কালের আয়নায়-হরতাল যদি ঘৃণ্য হয়, অন্যান্য নাগরিক অধিকারের কী হবে? by আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
হরতালকে এই দুর্নাম থেকে মুক্ত করতে হবে। বাকস্বাধীনতা বা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে বাড়াবাড়ি হলেও যেমন কেউ বলে না, এই স্বাধীনতা বাতিল করা হোক, হরতালের বেলাতেও তেমনি তার অপব্যবহারের বাড়াবাড়িতে হরতাল নিষিদ্ধ করা অযৌক্তিক।
তাতে নাগরিক অধিকার হরণ করা হবে, জনগণের দাবি আদায় এবং বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানোর শান্তিপূর্ণ পন্থাগুলো রোধ করা হবে
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা হঠাৎ একটি বোমা ফাটিয়েছেন। অবশ্য কথার বোমা। আমাদের মুরবি্ব পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা প্রায়ই এ ধরনের বোমা ফাটিয়ে থাকেন। এই বোমা ফাটানোর সঙ্গে তাদের দেশের কথা ও কাজের কোনো সঙ্গতি থাক আর না-ই থাক। মজিনা সাহেব ঠাস করে বলে ফেলেছেন, 'আমি হরতালকে ঘৃণা করি।' যদি তিনি বলতেন, আমি বাংলাদেশের সহিংস হরতালগুলোকে ঘৃণা করি, তাহলে এ কথার একটা অর্থ ছিল। কিন্তু তিনি যখন বলেন, একেবারে হরতালকেই তিনি ঘৃণা করেন, তখন প্রশ্ন উঠবে, যে হরতাল জনসাধারণের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শনের গণতান্ত্রিক অধিকার, সেই গণতান্ত্রিক অধিকার তথা গনতন্ত্রকেই তিনি কি ঘৃণা করেন?
মজিনা সাহেবের কথা শুনে আওয়ামী লীগের একশ্রেণীর নেতাকর্মী খুশি হয়েছেন। তারা ধরে নিয়েছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক হরতালগুলো যখন বিএনপি ডেকেছে, তখন মার্কিন রাষ্ট্রদূত তাদের ডাকা হরতালের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে আসলে বিএনপির প্রতি আমেরিকার অসন্তোষের কথাই ব্যক্ত করেছেন। অর্থাৎ মার্কিন সমর্থন আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে। সুতরাং আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকারের মার্কিন সমর্থন হারানোর ভয় নেই।
এ ধরনের ধারণা বোকার স্বর্গে বাস করার সমতুল্য। মজিনা সাহেব পুরনো ঘুঘু কূটনীতিক। তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি মাত্র বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। এ সফরের সময় তার সব কথাবার্তা হাসিনা সরকারকে খুশি করেনি। ঠিক এই সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত এমন একটি কথা বলবেন, যা বাংলাদেশের কোনো একটি দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব বোঝাবে এটা চিন্তা করা পাগলামি। আর যেখানে বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগের বন্ধু বলে কীর্তিত ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি পর্যন্ত 'তারা বাংলাদেশের কোনো একটি বিশেষ দলের বন্ধু নন' বলে খালেদা জিয়াকে আশ্বস্ত করে গেছেন, সেখানে ওয়াশিংটনের দূত আগ বাড়িয়ে পরোক্ষভাবেও সরাসরি বাংলাদেশের একটি দলের সরকারের পক্ষে তার বক্তব্যটির অর্থ করা যাবে_ এমন কথা বলবেন কি? বাংলাদেশ সম্পর্কে দিলি্ল-ওয়াশিংটন অক্সিসের বর্তমান মনোভাব কি অভিন্ন নয়?
