এই ঈদে মেঘের পাশে নেই প্রিয় দুটি মুখ
ঈদ সামনে রেখে গত বছর জার্মানি থেকে দেশে ফেরেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। তাঁদের একমাত্র সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ। মেঘের সেকি আনন্দ! বাবা-মায়ের হাত ধরে ছুটোছুটি। এ-মার্কেট থেকে ও-মার্কেট।
পাঞ্জাবিসহ ঈদের হরেক ফ্যাশনের পোশাক আর খেলনায় একাকার ছোট্ট মেঘের ঘর। ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল শেষে নতুন পোশাক পরে বাবার সঙ্গে নামাজ পড়তে যাওয়া। ঈদের আনন্দ ছোট্ট মেঘকে যেন ভাসিয়ে দেয়!
বছর ঘুরে আবার এসেছে ঈদ। কিন্তু আজ পরম আরাধ্য সেই দুটি মুখ অনুপস্থিত। মেঘকে ছেড়ে তাঁরা চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। ছোট্ট শিশুটি আজো সবকিছু স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে না। কিন্তু প্রিয় সেই দুটি মুখের টানা অনুপস্থিতি শিশুমনেও হয়তো প্রশ্ন তোলে। তাই তো এবারের ঈদে আশপাশের সবার কেনাকাটা দেখে মেঘের মধ্যে ব্যতিক্রমী প্রতিক্রিয়া দেখতে পান অন্যরা।
বাবা-মা নেই। তাই বলে থেমে নেই মেঘের জন্য কেনাকাটা। স্বজনদের অনেকেই তাকে এটা-ওটা উপহার দিয়েছেন। কেনা হয়েছে ঈদের পাঞ্জাবি আর স্যান্ডেল। তবে এসব উপহার কি থামাতে পারছে মেঘের অবুঝ মনের ভেতর তোলপাড় তোলা বোবা কান্না? আর কয়েক দিন পরই ঈদ। স্বজনরা সবাই থাকবেন মেঘের পাশে। থাকবেন না শুধু ওর সবচেয়ে কাছের দুটি মানুষ। বাবা-মা ছাড়া এবারই মেঘের প্রথম ঈদ।
স্বজনরা জানান, বাবা-মাকে না দেখে মেঘ যেন মাঝেমধ্যেই কেমন আনমনা হয়ে যায়। কাকে যেন খুঁজে ফেরে ওর দুটি চোখ। আর মেঘের সেই খুঁজে বেড়ানো দৃষ্টি দেখে নীরবে কাঁদেন পরিবারের অন্য সদস্যরা।
গত বছরের ঈদের আনন্দঘন মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে মেঘের মামা নওশের আলম রোমান আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'গত বছর ঈদের আগে আপু-দুলাভাই দুজনই (সাগর-রুনি) ছেলেকে অনেক সময় দেন। মেঘকে নিয়ে মার্কেটে যাওয়া, সকালে ঘুম থেকে তুলে ঈদের জামাতে নিয়ে যাওয়া, ঈদের আগে কয়েক দিন ধরে মেঘকে পছন্দের সব উপহার কিনে দেওয়া, প্রিয় খাবার খাওয়ানো, বাইরে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ায় ব্যস্ত সময় কাটান দুজনই। আজ তাঁরা নেই।'
রোমান বলেন, 'আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি মেঘের মন ভালো রাখতে। কিন্তু বাবা-মায়ের অভাব পূরণের সাধ্য কি কারো আছে? তবে আমরা যেকোনোভাবে হোক ওকে খুশি রাখতে চাই। নিজেদের সুখ বিলিয়ে দিতে চাই মেঘকে। স্বজনরা যে যার মতো করে মেঘকে শুভেচ্ছা জানাতে ভুল করছেন না। অনেকে বাসায় এসে মেঘকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করছেন। ঈদ উপলক্ষে অনেকেই অনেক ধরনের পোশাক ও খেলনা দিয়েছেন মেঘকে।'
মেঘ রাজাবাজারে নানি-মামাদের সঙ্গে থাকে। গতকাল ওই বাসায় গিয়ে মেঘের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। এ সময় ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে মেঘ বলে, 'ঈদে লাল পাঞ্জাবি কিনেছি। স্যান্ডেল কিনেছি। রুপা আন্টির সঙ্গে মার্কেটে গিয়ে এগুলো কিনেছি।'
