কিংবদন্তির গাজী কালু চম্পাবতী
কথিত আছে যাঁর কথায় বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খেত। যার অনুগত ছিল বনের বাঘ। পানির কুমির। সেই ইতিহাসখ্যাত গাজী, কালু, চম্পাবতী ঘুমিয়ে আছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারের কাছে বাদুরগাছা গ্রামে। ঘুরে আসুন সেখান থেকে।
কিংবদন্তির গাজী, কালু ও চম্পাবতী ঘুমিয়ে আছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বারোবাজারের অদূরে বাদুরগাছা গ্রামে। সেখানে আছে তাদের বাঁধাই করা কবর। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত হতে সেখানে বহু মানুষ আসেন কবরে মানত নিয়ে। তাদের কারও কারও মনের আশা পূরণ হয়। বছরে একবার বসে জলসা।
বাদুরগাছা গ্রামের পূর্বে বেড় দীঘি নামক একটি বড় জলাশয় আছে। ওই জলাশয়ের দক্ষিণ পাড়ে পাশাপাশি তিনটি কবর আছে। কবরগুলো হলো গাজী, কালু এবং চম্পাবতীর। বর্তমানে সেগুলোকে সংস্কার করে পলস্তারার ওপর নাম খোদাই করা হয়েছে। ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক এখানে করে দিয়েছেন ছাউনি। তিনটি কবরের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বড় কবরটিকে গাজী, পশ্চিমপাশের কবরটি কালুর এবং পূর্ব পাশের কবরটিকে চম্পাবতীর বলে ধারণা করা হয়। সেখানে ছাউনি দেয়ার পর অবশ্য তাই লেখা আছে। এছাড়া মাজার প্রাঙ্গণে রয়েছে আরও দুটি কবর। স্বাভাবিকের চেয়ে কবরগুলো লম্বা। তাদের নাম জানা যায়নি। মাজারের খাদেম জানান, এ দু’টি কবরও গাজীর অনুসারীদের। মারা গেলে তাদের এখানে কবর দেয়া হয়। এছাড়া খাদেম আরও জানান, গাজী, কালু ও চম্পাবতীর মাজারের পূর্ব পাশে মাটির নিচে রয়েছে প্রায় ৭ ফুট লম্বা আরেকটি নরকঙ্কাল। কিন্তু সেটির ওপর ইটের কোন গাঁথুনি তোলা হয়নি। মাটি খুঁড়তে গিয়ে সেটি পাওয়া যায় বেশ কয়েক বছর আগে।
কবরের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে আছে একটি পুরাতন বটগাছ। এলাকাবাসী জানান, তার নিচে রয়েছে একটি পাকা কূপ। অবশ্য গাছের গোড়ায়, মাটির নিচে কিছু প্রাচীন ইট ও ইটের ফাঁকে গুহার মতো একটি শূন্য স্থান নজরে পড়ে। এটি কূপ না আরও একটি পাকা কবরের গহবর তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।
ইতিহাসে গাজী কালু চম্পাবতী সম্পর্কে নানা ধরনের কথা শোনা যায়। শুধু বৃহত্তর যশোর নয়, সমগ্র বাংলায় তাদের সম্পর্কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের কিংবদন্তি। কবরের খাদেম বাবুল জানান, বিরাট নগরের রাজা ছিলেন সেকেন্দার শাহ। তাঁর প্রথম পুত্র জুলহাস শিকারে গিয়ে নিখোঁজ হন। তার দ্বিতীয় পুত্র গাজী এবং এছাড়া তাদের পালিতপুত্র ছিল কালু। রাজা গাজীকে তাঁর উত্তরাধিকার মনোনীত করতে চাইলে গাজী তা নিতে রাজি হননি। বরং কালুকে সাথে নিয়ে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে সুন্দরবনে উপস্থিত হন। সেখানে বাঘ, কুমির সবাই তাঁর বশীভূত হয়। পরে গাজী কালু উপস্থিত হলেন ছাপাইনগরে শ্রীরামরাজার দেশে। এ সময় রাজবাড়িতে আগুন লাগল, রানী হলেন অপহৃত, অবশেষে যে দেশে একজনও মুসলমান ছিলেন না গাজী কালুর কারণে সে দেশে সব মানুষ মুসলমান হয়ে নিস্তার পেলেন। ছাপাইনগরে তৈরি হলো সুন্দর মসজিদ। এরপর তারা দু’ ভাই গেলেন সোনাপুরে ও পরে ব্রহ্মননগরে রাজা মুকুট রায়ের দেশে। মুকুট রায়ের সাত