অনির্বাচিত প্রশাসক সংবিধানপরিপন্থী-দুই ঢাকায় নির্বাচন

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন আদালতের আদেশে স্থগিত থাকলেও সরকারের রাজনৈতিক অনীহা কোনো গোপন বিষয় নয়। চার মিনিটে ঢাকা ভাগ করার আগ থেকেই যে সন্দেহ ছিল, তা দিন দিন আরও পাকাপোক্ত হয়েছে।


অনির্বাচিত ব্যক্তিদের প্রতি অনাস্থা দেখিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছিল আওয়ামী লীগ। তারা দোহাই দিয়েছিল যে সংবিধানে প্রশাসনের সর্বস্তরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নিয়োগের কথাই বলা আছে। ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্ট অনধিক ছয় মাসের মধ্যে স্থানীয় সরকারের সর্বস্তর থেকে সরকারের নিয়োগ করা আমলাদের সরিয়ে দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই রায় আজও লঙ্ঘিত হয়ে চলেছে।
অনেক জল্পনা-কল্পনার মধ্যে দুই ডিসিসির নির্বাচনী তফসিল ঘোষিত হয়। এ নিয়ে তোড়জোড় শুরু হতে না-হতেই হাইকোর্ট বিভাগ একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ওই নির্বাচন তিন মাস স্থগিত করে দেন। অথচ, ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা ছিল নির্বাচন কমিশনের সামনে। ডিসিসির নির্বাচনের অন্যতম প্রার্থী তুহিন মালিক এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আপিল বিভাগে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি প্রতিকার পাননি। এই পটভূমিতে নির্বাচন কমিশন আইনি লড়াইয়ের যে উদ্যোগ নিচ্ছে, তা থেকে আশু সুফল মিলবে না বলেই অনেকে মনে করেন।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নানা ওজর-অজুহাত তুলে আদালতের মাধ্যমে নির্বাচন স্থগিত হওয়ার অনেক অপ্রীতিকর ও অগ্রহণযোগ্য উদাহরণ আছে। শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সে কারণেই বর্তমান সরকারের কাছে সংবিধানে একটি নতুন বিধান যুক্ত করতে সুপারিশ রেখেছিল। সেটি ছিল, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে গেজেটে ফল প্রকাশ না করা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কোনো সিদ্ধান্ত আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। কিন্তু সরকার ও সংসদ ওই ফাঁক বন্ধ করতে চায়নি।
দুই ডিসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের অব্যাহত নিষ্পৃহতা এবং প্রশাসক নিয়োগে তাদের যথেষ্ট উদ্যোগী ভূমিকার নিন্দা না জানিয়ে আমরা পারি না। এই অবস্থা কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সপক্ষে সরকারের অবস্থানকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্রায় ১০ বছর স্থানীয় নির্বাচন থেকে বঞ্চিত ঢাকা মহানগরের জনগোষ্ঠীকে অনির্দিষ্টকাল ধরে ঝুলিয়ে রাখার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দায়দায়িত্ব মূলত ক্ষমতাসীন দলকেই নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.