সময়ের প্রতিবিম্ব-প্রশান্ত জনগণের নিশ্চিন্ত সরকার by এবিএম মূসা
সম্প্রতি চট্টগ্রামে দলীয় কর্মী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একটি মহল দেশে অশান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে।’ তাঁর বক্তব্যটির পটভূমি ছিল অশান্ত পার্বত্যাঞ্চল। তাঁর বক্তব্য ছিল একটি বিশেষ অঞ্চলের পরিস্থিতি সম্পর্কীয়। জনজীবনে দুর্ভোগের কারণে কোনো এক সময় সারা দেশ অশান্ত হয়ে উঠতে পারে, তেমন কোনো আভাস বিশেষ
মহলের প্রতি তাঁর পরোক্ষ অভিযোগে খুঁজে পাইনি। তাঁর বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে আমি বলব, ‘কোনো বিশেষ মহল’ সুদূর পার্বত্যাঞ্চলে কয়েকটি দিন একটি অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। সেই অশান্তির কারণে, বিশেষ মহলের ভূমিকা নিয়ে অনেকে নানা ধরনের বিশ্লেষণ করেছেন। কারণ যা-ই হোক, আপাতত অঞ্চলটি পুরোপুরি শান্ত না হলেও সেখানে ‘অশান্তি’ নেই। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অভিযুক্ত অনুল্লিখিত বিশেষ মহলের সামগ্রিক অশান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশের এক প্রান্তে অবস্থিত একটি অঞ্চল নিয়ে আপাতত প্রধানমন্ত্রীর দুশ্চিন্তার অবসান ঘটেছে। কিন্তু পুরো দেশের কী অবস্থা, তা নিয়ে কি প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর সরকারের কোনো দুর্ভাবনা আছে? প্রধানমন্ত্রী কী ভাবছেন জানি না। আমার মনে হয় কোনো মহলের ‘উসকানির ও অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি’র যথেষ্ট কারণ থাকা সত্ত্বেও কেউ তেমনটি করছেন, এমনটি মনে হচ্ছে না। দেশবাসী অশান্ত হওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকা সত্ত্বেও শান্ত রয়েছে। বাস্তবে সরকারের কতিপয় ব্যর্থতা, অপারগতা আর তুঘলকি সিদ্ধান্তের কারণে জনজীবনের সব বিপর্যয়ের মধ্যেও তারা অত্যন্ত ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে শান্ত রয়েছে। এর কারণ, জনগণ দেশে বিদ্যমান শত সমস্যা সমাধানে তাদের অপরিসীম দুর্ভোগ লাঘবে বর্তমান সরকারকে আরও সময় দিতে চায়। কিন্তু দুশ্চিন্তা হচ্ছে, ‘কত দিন?’ আমার প্রশ্নটির ব্যুৎপত্তি হচ্ছে, গত কয়েক সপ্তাহের দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন অশান্তি সৃষ্টির খবর পড়ছি। সেই অশান্তির কারণ ‘বিশেষ মহলের কোনো ষড়যন্ত্র বা উসকানি’ নয়।
অদূর ভবিষ্যতে অশান্তি বিস্তারের আমার আশঙ্কা নিয়ে আলোচনার প্রথমে কয়েক দিন আগে প্রথম আলোয় আনিসুল হক শিক্ষাঙ্গনে অশান্তির বিবরণ দিয়েছেন। ভর্তি-বাণিজ্য, কলেজে চাঁদাবাজি, সরকারদলীয় ছাত্রদের দ্বিপক্ষীয় গুলিবিনিময়ের কথা বলেছেন। ইডেন কলেজে আর ময়মনসিংহের আনন্দমোহনে যা ঘটেছে, তা অবশ্য তিনি উল্লেখ করেননি। আনিসুল হক তাঁর গদ্যকার্টুনীয় রীতিতে বলতে চেয়েছেন, শিক্ষাঙ্গনে ‘অশান্ত’ পরিবেশ বিরাজ করছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোনো ‘বিশেষ মহল শিক্ষাঙ্গনে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে সরকারকে বিব্রত করছে’ এমন কথা বলেননি। তিনি বিশেষ মহলটিকে জানেন, তাই সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন। এই বিচ্ছেদের বিষয়টি অবশ্য আমার হূদয়ঙ্গম হয়নি, কারণ তাঁর তো ‘অভিমান’ করার কথা নয়। তিনি ‘অশান্তি’ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেননি কেন?