পুত্র, এক কন্যা-নাম চম্পাবতী। মুকুট রায়ের কন্যার সাথে গাজীর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কালু রাজদরবারে গেলে তাকে আটকে রাখা হয়। ফলে গাজী অসংখ্য বাঘ ও সৈন্য নিয়ে মুকুট রায়ের দরবার আক্রমণ করলেন। মুকুট রায়ের বলশালী সেনাপতি দক্ষিণ রায় আক্রমণ করলেন কুমির নিয়ে। কিন্তু পরাজিত হলেন। গাজী তার কান কেটে ১২ হাত লম্বা টিকি কেটে বেঁধে রাখলেন। এরপর মুকুট রায় সরাসরি যুদ্ধে নেমে পড়লেন। প্রতি রাতে মুকুট রায় তাঁর ‘মৃত্যুজীব কূপ’ হতে জল ছিটিয়ে হাতি, ঘোড়া, লোকজন বাঁচিয়ে দিতেন। গাজী গরু মেরে তার রক্ত ওই কূপের মধ্যে দিলে মুকুট রায়ের শক্তি নষ্ট হলো। যুদ্ধে পরাজিত হলেন তিনি। বিয়ে হলো গাজীর সাথে চম্পাবতীর। পরে গাজী, কালু ও চম্পাবতীকে সাথে নিয়ে গেলেন বিরাটনগরে।
বারোবাজার থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার পূর্বে গেলে একটি বড় দীঘি দেখতে পাওয়া যায়। স্থানীয় মানুষ তাকে শ্রীরাম রাজার দীঘি বলে থাকে। ওই দীঘির দক্ষিণ ও বাদুরগাছার পশ্চিমাংশকে পূর্বে ছাপাইনগর বলে মানুষ জানে। এখন ছাপাইনগর বাদুরগাছার মৌজার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সেখানে এখনও আছে শ্রীরাম রাজার গড়বেষ্টিত বাড়ি।
যাইহোক, এখনও প্রতিদিন বহু মানুষ আসেন গাজী, কালু ও চম্পাবতীর মাজারে। নিজেদের রোগ মুক্তির আশায় বট গাছে বেঁধে রেখে যান এক টুকরা ইট। রোগ উপশম হলে তারপর খুলে রেখে যান সেই ইট। সেদিন সেখানে গিয়ে দেখা মেলে শতাধিক ইটের টুকরা বাঁধা রয়েছে ওই বট গাছে। প্রতি চৈত্র মাসে বসে সেখানে জলসা। জলসা উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসেন তার ভক্তকুল। বারোবাজার থেকে মাজার পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে পাকা সড়ক। নির্জন সুন্দর পরিবেশ উপভোগ করা যায় সেখানে গেলে। অন্য ১০টি মাজারের চেয়ে ভিন্ন গাজী, কালু ও চম্পাবতীর মাজার। যে কোন দিন তাই বেড়িয়ে আসতে পারেন বাদুরগাছা গ্রামে।
-সাজেদ রহমান, যশোর
বাদুরগাছা গ্রামের পূর্বে বেড় দীঘি নামক একটি বড় জলাশয় আছে। ওই জলাশয়ের দক্ষিণ পাড়ে পাশাপাশি তিনটি কবর আছে। কবরগুলো হলো গাজী, কালু এবং চম্পাবতীর। বর্তমানে সেগুলোকে সংস্কার করে পলস্তারার ওপর নাম খোদাই করা হয়েছে। ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক এখানে করে দিয়েছেন ছাউনি। তিনটি কবরের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বড় কবরটিকে গাজী, পশ্চিমপাশের কবরটি কালুর এবং পূর্ব পাশের কবরটিকে চম্পাবতীর বলে ধারণা করা হয়। সেখানে ছাউনি দেয়ার পর অবশ্য তাই লেখা আছে। এছাড়া মাজার প্রাঙ্গণে রয়েছে আরও দুটি কবর। স্বাভাবিকের চেয়ে কবরগুলো লম্বা। তাদের নাম জানা যায়নি। মাজারের খাদেম জানান, এ দু’টি কবরও গাজীর অনুসারীদের। মারা গেলে তাদের এখানে কবর দেয়া হয়। এছাড়া খাদেম আরও জানান, গাজী, কালু ও চম্পাবতীর মাজারের পূর্ব পাশে মাটির নিচে রয়েছে প্রায় ৭ ফুট লম্বা আরেকটি নরকঙ্কাল। কিন্তু সেটির ওপর ইটের কোন গাঁথুনি তোলা হয়নি। মাটি খুঁড়তে গিয়ে সেটি পাওয়া যায় বেশ কয়েক বছর আগে।
