সদরে অন্দরে-কে লাগাবে তালা সবখানে by মোস্তফা হোসেইন
ঈদের আগে চাঁদাবাজি নেই, সন্ত্রাসের অভিযোগও নেই তেমন একটা। আর নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা যদি বলেন, তাহলে মানতে হবে, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক ভালো। কথাগুলো কল্পনায় নয়। সরকারের উচ্চ মহলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির মুখ থেকে উচ্চারিত।
বলেছেন জননিরাপত্তা বিধানে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। গত বুধবার তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্পষ্ট বলেন, 'শুধু রাস্তাঘাটের বেহাল দশা ছাড়া দেশে অন্য কোনো সমস্যা নেই। যেকোনো সময়ের চেয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে। ঈদের বাজারে এখনো কোনো চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি।'
পত্রিকায় প্রকাশিত এই সংবাদটি সিনিয়র সাংবাদিকের টেবিলে বসে পড়তে গিয়ে হোঁচট খেতে হলো। দৃষ্টি গেল পত্রিকার পাতা থেকে সাংবাদিকের দিকে। মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে মন চাইল, মন্ত্রী কি সত্য বলছেন?
দুর্ভাগ্যজনক ও আতঙ্কিত একটি দৃশ্য যেন এখনো সেই সাংবাদিকের মুখে ফুটে আছে। মাত্র চার দিন আগের ঘটনা। ইফতারের পর তিনি গিয়েছিলেন মগবাজারে। বাসায় ফেরার পথে কয়েক যুবক তাঁর পথ আগলে ধরে। দিয়ে দাও যা আছে। আঘাতও হানে দুর্বৃত্তরা। ছিনিয়ে নিয়ে যায় নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন। কী বলব এ ঘটনাকে? ছিনিয়ে নেওয়াকে কি তাহলে ছিনতাই না বলে অন্য নামে অভিহিত করতে হবে? বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও হয়তো তেমন কথা ছিল না। গোটা বাংলাদেশই যে এখন মগবাজার হয়ে গেছে। যখন যেখানে সুবিধা সেখানেই ঘটছে এভাবে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা। এই তো শুক্রবারই সংবাদ হলেন মাহমুদুল হাসান চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি। বাংলা একাডেমীর সামনে বিকেলে তাঁকে দুর্বৃত্তরা ছুরিকাঘাত করে। ছিনিয়ে নিয়ে যায় লক্ষাধিক টাকা। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে চৌধুরীর প্রাণত্যাগ করার পরও পুলিশকে বলতে শোনা যায়, ঘটনাটি পূর্বশত্রুতার জের ধরে ঘটতে পারে। শত্রুতার কারণে হোক আর ছিনতাই হোক, মাহমুদুল হাসান চৌধুরীর স্বজনদের কাছে আলাদা ফল বয়ে আনবে কি? শত্রুতার জের ধরে মৃত্যু হলেও যেমন মৃত্যু, ছিনতাইকারীর আঘাতে মৃত্যু হলেও তো মৃত্যুই।
ডাকাতি-চুরি যদি না হতো, যদি বিচ্ছিন্ন দু-একটি ছিনতাই ঘটনা দেখেই নিবৃত্ত থাকতে হতো, তাহলে হয়তো মাননীয় মন্ত্রীর বক্তব্য আমাদের আশ্বস্ত করতে পারত। হয়তো তাঁর দাবি অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে- এই বক্তব্য কষ্ট করে হলেও হজম করার চেষ্টা করা যেত। মনে করা যেত মন্ত্রীর পরামর্শ- 'নিজ দায়িত্বে ঘরে তালা দিয়ে বাড়ি যাবেন' মানলে আমাদের নিরাপত্তা বিষয়ে আর উদ্বিগ্ন হতে হবে না। কিন্তু সে মুহূর্তে দেখা যায় তালা ভেঙে ডাকাতদল ঘরে ঢোকে, সর্বস্ব নিয়ে সটকে পড়ে। তখন কি তালা দেওয়ার পরামর্শকে নিরাপদ মন্ত্র বলে মনে হতে পারে? ঈদের আগে সাধারণ সময়েই তালা ভাঙার উদাহরণ একটি-দুটি নয়, অসংখ্য পাওয়া যাবে এই ঢাকা শহরে। এমন ঘটনার দু-একটি মাত্র পত্রিকান্তরে প্রকাশ পায়। দু-একটির জন্য থানা পর্যন্ত জিডি হতে দেখা যায়। ফলে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে তথ্য জানা সত্যিই কঠিন। তালা ভাঙার এই পরামর্শ শুনে মনে হতে পারে, খালি ঘরই বুঝি চোর-ডাকাতদের লক্ষ্যবস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন, দেশে কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে না। অবাক হয়ে যাই যখন সংবাদে পড়ি, মাত্র ৩০ দিনেই ট্রেনে ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের হাতে ৪৭ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে। কী দুর্বিষহ চিত্র! তার পরও আমাদের মেনে নিতে হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। মাননীয় মন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী ছিনতাই কিংবা ডাকাতির কোনো ঘটনা ঘটে না দেশে।
সন্ত্রাসী শব্দের প্রচলিত অর্থ যদি বদলে দেওয়া যেত, তাহলে বোধ করি মন্ত্রীর বক্তব্যকে মধুর মনে হতো। মন্ত্রী মহোদয় যদি শেওড়াপাড়ার নুরুল ইসলামের নিকটজনদের কাছে ডাকতেন, তাহলে জানতেন মাত্র দুই লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ার কারণে একটি বুলেট তাঁর দেহ বিদীর্ণ করে দিয়েছে। বাড্ডার কবির হোসেনের কথা কি ভুলে গেছে পাঠক? গুলি ছুড়ে আহত করে চাঁদা না দেওয়ায়।
কথা হচ্ছিল ঈদের বাজার নিয়ে। সংগত কারণেই ঈদে বাড়ি ফেরার প্রসঙ্গ এসে যায়। নিরাপদে বাড়ি যেতে পারবে তো মানুষ? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী মহাসড়কে বেহাল দশা বিরাজ করছে (যদিও যোগাযোগমন্ত্রীর ভাষ্যে সড়কের বেহাল অবস্থা নেই)। বেহাল হওয়ার কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেই প্রসঙ্গটি তাই অনালোচিত থেকে যাক। কিন্তু দুর্ঘটনা এড়িয়েও কি নিরাপদে মানুষ বাড়ি যেতে পারবে? এমন সন্দেহ জাগে যখন দেখা যায় পথে পথে চাঁদাবাজরা গাড়ি থামায়। সেই চাঁদাবাজদের চেয়েও বড় চাঁদাবাজ মনে হতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চাঁদাবাজিকে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, মহাসড়কের জায়গায় জায়গায় তল্লাশির নামে গাড়ি থামানো হয়। গাড়ি থামিয়ে চেক করে ছেড়ে দিলে হয়তো মনে করা যেত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একান্তই নিরাপত্তা রক্ষার্থে এ কাজটি করছে। বাস্তবতা ভিন্ন, নিছক উছিলা এটি। পেছনে কাজ করছে অনৈতিক, বেআইনি ও অপরাধমূলক ইচ্ছা। তারা চালকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে। পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেসব ঘটনা। এর পরও কি আমাদের মেনে নিতে হবে দেশে কোনো ছিনতাই, চাঁদাবাজি হচ্ছে না? এবং সড়ক-মহাসড়কগুলো মেরামত শেষে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমিয়ে দিয়েছে।
