বিদুত্ সংকট-এসি বন্ধ রাখার আদেশ, না অনুরোধ? by এ কে এম জাকারিয়া
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) পিক আওয়ারে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বন্ধ রাখতে বলেছে। টেলিভিশনে বিইআরসির সংবাদ সন্মেলন ও পত্রিকার খবর দেখে এই বিভ্রান্তি খুব স্বাভাবিক যে এটি আদেশ, না অনুরোধ।
আদেশ হলে জনগণকে তা মানতে হবে এবং না মানলে তার জন্য কোনো শাস্তি বা জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে। আর বিষয়টি যদি শীতাতপ যন্ত্র ব্যবহারকারী ‘সমাজের অপেক্ষাকৃত বিত্তবানদের’(কমিশনের চেয়ারম্যানের ভাষায়) প্রতি আবেদন বা অনুরোধ হয়ে থাকে, তবে তা রাখা-না রাখার বিষয়টি নির্ভর করছে ব্যবহারকারীর ওপর।
একটি টিভি চ্যানেলে দেখেছি, বিইআরসির একজন সদস্য বলেছেন, কেউ এই সময়ে এসি ব্যবহার করলে তার বিদ্যুৎ-সংযোগ কেটে দেওয়া হতে পারে। অন্যদিকে প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ‘চলমান নাজুক বিদ্যুৎ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য দেশবাসীকে দুটি নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এক. বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় (পিক আওয়ার) সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত হাসপাতাল ও হোটেল-রেস্তোরাঁ ছাড়া সর্বত্র শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বন্ধ রাখা। দুই. অন্য সময়ে (অফ পিক আওয়ারে) ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এসি না চালানো।’ প্রতিবেদনে এর পরপরই বলা হয়েছে, ‘বিইআরসি আইন ২০০৩-এর ২২(ক) ও ২২(ড) ধারার ক্ষমতাবলে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ বিষয়টি যদি শুধু শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্রের ব্যবহারকারীদের প্রতি অনুরোধ বা আবেদন হতো, তবে এ ব্যাপারে ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে’ ব্যবস্থা নিতে ‘নির্দেশ’ দেওয়ার কোনো কারণ ছিল না। তাই ধরে নিতে হচ্ছে, বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র বন্ধ রাখা ও অন্য সময়ে তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে না রাখার বিষয়টি একটি নির্দেশ এবং এটা মেনে চলা সব নাগরিকের দায়িত্ব। আইন অনুযায়ী এ ধরনের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা বিইআরসির রয়েছে।
বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের ঘাটতি সরকারি হিসাবে প্রায় এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের মতো। এই ঘাটতি সামাল দেওয়ার পাশাপাশি চলতি বোরো মৌসুমে সেচের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এবং আজ থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে তাদের দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা সত্যিই এক কঠিন কাজ। বিইআরসি সে বিবেচনা থেকেই পিক আওয়ারে এসি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সবাই সেটা মেনে চললে ২০০, ৩০০ বা ৫০০—যত মেগাওয়াটই হোক না কেন, বিদ্যুতের যে সাশ্রয় হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই নির্দেশ কি জনগণ মেনে চলবে? যদি মেনে না চলে তবে বাস্তবিকভাবে কি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব? যদি জনগণ মেনে না চলে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া না যায়, তবে এ ধরনের নির্দেশের যৌক্তিকতা কী?
বাস্তবতা হচ্ছে, এই শহরের কোথায় কে কার বাসায় সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ১১টার মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র চালাচ্ছেন কি না তার তদারক করা কার্যত অসম্ভব, অবাস্তবও। সে ক্ষেত্রে নির্দেশ না দিয়ে এই সময় এসি বন্ধ রাখার জন্য জনগণের প্রতি অনুরোধ জানালেই সম্ভবত বিইআরসি বুদ্ধিমানের কাজ করত। কারণ, ফল আসলে একই পাওয়া যাবে। যাঁরা এ সময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র বন্ধ রাখবেন, তাঁরা তাদের নিজ দায়িত্ববোধ থেকেই বন্ধ রাখবেন বা অন্য সময়ে তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামাবেন না। আরও একটি বাস্তব সমস্যা হচ্ছে, এমন অনেক অফিস ও প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলোর অভ্যন্তরীণ সজ্জা এমনভাবে করা যে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্রনির্ভর। অনেক প্রতিষ্ঠানে ফ্যানের ব্যবস্থা নেই, বাতাস চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় জানালাও নেই। কেন এ ধরনের অভ্যন্তরীণ সজ্জা করা হয়েছে সেটা ভিন্ন প্রশ্ন; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এ ধরনের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সে অফিসগুলো বন্ধ রাখতে হবে।
বর্তমানে রাত আটটার পর বিপণিকেন্দ্র ও দোকানপাট বন্ধের সরকারি নির্দেশ কার্যকর রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, কিছু উল্লেখযোগ্য বিপণিকেন্দ্র ছাড়া অধিকাংশ দোকানপাট রাত ১১/১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। অর্থাৎ নির্দেশ থাকার পরও অনেকে তা মানছেন না এবং এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না। সরকারের তরফ থেকে কোনো নির্দেশ দেওয়া হলে তা যদি যথাযথভাবে কার্যকর করা না যায় তবে সে ধরনের নির্দেশ না দেওয়াই ভালো। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসি বন্ধের নির্দেশ কার্যকর করার চেয়ে এটা বরং অনেক সহজ কাজ। সরকারের উচিত আগে রাত আটটার মধ্যে দোকানপাট বন্ধের নির্দেশটি যথাযথভাবে কার্যকর করার চেষ্টা করা।
