প্রতিটি আসনে নৌকায় ভোট দেয়ার ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ॥ খুলনায় জনসমুদ্র- ০ জঙ্গী ও সন্ত্রাসমুক্ত খুলনায় মানুষ চার বছর নিরাপদে আছে- ০ বিএনপি এটাকে হত্যা ও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল- ০ আমরা মংলা বন্দর আন্তর্জাতিকমানের করছি, বিএনপি এটা বন্ধ করে দিয়েছিল
যেন রীতিমতো জনসমুদ্রে জোয়ার। খুলনাবাসী অনেকদিন পর যেন দেখল জনসমুদ্রের গর্জন! লাখ লাখ মানুষের তীব্র জনস্রোতের সামনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত এবং সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশসেবার সুযোগ দেয়ার জন্য বৃহত্তর খুলনাসহ দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
তিনি দেশবাসীর সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের মানুষ কিছু পায়, আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে সবকিছু লুটে খায়। আওয়ামী লীগ মানেই উন্নয়ন আর বিএনপি মানেই সন্ত্রাস-দুর্নীতি-জঙ্গীবাদ। যাদের কারণে (বিএনপি-জামায়াত জোট) সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ধ্বংস হয়েছে, দেশকে দুর্নীতিতে পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছে, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস-হত্যা-নির্যাতন চালিয়ে দেশের মানুষের শান্তি কেড়ে নিয়েছিলÑ দেশের মানুষ আর তাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না। দেশের মানুষ শান্তি চায়। রাজাকার-আলবদরদের নিয়ে বিএনপির ক্ষমতায় আসা মানেই দেশ আবারও সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-দুর্নীতি আর বিদেশে অর্থপাচার। দেশের মানুষ আর সেই দুর্বিষহ অবস্থায় ফিরে যেতে চায় না।বৃহস্পতিবার বিকেলে খুলনার সার্কিট হাউস ময়দানে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবারও নৌকা মার্কায় ভোট চাইলে লাখ লাখ মানুষ দু’হাত তুলে তাঁকে সমর্থন জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের দেশ সেবার সুযোগ দিন। আমরা আরও উন্নয়ন দেব, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মধ্যেই আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত আত্মনির্ভরশীল মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করব। দেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। আরেকবার সুযোগ দিন আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদাপূর্ণ আত্মনির্ভরশীল করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবই ইনশাল্লাহ।
লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে আওয়ামী লীগের জনসভায় তীব্র জনস্রোতে কয়েক ঘণ্টার জন্য যেন থমকে গিয়েছিল খুলনা মহানগর। খুলনা সার্কিট হাউস ময়দান ছাপিয়ে যশোর রোড, কেডি ঘোষ রোড, রতন সেন সরণি, হাজী মহসীন রোড, আহসান আহমেদ রোডসহ ময়দানের চতুর্দিকের প্রায় দেড় বর্গকিলোমিটার দীর্ঘ পথই ছিল জনতরঙ্গ। যেন জনতরঙ্গের শুরু আছে, শেষ নেই। জনতরঙ্গ থেকে ভেসে আসা লাখো মানুষের গগনবিদারী একই সেøাগান-‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের ঠাঁই নাই’, শেখ হাসিনার সরকার বার বার দরকার’ ইত্যাদি। আর জনসমুদ্রের গর্জন ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং আবারও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করার দীপ্ত শপথ।
লাখ লাখ মানুষের উপস্থিত ঘটিয়ে বেশ ভালই সাংগঠনিক শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছে বৃহত্তর খুলনা জেলার নেতারা। জনসভার প্রস্তুতি ছিল ব্যাপকই। কিন্তু কর্মসূচীতে এমন যে জনসমাগম ঘটবে তা আয়োজকদেরও হতবাক করে দেয়। সকাল থেকেই সাজ সাজ রব পড়ে এই জনসভাকে কেন্দ্র করে। খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানসহ চতুর্দিকে এত মানুষের স্থান সঙ্কুলান হবে নাÑ এটা আঁচ করতে পেরেই মঞ্চের চতুর্দিকে প্রায় দুই কিলোমিটার পথেই শত শত মাইক টানিয়ে দেয় আয়োজকরা। কিন্তু দুপুরের আগেই তীব্র জনস্রোতে রীতিমতো জনসমুদ্রে রূপ নেয় জনসভাটি। সার্কিট হাউসের সামনে মঞ্চ হলেও বিকেলের পূর্বেই জনসমাগম ময়দান ছাপিয়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শেষ হওয়ার সময়ও বিভিন্ন স্থান থেকে জনসভায় মিছিল নিয়ে লোক আসতে দেখা গেছে। জেলার নেতাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ৭ লাখেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছে।