টেন্ডারবাজির কথা এখানে আলোচনায় আসছে না। কিন্তু চাঁদাবাজি আর সন্ত্রাসীর ক্ষেত্রে যে নিকট অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে, তা বোধ করি সব মানুষই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করবে। তবে এটা ঠিক, নাগরিকের কাছে অতীতের দুরবস্থা যেমন দুর্বিষহ ছিল, তেমনি এখনকার অস্বাভাবিক পরিস্থিতিও মেনে নেওয়ার মতো নয়। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ দেশের বিশিষ্টজন, বিশেষ করে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কাছ থেকে এমন কোনো বক্তব্য আশা করে না, যা তাদের কষ্টকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
এই চাঁদাবাজির দায় সরকার এড়িয়ে যেতে পারে না। সর্বশেষ একটি চিত্র মানুষকে হতবাক করে দিতে পারে। ফেরিঘাটগুলোয় দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় শাসকদলের কীর্তিমান (!) পুরুষেরা লাঠি হাতে দাঁড়াত গাড়ির সামনে। সেখানে চাঁদার ভাগটা চলে আসত তাদের পকেটে। সম্প্রতি সেসব স্থানে চাঁদাবাজদের চাঁদাবাজিকে জায়েজ করার জন্য ক্ষমতাসীন একজন মন্তব্য করেছেন, এখন থেকে চাঁদাবাজি নয়, সেসব আদায়কারী আইনসংগতভাবেই চাঁদা আদায় করতে পারবে। নাম দেওয়া হবে সার্ভিস চার্জ। কী মজার আবদার! একবার ফেরি পাড়ি দিতে গিয়ে ব্যয় করতে হবে ২০ টাকা। এরপর আবার সরকারি দলের কীর্তিমানদের হাতে তুলে দিতে হবে কষ্টার্জিত অর্থ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তালা লাগানোর জন্য। এতে নিরাপদ থাকা যাবে। কিন্তু তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী ঘরে তালা লাগালেই কি নিরাপদে থাকা যাবে? ট্রেনের ছাদে, রাস্তায়, বাজারে কোন জায়গাটা আছে যেখানে মানুষ কিছুটা নিরাপদ মনে করতে পারে? সবখানেই তো খুন হচ্ছে মানুষ, ছিনতাই হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ঘরে তালা লাগিয়েই মানুষ বাড়ি যায়। কিন্তু রাস্তাঘাট আর হাটবাজার এসব স্থানে তালা লাগাবে কে?
তবে আমাদের প্রত্যাশা- ১৬ কোটি মানুষের ঘরে ঘরে তালা লাগানোর চেয়ে গুটিকয়েক ছিনতাইকারী, ডাকাতের ঘরে তালা লাগানোর কাজটি করুক সরকার। এটাই সহজ। আর এ কাজটি করার দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের।
mhussain_71@yahoo.com
পত্রিকায় প্রকাশিত এই সংবাদটি সিনিয়র সাংবাদিকের টেবিলে বসে পড়তে গিয়ে হোঁচট খেতে হলো। দৃষ্টি গেল পত্রিকার পাতা থেকে সাংবাদিকের দিকে। মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে মন চাইল, মন্ত্রী কি সত্য বলছেন?
দুর্ভাগ্যজনক ও আতঙ্কিত একটি দৃশ্য যেন এখনো সেই সাংবাদিকের মুখে ফুটে আছে। মাত্র চার দিন আগের ঘটনা। ইফতারের পর তিনি গিয়েছিলেন মগবাজারে। বাসায় ফেরার পথে কয়েক যুবক তাঁর পথ আগলে ধরে। দিয়ে দাও যা আছে। আঘাতও হানে দুর্বৃত্তরা। ছিনিয়ে নিয়ে যায় নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন। কী বলব এ ঘটনাকে? ছিনিয়ে নেওয়াকে কি তাহলে ছিনতাই না বলে অন্য নামে অভিহিত করতে হবে? বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও হয়তো তেমন কথা ছিল না। গোটা বাংলাদেশই যে এখন মগবাজার হয়ে গেছে। যখন যেখানে সুবিধা সেখানেই ঘটছে এভাবে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা। এই তো শুক্রবারই সংবাদ হলেন মাহমুদুল হাসান চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি। বাংলা একাডেমীর সামনে বিকেলে তাঁকে দুর্বৃত্তরা ছুরিকাঘাত করে। ছিনিয়ে নিয়ে যায় লক্ষাধিক টাকা। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে চৌধুরীর প্রাণত্যাগ করার পরও পুলিশকে বলতে শোনা যায়, ঘটনাটি পূর্বশত্রুতার জের ধরে ঘটতে পারে। শত্রুতার কারণে হোক আর ছিনতাই হোক, মাহমুদুল হাসান চৌধুরীর স্বজনদের কাছে আলাদা ফল বয়ে আনবে কি? শত্রুতার জের ধরে মৃত্যু হলেও যেমন মৃত্যু, ছিনতাইকারীর আঘাতে মৃত্যু হলেও তো মৃত্যুই।