মজিনা সাহেব যদি বলতেন তিনি হরতালকে ঘৃণা করেন না, হরতালের সঙ্গে বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে যুক্ত হত্যা, রক্তপাত, অগি্নকাণ্ড_ এক কথায় সন্ত্রাসকে ঘৃণা করেন, তাহলে তাকে সাধুবাদ দেওয়া যেত। কিন্তু তিনি এক কথায় গোটা হরতালের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে সকল দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের একটি অপরিহার্য অংশের প্রতি কার্যত ঘৃণা প্রকাশ করেছেন বলা চলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও একটি গণতান্ত্রিক দেশ। ধর্মঘট বিক্ষোভ মিছিল মিটিং করা এখনও মার্কিন জনগণের একটি সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকারের কোনো একটি অংশের প্রতিও তিনি ঘৃণা প্রকাশ করতে পারেন কি?
বাংলাদেশে বর্তমানে হরতালবিরোধী একটি কঠিন মনোভাব সাধারণ মানুষের মধ্যে দানা বেঁধে উঠেছে। এটা আসলে হরতালের বিরোধিতা নয়, হরতালকে কেন্দ্র করে যে হত্যা, অগি্নকাণ্ড, সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হয়, তাতে জনজীবনে যে ভয়াবহ দুর্ভোগ দেখা দেয়, তাতে স্বভাবতই মানুষ ক্ষুব্ধ এবং ত্রুক্রদ্ধ। একজন নিরীহ বাসচালক, যিনি হরতালের দিন বাস চালাননি, বাসটি পার্কিংয়ে রেখে তার ভেতরে ঘুমাচ্ছিলেন, তার গাড়িতে আগুন লাগিয়ে নৃশংসভাবে তাকে পুড়িয়ে মারা তো হরতাল নয়; তা বর্বরতা। গরিব রিকশাচালক যে পেটের দায়ে রাস্তায় তার গাড়ি বের করেছে, তাকে গাড়িসহ পুড়িয়ে মারা তো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিএনপি বা আওয়ামী লীগের বা যে কোনো দলের যেমন হরতাল ডাকার অধিকার আছে, তেমনি একজন নাগরিকেরও অধিকার আছে সে ডাকে সাড়া দেওয়ার অথবা না দেওয়ার। সে ক্ষেত্রে সাড়া না দিলে তাকে বল প্রয়োগে সাড়া দিতে বাধ্য করা হলে তা জঘন্য অপরাধ; গণতান্ত্রিক অধিকারের অপপ্রয়োগ। সবচেয়ে বড় কথা তা হরতাল নয়, তা সন্ত্রাস।
আমরা যেমন চাই রাজনীতি বর্জন নয়, চাই রাজনীতিকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত করা। তেমনি হরতালও বর্জন নয়, হরতালকে সন্ত্রাসমুক্ত করা দরকার। আমরা সকলেই বলি, দেশের রাজনীতি এখন কালো টাকার মালিক এবং সন্ত্রাসীদের কবলে চলে গেছে। তাই বলে কি রাজনীতি বাতিল করে দিতে হবে? না রাজনীতিকে কালো টাকা ও সন্ত্রাসের কবল থেকে মুক্ত করতে হবে? রাজনীতিবর্জিত গণতন্ত্র কি কখনও সক্রিয় ও সচল থাকতে পারে? সামরিক শাসকরা সকল সময় দেশের সকল দুর্ভোগের দায় রাজনীতির ওপর চাপান এবং রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ করে দেন। তারপর কিছুদিনের মধ্যে তারা নিজেরাই রাজনীতিক সাজেন এবং নিজেদেরই রাজনৈতিক দল গঠন করেন। প্রমাণিত হয়েছে, রাজনীতিকে কলুষিত করে সামরিক শাসন, স্বৈরাচার, কালো টাকা ও সন্ত্রাস। রাজনীতিকে এর কবলমুক্ত করা গেলে রাজনীতিই গণতন্ত্র ও গণঅধিকার রক্ষার শ্রেষ্ঠতম বাহন।