কবরের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে আছে একটি পুরাতন বটগাছ। এলাকাবাসী জানান, তার নিচে রয়েছে একটি পাকা কূপ। অবশ্য গাছের গোড়ায়, মাটির নিচে কিছু প্রাচীন ইট ও ইটের ফাঁকে গুহার মতো একটি শূন্য স্থান নজরে পড়ে। এটি কূপ না আরও একটি পাকা কবরের গহবর তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।
ইতিহাসে গাজী কালু চম্পাবতী সম্পর্কে নানা ধরনের কথা শোনা যায়। শুধু বৃহত্তর যশোর নয়, সমগ্র বাংলায় তাদের সম্পর্কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের কিংবদন্তি। কবরের খাদেম বাবুল জানান, বিরাট নগরের রাজা ছিলেন সেকেন্দার শাহ। তাঁর প্রথম পুত্র জুলহাস শিকারে গিয়ে নিখোঁজ হন। তার দ্বিতীয় পুত্র গাজী এবং এছাড়া তাদের পালিতপুত্র ছিল কালু। রাজা গাজীকে তাঁর উত্তরাধিকার মনোনীত করতে চাইলে গাজী তা নিতে রাজি হননি। বরং কালুকে সাথে নিয়ে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে সুন্দরবনে উপস্থিত হন। সেখানে বাঘ, কুমির সবাই তাঁর বশীভূত হয়। পরে গাজী কালু উপস্থিত হলেন ছাপাইনগরে শ্রীরামরাজার দেশে। এ সময় রাজবাড়িতে আগুন লাগল, রানী হলেন অপহৃত, অবশেষে যে দেশে একজনও মুসলমান ছিলেন না গাজী কালুর কারণে সে দেশে সব মানুষ মুসলমান হয়ে নিস্তার পেলেন। ছাপাইনগরে তৈরি হলো সুন্দর মসজিদ। এরপর তারা দু’ ভাই গেলেন সোনাপুরে ও পরে ব্রহ্মননগরে রাজা মুকুট রায়ের দেশে। মুকুট রায়ের সাত পুত্র, এক কন্যা-নাম চম্পাবতী। মুকুট রায়ের কন্যার সাথে গাজীর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কালু রাজদরবারে গেলে তাকে আটকে রাখা হয়। ফলে গাজী অসংখ্য বাঘ ও সৈন্য নিয়ে মুকুট রায়ের দরবার আক্রমণ করলেন। মুকুট রায়ের বলশালী সেনাপতি দক্ষিণ রায় আক্রমণ করলেন কুমির নিয়ে। কিন্তু পরাজিত হলেন। গাজী তার কান কেটে ১২ হাত লম্বা টিকি কেটে বেঁধে রাখলেন। এরপর মুকুট রায় সরাসরি যুদ্ধে নেমে পড়লেন। প্রতি রাতে মুকুট রায় তাঁর ‘মৃত্যুজীব কূপ’ হতে জল ছিটিয়ে হাতি, ঘোড়া, লোকজন বাঁচিয়ে দিতেন। গাজী গরু মেরে তার রক্ত ওই কূপের মধ্যে দিলে মুকুট রায়ের শক্তি নষ্ট হলো। যুদ্ধে পরাজিত হলেন তিনি। বিয়ে হলো গাজীর সাথে চম্পাবতীর। পরে গাজী, কালু ও চম্পাবতীকে সাথে নিয়ে গেলেন বিরাটনগরে।
বারোবাজার থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার পূর্বে গেলে একটি বড় দীঘি দেখতে পাওয়া যায়। স্থানীয় মানুষ তাকে শ্রীরাম রাজার দীঘি বলে থাকে। ওই দীঘির দক্ষিণ ও বাদুরগাছার পশ্চিমাংশকে পূর্বে ছাপাইনগর বলে মানুষ জানে। এখন ছাপাইনগর বাদুরগাছার মৌজার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সেখানে এখনও আছে শ্রীরাম রাজার গড়বেষ্টিত বাড়ি।
যাইহোক, এখনও প্রতিদিন বহু মানুষ আসেন গাজী, কালু ও চম্পাবতীর মাজারে। নিজেদের রোগ মুক্তির আশায় বট গাছে বেঁধে রেখে যান এক টুকরা ইট। রোগ উপশম হলে তারপর খুলে রেখে যান সেই ইট। সেদিন সেখানে গিয়ে দেখা মেলে শতাধিক ইটের টুকরা বাঁধা রয়েছে ওই বট গাছে। প্রতি চৈত্র মাসে বসে সেখানে জলসা। জলসা উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসেন তার ভক্তকুল। বারোবাজার থেকে মাজার পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে পাকা সড়ক। নির্জন সুন্দর পরিবেশ উপভোগ করা যায় সেখানে গেলে। অন্য ১০টি মাজারের চেয়ে ভিন্ন গাজী, কালু ও চম্পাবতীর মাজার। যে কোন দিন তাই বেড়িয়ে আসতে পারেন বাদুরগাছা গ্রামে।
-সাজেদ রহমান, যশোর
No comments