হাসিনা অনড়, খালেদা টলবেন কি?
প্রধান বিরোধী দলের আন্দোলন কর্মসূচির প্রধান দাবি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার পূনর্বহাল। এই দাবিতে অনড় বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
বিএনপি
এবং ১৮ দলীয় জোট এই প্রধান দাবি নিয়ে রাজপথে সরব। হরতাল, অবরোধ,
মানবন্ধনসহ আন্দোলনের সব কৌশলই রপ্ত করছে বিরোধী দল। তত্ত্বাবধায়ক দাবির এ
পর্যন্ত দৃশমান কোন ফল নেই। বরং উল্টো মামলা, হামলা, হয়রানি বেড়েছে বিরোধী
জোটের নেতাদের। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
কারাগারে। মামলার খড়গ আরও অনেক নেতার ঘাড়ে। উল্টো চিত্র সরকারি শিবিরে।
ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলতে গেলে একেবারেই
নির্ভার। তিনি তার অবস্থানে দৃঢ়, অনড়। তত্ত্বাবধায়ক দাবি তিনি বরাবরই
প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। বিকল্প হিসেবে অন্তবর্তী সরকার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা
আছে। কিন্তু এটি কিভাবে হবে? এই প্রশ্নের জবাব নেই কারও কাছে। সরকারি দলের
কাছ থেকেই এই অন্তবর্তী সরকারের প্রস্তাবটা এসেছিল প্রথম। সরকারি দলের
নেতারা এখনও তা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু কিভাবে এ সরকার গঠিত হবে এনিয়ে আলোচনায়
যাচ্ছেন না তারা। বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে এমন
প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। একজন সিনিয়র সম্পাদক জানতে চেয়েছিলেন নির্বাচন
নিয়ে অনিশ্চিয়তা, মানুষের মধ্যে যে উদ্বেগ তা দূর করতে সরকার পক্ষ কোন
উদ্যোগ নেবে কিনা। প্রধানমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ ভাষায় জানিয়ে দেন, অন্য
সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও সেভাবে হবে। উদাহরণ
হিসেবে তিনি বলেছেন, তার সরকারের সময়ে যেসব নির্বাচন হয়েছে তার সবগুলো
অবাধ, নিরপে ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন নির্বাচনকালে
প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা রকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে।
নির্বাচন কমিশন যাকে যেখানে চাইবে সেখানে বদলি করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী
কৌশলে ্এটিই জানিয়ে দিলেন যে- নির্বাচনটা দলীয় সরকারের অধীনেই হচ্ছে। এর
বিকল্প এখনও সরকার পক্ষ থেকে ভাবা হচ্ছে না। এটি যদি একান্তই ভাবতে হয়
তাহলে বিরোধী দলই সংসদে সে প্রস্তাব তুলুক। এরপর আলোচনা করে একটা
স্দ্ধিান্তে পৌঁছা যাবে। প্রধানমন্ত্রী এও বলেছেন, আগামী জানুয়ারির মধ্যে
জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচন যথাসময়েই হবে।
তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় এই যে সামনের এক বছরেরও কম সময়, এই সময়ে সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে কোন সমঝোতা না হলে কোন পরিস্থিতির মুখে পড়বে দেশ। সরকার দলীয় ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনের চেষ্টা করলে সেটা কি বিরোধী দল মেনে নেবে। না মানলে কি ই বা করণীয় থাকবে তাদের। দেশের প্রধান একটি দল নির্বাচনে অংশ না নিলে সেই নির্বাচন তাবৎ দুনিয়ায় কিভাবে মুল্যায়ণ হবে। এমন নানা প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খেলেও জবাব যে খুব সহসা মিলছে না তা দুই নেত্রীর অনঢ় অবস্থান থেকেই বুঝা যাচ্ছে। প্রধান বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। এর বিপরীতে নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি দল ভোটের রাজনীতি শুরু করেছে। সম্প্রতি সরকারি জোট সারা দেশে গণসংযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। অবশ্য এটি যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে। কিন্তু এর পেছনে মুল ল্ক্ষ হলো ভোট চাওয়া। গত চার বছরে মানুষের সঙ্গে সরকারি জোটের যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে তা কাটানো। এটিই তাদের প্রধান ল্ক্ষয। এছাড়া জোটনেত্রী শেখ হাসিনাও সররকারি কর্মসূচির সঙ্গে দল এবং জোটের পে জনসমর্থন আদাায়ের চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন সভা সমাবেশে তিনি নৌকার পক্ষ ভোট চাইছেন। সব মিলিয়ে নির্বাচন সামনে রেখে সরকারি জোটের প্রস্তুতি চলছে জোরালো ভাবেই।
বিরোধী দল? তাদেরও অপ্রস্তুত বলা যাবে না। কারণ গত চার বছরে সরকারি দলের জনবিচ্ছিন্নতা আর নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে বিরোধী দলের এ কাজটিকে অনেক এগিয়ে রেখেছে। তবে যতই জনসমর্থন থাকুক কোন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা কি সে নির্বাচনে অংশ নেবেন? এটি এখন বড় প্রশ্ন। দেশের সুশীল সমাজ, বিদেশী কূটনীতিক, বন্ধু রাষ্ট্র সবাই বলছে গণতন্ত্রের স্বার্থে আলোচনা প্রয়োজন। সরকারি বা বিরোধী দল যে কেউ আলোচনার ত্রে তৈরি করতে পারেন। আলোচনায় বসলে একটি সমাধানও আসবে। তবে দৃশত এমন কোন উদ্যোগ এখনও দেখা যাচ্ছে না। বরং দুই পক্ষ যার যার অবস্থানে অবিচল। শোনা যাচ্ছে বিরোধী দল সংসদ থেকে পদত্যাগ করবে। তারা এটি যদি করে তাহলে তখন তাদের সামনে একটি পথ খোলা থাকবে। আর তা হলো আন্দোলন। একমাত্র আন্দোলনই যখন দাবি আদায়ের লক্ষে পরিণত হবে তখন কি ছাড় দিতে চাইবে বিরোধী দল। মতাসীন জোটনেত্রী যদি তার অনড় অবস্থান ধরে রাখেন তাহলে বিরোধী নেত্রী কি তার অবস্থান থেকে টলবেন? নিকট অতীত ঘাটলে এমনটি আশা করারও কোন উপায় নেই।
No comments