বিস্ফোরক মামলায় অভিযোগপত্র-রাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত নয় তো!
অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে আরো একটি কাজ সম্পন্ন করল পুলিশ। যখন পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে চারদিকে সমালোচনার ঝড়, তখনই আরো একবার নিজেদের কর্মপরায়ণতার প্রমাণ রাখল এই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেশের একটি আলোচিত মামলায় যারা আদালতে গিয়ে নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে আসতে দ্বিধা করেনি, সেই মহানগর
গোয়েন্দা পুলিশই গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হরতাল চলাকালে সচিবালয়ে ককটেল নিক্ষেপের মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। এতে বিএনপির চার নারী সংসদ সদস্যসহ ছয় সংসদ সদস্যকেও আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্ত নেতাদের বেশির ভাগই গাড়ি পোড়ানোর মামলায় এখন কারাগারে। এর আগে একই হরতালের দিন রাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় করা মামলায় গত ১০ মে বিরোধী দলের ৪২ জন শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই মামলায় গ্রেপ্তার থাকা পাঁচ সংসদ সদস্য পরে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। জামিন পাওয়া সংসদ সদস্যদের মধ্যে এম কে আনোয়ার ও মাহবুবউদ্দিন খোকন ছাড়া বাকি তিনজনকে শাহবাগ থানার বিস্ফোরক মামলায় আসামি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বিএনপির নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীকে জীবিত ফেরত দেওয়ার দাবিতে গত ২৯ এপ্রিল ১৮ দলীয় জোটের হরতাল চলাকালে সচিবালয়ে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। ওই দিনই পুলিশ বাদী হয়ে বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা করে। এর এক মাসের মাথায় এই মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হলো।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দেওয়া এই অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, 'আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশ ও ষড়যন্ত্র করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশে সরকারি স্থাপনায় হামলা করে। আসামিরা বিস্ফোরকদ্রব্য সংগ্রহে সহায়তা ও আর্থিক সহযোগিতা করেন। তাঁদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশে মোটরসাইকেল আরোহী দুই যুবক সচিবালয়ে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ বিষয়ে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের ৩, ৩(ক) ও ৬ ধারায় অভিযোগপত্র দেওয়া হলো।' এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, 'একটি মিথ্যা, বানোয়াট মামলায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলকে দমন করতে সরকার এই পথ অবলম্বন করেছে।' তাঁর দাবি, অভিযোগপত্রের সঙ্গে এজাহারের (এফআইআর) কোনো মিল নেই।
মামলা যখন হয়েছে, অসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে সেই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, তখন এই মামলার রাজনৈতিক সম্পৃক্তি নিয়ে কথা উঠতেই পারে। যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির উত্তরাধিকার আমরা বহন করছি, তাতে এটা অস্বাভাবিক নয়। তবে এ-জাতীয় মামলার গ্রহণযোগ্যতাও সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ। রাজনৈতিক কারণে যেসব মামলা করা হয়, সেসব মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। যেখানে অনেক মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়ে ওঠেনি, সেখানে একটি বিশেষ রাজনৈতিক জোটের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় দ্রুত অভিযোগপত্র দাখিল হয়ে গেলে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। তা ছাড়া মামলা করার পর ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নানা উক্তিও এই মামলার ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে।
তার পরও পুলিশ একটি মামলার অভিযোগপত্র দ্রুততম সময়ে দিয়েছে। অন্যসব মামলার ব্যাপারেও পুলিশ এমন করিতকর্মা হলে বা এমন কর্মতৎপরতার স্বাক্ষর রাখতে পারলে হয়তো দেশে অপরাধপ্রবণতা অনেক কমে যেত।
No comments