বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৪১৩ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। মো. ওয়ালিউল ইসলাম, বীর প্রতীক ভানুগাছ মুক্ত করলেন তাঁরা ১৯৭১ সালের ২৯ নভেম্বর। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি দল ভারত থেকে এসে সমবেত হলো কৈলাসটিলায়।
মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের নেতৃত্বে মো. ওয়ালিউল ইসলাম।
মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে শমশেরনগরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালাবে। মো. ওয়ালিউল ইসলামের দল এবং অপর দলের ওপর দায়িত্ব, ভানুগাছে একদল পাকিস্তানি সেনা আছে, তারা যাতে পাল্টা আক্রমণ না করতে পারে, সেটাকে গার্ড করতে হবে।
১ ডিসেম্বর। মো. ওয়ালিউল ইসলাম সহযোদ্ধাদের নিয়ে প্রতিরক্ষা অবস্থান নিলেন ভানুগাছে। তাঁদের জানানো হয়েছে, সেখানে আছে এক প্লাটুন পাকিস্তানি সেনা। কিন্তু প্রতিরক্ষা অবস্থান নেওয়ার পর তাঁরা বুঝতে পারলেন, পাকিস্তানি সেনা সেখানে অনেক এবং তারা ১২০ মিমি মর্টারে সজ্জিত। বেশ শক্ত পাকিস্তানিদের অবস্থান।
মো. ওয়ালিউল ইসলাম এতে বিচলিত হলেন না। সহযোদ্ধাদের মনে সাহস জোগালেন। পরদিন সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন পাকিস্তানি সেনাদের ওপর। নিমিষে শুরু হয়ে গেল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকলেন। পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হলো। এতে তাঁরা দমে গেলেন না। মো. ওয়ালিউল ইসলামের নেতৃত্বে তাঁরা বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে পরদিন সকালে মুক্ত করলেন ভানুগাছ।
ভানুগাছ যুদ্ধে মো. ওয়ালিউল ইসলাম যথেষ্ট রণকৌশল ও সাহস প্রদর্শন করেন। মূলত তাঁর প্রচেষ্টাতেই মুক্ত হয় ভানুগাছ। মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে পাকিস্তানি সেনাদের ফেলে যাওয়া অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও রসদ।
মো. ওয়ালিউল ইসলাম ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম ইন্টারমিডিয়েট কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। কুমিল্লার ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে মা-বাবার অমতে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ওই কলেজে। তখন ছাত্ররাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মো. ওয়ালিউল ইসলাম ২৬ মার্চ থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। কয়েকজন সহপাঠীকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে তাঁরা অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন। তিনি বেশ কয়েকটি প্রতিরোধযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এর মধ্যে কালুরঘাট, মহালছড়ির যুদ্ধ অন্যতম।
প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে মো. ওয়ালিউল ইসলাম ভারতে যান। ত্রিপুরায় হরিণা ক্যাম্পে অবস্থানকালে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় প্রথম বাংলাদেশ ওয়ারকোর্সে। জলপাইগুড়ির মূর্তি ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে অক্টোবরের প্রথমার্ধ থেকে যুদ্ধ করেন জেড ফোর্সের অধীনে। তাঁকে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ এবং মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, ছোটলেখাসহ আরও কয়েকটি স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য মো. ওয়ালিউল ইসলামকে বীর প্রতীক খেতাব দেওয়া হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৩৮।
মো. ওয়ালিউল ইসলামের পৈতৃক বাড়ি বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর আলেকান্দা সড়কের বটতলায়। বর্তমানে তিনি এখানেই বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম মো. ওয়াজেদ আলী, মা আশরাফুননেসা। স্ত্রী হোসনে আরা বেগম। তাঁদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে।
সূত্র: প্রথম আলোর বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক সাইফুর রহমান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, দশম খণ্ড।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে শমশেরনগরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালাবে। মো. ওয়ালিউল ইসলামের দল এবং অপর দলের ওপর দায়িত্ব, ভানুগাছে একদল পাকিস্তানি সেনা আছে, তারা যাতে পাল্টা আক্রমণ না করতে পারে, সেটাকে গার্ড করতে হবে।
১ ডিসেম্বর। মো. ওয়ালিউল ইসলাম সহযোদ্ধাদের নিয়ে প্রতিরক্ষা অবস্থান নিলেন ভানুগাছে। তাঁদের জানানো হয়েছে, সেখানে আছে এক প্লাটুন পাকিস্তানি সেনা। কিন্তু প্রতিরক্ষা অবস্থান নেওয়ার পর তাঁরা বুঝতে পারলেন, পাকিস্তানি সেনা সেখানে অনেক এবং তারা ১২০ মিমি মর্টারে সজ্জিত। বেশ শক্ত পাকিস্তানিদের অবস্থান।
মো. ওয়ালিউল ইসলাম এতে বিচলিত হলেন না। সহযোদ্ধাদের মনে সাহস জোগালেন। পরদিন সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন পাকিস্তানি সেনাদের ওপর। নিমিষে শুরু হয়ে গেল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকলেন। পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হলো। এতে তাঁরা দমে গেলেন না। মো. ওয়ালিউল ইসলামের নেতৃত্বে তাঁরা বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে পরদিন সকালে মুক্ত করলেন ভানুগাছ।
ভানুগাছ যুদ্ধে মো. ওয়ালিউল ইসলাম যথেষ্ট রণকৌশল ও সাহস প্রদর্শন করেন। মূলত তাঁর প্রচেষ্টাতেই মুক্ত হয় ভানুগাছ। মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে পাকিস্তানি সেনাদের ফেলে যাওয়া অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও রসদ।
মো. ওয়ালিউল ইসলাম ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম ইন্টারমিডিয়েট কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। কুমিল্লার ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে মা-বাবার অমতে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ওই কলেজে। তখন ছাত্ররাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মো. ওয়ালিউল ইসলাম ২৬ মার্চ থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। কয়েকজন সহপাঠীকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে তাঁরা অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন। তিনি বেশ কয়েকটি প্রতিরোধযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এর মধ্যে কালুরঘাট, মহালছড়ির যুদ্ধ অন্যতম।
প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে মো. ওয়ালিউল ইসলাম ভারতে যান। ত্রিপুরায় হরিণা ক্যাম্পে অবস্থানকালে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় প্রথম বাংলাদেশ ওয়ারকোর্সে। জলপাইগুড়ির মূর্তি ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে অক্টোবরের প্রথমার্ধ থেকে যুদ্ধ করেন জেড ফোর্সের অধীনে। তাঁকে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ এবং মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, ছোটলেখাসহ আরও কয়েকটি স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য মো. ওয়ালিউল ইসলামকে বীর প্রতীক খেতাব দেওয়া হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৩৮।
মো. ওয়ালিউল ইসলামের পৈতৃক বাড়ি বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর আলেকান্দা সড়কের বটতলায়। বর্তমানে তিনি এখানেই বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম মো. ওয়াজেদ আলী, মা আশরাফুননেসা। স্ত্রী হোসনে আরা বেগম। তাঁদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে।
সূত্র: প্রথম আলোর বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক সাইফুর রহমান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, দশম খণ্ড।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments