স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ভাতিজা সাংবাদিক পেটালেন

'আমার অনেক দুষ্টু আত্মীয় আছে।' পাবনার বেড়ায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর ভাতিজার নেতৃত্বে কালের কণ্ঠের আঞ্চলিক প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুনের ওপর হামলার পর প্রতিমন্ত্রী এমন স্বীকারোক্তি করেছেন। পাবনা-১ নির্বাচনী এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কালের কণ্ঠে প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই হামলার ঘটনায় ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।


আহত মামুন, তাঁর পরিবারের সদস্য ও বেড়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা জানান, গতকাল সোমবার সকালে মামুন বেড়া বাজার থেকে থানায় যাওয়ার পথে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বড় ভাই বদিউল আলমের ছেলে আমিনুল ইসলাম ৮-১০ জন সন্ত্রাসীকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালান। সন্ত্রাসীরা লোহার রড ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে মামুনকে আহত করে। আশপাশের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েভর্তি করে। অবস্থার অবনতি ঘটায় দুপুরেই তাঁকে পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হামলায় জড়িত অন্যরা হলো নজরুল, ফিরোজ, হালিম, জাকির, সাগর প্রমুখ।
ঘটনার পর দুপুরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর সঙ্গে আলাপকালে তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, 'গ্রামের ছেলেরা একটা গণ্ডগোল করেছে বলে শুনেছি। আমি পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।' এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর ভাতিজা সম্পৃক্ত রয়েছে জানানো হলে তিনি বলেন, 'আমার অনেক দুষ্টু আত্মীয় আছে। তাদেরকে আমার সীমানায় ভিড়তে দেই না। আমি রাজনীতিবিদদের নিয়ে রাজনীতি করি। এ ঘটনায় আমার নাম জড়ানো দুঃখজনক।'
এদিকে মামুনের বড় ভাই আল মাহমুদ সরকার গতকাল বেড়া থানায় এজাহার জমা দিয়েছেন। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১১ মে কালের কণ্ঠের ১৪ পাতায় পাবনা-১ নির্বাচনী এলাকা বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার মাঠের রাজনীতি নিয়ে রিপোর্ট করেন। সেখানে বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গোলজার হোসেনসহ স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে মোবাইল ফোনে মামুনকে অব্যাহতভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। গতকাল সকালে মামুন বিষয়টি পুলিশকে জানাতে থানায় যাওয়ার সময় আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর জখম করে।
পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মামুনকে গতকাল দেখতে যান জেলা প্রশাসক এম সাইদুল হক চুন্নু। তিনি এই সন্ত্রাসী হামলায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর জানান, থানায় এজাহার দেওয়া হয়েছে। পুলিশ আসামিদের ধরতে তৎপর রয়েছে। বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হাই জানান, আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রতিবাদ : এদিকে মামুনের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে বেড়া উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গতকাল প্রতিবাদ সভা হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি সরদার আরিফুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সাংবাদিক বরুণ রায়, শফিউল আযম, ওয়াহিদুজ্জামান, বসন্ত দাস প্রমুখ। ইউনিটির পক্ষ থেকে সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ সকাল ১০টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যায় পাবনা প্রেসক্লাবেও প্রতিবাদ সভা হয়। ক্লাব সভাপতি শিবজিত নাগের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন ক্লাব সম্পাদক আহমেদ উল হক রানা, সাংবাদিক আনোয়ারুল হক, কামাল সিদ্দিকী, আঁখিনূর ইসলাম রেমন, হাবিবুর রহমান স্বপন, এ বি এম ফজলুর রহমান, আখতারুজ্জামান আখতার, উৎপল মির্জা, রুমী খোন্দকার প্রমুখ। বক্তারা অবিলম্বে চিহ্নিত ওইসব সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
সেই প্রতিবেদনের প্রতিবাদ
গত ১১ মে কালের কণ্ঠের ১৪ পৃষ্ঠায় 'টিআর-কাবিখা-টেন্ডার পান এমপি টুকুর স্বজনরা' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু। গতকাল সকালে ওই সাংবাদিকের ওপর তার ভাতিজার নেতৃত্বে হামলার পর বিকেলে তার পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফুর রহমান স্বাক্ষরিত এই প্রতিবাদ পাঠানো হয়।
প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, সরকারি বিধিমোতাবেক টিআর-কাবিখার উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাস্তবায়ন কমিটিতে প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন জড়িত ছিল না, এখনো নেই। তবে প্রতিমন্ত্রী প্রতি মাসে একাধিকবার পাবনায় তাঁর নির্বাচনী এলাকা (বেড়া-সাঁথিয়া) সফর করে সেখানে উন্নয়ন কর্মসূচির তদারকি করেন ও সাংগঠনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দেন। এতে দাবি করা হয়েছে, রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি ও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার হীন প্রয়াসে এরকম বানোয়াট গল্প ছাপানো হয়েছে।
আমাদের বক্তব্য : প্রকাশিত সংবাদে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক মনগড়া কোনো বক্তব্য পরিবেশন করেননি। সংশ্লিষ্ট জেলার দলীয় নেতাদের বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদনটি পরিবেশন করা হয়েছে। এতে বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. গোলজার হোসেনের বক্তব্য সনি্নবেশিত রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, 'আমি ৪০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে রাজনীতি ছেড়ে ঘরে এসে উঠেছি। কারণ এখন টেন্ডারবাজি, টিআর-কাবিখা লুটপাট, টাকার বিনিময়ে নিয়োগবাণিজ্য ছাড়া দলীয় কার্যক্রম প্রায় কিছুই হচ্ছে না। যা কিছু সুযোগ-সুবিধা তার সবকিছুই পাচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী কিছু পকেটকর্মী, ভাই ও আত্মীয়-স্বজন।
পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য আ হ ম ফজলুর রহমান মাসুদের বক্তব্যও সংবাদে পরিবেশন করা হয়। মাসুদ বলেন, সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু তার ছোট ভাই আবদুল বাতেনকেন্দ্রিক রাজনীতি করেন। আবদুল বাতেন তথাকথিত জামায়াত-বিএনপি সমর্থকদের নিয়ে সভা-মতবিনিময় করলেও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করেন না।

No comments

Powered by Blogger.