পাঠকের প্রতিক্রিয়া ॥ আবাসিক এলাকায় দুর্ভোগ by মোহাম্মদ আবু মিসির

১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে ঢাকা শহরের বিশিষ্ট নাগরিকদের বাসস্থানের জন্য লেকসহ ধানম-িতে একটি অভিজাত আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছিল। ঘন সবুজের ভেতর লেকের চারদিকে লাগানো হয়েছিল লাল রঙের বড় বড় কৃষ্ণচূড়ার চারা। এ ছাড়া লেকের ওপর দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল যেগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে সকাল-সন্ধ্যা মানুষ সেবন করত নির্মাল বাতাস, আর উপভোগ করত মনোরম শোভা।


আবাসিক এলাকার ভেতর যে সব রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল সেগুলো ছিল বেশ প্রশস্ত ও শান্ত সুনিবিড় ছায়াঘেরা।
বর্তমানে ধানম-ি আবাসিক এলাকার করদাতা ও বাসস্থানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকগুণ। কিন্তু করদাতারা কি তাদের করের বিনিময়ে প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন? ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের উদাসীনতার কারণে পুরো এলাকার ফুটপাতের নিচে নর্দমাগুলো আবর্জনায় ভরে গেছে। কারণ নর্দমাগুলোর ওপর কোথাও কোন ঢাকনা নেই। রাস্তার পাশে খাম্বা আছে কিন্তু বাতি নেই। ফলে চুরি, ডাকাতি, হাইজ্যাক ও রাহাজানি এলাকার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তা ছাড়া রাস্তার ওপর বাতি না থাকায় অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে রাতের বেলা ১১/এ সড়কের ওপর একদিকে নানা মাদকদ্রব্য যেমনÑ গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, ভায়াগ্রা ইত্যাদি বিক্রি হয়। অন্যদিকে নিশিকন্যাদের হাটও বসে বলে শোনা যায়। এসব ঘটনা ঘটছে মূলত স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে। ১১/এ সড়কটি সম্ভবত একমাত্র সড়ক যেটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খানাখন্দে ভরা, সামান্য বৃষ্টিতেই কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। ২০১২ সালে এলাকার অনেক রাস্তা সংস্কার হয়েছে একমাত্র ১১/এ সড়কটি ছাড়া। এই বিমাতাসুলভ আচরণের জবাব দিতে পারে একমাত্র ডিসিসি। কাজেই এই ব্যাপারে ডিসিসি প্রশাসক মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো।
এলাকার অভ্যন্তরীণ অনেক রাস্তার ওপর কতিপয় অর্থলিপ্সু বাড়িওয়ালার যোগসাজশে বছরের পর বছর পরিচালিত হচ্ছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কয়েক ডজন বেসরকারী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কোচিং সেন্টার, কমিউনিটি সেন্টার, হাসপাতাল ও অনুরূপ অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। যদি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠা ও সততার সাথে পালন করত তাহলে শিক্ষা বিস্তারের নামে অর্থ-উপার্জনকারী এসব তথাকথিত বিদ্যাপীঠ ও অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠতে পারত না। ধানম-ি আবাসিক এলাকার সকল সমস্যার শীর্ষে যানজট। এলাকার প্রতিটি রাস্তার এই যানজট অব্যাহত গতিতে চলতে থাকে সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। এই যানজট সৃষ্টি হয় মূলত স্কুলে আসা শত শত গাড়ি রাস্তার উভয় পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার ফলে। রাস্তার পাশে গাড়ি রেখে চালকরা তাস খেলতে থাকে আর যেসব গাড়ির মালিক নিজেরা গাড়ি চালান তারা রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করে অন্যত্র চলে যান। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করে রাখা ট্রাফিক আইনের পরিপন্থী। আবাসিক এলাকায় এ রকম ভয়ানক যানজট পৃথিবীর অন্য কোথাও আছে বলে আমাদের জানা নেই। পৃথিবীর প্রায় ৩০টি দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলতে পারি যে যানজট সৃষ্টিতেও আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।
সম্প্রতি মেপেললিফ ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি স্কুলকে ধানম-ি আবাসিক এলাকা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য মহামান্য হাইকোর্ট রায় দিয়েছে, আর এই রায় বাস্তবায়নের জন্য তিন বছর সময় বেঁধে দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে। এখন দেখার বিষয় আমাদের রাজউক কি করে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও প্রখ্যাত আইনজীবী এ্যাডভোকেট মনজিল মুরশেদের সম্মানে প্রদত্ত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাননীয় সংসদ সদস্য ধানম-ি আবাসিক এলাকার যাবতীয় সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা সাংসদ মহোদয়ের আশ্বাসের ওপর আস্থা স্থাপন করতে চাই। এ্যাডভোকেট মনজিল মুরশেদ এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, হাইকোর্টের উল্লিখিত রায়ের পর এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিলে অন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা কেন্দ্রগুলোকে অনায়াসে এলাকা থেকে উচ্ছেদ করতে পারে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
হাইকোর্টের রায়ের পর ধানমণ্ডি ১১/এ সড়কে অবস্থিত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আগামী ৬ মাসের মধ্যে অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য নবগঠিত ধানমণ্ডি ১১/এ কল্যাণ সমিতি ইতোমধ্যেই পত্র মারফত অনুরোধ জানিয়েছে। পাশাপাশি স্কুলে আসা গাড়িগুলো যাতে রাস্তার দুই পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে না থেকে শিক্ষার্থী বালক-বালিকাদের নামিয়ে দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে স্থান ত্যাগ করার জন্য প্রতি দুই দিন পরপর মাইকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সড়কের বিশেষ বিশেষ স্থানে সমিতির উদ্দেশ্য বর্ণনা করে জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে কয়েকটি ব্যানার লাগানো হয়েছে। কিছুদিন পূর্বে বৃক্ষমেলা উপলক্ষে সমিতি ১১/এ রাস্তার উভয় পাশে ২৫টি বকুলগাছ লাগিয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পালন করে। এলাকার অন্য সকল সমিতিও অনুরূপ কর্মসূচী গ্রহণ করতে পারে। ধানম-ি আবাসিক এলাকার হারিয়ে যাওয়া আভিজাত্য-ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা সিটি করপোরেশন (দক্ষিণ), পুলিশ প্রশাসন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে সম্মিলিতভাবে একটি মাস্টার প্লান তৈরি করে তা বাস্তবায়নের জন্য বিনীত অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

ধানমণ্ডি, ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.