যাক গে শিক্ষাঙ্গন প্রসঙ্গ। সারা দেশের কথাই বলি। একটু-আধটু অশান্ত হয়ে উঠেছে দেশের প্রতন্ত অঞ্চল। এর কারণ জঙ্গিবাদের বিস্তার নয়, বিরোধী দলের হুঙ্কার নয়, এমনকি বিশেষ মহলের উসকানি বা মদদও নয়। তবে সমগ্র দেশ নয়, গ্রামগঞ্জের কয়েকটি এলাকা মাঝেমধ্যে অশান্ত হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির জন্য ক্ষোভে ছোটখাটো বিস্ফোরণের খবর রোজই পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। বিদ্যুতের দাবিতে বগুড়া, চাঁপাই, ঝিনাইদহ, নড়াইল ও আরও ছোটখাটো এলাকায় ‘জনগণ’ অশান্ত হয়ে ঘেরাও-ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ করেছে। কালক্রমে অশান্তির এই বিক্ষিপ্ত বহিঃপ্রকাশ বিস্তার লাভ করবে, ‘সে আগুন ছড়িয়ে যাবে’ সবখানে। গ্রামের মানুষের প্রতিক্রিয়া আমার পুরোপুরি জানা নেই। শহরের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা করার প্রক্রিয়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে তুঘলকি মনে হলেও বিদ্যুৎ নিয়ে তেমন ব্যাপক কোনো বিক্ষোভের আলামত দেখা যায়নি, তাই কোনো অঘটন ঘটেনি। দুর্ভোগের শিকার শহরবাসীও আপাতত সহনশীল। বিএনপির সালাহউদ্দিনের মতো বর্তমান কোনো সাংসদ বা মন্ত্রীকে এখনো হাঁটুর ওপর প্যান্ট তুলে দৌড় দেওয়ায়নি জনগণ।
বেশ কয়েক দিন সংবাদপত্রের পাতায় বিরাট অক্ষরে লাল কালিতে ছয়-আট কলামের শিরোনাম হয়েছে ‘পানির জন্য হাহাকার’। হাহাকার যেন হামলায় রূপ নিতে না পারে, তাই জনগণকে ‘শান্ত’ রাখতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে সরকার নিশ্চিত হয়েছে। গ্যাস নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই—এত সব ‘নেই’ সত্ত্বেও দেশের দু-একটি জায়গায় সংঘটিত দু-চারটি ভাঙচুর-ঘেরাও অগ্রাহ্য করে দেশে ‘শান্তি’ বিরাজ করছে। আশা করি আমার পরবর্তী মন্তব্য পড়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করবেন না, তাঁদের সাঙ্গোপাঙ্গরা ঠ্যাঙানি দেবেন না। মন্তব্যটি হচ্ছে, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এত সহনশীল হয়ে উঠল কবে থেকে অথবা কেন? আরও অবাক ভাবনাটি হচ্ছে, এত সব ‘নেই’ নির্ির্বকারভাবে অতীতে এ দেশের জনগণ কখনো মেনে নেয়নি, এখন নিচ্ছে কেন? কারণ সংসদে তিন-চতুর্থাংশ আসন দিয়ে যাঁদের তারা ক্ষমতায় বসিয়েছে, তাঁদের, বিশেষ করে সরকারের ওপর আস্থা এখনো হারায়নি। ভাবছে, এখন ‘নেই’ তাতে কি, আসবে। আমি ভাবছি, সরকার সব ‘বন্ধ’ করতে বলছে, খোলার কী ব্যবস্থা করছে তা তো স্বচ্ছ নয়। নেই-নেই বলার ইতি ঘটিয়ে এখন যেমন বিদ্যুৎ এলে ‘এসেছে-এসেছে’ বলে সবাই হইহই করে ওঠে, কবে সেই সমবেত উল্লাসধ্বনি শোনা যাবে? গ্যাস আর পানি কবে পাওয়া যাবে? কবে যথাসময়ে রান্না করা যাবে? সরকারের কর্মকাণ্ড, পরিচালনারীতি, ভারপ্রাপ্তদের যোগ্যতা, কর্মকাণ্ডের ধরন আর তুঘলকি সিদ্ধান্ত থেকে এ প্রশ্নের জবাব পাচ্ছি না। জনগণও এই সব প্রশ্নের সঠিক জবাব না পেলে কত দিন শান্ত থেকে সরকারকে নিশ্চিন্ত রাখবে?
