পণ্যস্বত্ব হারাচ্ছে বাংলাদেশ-অধিকার নিশ্চিত করা হোক
কোনো দেশ বা অঞ্চলের কিছু পণ্য সেই দেশ বা অঞ্চলের ঐতিহ্যগত সম্পদ হিসেবেই গণ্য হয়। বাংলাদেশেরও এ রকম অনেক পণ্য রয়েছে। এগুলোর স্বত্ব ও স্বীকৃতি আদায়ে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় তালিকাভুক্তির রেওয়াজ আছে। সেই তালিকাভুক্তি কঠিন কিছু নয়। অথচ অতি সাধারণ এই কাজটি করতে বাংলাদেশ চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
ফলে বাংলাদেশ তার ঐতিহ্যবাহী বেশ কিছু পণ্যের স্বত্ব হারিয়েছে, যার মধ্যে জামদানি, নিমগাছ ও ফজলি আমের কথা সবার আগে চলে আসে। নকশিকাঁথা আমাদের বাংলাদেশের গর্ব। সেটুকুও আমরা ধরে রাখতে পারছি না। এই নকশিকাঁথার স্বত্বও চলে যাচ্ছে ভারতের হাতে। এ যেন প্যাঁচা সাজতে সাজতে ফিঙ্গে রাজা হয়ে যাওয়ার গল্পের মতোই মনে হয়। এর জন্য যে রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োজন, তা-ই শেষ করতে পারেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আইনি প্রস্তুতি নিতে নিতেই বাংলাদেশের বেশ কিছু নিজস্ব পণ্যের স্বত্ব নিয়ে গেছে ভারত। ফলে এখন এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে গেলেও রয়্যালিটি দিতে হবে ভারতকে। তাই স্বত্ব হারানোর কারণে শুধু ঐতিহ্যগতভাবেই নয়, আর্থিকভাবেও বাংলাদেশকে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। অথচ বহু আগে থেকেই এ বিষয়টি অনুভূত হয়ে আসছিল। বরং ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় 'ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সংরক্ষণ) অধ্যাদেশ-২০০৮' প্রণয়ন করে তার মাধ্যমে তিনটি মৎস্য পণ্য, ১২টি ফল, ১১টি প্রক্রিয়াজাত খাবার, আটটি শাকসবজি, ১৪টি কৃষিজাত পণ্যসহ মোট ৪৮টি খাদ্যপণ্য এবং খাদ্য বাদে ১৮টি পণ্যকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তাতে জামদানি শাড়ি, ফজলি আম ও নকশিকাঁথার কথাও উল্লেখ ছিল। আমাদের দুর্ভাগ্য, একটি অনির্বাচিত ও স্বল্পকালীন সরকার ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করলেও নির্বাচিত সরকার সেগুলোর স্বত্ব লাভের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেনি। ফলে চার বছরেও সেই অধ্যাদেশটি আর আইনে পরিণত হয়নি। এসব পণ্যের স্বত্ব পাওয়ার জন্য বাস্তবে কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। ফলে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের জামদানির কদর থাকলেও ভারত অন্ধ্র প্রদেশের কিছু গ্রামের জামদানিসদৃশ পণ্য দেখিয়ে জামদানির স্বত্ব নিয়ে নিয়েছে। রাজশাহীর সীমান্তবর্তী মালদহ এলাকায় কিছু পরিমাণে ফলন হলেও ফজলি মূলত রাজশাহী অঞ্চলের আম। অথচ মালদহের ফজলি দেখিয়ে ভারত ফজলি আমের স্বত্ব নিয়ে গেছে। নকশিকাঁথার স্বত্ব পেতেও ভারত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং হয়তো পেয়েও যাবে। এ জন্য ভারতকে দোষ দিয়ে তো লাভ নেই। তারা তো তাদের চেষ্টা করবেই। কিন্তু আমরা কেন এমনভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছি? আমরা কখন নড়ব? বাকি পণ্যগুলোর স্বত্বও ভারত নিয়ে নেওয়ার পর? এর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, শিল্প মন্ত্রণালয় আইনটি তৈরি করতে না পারায় তারা কিছুই করতে পারছে না। কবে নাগাদ আইনটি তৈরি হবে, তাও বলতে পারছে না শিল্প মন্ত্রণালয়। এ শুধু অবহেলা বা উদাসীনতা নয়, এক ক্ষমাহীন অপরাধও বটে। কারণ এর দায় বংশপরম্পরায় এ দেশের মানুষকেই বহন করতে হবে। আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
No comments