বিদ্যুৎ-সংকট এখন যে পর্যায়ে গেছে, তাতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের নানা পথ বের করার কোনো বিকল্প নেই। সন্দেহ নেই যে আমরা অনেকেই বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী নই। অপচয়ও করে থাকি অনেকে। আবার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের অনেক সহজ উপায়ও আমাদের জানা নেই। ফলে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য জনগণকে সচেতন ও উৎসাহিত করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। আমরা প্রায় সবাই রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে আমাদের টিভি চালাই। এর জন্য টিভিতে যে লাল বাতিটি জ্বলে, তাতেও বাড়তি বিদ্যুৎ খরচ হয়। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে যদি সুইচটি পুরো বন্ধ করে বের হওয়া যায়, তাতেও বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। যাঁদের বাসায় চার থেকে ছয়টি বাতি জ্বলে, তাঁরা একটু সচেতন হলেই অন্তত দুটি বাতি কম জ্বালিয়ে তাঁদের কাজ সারতে পারেন। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় যেন আমরা কোনোভাবেই ভুলেও কোনো রুমের বাতি জ্বালিয়ে রেখে বা ফ্যান ছেড়ে বের না হই। এ ধরনের ছোট ছোট সচেতনতা ও প্রতি পরিবারের একটু একটু কম বিদ্যুৎ খরচ আমাদের সবাইকেই স্বস্তি দিতে পারে।
ভারতের টিভি চ্যানেলগুলোতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন দেখেছি। অর্থমন্ত্রী মঙ্গলবার দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট সম্পর্কে বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। আমরা তবে কেন বিদ্যুৎ বা জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা আরও জোরের সঙ্গে করছি না? আমাদের দেশের অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান সামাজিক দায়বদ্ধতার (করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবলিটি) জায়গা থেকে নানা ধরনের সচেতনামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে। বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে জনগণকে উৎসাহিত ও উদ্দীপিত করতে প্রচার-প্রচারণা চালাতে তারা এগিয়ে আসছেন না কেন? বিদ্যুৎ সমস্যাতো এখন সবচেয়ে বড় জাতীয় সমস্যায় পরিনত হয়েছে।
এ কে এম জাকারিয়া: সাংবাদিক।
akmzakaria@gmail.com
একটি টিভি চ্যানেলে দেখেছি, বিইআরসির একজন সদস্য বলেছেন, কেউ এই সময়ে এসি ব্যবহার করলে তার বিদ্যুৎ-সংযোগ কেটে দেওয়া হতে পারে। অন্যদিকে প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ‘চলমান নাজুক বিদ্যুৎ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য দেশবাসীকে দুটি নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এক. বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় (পিক আওয়ার) সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত হাসপাতাল ও হোটেল-রেস্তোরাঁ ছাড়া সর্বত্র শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বন্ধ রাখা। দুই. অন্য সময়ে (অফ পিক আওয়ারে) ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এসি না চালানো।’ প্রতিবেদনে এর পরপরই বলা হয়েছে, ‘বিইআরসি আইন ২০০৩-এর ২২(ক) ও ২২(ড) ধারার ক্ষমতাবলে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ বিষয়টি যদি শুধু শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্রের ব্যবহারকারীদের প্রতি অনুরোধ বা আবেদন হতো, তবে এ ব্যাপারে ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে’ ব্যবস্থা নিতে ‘নির্দেশ’ দেওয়ার কোনো কারণ ছিল না। তাই ধরে নিতে হচ্ছে, বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র বন্ধ রাখা ও অন্য সময়ে তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে না রাখার বিষয়টি একটি নির্দেশ এবং এটা মেনে চলা সব নাগরিকের দায়িত্ব। আইন অনুযায়ী এ ধরনের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা বিইআরসির রয়েছে।
বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের ঘাটতি সরকারি হিসাবে প্রায় এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের মতো। এই ঘাটতি সামাল দেওয়ার পাশাপাশি চলতি বোরো মৌসুমে সেচের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এবং আজ থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে তাদের দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা সত্যিই এক কঠিন কাজ। বিইআরসি সে বিবেচনা থেকেই পিক আওয়ারে এসি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সবাই সেটা মেনে চললে ২০০, ৩০০ বা ৫০০—যত মেগাওয়াটই হোক না কেন, বিদ্যুতের যে সাশ্রয় হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই নির্দেশ কি জনগণ মেনে চলবে? যদি মেনে না চলে তবে বাস্তবিকভাবে কি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব? যদি জনগণ মেনে না চলে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া না যায়, তবে এ ধরনের নির্দেশের যৌক্তিকতা কী?