সর্বশেষ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনে পড়ল একটি বিষয়—খলিফা হজরত উমর (রা.) রাতে ছদ্মবেশে জনগণের হালহকিকত দেখতে একটি গ্রামে এলেন। দেখলেন, এক মহিলা হাঁড়িতে শুধু পানি সেদ্ধ করছেন। ছেলেমেয়েরা চারপাশে তাঁকে ঘিরে রয়েছে। খলিফা জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন, নিঃস্ব মহিলা ক্ষুুধার্ত ছেলেমেয়েদের শান্ত রাখার জন্য ছেলেদের বলেছেন, হাঁড়িতে গোশত সেদ্ধ করছেন। অথচ হাঁড়িতে শুধু পানি; গোশত নেই। ছেলেমেয়েদের আশ্বাস দিচ্ছেন শিগগিরই খাবার পাওয়ার। জনগণও সেই ক্ষুধার্ত ছেলেমেয়েগুলোর মতো অপেক্ষা করছে। প্রশান্ত জনগণের এই অপেক্ষা কবে শেষ হবে, এর ওপর নির্ভর করছে এ সরকার কত দিন নিশ্চিন্ত থাকতে পারবে।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
বাংলাদেশের এক প্রান্তে অবস্থিত একটি অঞ্চল নিয়ে আপাতত প্রধানমন্ত্রীর দুশ্চিন্তার অবসান ঘটেছে। কিন্তু পুরো দেশের কী অবস্থা, তা নিয়ে কি প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর সরকারের কোনো দুর্ভাবনা আছে? প্রধানমন্ত্রী কী ভাবছেন জানি না। আমার মনে হয় কোনো মহলের ‘উসকানির ও অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি’র যথেষ্ট কারণ থাকা সত্ত্বেও কেউ তেমনটি করছেন, এমনটি মনে হচ্ছে না। দেশবাসী অশান্ত হওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকা সত্ত্বেও শান্ত রয়েছে। বাস্তবে সরকারের কতিপয় ব্যর্থতা, অপারগতা আর তুঘলকি সিদ্ধান্তের কারণে জনজীবনের সব বিপর্যয়ের মধ্যেও তারা অত্যন্ত ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে শান্ত রয়েছে। এর কারণ, জনগণ দেশে বিদ্যমান শত সমস্যা সমাধানে তাদের অপরিসীম দুর্ভোগ লাঘবে বর্তমান সরকারকে আরও সময় দিতে চায়। কিন্তু দুশ্চিন্তা হচ্ছে, ‘কত দিন?’ আমার প্রশ্নটির ব্যুৎপত্তি হচ্ছে, গত কয়েক সপ্তাহের দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন অশান্তি সৃষ্টির খবর পড়ছি। সেই অশান্তির কারণ ‘বিশেষ মহলের কোনো ষড়যন্ত্র বা উসকানি’ নয়।
অদূর ভবিষ্যতে অশান্তি বিস্তারের আমার আশঙ্কা নিয়ে আলোচনার প্রথমে কয়েক দিন আগে প্রথম আলোয় আনিসুল হক শিক্ষাঙ্গনে অশান্তির বিবরণ দিয়েছেন। ভর্তি-বাণিজ্য, কলেজে চাঁদাবাজি, সরকারদলীয় ছাত্রদের দ্বিপক্ষীয় গুলিবিনিময়ের কথা বলেছেন। ইডেন কলেজে আর ময়মনসিংহের আনন্দমোহনে যা ঘটেছে, তা অবশ্য তিনি উল্লেখ করেননি। আনিসুল হক তাঁর গদ্যকার্টুনীয় রীতিতে বলতে চেয়েছেন, শিক্ষাঙ্গনে ‘অশান্ত’ পরিবেশ বিরাজ করছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোনো ‘বিশেষ মহল শিক্ষাঙ্গনে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে সরকারকে বিব্রত করছে’ এমন কথা বলেননি। তিনি বিশেষ মহলটিকে জানেন, তাই সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন। এই বিচ্ছেদের বিষয়টি অবশ্য আমার হূদয়ঙ্গম হয়নি, কারণ তাঁর তো ‘অভিমান’ করার কথা নয়। তিনি ‘অশান্তি’ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেননি কেন?
