ঈদ অণুগল্প- ঈর্ষা
মায়ের ওপর খুব রাগ হচ্ছে। ভাতটা একটু গরম করে দিতে বললাম, মা বললেন নিজে করে নিতে। কি আশ্চর্য! আমি কি জীবনে ভাত গরম করেছি? আর এই ঠান্ডা কড়কড়া ভাত কি খাওয়া যায়? কখন যে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছি নিজেই টের পাইনি। পাশেই আপু শুয়েছিল। আমার ফোঁপানোর শব্দে চমকে উঠে গেল।
‘কিরে, কাঁদছিস কেন?’ আপুর আদরমাখা প্রশ্নে যেন ভেতরের অভিমানটা আরও বেগ পেয়ে গেল। কান্নাভেজা কণ্ঠে আপুকে কারণ বলতেই ও হেসে নিল এক চোট। ‘এই কথা? আমার ছোট বোনটা গরম ভাত খেতে না পেয়ে কাঁদছে একা বসে? দাঁড়া! আমি থাকতে তোর গরম ভাত খাওয়া কে ঠেকায় দেখি।’ রাত ১২টার দিকে আরামের ঘুম ছেড়ে উঠে আমার জন্য ভাত গরম করে দিল আপু, আর সেই ভাত খাওয়ার পরই আমার রাগটা পড়ে গেল, সঙ্গে কান্নাও!
আরেক দিনের ঘটনা। আবারও আমার রাগ মা নামের সেই মহিলাটির ওপর। দোষ তেমন কিছুই না। কোচিং শেষে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছি নতুন উদ্বোধন হওয়া মার্কেটটাতে। তাতেই মায়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। ‘এতটুকুন মেয়ে, সে কিনা ঢ্যাঙ ঢ্যাঙ করতে করতে বন্ধুদের সঙ্গে পাড়া মাতিয়ে এসেছে। এ বয়সেই এই অবস্থা, আরেকটু বড় হলে কী করবে? এই মেয়ে তো দেখি আমাদের মাথা না খেয়ে ক্ষান্ত দেবে না...’ আরও কত কী যে মা বলছিলেন! আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারলাম না আমি মায়ের মাথা খাব, এটা কীভাবে সম্ভব? মা যে কি, রেগে গেলে কোনো হুঁশই থাকে না। সেখানেও ত্রাণকর্তা হিসেবে আপুর আবির্ভাব। অনেক বুঝিয়েসুঝিয়ে ওই রগচটা মহিলাটির হাত থেকে আমাকে বাঁচিয়ে ঘরে নিয়ে এল। আমি ততক্ষণে আমার গল্পের ঝুলি খুলে বসেছি। আপুও মনোযোগী শ্রোতার মতো শুনছে।
ইশ্! আম্মুটা যদি আপুর মতো হতো! আর কিছুই চাওয়ার থাকত না আমার।
সামনেই ঈদ। মা-বাবার সঙ্গে আমরা গেলাম মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে। বেশ কয়েকটা দোকান ঘুরে আমার জন্য একটা লাল টুকটুকে জামা কেনা হলো। আমি তো ভীষণ খুশি। কখন যে বাসায় গিয়ে পরে দেখব, সে চিন্তাই করছিলাম।
এবার আপুর পালা। খুব বেশি সময় লাগল না ওর পছন্দের পোশাকটা বাছাই করতে। বাদ সাধল দামটা। দাম শুনে তো বাবার চক্ষু চড়ক গাছ! এত দাম হতে পারে একটা সালোয়ার-কামিজের! দামাদামি করার পরিশ্রমেও যেতে চাইলেন না তিনি। সেখান থেকে দ্রুতই বেরিয়ে এলাম আমরা।
রাত হওয়ায় সেদিনকার মতো বাসায় ফিরে আসি আমরা। আমার খুশি আর দেখে কে! সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ালাম আমার নতুন জামাটা পরে। মা বরাবরের মতো আমার আচরণে ত্যক্ত। আমার সেসব দেখার সময় কোথায়! নিজের জন্য এতটাই আনন্দে ছিলাম যে আপু ওর পছন্দের পোশাক কিনতে না পেরে যে আমার উচ্ছ্বাসে যোগ দিতে পারছে না, তা টেরই পেলাম না।
এর পরের ঘটনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। বাবা আপুর জন্য ওই পোশাকটা কিনে এনেছেন। আপুর উচ্ছ্বাসে এবার আমার অংশগ্রহণ ছিল না। বাবা দেখলাম মাকে বলছেন, ‘প্রতিবারই তো মেয়েটাকে কমের মধ্যে দেওয়া হয়। এবার না হয় একটু বাড়তি খরচ করলাম। মেয়েটা অন্তত খুশি তো হয়েছে।’ মাকেও দেখলাম বাবার কথায় সম্মতি দিচ্ছেন। আশ্চর্য তো!