ক্ষমতায় আসার পর চার বছরের মাথায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুলনায় তৃতীয় এই সফরকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছিল বৃহত্তর এই জেলার নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে। প্রত্যাশার চেয়েও দ্বিগুণ মানুষের স্রোতে শুধু সার্কিট হাউস ময়দানই নয়, পুরো খুলনা মহানগরই যেন পরিণত হয়েছিল বিশাল সমাবেশে। দুপুর ১২টার পর থেকেই হাজারো মিছিলের তোড়ে পুরো শহরই যেন থমকে দাঁড়িয়েছিল। যেদিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। আর এ বিশাল জনসমুদ্রে নির্বাচনের এক বছর আগেই নির্বাচনী আমেজ ছিল চোখে পড়ার মতো।
নির্বাচনী বছরের শুরুতেই নৌকা তথা শাসক দল আওয়ামী লীগের পক্ষে জনসমর্থন প্রত্যক্ষ করল বৃহত্তর খুলনাবাসী। জনসভায় আসা লাখো মানুষই যেন মেতে উঠেছিল নির্বাচনী আমেজে। খুলনা মহানগরী ও জেলা ছাড়াও আশপাশের জেলা বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা ও যশোর থেকেও আসা অজস্র মিছিলের প্রতিটিতেই ছিল বিশাল বিশাল নৌকার প্রতিকৃতি ও বিশাল বিশাল আসল নৌকা। ঠেলাগাড়িতে বিশাল বিশাল নৌকা তুলে তার ওপর বৈঠা নিয়ে নৌকার মাঝির নৌকা চালানোর অসংখ্য দৃশ্যও প্রত্যক্ষ করেছেন খুলনাবাসী। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সত্যিই এক অন্যরকম গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছিল বৃহত্তর খুলনা বিভাগে।
দুপুর আড়াইটায় জনসভার জন্য নির্ধারিত সময়সূচী দেয়া থাকলেও সকাল ৯টা থেকেই বিশাল নৌকার ওপর স্থাপিত সুসজ্জিত মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গীত পরিবেশ শুরু হয়। বেলা ১১টা থেকেই আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত অসংখ্য মিছিল আসতে শুরু করে সার্কিট হাউস ময়দান অভিমুখে। বিশাল এই মাঠটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। ময়দান ছাড়াও চতুর্দিকের দেড় বর্গকিলোমিটার পথের কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। লাখো মানুষের ভিড় পেরিয়ে ময়দানে যেতে না পারা হাজার হাজার মানুষকে বিশাল এলাকা জুড়ে লাগানো মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনতে দেখা গেছে। তবে হাজার হাজার মিছিলে নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করার মতো। সার্কিট হাউস ময়দানের আশপাশে বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও গাছের ডালে চড়ে অনেক মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে দেখা যায়।
গত নির্বাচনে খুলনা বিভাগের ৩৬টি আসনের মধ্যে শুধু সদর আসন ছাড়া বাকি ৩৫টিতেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীরা বিজয়ী হন। আগামী নির্বাচনের আর মাত্র এক বছর বাকি। তাই বিজয়ী সংসদ সদস্য এবং আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে বর্ণাঢ্য মিছিল ও শোডাউন ছিল দেখার মতো। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য শেখ হেলাল এমপির সমর্থনে কয়েক হাজার নেতাকর্মীর বর্ণাঢ্য মিছিল সবার নজর কাড়ে।
বাদ্য-বাজনার তালে তালে নেচে গেয়ে লাখো মানুষ আওয়ামী লীগের এ জনসভায় যোগদান করে। প্রধানমন্ত্রী বিকেল সাড়ে তিনটায় জনসভাস্থলে পৌঁছলে লাখো মানুষ সেøাগানে সেøাগানে পুরো এলাকা মুখরিত করে তোলে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় উপচে পড়া জনসমুদ্রে হাত নেড়ে অভিনন্দনের জবাব দেন। শেখ হাসিনার আগমনকে সামনে রেখে এক অন্য রকমভাবে সেজেছিল পুরো খুলনা মহানগর। পথে পথে অসংখ্য তোরণ আর ডিজিটাল ব্যানার টানিয়ে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা- তুলে ধরা হয়। পুরো জেলার এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেই যেখানে বিভিন্ন নেতার শুভেচ্ছা সংবলিত ডিজিটাল ব্যানার দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়নি।
দুপুর সাড়ে ১২টা থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, শেখ হেলাল এমপি, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, প্রতিমন্ত্রী মুন্নজান সুফিয়ান, বিএম মোজাম্মেল হক এমপি, শেখ হারুনুর রশিদ, ডা. মোজাম্মেল হোসেন এমপি, এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা, মোল্লা জালাল উদ্দিন এমপি, সোহরাব আলী ছানা এমপি, ননী গোপাল ম-ল এমপি, সুভাষ বোস, ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা এমপি, এসএম কামাল হোসেন, এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শেখর, নজরুল ইসলাম, মাহবুবুল আলম হিরণ, অসীত বরণ বিশ্বাস, ছাত্রলীগ সভাপতি এসএম বদিউজ্জামান সোহাগ। সভা পরিচালনা করেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান ও সদর থানা আওয়ামী লীগের এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম। এ সময় মঞ্চে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেককে আবারও বিজয়ী করার জন্য খুলনাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