ডাকাতি-চুরি যদি না হতো, যদি বিচ্ছিন্ন দু-একটি ছিনতাই ঘটনা দেখেই নিবৃত্ত থাকতে হতো, তাহলে হয়তো মাননীয় মন্ত্রীর বক্তব্য আমাদের আশ্বস্ত করতে পারত। হয়তো তাঁর দাবি অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে- এই বক্তব্য কষ্ট করে হলেও হজম করার চেষ্টা করা যেত। মনে করা যেত মন্ত্রীর পরামর্শ- 'নিজ দায়িত্বে ঘরে তালা দিয়ে বাড়ি যাবেন' মানলে আমাদের নিরাপত্তা বিষয়ে আর উদ্বিগ্ন হতে হবে না। কিন্তু সে মুহূর্তে দেখা যায় তালা ভেঙে ডাকাতদল ঘরে ঢোকে, সর্বস্ব নিয়ে সটকে পড়ে। তখন কি তালা দেওয়ার পরামর্শকে নিরাপদ মন্ত্র বলে মনে হতে পারে? ঈদের আগে সাধারণ সময়েই তালা ভাঙার উদাহরণ একটি-দুটি নয়, অসংখ্য পাওয়া যাবে এই ঢাকা শহরে। এমন ঘটনার দু-একটি মাত্র পত্রিকান্তরে প্রকাশ পায়। দু-একটির জন্য থানা পর্যন্ত জিডি হতে দেখা যায়। ফলে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে তথ্য জানা সত্যিই কঠিন। তালা ভাঙার এই পরামর্শ শুনে মনে হতে পারে, খালি ঘরই বুঝি চোর-ডাকাতদের লক্ষ্যবস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন, দেশে কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে না। অবাক হয়ে যাই যখন সংবাদে পড়ি, মাত্র ৩০ দিনেই ট্রেনে ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের হাতে ৪৭ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে। কী দুর্বিষহ চিত্র! তার পরও আমাদের মেনে নিতে হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। মাননীয় মন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী ছিনতাই কিংবা ডাকাতির কোনো ঘটনা ঘটে না দেশে।
সন্ত্রাসী শব্দের প্রচলিত অর্থ যদি বদলে দেওয়া যেত, তাহলে বোধ করি মন্ত্রীর বক্তব্যকে মধুর মনে হতো। মন্ত্রী মহোদয় যদি শেওড়াপাড়ার নুরুল ইসলামের নিকটজনদের কাছে ডাকতেন, তাহলে জানতেন মাত্র দুই লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ার কারণে একটি বুলেট তাঁর দেহ বিদীর্ণ করে দিয়েছে। বাড্ডার কবির হোসেনের কথা কি ভুলে গেছে পাঠক? গুলি ছুড়ে আহত করে চাঁদা না দেওয়ায়।
কথা হচ্ছিল ঈদের বাজার নিয়ে। সংগত কারণেই ঈদে বাড়ি ফেরার প্রসঙ্গ এসে যায়। নিরাপদে বাড়ি যেতে পারবে তো মানুষ? