সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ

সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলা-নির্যাতনের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তিনি বলেছেন, দেশে প্রতিটি নির্যাতনের ঘটনারই তদন্ত চলছে। পুলিশ অন্যায় করলে ছাড় দেওয়া হবে না। আর পুরো বাহিনীর সব পুলিশ সদস্য ভালো হবে এমন কথা নেই।


তবে ক্রসফায়ার প্রসঙ্গে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষেই যুক্তি তুলে ধরেছেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গতকাল শুক্রবার 'মিট দ্য রিপোর্টার্স' অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপুসহ সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সাহারা খাতুন বলেন, 'সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিকদের ওপর যেসব নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তাতে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। পুলিশের যেসব সদস্য খারাপ কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে অতীতে যেমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ভবিষ্যতেও তেমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' তিনি বলেন, 'পুলিশের এক লাখ ৪১ হাজার সদস্যের সবাই ভালো হবে এমন কথা নেই। এর মধ্যে কিছু খারাপ সদস্য থাকবেই। পুলিশ অন্যায় করলে ছাড় দেব না। এমনকি আমার কোনো আত্মীয় অন্যায় করলেও নয়।' সাংবাদিকদের সহায়তা কামনা করে তিনি বলেন, 'আপনারা আমাদের ভুল শুধরে দেবেন।'
সরকারের সাড়ে তিন বছরে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'সরকার আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। জঙ্গিবাদ, চাঁদাবাজি ও চরমপন্থীদের দমন করা হয়েছে।' তিনি যুদ্ধাপরাধের মামলাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। সরকারের বিদায় বেলায় বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুপ্তহত্যা ও গুমে জড়িতদের দায়মুক্তি দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, 'আপনারা কি চান সন্ত্রাসীরা ধরা না পড়ুক?' বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে যুক্তি দিয়ে সাহারা খাতুন বলেন, 'তাদের কাজ সন্ত্রাসী ধরা। সন্ত্রাসীকে ধরতে গেলে তারা যদি গুলি চালায়, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব কী হবে, আপনারাই বলেন? আত্মরক্ষায় তাদের গুলি চালাতেই হবে।'
গত সপ্তাহে রাজধানীতে মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বিক্ষোভের সময় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন তিন ফটো সাংবাদিক। আদালতপাড়ায় পুলিশের হাতে এক তরুণীর শ্লীলতাহানির খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে পিটুনির শিকার হন আরো তিন সাংবাদিক। আর বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম কার্যালয়ের সামনে দুই সাংবাদিককে ছুরি মেরে আহত করে সন্ত্রাসীরা। এসব বিষয়ে মঙ্গলবার এক আলোচনা সভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু সাংবাদিকদের পরামর্শ দেন, 'কোথাও সাংঘর্ষিক অবস্থা সৃষ্টি হলে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালনকালে সংবাদকর্মীরা নিরাপদ দূরত্বে থাকলে অনেক ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া যাবে।' টুকুর এ বক্তব্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সাহারা খাতুন বলেন, 'আমাকে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন যে তিনি এমন কিছুই বলেন নাই। অথচ এটাই মিডিয়াতে বারবার তুলে ধরা হচ্ছে। তার পরও যদি আপনাদের প্রশ্ন থাকে তাঁকে করুন।'
বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় 'ক্রসফায়ার' বা 'বন্দুকযুদ্ধের' কথা বলা হলেও হতাহতদের আগেই ধরে এনে ঘটনা সাজানোর অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে তাঁরা যেন আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন।' বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী এবং সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সাহারা খাতুন বলেন, 'তদন্ত চলছে।'
আরেক প্রশ্নের জবাবে সাহারা খাতুন বলেন, 'পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কিছু প্রক্রিয়া আছে। প্রথমে প্রত্যাহার করা হয়, তারপর বরখাস্ত করা হয়। এসব ধাপ শেষে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ উঠেছে, এসব নিয়ে তদন্ত চলছে।'

No comments

Powered by Blogger.