আমানত শাহ্ লুঙ্গি অলিম্পিক আপডেট-হেসেখেলে ইতিহাসে বোল্ট by মাসুদ পারভেজ
চোখের সামনে উসাইন বোল্ট আর কল্পনায় কার্ল লুইস! স্ট্র্যাটফোর্ডের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ইতিহাসে ঢুকে যাওয়া আরেকটি দৌড়ের পর সবাইকে কল্পনার ডানায়ও ভর করালেন বোল্ট। সে কল্পনা ক্ষতবিক্ষত লুইসের ছবিই ফুটিয়ে তুলছিল কেবল।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই স্প্রিন্ট কিংবদন্তির বক্তব্যে কিছুদিন ধরেই যে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে উঠছিলেন 'লাইটনিং বোল্ট'।
জ্যামাইকান স্প্রিন্টারদের সাফল্যে পারফরম্যান্সবর্ধক ড্রাগের প্রভাব থাকতে পারে বলে সন্দিহান লুইসকে অবশ্য দৌড় শেষ হওয়ামাত্রই একহাত নিয়ে ফেলেছেন ক্রিস গেইল। টু্ইটারে সঙ্গে সঙ্গেই এ জ্যামাইকান ক্রিকেটার লিখে দিয়েছেন, 'কার্ল লুইস ইজ স্ট্রাইকেন বাই লাইটনিং, বিটেন বাই বিস্ট (ইয়োহান ব্লেক) অ্যান্ড ইটেন বাই ওয়ের (ব্রোঞ্জজয়ী ওয়ারেন ওয়ের)।'
বোল্টের সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের ব্যস্ত রাখল গেইলের ওই টুইটই। বেশির ভাগ দেশেই ক্রিকেটের প্রচলন নেই, তাই গেইলকে সবাই চেনেনও না। তাই বলে তাঁর বক্তব্যের মর্মোদ্ধার করে কল্পনায় ডুব দেওয়ায় বাধা ছিল না কোনো। এদিনই সর্বজনীন হয়ে ওঠা গেইলের টুইট নিয়ে নানা হাস্যরসে অনেক সময় কেটে যাওয়ার পর এলেন বোল্ট। সঞ্চালক একে একে সোনা, রুপা ও ব্রোঞ্জ বিজয়ীর নাম বলতেই বোল্ট গলা চড়িয়ে এমনভাবে 'ইয়েস, অল জ্যামাইকানস' বললেন যে মনে হলো, লুইসকেই শোনাতে চাইছেন!
অনন্য সব অর্জনের মালা পরে বসে থাকা বোল্ট পরে লুইসকে একহাত নিতে ছাড়েননি। ওই মার্কিনির প্রতি তাঁর বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা অবশিষ্ট নেই বলে বৈশ্বিক মিডিয়ার জন্য মুখরোচক এক 'শিরোনাম'ও দিয়েছেন। এর আগে ট্র্যাকে জ্যামাইকানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়া ২০০ মিটার স্প্রিন্টের ফাইনালে তাঁর আরেকটি ঝলক নিয়ে হাজির বোল্ট। ১০০ মিটারে না পারা স্বদেশি ইয়োহান ব্লেক ২০০ মিটারে তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন কি না, সেই কৌতূহলও শেষ করে দিলেন ১৯.৩২ সেকেন্ডের এক দৌড়ে।
ব্লেককে দু-এক দিন আগে ২০০ মিটার নিয়ে কী বলেছিলেন সে কথাও জানিয়ে দিলেন বোল্ট, ''সন্দেহ নেই যে ব্লেক একজন গ্রেট অ্যাথলেট। তবে আমি এও শুনেছিলাম যে ২০০ মিটার নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ও কিছু কথা বলেছে। তাই ওকে বলে দিয়েছিলাম 'নো চান্স'। ২০০ মিটারে আমাকে হারানোর সুযোগ ওকে দিচ্ছি না।'' সুযোগ রাখলে কী আর দৌড় শেষ করতে ১৯.৪৪ সেকেন্ড সময় লাগে ব্লেকের। ওয়ের (১৯.৮৪) তো আরো কত পরে শেষ করে ২০০ মিটার স্প্রিন্টকে পুরোপুরি জ্যামাইকান জয়োৎসবের মঞ্চ বানিয়েছেন।
মঞ্চের সর্বোচ্চ বেদিতে উঠে বোল্ট বনে গেছেন পরপর দুই অলিম্পিকের 'স্প্রিন্ট ডাবল' (১০০ ও ২০০ মিটার) জেতার মতো অনন্য এক কীর্তির স্রষ্টা। নিজেকে 'জীবন্ত কিংবদন্তি' বলার জন্য এ সাফল্যের অপেক্ষায়ই তো ছিলেন ওই দুটো ইভেন্টেরই বিশ্বরেকর্ডের মালিক। একটু জানিয়ে রাখা দরকার, স্প্রিন্টে না হলেও এক অলিম্পিকে জেতা ব্যক্তিগত ইভেন্টের ডাবল পরেরবার এসেও জেতার নজির আছে আরো। ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিকের পর ১৯৭৬-র মন্ট্রিল গেমসেও পাঁচ হাজার এবং ১০ হাজার মিটার দৌড়ের সোনা জিতেছিলেন ফিনল্যান্ডের লাস ভিরেন। তবে স্প্রিন্টে বোল্টই প্রথম।
সাত নম্বর লেন থেকে দৌড় শুরু করে এক পর্যায়ে অন্যদের পেছনে ফেলে এগিয়ে গেলেন অনেকখানি। ফিনিশিং লাইন যখন কাছাকাছি, তখন নিজের বাম দিকে ঘুরে দেখতে চাইলেন ব্লেকের কী অবস্থা। তাঁর শ্রেষ্ঠত্বকে চ্যালেঞ্জ করার মতো অবস্থায় নেই দেখে শেষ ১০ মিটারে সেই চিরাচরিত স্টাইল। গতি কমিয়ে দিয়ে উদ্যাপনের শুরু। ঠোঁটের ওপর তর্জনীটা ধরে সমালোচকদের চুপ করার আহ্বান। ফিনিশিং লাইন পেরিয়ে গিয়েই ছুটলেন ট্র্যাকের নিকটতম গ্যালারিতে অপেক্ষমাণ জ্যামাইকান সমর্থকদের দিকে। আনন্দে তাঁদের কারো কারো বুকে ক্ষণিকের জন্য বিলীনও হয়ে গেলেন। এক ফটোগ্রাফারের ক্যামেরা নিয়ে নিজেই কিছু ছবি তোলার চেষ্টা করলেন।
অথচ দৌড় শুরুর আগে নিজেকে ক্ষণিকের জন্য খুব নিঃসঙ্গই লাগছিল। বেশিক্ষণ অবশ্য নয়। দর্শকদের চিৎকারে নিজেকে ফিরে পাওয়া বোল্ট হয়তো তখন ব্রিটিশ অ্যাথলেট মারলন ডেভোনিশের মতো নিজেকে শুধাচ্ছিলেন, 'ক্রাউড ইজ মাই অনলি ড্রাগ'। এর পরের দৌড়টা তাই হলো এক ইতিহাসস্রষ্টার। অর্জনের মালা গাঁথাও পরিপূর্ণ হলো তাই। এরপর আর কী করবেন বোল্ট? সংবাদ সম্মেলনে তাই একে একে অনেকেই তাঁকে নানা 'বিকল্প' দিয়ে যেতে থাকলেন। ফুটবল খেলবেন কি না, নাকি ক্রিকেটটাও একটু চেষ্টা করে দেখবেন। ৪০০ মিটারে দৌড়ানোর ব্যাপারটা মাথায় কতটুকু আছে বা লং জাম্পে নাম লিখিয়ে ফেলবেন কি না! ইত্যাকার নানা প্রশ্নে মনে হচ্ছিল, বোল্ট যেন এক 'পাইরেট অব দ্য ক্যারিবিয়ান', স্প্রিন্টের জগৎ যাঁর ইতিমধ্যেই লুট করা হয়ে গেছে। এখন নতুন লক্ষ্যে যেতে হবে আরো দূর, বহুদূর।
চোখের সামনের বোল্ট দূরের ছবি যেমন দেখালেন, তেমনি কল্পনায় কার্ল লুইসকেও! এ 'ক্যারিবিয়ান পাইরেট'-এ যে আরেক কিংবদন্তি লুইসের সম্মানও লুট হলো অনেকখানি!