হরতাল সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। আধুনিক গণতন্ত্রে নাগরিকদের অধিকার রক্ষা ও দাবি আদায়ের যে ক'টি শান্তিপূর্ণ পন্থা আছে, তার মধ্যে হরতাল ও ধর্মঘট একটি শ্রেষ্ঠ পন্থা। বাকস্বাধীনতা, মিটিং-মিছিল করার স্বাধীনতা, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জাগানোর অধিকার ইত্যাদি নানা নাগরিক অধিকারের মধ্যে হরতালও একটি। হরতালের অধিকারকে বাতিল করা হলে একটি বড় নাগরিক অধিকারই হরণ করা হবে। এ জন্য রাজনীতির মতোই হরতাল বেআইনি করা নয়, হরতালকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে হবে। সন্ত্রাস দমন না করে হরতাল বাতিল বা নিষিদ্ধ করা হলে তা কাজ দেবে না। অন্য নামে সন্ত্রাসী হরতাল চালানো হবে। শর্ষের ভেতর থেকে ভূত না তাড়ালে শর্ষেকে শাস্তি দিয়ে লাভ নেই।
আমাদের দেশের একশ্রেণীর মিডিয়া, একশ্রেণীর ভদ্রলোক, এমনকি ব্যবসায়ীদের মধ্যে হরতাল নিষিদ্ধ করার জিগির উঠেছে। হরতালে দেশের জনজীবনে যে বিরাট দুর্ভোগ দেখা দেয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয়, অর্থনীতির সর্বনাশ হয়, তার পরিপ্রেক্ষিতে হরতাল নিষিদ্ধ করার দাবি অনেকের কাছেই যৌক্তিক মনে হয়। কিন্তু নাগরিক অধিকার কর্তন করে যেমন নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষা করা যায় না, তেমনি হরতাল নিষিদ্ধ করেও দেশের জনজীবন ও অর্থনীতিকে দুর্ভোগমুক্ত করা যাবে না। তখন সন্ত্রাস নতুন নামে জনজীবনে আরও বড় দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে। সমস্যার মূল হরতালে নয়, এই মূলটির উৎস সন্ত্রাস।
আধুনিক হরতালের জনক মহাত্মা গান্ধী বলেছেন, 'নাগরিকদের অধিকার ও দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় হচ্ছে হরতাল ও ধর্মঘট। তা যখন-তখন বা ঘন ঘন ডাকা চলবে না। দাবি আদায়ের অন্য পন্থাগুলো ব্যর্থ হলে তখন এমনভাবে হরতালের ডাক দিতে হবে, যে ডাকের পেছনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন থাকবে। এই সমর্থন না থাকলে হরতাল ডাকা চলবে না। জোর খাটিয়ে জনগণের দ্বারা হরতাল পালন করাতে গেলে তা হরতাল নয়। হরতালের সঙ্গে হিংসা যুক্ত করা হলেই হরতাল বন্ধ করে দিতে হবে।
মহাত্মা গান্ধী তার এই কথা কাজে প্রয়োগ করে দেখিয়েছেন। ব্রিটিশ আমলে চৌরিচেরির ঘটনায় যখন হরতাল ডাকা হয়, তখন হিংসাত্মক ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি আন্দোলন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের শর্ত ছিল, এই অসহযোগ অহিংস হতে হবে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় বঙ্গবন্ধু প্রথমে অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। আপামর দেশের মানুষ তাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছিল। ফলে আন্দোলনটি সফল হয় এবং গণযুদ্ধে পরিণত হয়।
হালে বাংলাদেশে বিএনপির ডাকা হরতালগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, এর চরিত্র প্রকৃত হরতালের নয়। হরতাল ডাকার জন্য জনগণের সম্মতি বা সমর্থনের তোয়াক্কা করা হয় না। জনসাধারণ না চাইলেও সন্ত্রাস সৃষ্টি দ্বারা জনগণকে হরতাল পালনে বাধ্য করা হয়। দোকানপাট, বাস পুড়িয়ে, নিরীহ মানুষ হত্যা করে এমন বিভীষিকা সৃষ্টি করা হয়, যার উদ্দেশ্য জনগণের দাবি-দাওয়া আদায় করা নয়; উদ্দেশ্য সন্ত্রাস দ্বারা অরাজকতা সৃষ্টি করা এবং গণতান্ত্রিক সরকারকে অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করা। কোনো ক্ষমতাসীন সরকারের মনে অসাধু উদ্দেশ্য থাকলে বিরোধী দলের এই ধরনের জনসমর্থনহীন কার্যকলাপকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করে শুধু হরতাল নয়, সকল নাগরিক অধিকারই স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বাতিল করে দিতে পারে। নাগরিক অধিকারের সঙ্গে সঙ্গে মানবাধিকারও তখন বিপন্ন হয়। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার বহু দেশে এ ধরনের বহু ঘটনার উদাহরণ আছে।