মেঘের নানি নূরুন্নাহার মেঘ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, 'কয়েক দিন আগে আগের বাসা থেকে মেঘের পড়ার টেবিল ও একটি টেলিভিশন এই বাসায় আনা হয়েছে। এ সবকিছু বাসায় আনার পরপরই মেঘ মাম্মি (মা)-বাবার কথা বলে কান্নাকাটি শুরু করে। রাতে স্বপ্ন দেখে ভয়ে ঘুম ভেঙে বাবা-মাকে খোঁজে। টিভিতে কারো মৃত্যু দেখলেই বাবা-মায়ের কথা বলে।'
খুনিদের গ্রেপ্তার নিয়ে হতাশা : মেঘের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকেই চলে আসে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রসঙ্গ। তদন্তকাজ থেমে থাকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন পরিবারের সদস্যরা। হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় ছয় মাস কেটে গেলেও আজ পর্যন্ত খুনি শনাক্ত না হওয়ায় তাঁরা পুরোপুরি হতাশ।
মামলার বাদী মেঘের মামা নওশের আলম রোমান ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, 'তদন্তের নামে কালক্ষেপণ আর নাটক চলছে। এতে করে খুনিরা সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। গত শনিবারও আমার মায়ের মোবাইল ফোনে এক ব্যক্তি ফোন করে হুমকি দিয়ে আজেবাজে কথা বলেছে। ডিবি থেকে তদন্তভার হস্তান্তর হয়েছে র্যাবে। তাদের তদন্তেও অগ্রগতি দেখছি না।'
মেঘের নানি বলেন, 'আমরা হতাশ। তারপরও আশায় বুক বেঁধে আছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুনিদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে- এটাই আশা।'
তদন্তে অগ্রগতির দাবি র্যাবের : সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, র্যাব মামলা তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। একই কথা পুলিশও বলেছে হাজারবার। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পুলিশ যা বলে আসছিল, আজকের র্যাবের জবাবে তার ভিন্ন কিছু নেই।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসা থেকে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি খুন হন।
বছর ঘুরে আবার এসেছে ঈদ। কিন্তু আজ পরম আরাধ্য সেই দুটি মুখ অনুপস্থিত। মেঘকে ছেড়ে তাঁরা চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। ছোট্ট শিশুটি আজো সবকিছু স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে না। কিন্তু প্রিয় সেই দুটি মুখের টানা অনুপস্থিতি শিশুমনেও হয়তো প্রশ্ন তোলে। তাই তো এবারের ঈদে আশপাশের সবার কেনাকাটা দেখে মেঘের মধ্যে ব্যতিক্রমী প্রতিক্রিয়া দেখতে পান অন্যরা।
বাবা-মা নেই। তাই বলে থেমে নেই মেঘের জন্য কেনাকাটা। স্বজনদের অনেকেই তাকে এটা-ওটা উপহার দিয়েছেন। কেনা হয়েছে ঈদের পাঞ্জাবি আর স্যান্ডেল। তবে এসব উপহার কি থামাতে পারছে মেঘের অবুঝ মনের ভেতর তোলপাড় তোলা বোবা কান্না? আর কয়েক দিন পরই ঈদ। স্বজনরা সবাই থাকবেন মেঘের পাশে। থাকবেন না শুধু ওর সবচেয়ে কাছের দুটি মানুষ। বাবা-মা ছাড়া এবারই মেঘের প্রথম ঈদ।
স্বজনরা জানান, বাবা-মাকে না দেখে মেঘ যেন মাঝেমধ্যেই কেমন আনমনা হয়ে যায়। কাকে যেন খুঁজে ফেরে ওর দুটি চোখ। আর মেঘের সেই খুঁজে বেড়ানো দৃষ্টি দেখে নীরবে কাঁদেন পরিবারের অন্য সদস্যরা।