জ্যামাইকান স্প্রিন্টারদের সাফল্যে পারফরম্যান্সবর্ধক ড্রাগের প্রভাব থাকতে পারে বলে সন্দিহান লুইসকে অবশ্য দৌড় শেষ হওয়ামাত্রই একহাত নিয়ে ফেলেছেন ক্রিস গেইল। টু্ইটারে সঙ্গে সঙ্গেই এ জ্যামাইকান ক্রিকেটার লিখে দিয়েছেন, 'কার্ল লুইস ইজ স্ট্রাইকেন বাই লাইটনিং, বিটেন বাই বিস্ট (ইয়োহান ব্লেক) অ্যান্ড ইটেন বাই ওয়ের (ব্রোঞ্জজয়ী ওয়ারেন ওয়ের)।'
বোল্টের সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের ব্যস্ত রাখল গেইলের ওই টুইটই। বেশির ভাগ দেশেই ক্রিকেটের প্রচলন নেই, তাই গেইলকে সবাই চেনেনও না। তাই বলে তাঁর বক্তব্যের মর্মোদ্ধার করে কল্পনায় ডুব দেওয়ায় বাধা ছিল না কোনো। এদিনই সর্বজনীন হয়ে ওঠা গেইলের টুইট নিয়ে নানা হাস্যরসে অনেক সময় কেটে যাওয়ার পর এলেন বোল্ট। সঞ্চালক একে একে সোনা, রুপা ও ব্রোঞ্জ বিজয়ীর নাম বলতেই বোল্ট গলা চড়িয়ে এমনভাবে 'ইয়েস, অল জ্যামাইকানস' বললেন যে মনে হলো, লুইসকেই শোনাতে চাইছেন!
অনন্য সব অর্জনের মালা পরে বসে থাকা বোল্ট পরে লুইসকে একহাত নিতে ছাড়েননি। ওই মার্কিনির প্রতি তাঁর বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা অবশিষ্ট নেই বলে বৈশ্বিক মিডিয়ার জন্য মুখরোচক এক 'শিরোনাম'ও দিয়েছেন। এর আগে ট্র্যাকে জ্যামাইকানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়া ২০০ মিটার স্প্রিন্টের ফাইনালে তাঁর আরেকটি ঝলক নিয়ে হাজির বোল্ট। ১০০ মিটারে না পারা স্বদেশি ইয়োহান ব্লেক ২০০ মিটারে তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন কি না, সেই কৌতূহলও শেষ করে দিলেন ১৯.৩২ সেকেন্ডের এক দৌড়ে।
ব্লেককে দু-এক দিন আগে ২০০ মিটার নিয়ে কী বলেছিলেন সে কথাও জানিয়ে দিলেন বোল্ট, ''সন্দেহ নেই যে ব্লেক একজন গ্রেট অ্যাথলেট। তবে আমি এও শুনেছিলাম যে ২০০ মিটার নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ও কিছু কথা বলেছে। তাই ওকে বলে দিয়েছিলাম 'নো চান্স'। ২০০ মিটারে আমাকে হারানোর সুযোগ ওকে দিচ্ছি না।'' সুযোগ রাখলে কী আর দৌড় শেষ করতে ১৯.৪৪ সেকেন্ড সময় লাগে ব্লেকের। ওয়ের (১৯.৮৪) তো আরো কত পরে শেষ করে ২০০ মিটার স্প্রিন্টকে পুরোপুরি জ্যামাইকান জয়োৎসবের মঞ্চ বানিয়েছেন।
