মোবাইল ফোনে ভিক্ষা!

গাইবান্ধা সদর উপজেলা খোলাহাটী ইউনিয়নের মাঠ বাজার এলাকার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক সাইদুর রহমান। মোবাইল যার ভিক্ষাবৃত্তির অন্যতম উপজীব্য। দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা এই অদম্য উৎসাহী মানুষটির স্বাভাবিক জীবনযাপন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারেনি।


ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেও তার সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার কাক্সিক্ষত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলেছেন।
জন্ম থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাইদুর রহমান বিয়ে করেছেন একই গ্রামের ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া জানা একজন স্বাভাবিক মানুষ নুরজাহান বেগমকে। এখন তার দুটি সন্তান, একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। মেয়েটি এখন স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণীতে পড়ালেখা করছে। আর ছেলেটির বয়স আড়াই বছর। প্রতিদিন ভিক্ষা থেকে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত সে আয় করতে পারে। রমজান মাসে তার গড় আয়ের পরিমাণ প্রতিদিন সর্বনিম্ন প্রায় ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। এ আয় দিয়েই সে নিজের পরিবার পরিজনকে প্রতিপালন করার পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে আত্মনির্ভর করে গড়ে তুলতে চান।
সাইদুর রহমানের একটি মাত্র স্বপ্নÑ তার ছেলে লেখাপড়া শিখে চাকরি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করবে। সে চায় না ছেলে মেয়েরা এই ভিক্ষাবৃত্তি পেশাকে আঁকড়ে ধরে থাকুক। সে জানায় তার এই গ্রামীণ সিম (০১৭১৩-৭৬৭২০৩) নোকিয়া ১২০৮ মডেল মোবাইলটি ভিক্ষাবৃত্তিতে যথেষ্ট সহায়তা করে থাকে। মৃত্যুবার্ষিকী, আকিকা, মজলিশ, ফেতরা, যাকাত, ছদ্কা ইত্যাদি প্রদানের ক্ষেত্রে উচ্চবিত্তের মানুষরা তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তাকে সংবাদ দিয়ে থাকে। যার মাধ্যমে তার আয় বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়।
গাইবান্ধা প্রেসক্লাব চত্বর সংলগ্ন চায়ের দোকানসহ কয়েকটি বিশেষ দোকানে সে নিয়মিতই চা নাস্তা খেতে আসে। এসব জায়গায় তার মোবাইল নম্বরটি দেয়া আছে। যাতে প্রয়োজনে যে কেউ ভিক্ষুকদের প্রয়োজন হলে তাকে জানাতে পারে। তার সাথে প্রায় ৭ থেকে ১০ জন ভিক্ষুকের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা আছে। প্রয়োজনে সে সবাইকে খবর দিয়ে কোন একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে।
সাইদুর রহমান প্রতিবন্ধী হলেও যথেষ্ট উন্নতি মনস্ক চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী। সে বলে ইসলাম ধর্ম ভিক্ষাবৃত্তি সমর্থন করে না। কিন্তু যেহেতু সে জন্ম থেকে অন্ধ সে কারণে এই পেশাটিকে পছন্দ না হলেও জীবন জীবিকার তাগিদে সঙ্গত কারণেই তাকে এটিই আঁকড়ে ধরে থাকতে হচ্ছে।
-আবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা

No comments

Powered by Blogger.