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী মহাসড়কে বেহাল দশা বিরাজ করছে (যদিও যোগাযোগমন্ত্রীর ভাষ্যে সড়কের বেহাল অবস্থা নেই)। বেহাল হওয়ার কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেই প্রসঙ্গটি তাই অনালোচিত থেকে যাক। কিন্তু দুর্ঘটনা এড়িয়েও কি নিরাপদে মানুষ বাড়ি যেতে পারবে? এমন সন্দেহ জাগে যখন দেখা যায় পথে পথে চাঁদাবাজরা গাড়ি থামায়। সেই চাঁদাবাজদের চেয়েও বড় চাঁদাবাজ মনে হতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চাঁদাবাজিকে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, মহাসড়কের জায়গায় জায়গায় তল্লাশির নামে গাড়ি থামানো হয়। গাড়ি থামিয়ে চেক করে ছেড়ে দিলে হয়তো মনে করা যেত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একান্তই নিরাপত্তা রক্ষার্থে এ কাজটি করছে। বাস্তবতা ভিন্ন, নিছক উছিলা এটি। পেছনে কাজ করছে অনৈতিক, বেআইনি ও অপরাধমূলক ইচ্ছা। তারা চালকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে। পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেসব ঘটনা। এর পরও কি আমাদের মেনে নিতে হবে দেশে কোনো ছিনতাই, চাঁদাবাজি হচ্ছে না? এবং সড়ক-মহাসড়কগুলো মেরামত শেষে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমিয়ে দিয়েছে।
টেন্ডারবাজির কথা এখানে আলোচনায় আসছে না। কিন্তু চাঁদাবাজি আর সন্ত্রাসীর ক্ষেত্রে যে নিকট অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে, তা বোধ করি সব মানুষই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করবে। তবে এটা ঠিক, নাগরিকের কাছে অতীতের দুরবস্থা যেমন দুর্বিষহ ছিল, তেমনি এখনকার অস্বাভাবিক পরিস্থিতিও মেনে নেওয়ার মতো নয়। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ দেশের বিশিষ্টজন, বিশেষ করে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কাছ থেকে এমন কোনো বক্তব্য আশা করে না, যা তাদের কষ্টকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
এই চাঁদাবাজির দায় সরকার এড়িয়ে যেতে পারে না। সর্বশেষ একটি চিত্র মানুষকে হতবাক করে দিতে পারে। ফেরিঘাটগুলোয় দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় শাসকদলের কীর্তিমান (!) পুরুষেরা লাঠি হাতে দাঁড়াত গাড়ির সামনে। সেখানে চাঁদার ভাগটা চলে আসত তাদের পকেটে। সম্প্রতি সেসব স্থানে চাঁদাবাজদের চাঁদাবাজিকে জায়েজ করার জন্য ক্ষমতাসীন একজন মন্তব্য করেছেন, এখন থেকে চাঁদাবাজি নয়, সেসব আদায়কারী আইনসংগতভাবেই চাঁদা আদায় করতে পারবে। নাম দেওয়া হবে সার্ভিস চার্জ। কী মজার আবদার! একবার ফেরি পাড়ি দিতে গিয়ে ব্যয় করতে হবে ২০ টাকা। এরপর আবার সরকারি দলের কীর্তিমানদের হাতে তুলে দিতে হবে কষ্টার্জিত অর্থ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তালা লাগানোর জন্য। এতে নিরাপদ থাকা যাবে। কিন্তু তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী ঘরে তালা লাগালেই কি নিরাপদে থাকা যাবে? ট্রেনের ছাদে, রাস্তায়, বাজারে কোন জায়গাটা আছে যেখানে মানুষ কিছুটা নিরাপদ মনে করতে পারে? সবখানেই তো খুন হচ্ছে মানুষ, ছিনতাই হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ঘরে তালা লাগিয়েই মানুষ বাড়ি যায়। কিন্তু রাস্তাঘাট আর হাটবাজার এসব স্থানে তালা লাগাবে কে?
তবে আমাদের প্রত্যাশা- ১৬ কোটি মানুষের ঘরে ঘরে তালা লাগানোর চেয়ে গুটিকয়েক ছিনতাইকারী, ডাকাতের ঘরে তালা লাগানোর কাজটি করুক সরকার। এটাই সহজ। আর এ কাজটি করার দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের।
mhussain_71@yahoo.com
No comments