জনসভায় প্রধানমন্ত্রী যা বলেন
বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের গত চার বছরে দেশের সার্বিক উন্নয়নের বর্ণনার পাশাপাশি বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, বিদেশীদের হাতে বাংলাদেশের সম্পদ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ার সরকার দেশকে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ ও মৃত্যুপুরী বানিয়েছিল। বিশেষ করে বৃহত্তর খুলনায় বিএনপি-জামায়াত জোটের পাঁচ বছর ছিল সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য, মৃত্যুপুরী। শুধু খুলনাতেই হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাংবাদিক হুমায়ুন কবির বালু, মানিক সাহা, হারুন-উর রশিদসহ অসংখ্য সাংবাদিককে জীবন দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে খুলনা অঞ্চলের সন্ত্রাস দমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছি। বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামল মানেই ছিল হত্যা, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ সৃষ্টি আর দুর্নীতি করে বিদেশে অর্থ পাচার।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এই চার বছরের শাসনামলে সব দিক দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের দুঃশাসনের কথা দেশের মানুষ কোনদিন ভুলে যাবে না। বিরোধীদলীয় নেতার (খালেদা জিয়া) পুত্রের দুর্নীতির পাচার করা অর্থ-সম্পদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ধরা পড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফবিআই এসে তাঁর পুত্রদের অর্থ পাচারের ঘটনায় আদালতে সাক্ষ্য পর্যন্ত দিয়েছেন। আমরা ক্ষমতায় এসে বিরোধীদলীয় নেতার পুত্রের পাচার করা অর্থ ফেরত এনেছি। একে একে পাচারকৃত সব অর্থ দেশে ফিরিয়ে এনে দেশের উন্নয়নে ব্যয় করব ইনশাল্লাহ।
বিদ্যুত খাতে উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় এসেই দেখলাম বিদ্যুতের জন্য সারাদেশে হাহাকার। ২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার সময় ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করে রেখে গিয়েছিলাম। সাত বছর পর এবার ক্ষমতায় এসে দেখলাম বিদ্যুত উৎপাদন তো বাড়েইনি, বরং কমে ৩ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ৫ বছর ক্ষমতায় থেকে এক ফোঁটা বিদ্যুতও উৎপাদন না করে সব টাকা লুটেপুটে খেয়ে গেছে। বিএনপি ক্ষমতায় থেকে দেশবাসীকে বিদ্যুত দেয়নি, দিয়েছে বিদ্যুতের খাম্বা। কারণ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র খাম্বার ব্যবসা করত। তাই তারা খাম্বা দিয়েছে, বিদ্যুত দেয়নি। তিনি বলেন, বর্তমান মহাজোট সরকার মাত্র চার বছরেই সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করেছে। সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে আমরা গ্রাম-বাংলাকে আলোকিত করছি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তাঁর সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছি। আমরা নির্বাচনের আগে দেশবাসীকে কথা দিয়েছিলাম ক্ষমতায় এলে একাত্তরে যারা লাখো মানুষকে হত্যা করেছে, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, লাখো মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছে- সেসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করব। নির্বাচনের আগে আমরা জাতিকে দেয়া সেই ওয়াদা পূরণ করেছি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে আমরা প্রথম রায় পেয়েছি। ইনশাল্লাহ সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবেই।