ঈদের আগের রাত। ১২টা বা তারও বেশি বাজে। আমি অপেক্ষা করছি রাতটা কখন আরও একটু গভীর হবে। নার্ভাস লাগছে ভীষণ। কপালে হাত দিয়ে দেখলাম, সেখানে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। দেড়টা পর্যন্ত চুপচাপ শুয়ে রইলাম। এরপর বালিশের নিচ থেকে কাঁচিটা বের করলাম। ঘরের একচিলতে আলোতে কাঁচির ধারাল অংশটা ঝলসে উঠল। আমি কাঁচি হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে পা বাড়ালাম কাবার্ডের দিকে। যা এর আগে কখনো হয়নি, তা এবারও হবে না, আমি হতে দেব না।
নাদিরা মুসতারী
nmsmell@gmail.com
আরেক দিনের ঘটনা। আবারও আমার রাগ মা নামের সেই মহিলাটির ওপর। দোষ তেমন কিছুই না। কোচিং শেষে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছি নতুন উদ্বোধন হওয়া মার্কেটটাতে। তাতেই মায়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। ‘এতটুকুন মেয়ে, সে কিনা ঢ্যাঙ ঢ্যাঙ করতে করতে বন্ধুদের সঙ্গে পাড়া মাতিয়ে এসেছে। এ বয়সেই এই অবস্থা, আরেকটু বড় হলে কী করবে? এই মেয়ে তো দেখি আমাদের মাথা না খেয়ে ক্ষান্ত দেবে না...’ আরও কত কী যে মা বলছিলেন! আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারলাম না আমি মায়ের মাথা খাব, এটা কীভাবে সম্ভব? মা যে কি, রেগে গেলে কোনো হুঁশই থাকে না। সেখানেও ত্রাণকর্তা হিসেবে আপুর আবির্ভাব। অনেক বুঝিয়েসুঝিয়ে ওই রগচটা মহিলাটির হাত থেকে আমাকে বাঁচিয়ে ঘরে নিয়ে এল। আমি ততক্ষণে আমার গল্পের ঝুলি খুলে বসেছি। আপুও মনোযোগী শ্রোতার মতো শুনছে।
ইশ্! আম্মুটা যদি আপুর মতো হতো! আর কিছুই চাওয়ার থাকত না আমার।
সামনেই ঈদ। মা-বাবার সঙ্গে আমরা গেলাম মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে। বেশ কয়েকটা দোকান ঘুরে আমার জন্য একটা লাল টুকটুকে জামা কেনা হলো। আমি তো ভীষণ খুশি। কখন যে বাসায় গিয়ে পরে দেখব, সে চিন্তাই করছিলাম।
এবার আপুর পালা। খুব বেশি সময় লাগল না ওর পছন্দের পোশাকটা বাছাই করতে। বাদ সাধল দামটা। দাম শুনে তো বাবার চক্ষু চড়ক গাছ! এত দাম হতে পারে একটা সালোয়ার-কামিজের! দামাদামি করার পরিশ্রমেও যেতে চাইলেন না তিনি। সেখান থেকে দ্রুতই বেরিয়ে এলাম আমরা।
রাত হওয়ায় সেদিনকার মতো বাসায় ফিরে আসি আমরা। আমার খুশি আর দেখে কে! সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ালাম আমার নতুন জামাটা পরে। মা বরাবরের মতো আমার আচরণে ত্যক্ত। আমার সেসব দেখার সময় কোথায়! নিজের জন্য এতটাই আনন্দে ছিলাম যে আপু ওর পছন্দের পোশাক কিনতে না পেরে যে আমার উচ্ছ্বাসে যোগ দিতে পারছে না, তা টেরই পেলাম না।
এর পরের ঘটনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। বাবা আপুর জন্য ওই পোশাকটা কিনে এনেছেন। আপুর উচ্ছ্বাসে এবার আমার অংশগ্রহণ ছিল না। বাবা দেখলাম মাকে বলছেন, ‘প্রতিবারই তো মেয়েটাকে কমের মধ্যে দেওয়া হয়। এবার না হয় একটু বাড়তি খরচ করলাম। মেয়েটা অন্তত খুশি তো হয়েছে।’ মাকেও দেখলাম বাবার কথায় সম্মতি দিচ্ছেন। আশ্চর্য তো!
ঈদের আগের রাত। ১২টা বা তারও বেশি বাজে। আমি অপেক্ষা করছি রাতটা কখন আরও একটু গভীর হবে। নার্ভাস লাগছে ভীষণ। কপালে হাত দিয়ে দেখলাম, সেখানে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। দেড়টা পর্যন্ত চুপচাপ শুয়ে রইলাম। এরপর বালিশের নিচ থেকে কাঁচিটা বের করলাম। ঘরের একচিলতে আলোতে কাঁচির ধারাল অংশটা ঝলসে উঠল। আমি কাঁচি হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে পা বাড়ালাম কাবার্ডের দিকে। যা এর আগে কখনো হয়নি, তা এবারও হবে না, আমি হতে দেব না।
নাদিরা মুসতারী
nmsmell@gmail.com
No comments