গত বছরের ঈদের আনন্দঘন মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে মেঘের মামা নওশের আলম রোমান আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'গত বছর ঈদের আগে আপু-দুলাভাই দুজনই (সাগর-রুনি) ছেলেকে অনেক সময় দেন। মেঘকে নিয়ে মার্কেটে যাওয়া, সকালে ঘুম থেকে তুলে ঈদের জামাতে নিয়ে যাওয়া, ঈদের আগে কয়েক দিন ধরে মেঘকে পছন্দের সব উপহার কিনে দেওয়া, প্রিয় খাবার খাওয়ানো, বাইরে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ায় ব্যস্ত সময় কাটান দুজনই। আজ তাঁরা নেই।'
রোমান বলেন, 'আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি মেঘের মন ভালো রাখতে। কিন্তু বাবা-মায়ের অভাব পূরণের সাধ্য কি কারো আছে? তবে আমরা যেকোনোভাবে হোক ওকে খুশি রাখতে চাই। নিজেদের সুখ বিলিয়ে দিতে চাই মেঘকে। স্বজনরা যে যার মতো করে মেঘকে শুভেচ্ছা জানাতে ভুল করছেন না। অনেকে বাসায় এসে মেঘকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করছেন। ঈদ উপলক্ষে অনেকেই অনেক ধরনের পোশাক ও খেলনা দিয়েছেন মেঘকে।'
মেঘ রাজাবাজারে নানি-মামাদের সঙ্গে থাকে। গতকাল ওই বাসায় গিয়ে মেঘের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। এ সময় ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে মেঘ বলে, 'ঈদে লাল পাঞ্জাবি কিনেছি। স্যান্ডেল কিনেছি। রুপা আন্টির সঙ্গে মার্কেটে গিয়ে এগুলো কিনেছি।'
মেঘের নানি নূরুন্নাহার মেঘ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, 'কয়েক দিন আগে আগের বাসা থেকে মেঘের পড়ার টেবিল ও একটি টেলিভিশন এই বাসায় আনা হয়েছে। এ সবকিছু বাসায় আনার পরপরই মেঘ মাম্মি (মা)-বাবার কথা বলে কান্নাকাটি শুরু করে। রাতে স্বপ্ন দেখে ভয়ে ঘুম ভেঙে বাবা-মাকে খোঁজে। টিভিতে কারো মৃত্যু দেখলেই বাবা-মায়ের কথা বলে।'
খুনিদের গ্রেপ্তার নিয়ে হতাশা : মেঘের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকেই চলে আসে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রসঙ্গ। তদন্তকাজ থেমে থাকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন পরিবারের সদস্যরা। হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় ছয় মাস কেটে গেলেও আজ পর্যন্ত খুনি শনাক্ত না হওয়ায় তাঁরা পুরোপুরি হতাশ।
মামলার বাদী মেঘের মামা নওশের আলম রোমান ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, 'তদন্তের নামে কালক্ষেপণ আর নাটক চলছে। এতে করে খুনিরা সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। গত শনিবারও আমার মায়ের মোবাইল ফোনে এক ব্যক্তি ফোন করে হুমকি দিয়ে আজেবাজে কথা বলেছে। ডিবি থেকে তদন্তভার হস্তান্তর হয়েছে র্যাবে। তাদের তদন্তেও অগ্রগতি দেখছি না।'
মেঘের নানি বলেন, 'আমরা হতাশ। তারপরও আশায় বুক বেঁধে আছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুনিদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে- এটাই আশা।'
তদন্তে অগ্রগতির দাবি র্যাবের : সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, র্যাব মামলা তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। একই কথা পুলিশও বলেছে হাজারবার। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পুলিশ যা বলে আসছিল, আজকের র্যাবের জবাবে তার ভিন্ন কিছু নেই।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসা থেকে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি খুন হন।
No comments