতা বা সহমর্মিতা প্রকাশ করতে পারেনি এবং এটা নুরুল আমীনের কারণেই সম্ভব ছিল না। সংবাদ একুশের ঘটনাবলী সম্পর্কে নুরুল আমীন সরকারের বক্তব্যের বাইরে কিছুই ছাপতে পারেনি।নুরুল আমীন তার নিজের পত্রিকা দৈনিক সংবাদকে জনতার রোষানল থেকে রা করার জন্য ২২ ফেব্রুয়ারি উক্ত পত্রিকার পাশর্্ববতর্ী এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর পাহারা বসান। এক পর্যায়ে ছাত্রজনতা এসব বাহিনীর বাধা অতিক্রম করে সংবাদ অফিসমুখে অগ্রসর হতে চেষ্টা করলে মুহুমর্ুহু গুলি চালানো হয়। অকুস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আবদুস সালাম। নবাবপুর রোডে সংবাদ অফিসের অনতিদূরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ৮ বছরের বালক অহিউল্লাহ এবং সফিউর রহমান নামক আর একজন সরকারী কর্মচারী। এভাবে নুরুল আমীনের হাত ভাষাশহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়।
২২ ফেব্রুয়ারি রাতে পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থা পরিষদে প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমীন এক প্রস্তাবে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য পাক গণপরিষদের নিকট সুপারিশ করেন। এ প্রসঙ্গে নূরুল আমীনের বক্তব্য নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো: " অ ঠণথর্ ম বমশণর্ দর্ট 'কদধ্র ই্র্রণবঠফহ রণডমববণভঢ্রর্ মর্ দণ ডমভর্্রর্ধলণর্ভ ই্র্রণবঠফহ মত যটপধর্্রটভর্ দর্ট ঈণভথটফধ ঠণ মভণ মতর্ দণ র্্রর্টণ ীটভথলটথণ্র মত যটপধর্্রটভ'. কদণ রণট্রমভ তমর বমশধভথর্ দধ্র বর্মধমভ ধ্রর্ দর্টর্ দণরণ দট্র ঠণণভ ট থমমঢ ঢণটফ মত ডমভতল্রধমভ টবমভথর্্র ট ্রণর্ডধমভ মতর্ দণ বণবঠণর্র মতর্ দণ যলঠফধডর্ দর্টর্ দণ টর্ডধমভর্ দর্ট ষট্রর্ টপণভ ঠহ ঐমশণরভবণর্ভ হণর্্রণরঢটহ ষট্র টভ টডডমলর্ভ মতর্ দণ ঢণবটভঢ ঠহর্ দণ র্্রলঢণর্ভ্র তমর ঠণভথটফধর্ ম ঠণ মভণ মতর্ দণ র্ওর্টণ ীটভথলটথণ্র. কদণ ধ্র্রলণ্র দটশণ ঠণণভ ডমভতমলভঢণঢ, ঠণডটল্রণ ্রম তটর ট্রর্ দর্ট ঢণবটভঢ ধ্র ডমভডণরভণঢ,র্ দণ র্্রলঢণর্ভ্র ঠরমলথর্দ মর্লর্ ষম যণটডণতলফ যরমডণ্র্রধমভ্র মভর্ ষম মডডট্রধমভ্র টভঢর্ দণ ঐমশণরভবণর্ভ ঢধঢ ভর্মর্ টপণ টভহ টর্ডধমভ; ঠর্লর্ দধ্রর্ ধবণ ধভতরমবর্টধমভ র্টর্ দণ ঢধ্রযম্রটফ মতর্ দণ ঢধর্্ররধর্ড ুটথধর্্ররর্টণ ষট্রর্ দর্টর্ দণহ টরণ থমধভথর্ ম যটরটফহ্রণর্ দণ ভমরবটফ ফধতণ মতর্ দণ যণমযফণ টভঢর্ দণরতমরণ মভ মরঢণর লভঢণর ্রণর্ডধমভ ১৪৪ ডর. .ে উ. ষট্র যরমবলফথর্টণঢ. ...হণর্্রণরঢটহ'্র ধভডধঢণর্ভ ষট্র ধভ ডমভভণর্ডধমভ ষর্ধদর্ দণ ঢর্ণণরবধভণঢ র্টর্র্ধলঢণ মত ট ্রণর্ডধমভ মতর্ দণ যণমযফণর্ ম ঠরণটপর্ দণ ফটষ টভঢর্ দর্ট দট্র মভ ডমভভণর্ডধমভ ষর্ধদর্ দণ ফটভথভটথণ ্যলণর্্রধমভ" (সূত্র : ঋটর্্র যটপধর্্রটভ ীণথধ্রফর্ধধশণ ই্র্রণবঠফহ যরমডণণঢধভথ্র, ২২ এণঠরলটরহ ১৯৫২)
এ প্রসঙ্গে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার এক সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়, "জনাব নূরুল আমীন বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করার জন্য যে প্রস্তাব ২২ ফেব্রুয়ারি উপস্থাপিত করলেন, তা যদি ২১ ফেব্রুয়ারিতে করতে পারতেন, তা হলে এতগুলো অমূল্য জীবন এভাবে নষ্ট হতো না; তারও পূর্বে যদি পূর্ববঙ্গের জনসাধারণের মাতৃভাষার দাবি পূর্ববঙ্গ রাজ্যেরই দাবি করে লইতে পারতেন, তা হলে মাতৃভাষার মর্যাদা রার জন্য ছাত্র ও জনবিােভই দেখা দিত না" (সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২)।