মঞ্চের সর্বোচ্চ বেদিতে উঠে বোল্ট বনে গেছেন পরপর দুই অলিম্পিকের 'স্প্রিন্ট ডাবল' (১০০ ও ২০০ মিটার) জেতার মতো অনন্য এক কীর্তির স্রষ্টা। নিজেকে 'জীবন্ত কিংবদন্তি' বলার জন্য এ সাফল্যের অপেক্ষায়ই তো ছিলেন ওই দুটো ইভেন্টেরই বিশ্বরেকর্ডের মালিক। একটু জানিয়ে রাখা দরকার, স্প্রিন্টে না হলেও এক অলিম্পিকে জেতা ব্যক্তিগত ইভেন্টের ডাবল পরেরবার এসেও জেতার নজির আছে আরো। ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিকের পর ১৯৭৬-র মন্ট্রিল গেমসেও পাঁচ হাজার এবং ১০ হাজার মিটার দৌড়ের সোনা জিতেছিলেন ফিনল্যান্ডের লাস ভিরেন। তবে স্প্রিন্টে বোল্টই প্রথম।
সাত নম্বর লেন থেকে দৌড় শুরু করে এক পর্যায়ে অন্যদের পেছনে ফেলে এগিয়ে গেলেন অনেকখানি। ফিনিশিং লাইন যখন কাছাকাছি, তখন নিজের বাম দিকে ঘুরে দেখতে চাইলেন ব্লেকের কী অবস্থা। তাঁর শ্রেষ্ঠত্বকে চ্যালেঞ্জ করার মতো অবস্থায় নেই দেখে শেষ ১০ মিটারে সেই চিরাচরিত স্টাইল। গতি কমিয়ে দিয়ে উদ্যাপনের শুরু। ঠোঁটের ওপর তর্জনীটা ধরে সমালোচকদের চুপ করার আহ্বান। ফিনিশিং লাইন পেরিয়ে গিয়েই ছুটলেন ট্র্যাকের নিকটতম গ্যালারিতে অপেক্ষমাণ জ্যামাইকান সমর্থকদের দিকে। আনন্দে তাঁদের কারো কারো বুকে ক্ষণিকের জন্য বিলীনও হয়ে গেলেন। এক ফটোগ্রাফারের ক্যামেরা নিয়ে নিজেই কিছু ছবি তোলার চেষ্টা করলেন।
অথচ দৌড় শুরুর আগে নিজেকে ক্ষণিকের জন্য খুব নিঃসঙ্গই লাগছিল। বেশিক্ষণ অবশ্য নয়। দর্শকদের চিৎকারে নিজেকে ফিরে পাওয়া বোল্ট হয়তো তখন ব্রিটিশ অ্যাথলেট মারলন ডেভোনিশের মতো নিজেকে শুধাচ্ছিলেন, 'ক্রাউড ইজ মাই অনলি ড্রাগ'। এর পরের দৌড়টা তাই হলো এক ইতিহাসস্রষ্টার। অর্জনের মালা গাঁথাও পরিপূর্ণ হলো তাই। এরপর আর কী করবেন বোল্ট? সংবাদ সম্মেলনে তাই একে একে অনেকেই তাঁকে নানা 'বিকল্প' দিয়ে যেতে থাকলেন। ফুটবল খেলবেন কি না, নাকি ক্রিকেটটাও একটু চেষ্টা করে দেখবেন। ৪০০ মিটারে দৌড়ানোর ব্যাপারটা মাথায় কতটুকু আছে বা লং জাম্পে নাম লিখিয়ে ফেলবেন কি না! ইত্যাকার নানা প্রশ্নে মনে হচ্ছিল, বোল্ট যেন এক 'পাইরেট অব দ্য ক্যারিবিয়ান', স্প্রিন্টের জগৎ যাঁর ইতিমধ্যেই লুট করা হয়ে গেছে। এখন নতুন লক্ষ্যে যেতে হবে আরো দূর, বহুদূর।
চোখের সামনের বোল্ট দূরের ছবি যেমন দেখালেন, তেমনি কল্পনায় কার্ল লুইসকেও! এ 'ক্যারিবিয়ান পাইরেট'-এ যে আরেক কিংবদন্তি লুইসের সম্মানও লুট হলো অনেকখানি!
No comments