খাদ্যপণ্য নিয়ে নতুন আশঙ্কা-আসন্ন দুর্দিনে আমাদের প্রস্তুতি কী

বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দুর্দিন আসন্ন- এমন এক সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা। এফএওর মতে, অস্বাভাবিক আবহাওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম বেড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে এক নজিরবিহীন পরিস্থিতির। এফএও বলছে,


এ বছর বন্যা, অতিবৃষ্টি ও খরার মতো চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার কারণে জুলাই নাগাদ সারা বিশ্বেই খাদ্যের দাম বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে খরা, ব্রাজিলে অসময়ে বৃষ্টিপাত আর রাশিয়ায় উৎপাদন-প্রক্রিয়ার সংকটের কারণে এ সমস্যা গুরুতর চেহারা নিয়েছে বলে মনে করছে এফএও বা জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা। সংস্থাটির মতে, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাস ধরে খাদ্যের দাম কম ছিল। কিন্তু জুলাই মাসে দাম বেড়েছে ৬ শতাংশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এই প্রতিবেদন নিঃসন্দেহে নতুন এক আশঙ্কার জন্ম দেবে। কারণ বিশ্বের মোট ১০৫টি দেশের নাগরিকদের খাদ্য ক্রয়ক্ষমতা, খাদ্যের সহজলভ্যতা ও খাদ্যমান বিবেচনা করে 'দি ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট' প্রকাশিত বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সূচক ২০১২-তে উল্লেখ করা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তা সবচেয়ে কম। এই সূচকে দেখা গেছে, শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও নেপালের চেয়ে বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তা অনেক কম। আর বৈশ্বিকভাবে খাদ্যনিরাপত্তার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থা ৮৪তম। খাদ্য ক্রয়ক্ষমতা, সহজলভ্যতা এবং মানের বিবেচনাভিত্তিক সূচক নির্ধারণী মোট ১০০ মানের মধ্যে বাংলাদেশের প্রাপ্তি মাত্র ৩৪ দশমিক ৬। অন্যদিকে এক বছর আগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিশ্বের ১০০ কোটি মানুষ অনাহারে দিন কাটায়। আরো ১০০ কোটি মানুষ অপুষ্টির শিকার কেবলই খাদ্যাভাবে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে খাদ্যমূল্যের দাম কিছুটা স্থিতিশীল হলেও কিছুদিন আগেও এমন অবস্থা ছিল না। এফএওর বর্তমান প্রতিবেদনে যে তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে, এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে। বিশ্বের সব জায়গায়ই যখন খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে, তখন বাংলাদেশ যে এর বাইরে থাকবে না- এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের বাজারে জিনিসপত্রের দাম যখন বাড়ে, তখন আন্তর্জাতিক বাজারের কথা বলা হয়ে থাকে। এবার বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের বাজার কতটা স্থিতিশীল থাকবে, সেটাই দেখার বিষয়। আবার বিশ্বজুড়ে যখনই খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়, তখনই সবার দৃষ্টি যায় খাদ্য ঘাটতির দিকে। খাদ্য ঘাটতির প্রধান কারণ হচ্ছে উৎপাদন কমে যাওয়া। এফএওর প্রতিবেদনে সে কথা উল্লেখ করা হয়েছে। উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে উৎপাদিত ফসল নষ্ট হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আবার কৃষিজাত পণ্য জ্বালানি উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে খাদ্যপণ্যের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশনের আশঙ্কা, ২০০৭-০৮ সালে বিশ্বব্যাপী যে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছিল এবং যে ক্ষতির আঘাত বিশ্বের দরিদ্র মানুষের ওপর পড়েছিল, এবারও তার একটা পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
কাজেই এফএওর এই প্রতিবেদনকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। আগামী দিনের সংকট মোকাবিলায় উৎপাদন ও মজুদ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। কিছুদিন আগে প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে, কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সৌদি আরব, চীন প্রভৃতি দেশ এরই মধ্যে বিশ্বের অন্য দেশে কৃষিজমি কিনতে শুরু করেছে। বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানও কৃষিজমিতে বিনিয়োগ করছে। এখনকার বাস্তবতায় এটা সঠিক বিনিয়োগ। বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এখন থেকেই কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। বাংলাদেশের মতো একটি গরিব দেশকেও নিতে হবে আগাম প্রস্তুতি। যে দুর্দিনের কথা এফএও বলেছে, সেই সংকট মোকাবিলায় আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুত হতে হবে। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দেরি করবে না।

No comments

Powered by Blogger.