অলিম্পিক খেলার গল্প by নাদিরা মজুমদার
(গতকালের পর) এর কতটা সত্যি আর কতটুকু বানানো, বলা কঠিন। দুঃখজনক যে, বাচ্চা মেয়েটিকে টার্গেট করা হয়েছে। কারণ, শো-ওয়েন ফেলপস বা লখটের চেয়ে কত সেকেন্ড গতিশীল? বা সার্বিক হিসাব করলে আদৌ কি ততটুকু গতিশীল? অন্য ডিসিপ্লিনে ১৬/১৭ বছর বয়সে আর কেউ কি চমক দেখায়নি? দেখায় তো! মানতে কারও কষ্ট
হলেও মানতেই হবে যে চীনের প্রাচীরের মতোই শো-ওয়েনও চীনের আরেক বিস্ময় হয়ে রইল। শো-ওয়েন প্রসঙ্গে মাইকেল ফেলপসও চলে আসতে বাধ্য। ফেলপসও লন্ডন অলিম্পিকে চমক সৃষ্টি করেন; সোভিয়েত জিমন্যাস্ট লারিসা লাতিনোভা একে চমক না বলে বলেছেন:ঐতিহাসিক সেই মুহূর্তটিতে আমিও ছিলাম। ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত মেলবোর্ন, রোম ও টোকিয়ো অলিম্পিকেÑসাকল্যে নয় বছরের জীবনে, লারিসা লাতিনোভা সর্বমোট ১৮টি অলিম্পিক পদক অর্জন করে যে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন, ফেলপস লারিসার এই রেকর্ডটি ভঙ্গ করেন ২০১২ সালে। ২০০০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সিডনি, এথেন্স, বেজিং ও লন্ডনে তেরো বছরের সাঁতারের জীবনে সর্বমোট ১৯টি অলিম্পিক পদক তিনি জমা করেন। লারিসার রেকর্ড ভাঙতে সময় লেগেছে ৪৮ বছর, ফেলপসের রেকর্ড ভাঙতে কয় বছর লাগে, দেখা যাক।
অলিম্পিজমের জোরালো মন্ত্র বলছে: প্লিজ, খেলার মধ্যে রাজনীতি টেনে এনো না। কুবার্তে ও অনেকেই মন্ত্রটি ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন; করছেনও। কিন্তু মাঝে মধ্যে চলে এসেছে তবু। ফলে, বয়কট, সহিংসতা, বিতর্কিত বিষয়ের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। একটি অতি সংক্ষিপ্ত ও দ্রুত হিসাব নিলে দেখা যায় যে, ১৮৯৬ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্র্যন্ত মাত্র তিনটি দেশÑ যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও সুইজারল্যান্ড; সব ক’টি অলিম্পিকেই দল পাঠিয়েছে। কোন কোন দেশ অবশ্য খেলোয়াড় ও ক্রীড়কের অভাবে কোন টিম পাঠাতে পারেনি; একে তাই বয়কট করা বলা চলে না। কিন্তু কখনওবা পরিকল্পিতভাবে একযোগে একাধিক দেশ বিভিন্ন কারণে অলিম্পিকের উৎসব ও অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকেছে। যেমন, ১৯৫৬ সালের মেলবোর্ন অলিম্পিক দিয়ে শুরু করা যাক। সুয়েজ সঙ্কটের গভীর সন্ধিক্ষণের বছর এটি; ক্যাম্বোডিয়া, মিসর, ইরাক ও লেবানন মেলবোর্নকে এক শ’ ভাগ বয়কট করে। অপরদিকে, ‘রিপাবলিক অব চায়না’ নামের ঘোমটায় তাইওয়ান অংশ নিচ্ছে বলে চীনও বয়কট করে বসে। ফলে, হাঙ্গেরির গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সোভিয়েত দমননীতির প্রতি প্রতিবাদ দেখাতে, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও সুইজারল্যান্ড মেলবোর্র্ন অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করবে না বলে মনস্থির করে ফেললেও শেষ পর্যন্ত ইকোয়েস্ট্রিয়ান ডিসিপ্লিনে অংশ নিয়ে বয়কটের নিন্দা মোচন করে। একইভাবে, বিপুলসংখ্যক আফ্রিকান দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা ও রোডেশিয়ার (আধুনিককালের জিম্বাবুইয়ে) বর্ণবৈষম্যবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে। বলে বসে যে, তারা ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিক ও ১৯৭৬ সালের মন্ট্রিল অলিম্পিক বয়কট করবে। তাদের চাপ কাজ করে। দেশদুটো অলিম্পিক খেলা থেকে বহি®কৃত হয়।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় জাতীয় রাগবি টিম পাঠিয়ে নিউজিল্যান্ড যে পাপ করেছিল, এবং তার প্রতিদান হিসেবে তাকেও বহিষ্কারের আফ্রিকীয় দাবিটি মেনে নেয়া হয়নি, তার রেশ কিন্তু সহজে মেটেনি। ইত্যবসরে যখন মন্ট্রিলে অলিম্পিক বেশ জমে উঠেছে এবং হুমকিদাতা কোন কোন দেশের খেলোয়াড় ও ক্রীড়করা অংশও নিয়েছেÑঘটনার এই নাটকীয় মুহূর্তে তানজানিয়ার নেতৃত্বে আফ্রিকার বিশটি দেশের সঙ্গে গায়ানা ও ইরাকও অলিম্পিক খেলা পরিত্যাগ করে চলে আসে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন ও প্রজাতন্ত্রী চীনের মধ্যেও মতান্তর মন্ট্রিলে আরও প্রকট