আনন্দবাজার পত্রিকার উক্ত সম্পাদকীয়তে নুরুল আমীনের সমালোচনা করে আরও বলা হয়, 'পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী জনাব নুরুল আমীন এবং মুসলিম লীগের আর সব নায়কগণ পূর্ববঙ্গের জনসাধারণের শিা-দীা এবং জীবনের বিবিধ প্রয়োজনের জন্য তাদের মাতৃভাষা বাংলার প্রাধান্য যে একান্ত অপরিহার্য, প্রদেশের রাজকার্য পরিচালনা এবং শিা বিস্তারের েেত্রও বাংলাভাষার অনিবার্যতা কত, তা জানেন; কিন্তু যেহেতু করাচীর কর্তাগণ একমাত্র উদর্ুকেই রাষ্ট্রভাষারূপে চালাতে চান। পূর্ববঙ্গের রাজ্য পরিচালনার ব্যাপারেও উদর্ু ভাষীদের প্রাধান্য কায়েম রাখতে চান, সেহেতু যা সত্য, যা পূর্ববঙ্গের জনগণের তাও বলতে পারেন না" (সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২)।
দেশে ভাষা-আন্দোলনের উত্তালে চরম অবস্থা যখন বিরাজ করছিল, সে সময ২৪ ফেব্রুয়ারি পূর্ব-পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমীন প্রদেশবাসীর উদ্দেশে বেতার-ভাষণ দেন। নুরুল আমীনের এই বেতার-ভাষণের মধ্যে অনেক মিথ্যাচার অনেক অসত্য কথন এবং বাড়াবাড়ি রয়েছে। তিনি তার মতা প্রয়োগ বা অপপ্রয়োগের কারণ ইত্যাদি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন তার ভাষণে।
নুরুল আমীনের বেতার-ভাষণটি নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো :
"আজ ঢাকায় কোন ঘটনা দুর্ঘটনা হয় নাই।
ঢাকার শৃক্মখলা বিনষ্ট করিবার যে চেষ্টা করা হইয়াছে এবং ইহার ফলে যে ঘটনা দুর্ঘটনা হইয়াছে ও সরকার যে ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়াছেন, সরকারী এশতেহারে এ যাবত তাহার সত্য বিরবণই কেবল প্রকাশ করা হইয়াছে। ১৪৪ ধারা জারির যৌক্তিকতা সম্পর্কে খোলখুলিভাবেই সন্দেহ প্রকাশ করা হইয়াছে। কলিকাতার সংবাদপত্রে সাধারণত দেশের জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করিবার এবং তাহাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করিবার চেষ্টাই করা হইয়া থাকে; কিন্তু শুধু কলিকাতার সংবাদপত্রে নয়, ঢাকায়ও কোন কোন মহলে বলা হইয়াছে যে, বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য যে, দাবি উত্থাপন করা হইয়াছে, তাহার কণ্ঠরোধ করিবার জন্যই এই আদেশ জারি করা হইয়াছে। শৃক্মখলা রার জন্য যে ব্যবস্থা অবলম্বন করা হইয়াছে, তৎসম্পর্কেও কতিপয় উত্তেজনাকর এবং বস্তুত প েসম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বিবৃতি দেয়া হইয়াছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, স্থানীয় কতিপয় সংবাদপত্রে বলা হইয়াছে যে, শুক্রবার সেনাবাহিনী নিরপরাধ জনসাধারণের ওপর গুলিবর্ষণ করে, কয়েকজনকে বেয়নেট দ্বারা ঘায়েল করে এবং লুঠতরাজে যোগদান করে এই বিবরণী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
গোলযোগের ফলে দুর্ভাগ্যক্রমে যাহারা আহত বা নিহত হইয়াছিলেন, তাহাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের জন্য যানবাহন অচল করিয়া দেয়ার, দোকানদারদিগকে হরতাল পালনের জন্য প্ররোচিত বা বাধ্য করার এবং সরকারী কর্মচারীদিগকে কাজে যোগদান হইতে বিরত রাখার চেষ্টা করা হয় বলিয়া সরকার হৃদয়ঙ্গম করিয়াছেন।
