শিবিরমুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই ॥ দাবি রাবি শিক্ষক নেতৃবৃন্দের
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক সমাজের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের জন্য মৌলবাদমুক্ত রাজনীতি আর শিবিরমুক্ত শিক্ষাঙ্গন অনিবার্য।
এদের বিরম্নদ্ধে বাংলাদেশে এবং দেশের বাইরে জনভাষ্য জোরালো হচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজশাহী শহর তথা সমগ্র উত্তরবঙ্গকে শিবিরমুক্ত শিক্ষাঙ্গন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন আজ থেকেই শুরু হলো। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই; বাঙালীর আবহমান সংস্কৃতির বিকাশ চাই। ধর্মান্ধ সামপ্রদায়িক রাজনীতির অবসান চাই। জ্ঞানভিত্তিক, প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ গড়ে তোলার জন্য সন্ত্রাসমুক্ত শিাঙ্গন চাই। এসব ল্য অর্জনে ক্রমাগত চেষ্টার কারণেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক সমাজের শিকগণ নির্যাতন, লাঞ্ছনা, জেল-জুলুম এবং হত্যার শিকার হয়েছেন। তাঁদের নেতৃত্বে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের সপরে প্রশাসন। স্বাধীনতাবিরোধী খুনী জামায়াত-শিবিরচক্রকে প্রতিহত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক সমাজের সকল সদস্যের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। শুক্রবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় জুবেরী ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।শিক নেতৃবৃন্দ বলেন, জামায়াত-শিবির দীর্ঘ কয়েক দশক যাবত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের নৃশংসতা ও অপকর্মের দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য, এ অঞ্চলের মানুষের জন্য, দেশের জন্য এ এক জঘন্য কলঙ্ক। জামায়াত-শিবিরের উপযর্ুপরি নৃশংসতায় এ শিাঙ্গনে নিহত হয়েছেন দু'প্রতিথযশা শিক, অসংখ্য সম্ভাবনাময় তরম্নণ শিাথর্ী। বিবেকবান মানুষ, দেশপ্রেমিক জনতা স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের এ হিংস্রতা মেনে নিতে পারে না। দেশব্যাপী খুনী, বর্বর-সামপ্রদায়িক এ অপশক্তি এবং তাদের দোসর-দালালদের প্রতিহত করার আওয়াজ উঠেছে। আমরা এ প্রতিরোধ চেতনার শরিক এবং সক্রিয় সমর্থক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক সমাজ উদার গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল এবং অসামপ্রদায়িক চিনত্মা, চেতনা ও সক্রিয়তার এক সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকল শিক '৭২-এর সংবিধানের চার মূলনীতির আলোকে ুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার মতায় আসার পর এবার জাতির জনক হত্যার রায় কার্যকর হয়েছে। জাতীয় চার নেতাসহ সকল রাজনৈতিক হত্যাকা-ের তদনত্ম ও বিচার ত্বরান্বিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ফিরে যাচ্ছে '৭২-এর সংবিধানে। '৭১ -এর যুদ্ধাপরাধী, ঘাতক-দালালদের বিচার করার জন্য গণদাবি তীব্র হয়ে উঠেছে। ফলে ভীতু, জনবিচ্ছিন্ন, ঘৃণিত জামায়াত-শিবিরচক্র হত্যা আগ্রাসনের মাধ্যমে শিাঙ্গন ও দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিঘি্নত করা। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে গত ৯ ফেব্রম্নয়ারি রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুপরিকল্পিতভাবে নৃশংস হত্যাকা- চালানো হয়েছে। সাংবাদিকরা দেখেছেন তাদের নিশানা, হামলার সময় নির্বাচন এবং নির্মম নিষ্ঠুরতা। প্রশিণ এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছাড়া এ কাজ সম্ভব নয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আক্রমণের জন্য শিবির যে প্রস্তুতি নিচ্ছে সে সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা উর্ধতন পুলিশ প্রশাসনকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন অবহিত করেছে বলে আমাদের জানা নেই। গোয়েন্দারা কেন জানে না কিংবা কেন সংশিস্নষ্ট কতর্ৃপকে জানায়নি_ ৮ ফেব্রম্নয়ারির ঘটনার পরিপ্রেেিত এ প্রশ্নটি খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। ওই রাতে জামায়াত-শিবিরের বর্বর হামলায় মেধাবী ছাত্র ফারম্নক হোসেন নিহত এবং আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক ছাত্র। আমরা এ নারকীয় ও নৃশংস হত্যাকা-ে ুব্ধ, মর্মাহত। সরকার প্রিতার সাথে হত্যাকারী