বিএনপির সাম্প্রতিক হরতালগুলোতেও প্রমাণিত হয়েছে, এই হরতালের পেছনে জনসমর্থন নেই। জনসমর্থন থাকলে বলপ্রয়োগে বা হত্যা, অগি্নকাণ্ড দ্বারা ভীতি সৃষ্টিপূর্বক তারা সাধারণ মানুষকে হরতাল পালনে বাধ্য করার চেষ্টা করতেন না। হরতাল স্বতঃস্ফূর্তভাবে সফল হতো। অতীতে এমনকি ১৯৯৬ সালেও বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল ও আন্দোলনে আওয়ামী লীগ যে সফল হয়েছে, তার কারণ তার পেছনে স্বতঃস্ফূর্ত জনসমর্থন ছিল। ফলে সেই আন্দোলনে খালেদা জিয়াকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। বর্তমানে ইলিয়াস আলী ইস্যু বা বিএনপির নেতাদের গ্রেফতারের ইস্যুতে হরতাল ডেকে বলপ্রয়োগে তা সফল করতে গিয়ে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। তাদের আন্দোলন কোনো গতি পায়নি। মাঝখানে হরতালকে তারা দুর্নামগ্রস্ত করেছেন।
হরতালকে এই দুর্নাম থেকে মুক্ত করতে হবে। বাকস্বাধীনতা বা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে বাড়াবাড়ি হলেও যেমন কেউ বলে না, এই স্বাধীনতা বাতিল করা হোক, হরতালের বেলাতেও তেমনি তার অপব্যবহারের বাড়াবাড়িতে হরতাল নিষিদ্ধ করা অযৌক্তিক। তাতে নাগরিক অধিকার হরণ করা হবে, জনগণের দাবি আদায় এবং বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানোর শান্তিপূর্ণ পন্থাগুলো রোধ করা হবে। তাতে সেই বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ প্রকাশকে হিংসা ও অশান্তির পথেই ঠেলে দেওয়া হবে মাত্র।
যেটা আজ করা দরকার তাহলো, হরতালকে সন্ত্রাসমুক্ত করা। রাজনৈতিক দলগুলোর আজ এই ঐকমত্যে পেঁৗছা দরকার। গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে, তারা জনগণের ইচ্ছার বাইরে, বলপ্রয়োগ বা হিংসাত্মক পন্থার সাহায্যে হরতাল ডাকতে যাবেন না। সরকারও এ ধরনের আইন করতে পারে যে, কোনো দলের ডাকা হরতালে যদি নাগরিকদের জানমালের ক্ষতি হয়, তাহলে সেই দলটিকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর হরতালের নামে দেশে এখন যা হচ্ছে, তা যে হরতাল নয়, বরং সন্ত্রাস এবং বৃহত্তর সন্ত্রাসী লক্ষ্যের অংশ, তা দেশের নাগরিক সমাজকেও বুঝতে হবে। হরতাল নিষিদ্ধ করা নয়, হরতালের মুখোশের আড়ালে যে সন্ত্রাস দেশের গোটা রাজনীতিকেই গ্রাস করতে চাইছে, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলোকে কলঙ্কিত করতে চাইছে, তার বিরুদ্ধে দেশে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। নইলে আজ হরতাল নিষিদ্ধ করা হলে আগামীকাল অন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলোকেও বাতিল অথবা নিষিদ্ধ করার দাবি তুলতে পারে অপশক্তি।
দেশে দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষায় মার্কিন ভূমিকা মোটেই উজ্জ্বল নয়। 'আমি হরতাল ঘৃণা করি' বলতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজিনা সাহেব কী বুঝিয়েছেন, তার সমালোচনার লক্ষ্য সন্ত্রাস, না হরতাল, তার একটা ব্যাখ্যা দিলে আমরা সন্দেহবাদীরা সন্দেহমুক্ত হতে পারি।
লন্ডন, ১ জুন ২০১২, শুক্রবার