বাস্তবতা হচ্ছে, এই শহরের কোথায় কে কার বাসায় সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ১১টার মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র চালাচ্ছেন কি না তার তদারক করা কার্যত অসম্ভব, অবাস্তবও। সে ক্ষেত্রে নির্দেশ না দিয়ে এই সময় এসি বন্ধ রাখার জন্য জনগণের প্রতি অনুরোধ জানালেই সম্ভবত বিইআরসি বুদ্ধিমানের কাজ করত। কারণ, ফল আসলে একই পাওয়া যাবে। যাঁরা এ সময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র বন্ধ রাখবেন, তাঁরা তাদের নিজ দায়িত্ববোধ থেকেই বন্ধ রাখবেন বা অন্য সময়ে তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামাবেন না। আরও একটি বাস্তব সমস্যা হচ্ছে, এমন অনেক অফিস ও প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলোর অভ্যন্তরীণ সজ্জা এমনভাবে করা যে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্রনির্ভর। অনেক প্রতিষ্ঠানে ফ্যানের ব্যবস্থা নেই, বাতাস চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় জানালাও নেই। কেন এ ধরনের অভ্যন্তরীণ সজ্জা করা হয়েছে সেটা ভিন্ন প্রশ্ন; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এ ধরনের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সে অফিসগুলো বন্ধ রাখতে হবে।
বর্তমানে রাত আটটার পর বিপণিকেন্দ্র ও দোকানপাট বন্ধের সরকারি নির্দেশ কার্যকর রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, কিছু উল্লেখযোগ্য বিপণিকেন্দ্র ছাড়া অধিকাংশ দোকানপাট রাত ১১/১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। অর্থাৎ নির্দেশ থাকার পরও অনেকে তা মানছেন না এবং এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না। সরকারের তরফ থেকে কোনো নির্দেশ দেওয়া হলে তা যদি যথাযথভাবে কার্যকর করা না যায় তবে সে ধরনের নির্দেশ না দেওয়াই ভালো। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসি বন্ধের নির্দেশ কার্যকর করার চেয়ে এটা বরং অনেক সহজ কাজ। সরকারের উচিত আগে রাত আটটার মধ্যে দোকানপাট বন্ধের নির্দেশটি যথাযথভাবে কার্যকর করার চেষ্টা করা।
বিদ্যুৎ-সংকট এখন যে পর্যায়ে গেছে, তাতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের নানা পথ বের করার কোনো বিকল্প নেই। সন্দেহ নেই যে আমরা অনেকেই বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী নই। অপচয়ও করে থাকি অনেকে। আবার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের অনেক সহজ উপায়ও আমাদের জানা নেই। ফলে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য জনগণকে সচেতন ও উৎসাহিত করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। আমরা প্রায় সবাই রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে আমাদের টিভি চালাই। এর জন্য টিভিতে যে লাল বাতিটি জ্বলে, তাতেও বাড়তি বিদ্যুৎ খরচ হয়। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে যদি সুইচটি পুরো বন্ধ করে বের হওয়া যায়, তাতেও বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। যাঁদের বাসায় চার থেকে ছয়টি বাতি জ্বলে, তাঁরা একটু সচেতন হলেই অন্তত দুটি বাতি কম জ্বালিয়ে তাঁদের কাজ সারতে পারেন। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় যেন আমরা কোনোভাবেই ভুলেও কোনো রুমের বাতি জ্বালিয়ে রেখে বা ফ্যান ছেড়ে বের না হই। এ ধরনের ছোট ছোট সচেতনতা ও প্রতি পরিবারের একটু একটু কম বিদ্যুৎ খরচ আমাদের সবাইকেই স্বস্তি দিতে পারে।
ভারতের টিভি চ্যানেলগুলোতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন দেখেছি। অর্থমন্ত্রী মঙ্গলবার দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট সম্পর্কে বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। আমরা তবে কেন বিদ্যুৎ বা জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা আরও জোরের সঙ্গে করছি না? আমাদের দেশের অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান সামাজিক দায়বদ্ধতার (করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবলিটি) জায়গা থেকে নানা ধরনের সচেতনামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে। বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে জনগণকে উৎসাহিত ও উদ্দীপিত করতে প্রচার-প্রচারণা চালাতে তারা এগিয়ে আসছেন না কেন? বিদ্যুৎ সমস্যাতো এখন সবচেয়ে বড় জাতীয় সমস্যায় পরিনত হয়েছে।
এ কে এম জাকারিয়া: সাংবাদিক।
akmzakaria@gmail.com
No comments