এবং ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে। আহতদের সুচিকিৎসার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সরকারের এ পদপে ত্বরিত, সংবেদনশীল এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চাকেন্দ্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা অুণ্ন রাখা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধকারী '৭১ -এর ঘাতক-দালালদের প্রশ্রয়ে বেপরোয়া কায়েমি স্বার্থবাদী সামপ্রদায়িক অপশক্তির আগ্রাসন বন্ধ করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিকদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার রা এবং সর্বোপরি দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় এ পদপে তাৎপর্যপূর্ণ এবং ইতিবাচক হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা চাই সরকারের এসব পদপে দ্রম্নত বাসত্মবায়িত হোক।
শিক নেতৃবৃন্দ বলেন, সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টে এ নারকীয় ঘটনার সময় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে। শিবিরকে প্রতিহত করার জন্য পুলিশ কেন কৌশলগত পরিকল্পনা করল না? কার নির্দেশে ঘটনার প্রাক-মুহূর্তেই ক্যাম্পাস থেকে কয়েক ভ্যান পুলিশ চলে গেল এবং ঘটনার সময় পুলিশ কেন নিষ্ক্রিয় থাকল এ বিষয়গুলোর উত্তর খোঁজা একানত্ম জরম্নরী? ল্য করা গেছে, কোন কোন হলে পুলিশের সাহসী তৎপরতার কারণে জঙ্গী শিবিরকমর্ীরা হলে প্রবেশ করতে পারেনি। আবার কোন কোন হলে মৃতু্যর মুখে দাঁড়ানো অবস্থায় ছাত্রদের রায় পুলিশ আক্রমণকারী শিবিরকমর্ীদের প্রতিহত করেনি। একেক হলে পুলিশের একেক রকম আচরণের রহস্য কোথায়? ঘটনার পর সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকা সত্ত্বেও কেন পুলিশ বিশেষ বিশেষ হল এবং স্থানগুলো তলস্নাশি করল না? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে আমরা উদগ্রীব। এ অবস্থার সুযোগ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক সমাজের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছে কোন কোন মহল। আমরা এ অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাই এবং দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাতে চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে যারা বিশ্বাস করে তাদের মধ্যে বিভেদ ব্যবধান নেই।
সাংবাদিকদের মতো শিকরাও জাতির বিবেক। তাঁরা তরম্নণ প্রজন্মকে আলোকায়নে দীতি করতে চান। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ফারম্নকের মর্মানত্মিক হত্যাকা- আমরা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছি। আহতদের আহাজারিতে আমরা বিদীর্ণ হচ্ছি। ভবিষ্যতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে যাতে এ রকম ঘটনা আর না ঘটে তার জন্য আমাদের প্রতিজ্ঞার কথা আপনাদের জানাতে চাই। শিবিরমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে আমরা বদ্ধপরিকর। সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে শিবিরমুক্ত করা হোক। খুনী শিবিরকমর্ীদের গ্রেফতার করে ফাঁসির ব্যবস্থা করা হোক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও যে সব যুদ্ধাপরাধী শিক-কর্মচারী কর্মরত আছে তাদের চাকরিচু্যত করে বিচারের আওতায় আনা হোক। নিহত ফারম্নকের পরিবারকে এককালীন অর্থ সাহায্য করা হোক। ফারম্নকের বোনদের উচ্চশিার দায়িত্ব গ্রহণে সরকারকে অনুরোধ জানান শিক নেতৃবৃন্দ। তাঁরা বলেন, ৯ ফেব্রম্নয়ারির ঘটনার পরিপ্রেেিত সরকার ইতোমধ্যে অনেক ইতিবাচক পদপে গ্রহণ করেছে। এজন্য সরকারকে অভিনন্দন জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম. শাহ্ নওয়াজ আলী। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, অধ্যাপক মোখলেসুর রহমান, অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক, অধ্যাপক মাহবুবর রহমান, অধ্যাপক জালাল উদ্দিন, অধ্যাপক ফায়েকউজ্জামান, অধ্যাপক গোলাম সাবি্বর সাত্তার তাপু, অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন মিশ্র, দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস ও হাসিবুল আলম প্রধান। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিক নেতৃবৃন্দ জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত যুদ্ধাপরাধী শিক-কর্মচারীর তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
No comments