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা হঠাৎ একটি বোমা ফাটিয়েছেন। অবশ্য কথার বোমা। আমাদের মুরবি্ব পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা প্রায়ই এ ধরনের বোমা ফাটিয়ে থাকেন। এই বোমা ফাটানোর সঙ্গে তাদের দেশের কথা ও কাজের কোনো সঙ্গতি থাক আর না-ই থাক। মজিনা সাহেব ঠাস করে বলে ফেলেছেন, 'আমি হরতালকে ঘৃণা করি।' যদি তিনি বলতেন, আমি বাংলাদেশের সহিংস হরতালগুলোকে ঘৃণা করি, তাহলে এ কথার একটা অর্থ ছিল। কিন্তু তিনি যখন বলেন, একেবারে হরতালকেই তিনি ঘৃণা করেন, তখন প্রশ্ন উঠবে, যে হরতাল জনসাধারণের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শনের গণতান্ত্রিক অধিকার, সেই গণতান্ত্রিক অধিকার তথা গনতন্ত্রকেই তিনি কি ঘৃণা করেন?
মজিনা সাহেবের কথা শুনে আওয়ামী লীগের একশ্রেণীর নেতাকর্মী খুশি হয়েছেন। তারা ধরে নিয়েছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক হরতালগুলো যখন বিএনপি ডেকেছে, তখন মার্কিন রাষ্ট্রদূত তাদের ডাকা হরতালের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে আসলে বিএনপির প্রতি আমেরিকার অসন্তোষের কথাই ব্যক্ত করেছেন। অর্থাৎ মার্কিন সমর্থন আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে। সুতরাং আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকারের মার্কিন সমর্থন হারানোর ভয় নেই।
এ ধরনের ধারণা বোকার স্বর্গে বাস করার সমতুল্য। মজিনা সাহেব পুরনো ঘুঘু কূটনীতিক। তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি মাত্র বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। এ সফরের সময় তার সব কথাবার্তা হাসিনা সরকারকে খুশি করেনি। ঠিক এই সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত এমন একটি কথা বলবেন, যা বাংলাদেশের কোনো একটি দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব বোঝাবে এটা চিন্তা করা পাগলামি। আর যেখানে বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগের বন্ধু বলে কীর্তিত ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি পর্যন্ত 'তারা বাংলাদেশের কোনো একটি বিশেষ দলের বন্ধু নন' বলে খালেদা জিয়াকে আশ্বস্ত করে গেছেন, সেখানে ওয়াশিংটনের দূত আগ বাড়িয়ে পরোক্ষভাবেও সরাসরি বাংলাদেশের একটি দলের সরকারের পক্ষে তার বক্তব্যটির অর্থ করা যাবে_ এমন কথা বলবেন কি? বাংলাদেশ সম্পর্কে দিলি্ল-ওয়াশিংটন অক্সিসের বর্তমান মনোভাব কি অভিন্ন নয়?
মজিনা সাহেব যদি বলতেন তিনি হরতালকে ঘৃণা করেন না, হরতালের সঙ্গে বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে যুক্ত হত্যা, রক্তপাত, অগি্নকাণ্ড_ এক কথায় সন্ত্রাসকে ঘৃণা করেন, তাহলে তাকে সাধুবাদ দেওয়া যেত। কিন্তু তিনি এক কথায় গোটা হরতালের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে সকল দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের একটি অপরিহার্য অংশের প্রতি কার্যত ঘৃণা প্রকাশ করেছেন বলা চলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও একটি গণতান্ত্রিক দেশ। ধর্মঘট বিক্ষোভ মিছিল মিটিং করা এখনও মার্কিন জনগণের একটি সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকারের কোনো একটি অংশের প্রতিও তিনি ঘৃণা প্রকাশ করতে পারেন কি?