যাক গে শিক্ষাঙ্গন প্রসঙ্গ। সারা দেশের কথাই বলি। একটু-আধটু অশান্ত হয়ে উঠেছে দেশের প্রতন্ত অঞ্চল। এর কারণ জঙ্গিবাদের বিস্তার নয়, বিরোধী দলের হুঙ্কার নয়, এমনকি বিশেষ মহলের উসকানি বা মদদও নয়। তবে সমগ্র দেশ নয়, গ্রামগঞ্জের কয়েকটি এলাকা মাঝেমধ্যে অশান্ত হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির জন্য ক্ষোভে ছোটখাটো বিস্ফোরণের খবর রোজই পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। বিদ্যুতের দাবিতে বগুড়া, চাঁপাই, ঝিনাইদহ, নড়াইল ও আরও ছোটখাটো এলাকায় ‘জনগণ’ অশান্ত হয়ে ঘেরাও-ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ করেছে। কালক্রমে অশান্তির এই বিক্ষিপ্ত বহিঃপ্রকাশ বিস্তার লাভ করবে, ‘সে আগুন ছড়িয়ে যাবে’ সবখানে। গ্রামের মানুষের প্রতিক্রিয়া আমার পুরোপুরি জানা নেই। শহরের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা করার প্রক্রিয়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে তুঘলকি মনে হলেও বিদ্যুৎ নিয়ে তেমন ব্যাপক কোনো বিক্ষোভের আলামত দেখা যায়নি, তাই কোনো অঘটন ঘটেনি। দুর্ভোগের শিকার শহরবাসীও আপাতত সহনশীল। বিএনপির সালাহউদ্দিনের মতো বর্তমান কোনো সাংসদ বা মন্ত্রীকে এখনো হাঁটুর ওপর প্যান্ট তুলে দৌড় দেওয়ায়নি জনগণ।
বেশ কয়েক দিন সংবাদপত্রের পাতায় বিরাট অক্ষরে লাল কালিতে ছয়-আট কলামের শিরোনাম হয়েছে ‘পানির জন্য হাহাকার’। হাহাকার যেন হামলায় রূপ নিতে না পারে, তাই জনগণকে ‘শান্ত’ রাখতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে সরকার নিশ্চিত হয়েছে। গ্যাস নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই—এত সব ‘নেই’ সত্ত্বেও দেশের দু-একটি জায়গায় সংঘটিত দু-চারটি ভাঙচুর-ঘেরাও অগ্রাহ্য করে দেশে ‘শান্তি’ বিরাজ করছে। আশা করি আমার পরবর্তী মন্তব্য পড়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করবেন না, তাঁদের সাঙ্গোপাঙ্গরা ঠ্যাঙানি দেবেন না। মন্তব্যটি হচ্ছে, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এত সহনশীল হয়ে উঠল কবে থেকে অথবা কেন? আরও অবাক ভাবনাটি হচ্ছে, এত সব ‘নেই’ নির্ির্বকারভাবে অতীতে এ দেশের জনগণ কখনো মেনে নেয়নি, এখন নিচ্ছে কেন? কারণ সংসদে তিন-চতুর্থাংশ আসন দিয়ে যাঁদের তারা ক্ষমতায় বসিয়েছে, তাঁদের, বিশেষ করে সরকারের ওপর আস্থা এখনো হারায়নি। ভাবছে, এখন ‘নেই’ তাতে কি, আসবে। আমি ভাবছি, সরকার সব ‘বন্ধ’ করতে বলছে, খোলার কী ব্যবস্থা করছে তা তো স্বচ্ছ নয়। নেই-নেই বলার ইতি ঘটিয়ে এখন যেমন বিদ্যুৎ এলে ‘এসেছে-এসেছে’ বলে সবাই হইহই করে ওঠে, কবে সেই সমবেত উল্লাসধ্বনি শোনা যাবে? গ্যাস আর পানি কবে পাওয়া যাবে? কবে যথাসময়ে রান্না করা যাবে? সরকারের কর্মকাণ্ড, পরিচালনারীতি, ভারপ্রাপ্তদের যোগ্যতা, কর্মকাণ্ডের ধরন আর তুঘলকি সিদ্ধান্ত থেকে এ প্রশ্নের জবাব পাচ্ছি না। জনগণও এই সব প্রশ্নের সঠিক জবাব না পেলে কত দিন শান্ত থেকে সরকারকে নিশ্চিন্ত রাখবে?
সর্বশেষ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনে পড়ল একটি বিষয়—খলিফা হজরত উমর (রা.) রাতে ছদ্মবেশে জনগণের হালহকিকত দেখতে একটি গ্রামে এলেন। দেখলেন, এক মহিলা হাঁড়িতে শুধু পানি সেদ্ধ করছেন। ছেলেমেয়েরা চারপাশে তাঁকে ঘিরে রয়েছে। খলিফা জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন, নিঃস্ব মহিলা ক্ষুুধার্ত ছেলেমেয়েদের শান্ত রাখার জন্য ছেলেদের বলেছেন, হাঁড়িতে গোশত সেদ্ধ করছেন। অথচ হাঁড়িতে শুধু পানি; গোশত নেই। ছেলেমেয়েদের আশ্বাস দিচ্ছেন শিগগিরই খাবার পাওয়ার। জনগণও সেই ক্ষুধার্ত ছেলেমেয়েগুলোর মতো অপেক্ষা করছে। প্রশান্ত জনগণের এই অপেক্ষা কবে শেষ হবে, এর ওপর নির্ভর করছে এ সরকার কত দিন নিশ্চিন্ত থাকতে পারবে।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
No comments