লিবিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট ইসলামপন্থী মাগারিফ

লিবিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ মুয়াম্মার গাদ্দাফির আমলের বিরোধী নেতা মোহাম্মদ আল-মাগারিফকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে। পরিষদ ক্ষমতা নেওয়ার এক দিন পর গত বৃহস্পতিবার রাতে ভোটাভুটির মাধ্যমে তাঁকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। মাগারিফ মধ্য ইসলামপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত।


বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে লিবিয়ার অন্তর্বতীকালীন জাতীয় পরিষদ জেনারেল ন্যাশনাল কংগ্রেসের অধিবেশন বসে। গতকাল শুক্রবার ভোর রাত পর্যন্ত অধিবেশন চলে। ২০০ সদস্যের পরিষদে ১১৩-৮৫ ভোটে মাগারিফ স্বতন্ত্র প্রার্থী উদারপন্থী আলী জিদানকে পরাজিত করেন।
নতুন প্রেসিডেন্ট মাগারিফের নেতৃত্ব পরিষদ নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবে এবং আগামী বছর নাগাদ নতুন সংবিধান প্রণয়ন পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করবে। ৬০ সদস্যের একটি প্যানেলের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের পরই নির্বাচন হবে।
লিবিয়ার জাতীয় অন্তর্বর্তী পরিষদ (এনটিসি) গত বুধবার নবনির্বাচিত অন্তর্বর্তী জাতীয় পরিষদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়। চার দশক ধরে শক্ত হাতে দেশ পরিচালনাকারী গাদ্দাফি গত বছর বিদ্রোহীদের হাতে ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর এনটিসি দেশ পরিচালানার দায়িত্ব নিয়েছিল।
জাতীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট মাগারিফ একজন অর্থনীতিবিদ। তিনি যুক্তরাজ্য থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭০-এর দশকে তিনি গাদ্দাফি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। ১৯৮০ সালে তিনি গাদ্দাফির পক্ষ ত্যাগ করেন। তাঁর স্বৈরশাসনের বিরোধিতা করে নির্বাসিত ব্যক্তিদের সংগঠিত করে তিনি লিবিয়ান ন্যাশনাল সালভেশন ফ্রন্ট গঠন করেন।
মাগারিফের মেয়ে আসমা জানান, গাদ্দাফির গোয়েন্দারা মাগারিফকে ১৯৮১ সালে রোমে, ১৯৮৪ সালে কাসাব্লাঙ্কা এবং ১৯৮৫ সালে মাদ্রিদে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। দেশে থাকা তাঁর আত্মীয়-স্বজনেরাও জেল-জুলুমের শিকার হন।
মাগারিফ লিবিয়ার মুসলিম ব্রাদারহুডের ঘনিষ্ঠ মধ্য ইসলামপন্থী হিসেবে বিবেচিত। তবে তিনি তাঁর ন্যাশনাল ফ্রন্ট পার্টির (সাবেক লিবিয়ান ন্যাশনাল সালভেশন ফ্রন্ট) টিকিটে জয়ী হয়েছেন। ব্রাদারহুডের জাস্টিস অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন পার্টির (জেসিপি) একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাগারিফের জয় ‘ইসলামপন্থীদেরই বিজয়’। তবে পরিষদের একজন স্বতন্ত্র সদস্য বলেন, ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকেই মাগারিফকে ভোট দিয়েছেন সদস্যরা; ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়।
মাগারিফ ১৯৪০ সালে লিবিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বেনগাজিতে জন্ম নেন। গত বছর গাদ্দাফিবিরোধী আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল শহরটি। পরিষদ একই দিন দুজন ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার কথা ছিল। তবে একজন নির্বাচন করার পর অধিবেশন মুলতবি করা হয়। নবনির্বাচিত প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেন দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর মিসরাতার স্বতন্ত্র সদস্য জোম্মা আতিগা। এএফপি ও বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.