বাংলাদেশে বর্তমানে হরতালবিরোধী একটি কঠিন মনোভাব সাধারণ মানুষের মধ্যে দানা বেঁধে উঠেছে। এটা আসলে হরতালের বিরোধিতা নয়, হরতালকে কেন্দ্র করে যে হত্যা, অগি্নকাণ্ড, সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হয়, তাতে জনজীবনে যে ভয়াবহ দুর্ভোগ দেখা দেয়, তাতে স্বভাবতই মানুষ ক্ষুব্ধ এবং ত্রুক্রদ্ধ। একজন নিরীহ বাসচালক, যিনি হরতালের দিন বাস চালাননি, বাসটি পার্কিংয়ে রেখে তার ভেতরে ঘুমাচ্ছিলেন, তার গাড়িতে আগুন লাগিয়ে নৃশংসভাবে তাকে পুড়িয়ে মারা তো হরতাল নয়; তা বর্বরতা। গরিব রিকশাচালক যে পেটের দায়ে রাস্তায় তার গাড়ি বের করেছে, তাকে গাড়িসহ পুড়িয়ে মারা তো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিএনপি বা আওয়ামী লীগের বা যে কোনো দলের যেমন হরতাল ডাকার অধিকার আছে, তেমনি একজন নাগরিকেরও অধিকার আছে সে ডাকে সাড়া দেওয়ার অথবা না দেওয়ার। সে ক্ষেত্রে সাড়া না দিলে তাকে বল প্রয়োগে সাড়া দিতে বাধ্য করা হলে তা জঘন্য অপরাধ; গণতান্ত্রিক অধিকারের অপপ্রয়োগ। সবচেয়ে বড় কথা তা হরতাল নয়, তা সন্ত্রাস।
আমরা যেমন চাই রাজনীতি বর্জন নয়, চাই রাজনীতিকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত করা। তেমনি হরতালও বর্জন নয়, হরতালকে সন্ত্রাসমুক্ত করা দরকার। আমরা সকলেই বলি, দেশের রাজনীতি এখন কালো টাকার মালিক এবং সন্ত্রাসীদের কবলে চলে গেছে। তাই বলে কি রাজনীতি বাতিল করে দিতে হবে? না রাজনীতিকে কালো টাকা ও সন্ত্রাসের কবল থেকে মুক্ত করতে হবে? রাজনীতিবর্জিত গণতন্ত্র কি কখনও সক্রিয় ও সচল থাকতে পারে? সামরিক শাসকরা সকল সময় দেশের সকল দুর্ভোগের দায় রাজনীতির ওপর চাপান এবং রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ করে দেন। তারপর কিছুদিনের মধ্যে তারা নিজেরাই রাজনীতিক সাজেন এবং নিজেদেরই রাজনৈতিক দল গঠন করেন। প্রমাণিত হয়েছে, রাজনীতিকে কলুষিত করে সামরিক শাসন, স্বৈরাচার, কালো টাকা ও সন্ত্রাস। রাজনীতিকে এর কবলমুক্ত করা গেলে রাজনীতিই গণতন্ত্র ও গণঅধিকার রক্ষার শ্রেষ্ঠতম বাহন।
হরতাল সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। আধুনিক গণতন্ত্রে নাগরিকদের অধিকার রক্ষা ও দাবি আদায়ের যে ক'টি শান্তিপূর্ণ পন্থা আছে, তার মধ্যে হরতাল ও ধর্মঘট একটি শ্রেষ্ঠ পন্থা। বাকস্বাধীনতা, মিটিং-মিছিল করার স্বাধীনতা, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জাগানোর অধিকার ইত্যাদি নানা নাগরিক অধিকারের মধ্যে হরতালও একটি। হরতালের অধিকারকে বাতিল করা হলে একটি বড় নাগরিক অধিকারই হরণ করা হবে। এ জন্য রাজনীতির মতোই হরতাল বেআইনি করা নয়, হরতালকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে হবে। সন্ত্রাস দমন না করে হরতাল বাতিল বা নিষিদ্ধ করা হলে তা কাজ দেবে না। অন্য নামে সন্ত্রাসী হরতাল চালানো হবে। শর্ষের ভেতর থেকে ভূত না তাড়ালে শর্ষেকে শাস্তি দিয়ে লাভ নেই।
আমাদের দেশের একশ্রেণীর মিডিয়া, একশ্রেণীর ভদ্রলোক, এমনকি ব্যবসায়ীদের মধ্যে হরতাল নিষিদ্ধ করার জিগির উঠেছে। হরতালে দেশের জনজীবনে যে বিরাট দুর্ভোগ দেখা দেয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয়, অর্থনীতির সর্বনাশ হয়, তার পরিপ্রেক্ষিতে হরতাল নিষিদ্ধ করার দাবি অনেকের কাছেই যৌক্তিক মনে হয়। কিন্তু নাগরিক অধিকার কর্তন করে যেমন নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষা করা যায় না, তেমনি হরতাল নিষিদ্ধ করেও দেশের জনজীবন ও অর্থনীতিকে দুর্ভোগমুক্ত করা যাবে না। তখন সন্ত্রাস নতুন নামে জনজীবনে আরও বড় দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে। সমস্যার মূল হরতালে নয়, এই মূলটির উৎস সন্ত্রাস।
আধুনিক হরতালের জনক মহাত্মা গান্ধী বলেছেন, 'নাগরিকদের অধিকার ও দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় হচ্ছে হরতাল ও ধর্মঘট। তা যখন-তখন বা ঘন ঘন ডাকা চলবে না। দাবি আদায়ের অন্য পন্থাগুলো ব্যর্থ হলে তখন এমনভাবে হরতালের ডাক দিতে হবে, যে ডাকের পেছনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন থাকবে। এই সমর্থন না থাকলে হরতাল ডাকা চলবে না। জোর খাটিয়ে জনগণের দ্বারা হরতাল পালন করাতে গেলে তা হরতাল নয়। হরতালের সঙ্গে হিংসা যুক্ত করা হলেই হরতাল বন্ধ করে দিতে হবে।
মহাত্মা গান্ধী তার এই কথা কাজে প্রয়োগ করে দেখিয়েছেন। ব্রিটিশ আমলে চৌরিচেরির ঘটনায় যখন হরতাল ডাকা হয়, তখন হিংসাত্মক ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি আন্দোলন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের শর্ত ছিল, এই অসহযোগ অহিংস হতে হবে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় বঙ্গবন্ধু প্রথমে অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। আপামর দেশের মানুষ তাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছিল। ফলে আন্দোলনটি সফল হয় এবং গণযুদ্ধে পরিণত হয়।
হালে বাংলাদেশে বিএনপির ডাকা হরতালগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, এর চরিত্র প্রকৃত হরতালের নয়। হরতাল ডাকার জন্য জনগণের সম্মতি বা সমর্থনের তোয়াক্কা করা হয় না। জনসাধারণ না চাইলেও সন্ত্রাস সৃষ্টি দ্বারা জনগণকে হরতাল পালনে বাধ্য করা হয়। দোকানপাট, বাস পুড়িয়ে, নিরীহ মানুষ হত্যা করে এমন বিভীষিকা সৃষ্টি করা হয়, যার উদ্দেশ্য জনগণের দাবি-দাওয়া আদায় করা নয়; উদ্দেশ্য সন্ত্রাস দ্বারা অরাজকতা সৃষ্টি করা এবং গণতান্ত্রিক সরকারকে অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করা। কোনো ক্ষমতাসীন সরকারের মনে অসাধু উদ্দেশ্য থাকলে বিরোধী দলের এই ধরনের জনসমর্থনহীন কার্যকলাপকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করে শুধু হরতাল নয়, সকল নাগরিক অধিকারই স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বাতিল করে দিতে পারে। নাগরিক অধিকারের সঙ্গে সঙ্গে মানবাধিকারও তখন বিপন্ন হয়। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার বহু দেশে এ ধরনের বহু ঘটনার উদাহরণ আছে।