কাজেই এই সম্পর্কে আলোচনা করা প্রয়োজন বলিয়া সরকার মনে করেন এবং আশা করেন যে, গত বৃহস্পতিবার হইতে যে সকল ঘটনা ঘটিয়াছে, তাহাদের শুধুমাত্র বিবরণ দান করিলেই শৃক্মখলা বজায় রাখার জন্য সরকার ১৪৪ ধারা জারি করাসহ যে সকল সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছিলেন জনসাধারণ তাহার যৌক্তিকতা হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিবেন।
গত বৃহস্পতিবার হইতে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হইয়াছে, তাহাতে দেখা যায়, এই ঘটনার তাৎপর্য সম্পর্কে আরও অধিক তথ্য উদঘাটন এবং যাহারা উহার প্ররোচনা দান করিতেছিল, অথবা উহার পরিকল্পনা করিতেছিল তাহাদের উদ্দেশ্য প্রকাশ করা একান্ত প্রয়োজন।
ভাষা সমস্যা সম্পর্কে জনমত চাপা দেওয়ার অভিপ্রায়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হইয়াছিল বলিয়া যে অভিযোগ করা হইতেছে, তাহা সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন। ১৪৪ জারি করার সহিত ভাষা সমস্যার কোন সম্পর্ক নাই। একদল স্বার্থান্বেষী লোক প্রাদেশিক আইনপরিষদ অধিবেশন আরম্ভের দিন এবং যতদিন উহার অধিবেশন চলিবে ততদিন শৃক্মখলা নষ্ট করার পরিকল্পনা করিয়াছে বলিয়া সু্#৬৩৭৪৩;ষ্ট প্রমাণ পাইয়া জেলা কর্তৃপ সতর্কতা হিসেবে ১৪৪ ধারা জারি করার সিদ্ধান্ত করেন। আইন ও শৃক্মখলা ভঙ্গ করার যে কোন প্রয়াসের মোকাবেলা করার জন্য কর্তৃপ এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। সরকার আইন ও শৃক্মখলা ভঙ্গ করার পরিকল্পনার কথা জানিতে পারিয়াছিলেন। ভাষা বা অন্য যে কোন প্রশ্ন সম্পর্কে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনমত প্রকাশে বাধাদানের কোন অভিপ্রায়ই ছিল না। একপরেও অনধিকার পূর্বে সরকার কোন প্রকার হস্তপে করে নাই। ভাষার প্রশ্নে ঢাকা এবং ঢাকার বাহিরে মিছিল বাহির করিতে এবং সভা ও শোভাযাত্রার অনুমতি দান করিয়াছিলেন। তাহা হইতেই এই উক্তির সত্যতা সুস্পষ্ট হইয়া উঠিবে।
ভাষা আন্দোলনের দাবি কিছু নয়, আইন ও শৃক্মখলা ভঙ্গ করিয়া শান্তি নষ্ট করার জন্য যে একটা ধ্বংসাত্মক ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল ১৪৪ ধারা জারি করার পরবতর্ী ঘটনা পরিস্থিতিই তাহার প্রমাণ। এই যুক্তির সমর্থনে দু'টি বিষয় উল্লেখ করা যাইতে পারে। প্রথমত, শোভাযাত্রা ও জনসভা একেবারে নিষিদ্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে, ১৪৪ ধারা জারিতে তেমন কোন কথা ছিল না। নিষেধাজ্ঞায় বলা হইয়াছিল যে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি লইয়া শোভাযাত্রা ও জনসভার অনুষ্ঠান করা যাইতে পারিবে। ভাষার প্রশ্ন সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করার উদ্দেশ্যে জনসভার অনুষ্ঠান করা অথবা শোভাযাত্রা বাহির করার যদিই তাহাদের ইচ্ছা ছিল তবে তাহার জন্য এই অনুমতি লওয়ার পথে কোনই বাধা ছিল না। কিন্তু তাহারা কখনও এরূপ করে নাই। দ্বিতীয়ত, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার জন্য প্রাদেশিক সরকারের সুপারিশ সত্ত্বেও এখনও দৃঢ়তার সহিত ছাত্র ও জনসাধারণকে হিংসাত্মক কাজে উত্তেজিত করার ও আইন ভঙ্গের জন্য সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা চলিতেছে। এই সকল যুক্তি এবং হাঙ্গামাকারীদের কার্যকলাপ হইতে নিঃসন্দেহে ইহাই প্রতিপন্ন হয় যে, ভীষণ রকমের কোন একটা বিপর্যয় সৃষ্টি করাই ছিল তাহাদের প্রধান মতলব; শুধু জনসাধারণের সহানুভূতি লাভের জন্যই তাহারা ইহার সহিত ভাষার প্রশ্ন যোগ করে। (চলবে)
No comments