হয়ে ওঠে; প্রজাতন্ত্রী চীন নাম বদলের আগ পর্যন্ত খেলার অপরিহার্য অংশ হিসেবে পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের প্রশ্নে সমঝোতায় আসতে বেঁকে বসে তাইওয়ান। ফলে, সেও বয়কট করে। এরপর, ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তাইওয়ান কোন অলিম্পিকে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। নাম বদলে চাইনিজ তাইপেয় নামে পরিচিত হয়ে ও সেই সঙ্গে বিশেষ পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের ধারক হওয়ার পর থেকে তাইওয়ান আবার অলিম্পিকে শরিক হতে শুরু করে। (চলবে)
হধফরৎধযসধলঁসফধৎ@মসধরষ.পড়স
অলিম্পিজমের জোরালো মন্ত্র বলছে: প্লিজ, খেলার মধ্যে রাজনীতি টেনে এনো না। কুবার্তে ও অনেকেই মন্ত্রটি ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন; করছেনও। কিন্তু মাঝে মধ্যে চলে এসেছে তবু। ফলে, বয়কট, সহিংসতা, বিতর্কিত বিষয়ের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। একটি অতি সংক্ষিপ্ত ও দ্রুত হিসাব নিলে দেখা যায় যে, ১৮৯৬ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্র্যন্ত মাত্র তিনটি দেশÑ যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও সুইজারল্যান্ড; সব ক’টি অলিম্পিকেই দল পাঠিয়েছে। কোন কোন দেশ অবশ্য খেলোয়াড় ও ক্রীড়কের অভাবে কোন টিম পাঠাতে পারেনি; একে তাই বয়কট করা বলা চলে না। কিন্তু কখনওবা পরিকল্পিতভাবে একযোগে একাধিক দেশ বিভিন্ন কারণে অলিম্পিকের উৎসব ও অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকেছে। যেমন, ১৯৫৬ সালের মেলবোর্ন অলিম্পিক দিয়ে শুরু করা যাক। সুয়েজ সঙ্কটের গভীর সন্ধিক্ষণের বছর এটি; ক্যাম্বোডিয়া, মিসর, ইরাক ও লেবানন মেলবোর্নকে এক শ’ ভাগ বয়কট করে। অপরদিকে, ‘রিপাবলিক অব চায়না’ নামের ঘোমটায় তাইওয়ান অংশ নিচ্ছে বলে চীনও বয়কট করে বসে। ফলে, হাঙ্গেরির গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সোভিয়েত দমননীতির প্রতি প্রতিবাদ দেখাতে, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও সুইজারল্যান্ড মেলবোর্র্ন অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করবে না বলে মনস্থির করে ফেললেও শেষ পর্যন্ত ইকোয়েস্ট্রিয়ান ডিসিপ্লিনে অংশ নিয়ে বয়কটের নিন্দা মোচন করে। একইভাবে, বিপুলসংখ্যক আফ্রিকান দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা ও রোডেশিয়ার (আধুনিককালের জিম্বাবুইয়ে) বর্ণবৈষম্যবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে। বলে বসে যে, তারা ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিক ও ১৯৭৬ সালের মন্ট্রিল অলিম্পিক বয়কট করবে। তাদের চাপ কাজ করে। দেশদুটো অলিম্পিক খেলা থেকে বহি®কৃত হয়।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় জাতীয় রাগবি টিম পাঠিয়ে নিউজিল্যান্ড যে পাপ করেছিল, এবং তার প্রতিদান হিসেবে তাকেও বহিষ্কারের আফ্রিকীয় দাবিটি মেনে নেয়া হয়নি, তার রেশ কিন্তু সহজে মেটেনি। ইত্যবসরে যখন মন্ট্রিলে অলিম্পিক বেশ জমে উঠেছে এবং হুমকিদাতা কোন কোন দেশের খেলোয়াড় ও ক্রীড়করা অংশও নিয়েছেÑঘটনার এই নাটকীয় মুহূর্তে তানজানিয়ার নেতৃত্বে আফ্রিকার বিশটি দেশের সঙ্গে গায়ানা ও ইরাকও অলিম্পিক খেলা পরিত্যাগ করে চলে আসে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন ও প্রজাতন্ত্রী চীনের মধ্যেও মতান্তর মন্ট্রিলে আরও প্রকট হয়ে ওঠে; প্রজাতন্ত্রী চীন নাম বদলের আগ পর্যন্ত খেলার অপরিহার্য অংশ হিসেবে পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের প্রশ্নে সমঝোতায় আসতে বেঁকে বসে তাইওয়ান। ফলে, সেও বয়কট করে। এরপর, ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তাইওয়ান কোন অলিম্পিকে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। নাম বদলে চাইনিজ তাইপেয় নামে পরিচিত হয়ে ও সেই সঙ্গে বিশেষ পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের ধারক হওয়ার পর থেকে তাইওয়ান আবার অলিম্পিকে শরিক হতে শুরু করে। (চলবে)
হধফরৎধযসধলঁসফধৎ@মসধরষ.পড়স
No comments