বিএনপির সাম্প্রতিক হরতালগুলোতেও প্রমাণিত হয়েছে, এই হরতালের পেছনে জনসমর্থন নেই। জনসমর্থন থাকলে বলপ্রয়োগে বা হত্যা, অগি্নকাণ্ড দ্বারা ভীতি সৃষ্টিপূর্বক তারা সাধারণ মানুষকে হরতাল পালনে বাধ্য করার চেষ্টা করতেন না। হরতাল স্বতঃস্ফূর্তভাবে সফল হতো। অতীতে এমনকি ১৯৯৬ সালেও বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল ও আন্দোলনে আওয়ামী লীগ যে সফল হয়েছে, তার কারণ তার পেছনে স্বতঃস্ফূর্ত জনসমর্থন ছিল। ফলে সেই আন্দোলনে খালেদা জিয়াকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। বর্তমানে ইলিয়াস আলী ইস্যু বা বিএনপির নেতাদের গ্রেফতারের ইস্যুতে হরতাল ডেকে বলপ্রয়োগে তা সফল করতে গিয়ে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। তাদের আন্দোলন কোনো গতি পায়নি। মাঝখানে হরতালকে তারা দুর্নামগ্রস্ত করেছেন।
হরতালকে এই দুর্নাম থেকে মুক্ত করতে হবে। বাকস্বাধীনতা বা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে বাড়াবাড়ি হলেও যেমন কেউ বলে না, এই স্বাধীনতা বাতিল করা হোক, হরতালের বেলাতেও তেমনি তার অপব্যবহারের বাড়াবাড়িতে হরতাল নিষিদ্ধ করা অযৌক্তিক। তাতে নাগরিক অধিকার হরণ করা হবে, জনগণের দাবি আদায় এবং বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানোর শান্তিপূর্ণ পন্থাগুলো রোধ করা হবে। তাতে সেই বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ প্রকাশকে হিংসা ও অশান্তির পথেই ঠেলে দেওয়া হবে মাত্র।
যেটা আজ করা দরকার তাহলো, হরতালকে সন্ত্রাসমুক্ত করা। রাজনৈতিক দলগুলোর আজ এই ঐকমত্যে পেঁৗছা দরকার। গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে, তারা জনগণের ইচ্ছার বাইরে, বলপ্রয়োগ বা হিংসাত্মক পন্থার সাহায্যে হরতাল ডাকতে যাবেন না। সরকারও এ ধরনের আইন করতে পারে যে, কোনো দলের ডাকা হরতালে যদি নাগরিকদের জানমালের ক্ষতি হয়, তাহলে সেই দলটিকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর হরতালের নামে দেশে এখন যা হচ্ছে, তা যে হরতাল নয়, বরং সন্ত্রাস এবং বৃহত্তর সন্ত্রাসী লক্ষ্যের অংশ, তা দেশের নাগরিক সমাজকেও বুঝতে হবে। হরতাল নিষিদ্ধ করা নয়, হরতালের মুখোশের আড়ালে যে সন্ত্রাস দেশের গোটা রাজনীতিকেই গ্রাস করতে চাইছে, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলোকে কলঙ্কিত করতে চাইছে, তার বিরুদ্ধে দেশে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। নইলে আজ হরতাল নিষিদ্ধ করা হলে আগামীকাল অন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলোকেও বাতিল অথবা নিষিদ্ধ করার দাবি তুলতে পারে অপশক্তি।
দেশে দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষায় মার্কিন ভূমিকা মোটেই উজ্জ্বল নয়। 'আমি হরতাল ঘৃণা করি' বলতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজিনা সাহেব কী বুঝিয়েছেন, তার সমালোচনার লক্ষ্য সন্ত্রাস, না হরতাল, তার একটা ব্যাখ্যা দিলে আমরা সন্দেহবাদীরা সন্দেহমুক্ত হতে পারি।
লন্ডন, ১ জুন ২০১২, শুক্রবার
No comments