বৃহত্তর খুলনার উন্নয়নে তাঁর সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে এ অঞ্চলের প্রাণ মংলা বন্দরকে বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে তা আবার চালু করেছি, মংলা বন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে নিতে নিজস্ব ড্রেজার কিনেছি। বিএনপি ক্ষমতায় থেকে খুলনার সব পাটকল বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে সব বন্ধ পাটকল আবার চালু করেছি। খুলনা মহানগরীর উন্নয়নে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছি। মহানগরের আইন-শৃঙ্খলারক্ষায় নতুন তিনটি থানা, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও নতুন আইটি ভিলেজ তৈরি করব। টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট গড়ে তুলব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী গিয়ে দুর্বিষহ কষ্ট ও নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে, সেখানে কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে বসবাসরত ২ লাখ ৪৮ হাজার বাংলাদেশীকে সে দেশের সরকার বৈধতা দিয়েছে। এখন মাত্র ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করে সরকারীভাবে মানুষ মালয়েশিয়া যেতে পারবে। তিনি বলেন, মাত্র চার বছরে আমরা ২০ লাখ জনশক্তি বিদেশে প্রেরণ করেছি। প্রায় সাড়ে চার লাখ বেকারের সরকারী চাকরি এবং সরকারী-বেসরকারীভাবে প্রায় ৭৮ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। অতীতে কোন সরকার তা পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করে বলেন, জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ জনগণের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগই দেশের মানুষকে ভাষার অধিকার, স্বাধীনতাসহ সবকিছুই দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের জনগণ কিছু পায়। তিনি বলেন, আমাদের নীতিই হচ্ছে দেশের উন্নয়ন। আর বিএনপি-জামায়াতের নীতি হচ্ছে দুর্নীতি।
আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশসেবার সুযোগ দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তুলছি। গত নির্বাচনে দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল বলেই আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আইনী লড়াই করে গভীর সমুদ্রে এক লাখ ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেছি। ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে করা আমাদের মামলার রায় হবে। ইনশাল্লাহ সেখানেও বিজয়ী হয়ে আমরা আরও বিশাল অঞ্চলে সমুদ্রবিজয় করব। ২০২১ সালের মধ্যেই দেশকে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত, উন্নয়ন-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবই।
অন্য নেতারা যা বলেন
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আগামী নির্বাচনে আবারও শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করার জন্য খুলনাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশকে যদি সন্ত্রাস-দুর্নীতি ও জঙ্গীবাদমুক্ত দেখতে চান, উন্নয়ন-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা দেখতে চান- তবে আগামী নির্বাচনেও রাজাকার-আলবদর-স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের দোসর খালেদা জিয়াকে ‘না’ বলুন, শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করুন।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আওয়ামী লীগ সরকারের সন্ত্রাস দমনের কথা উল্লেখ করে বলেন, একটি গুলি বা ক্রসফায়ার না করেই শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ সিকদারসহ সব সন্ত্রাসীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছিলাম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়ায় সারাদেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানালেও খালেদা ম্যাডাম কোন কথা বলেন না। কারণ জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির কোন পার্থক্য নেই, খালেদা জিয়া ও গোলাম আযমের মধ্যেও কোন পার্থক্য নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বাংলাদেশে কোন নির্বাচন হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশবাসী আর কোনদিন খুনী-জঙ্গীবাদীদের দল বিএনপি-জামায়াতকে ভোট দেবে না। কারণ খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলে এ দেশ আবারও হাওয়া ভবন, দুর্নীতি ও জঙ্গীবাদের দেশ হবে।
যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আগামী ফেব্রুয়ারি থেকেই দক্ষিণাঞ্চল-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর মূল কাজ শুরু হবে বলে ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, খুলনাজুড়ে শেখ হাসিনার পক্ষে সাগরের মতোই মানুষের ঢেউ নেমেছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসেই মূল সেতু নির্মাণের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে সুখবর দেবেন ইনশাল্লাহ।
No comments