প্রবাসের শ্রমবাজার-সম্ভাবনা হাতছাড়া হতে দেবেন না
জনশক্তি রফতানি খাত চাঙ্গা_ এ খবরটি উৎসাহব্যঞ্জক। সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে প্রায় আড়াই লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে কাজের জন্য গিয়েছে। গত বছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে রফতানি বেড়েছে ৬২ শতাংশ।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আশা, গত বছর ৫ লাখ ৬৮ হাজার লোক দেশ ছেড়েছে কাজের সন্ধানে। এবারে আরও বেশি লোক যাবে। বিশেষভাবে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের পাঠানোর জন্য চেষ্টা চলছে। লিবিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে সেখানেও নতুন করে কাজের সুযোগ মিলতে পারে। এভাবে দেশের শ্রমবাজারে কাজের জন্য ভিড় করা বিপুলসংখ্যক মানুষের চাপ যেমন কমবে, তেমনি প্রবাস থেকে আসবে বাড়তি বৈদেশিক মুদ্রা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৪০ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিদের বিভিন্ন ধরনের সুবিধা প্রদানের নীতি অব্যাহত থাকলে রেমিট্যান্স বাড়তে থাকবে তাতে সন্দেহ নেই। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার কথা। প্রবাসে চাকরি নিয়ে যাওয়ার ব্যয় কমিয়ে আনা এবং এ সময়ে ঋণ প্রদানের জন্যও সরকারের প্রতিশ্রুতির যথাযথ বাস্তবায়ন হতে হবে। জনশক্তি রফতানির প্রক্রিয়ায় বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সক্রিয়তা অস্বীকারের উপায় নেই। তারা বাজার সন্ধান এবং চাহিদা অনুযায়ী নানা মেয়াদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী প্রেরণ করেছে। কিন্তু একই সঙ্গে বলতে হবে, অসাধু প্রতিষ্ঠানের দাপট-দৌরাত্ম্যও রয়ে গেছে অসহনীয় পর্যায়ে। বাড়তি অর্থ গ্রহণসহ নানা ধরনের অনিয়মের সঙ্গে তারা জড়িত এবং হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও শাস্তির ঘটনা কার্যত অনুপস্থিত। সার্কভুক্ত দেশ মালদ্বীপে বাংলাদেশি কর্মীদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেছেন সহযোগী দৈনিক প্রথম আলোর একজন প্রতিবেদক। সেখানে কয়েকদিন অবস্থানকালে তিনি জেনেছেন, মাত্র ৩ লাখ ২৮ হাজার লোকসংখ্যার এ দেশটিতে অন্তত ৫০ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন, যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই এবং অনেকেই এত অর্থ ব্যয় করে গিয়েছেন, যা দুই বছর কাজ করেও তুলতে পারেননি। তারা বৈধভাবেই সেখানে গিয়েছেন, কিন্তু দুই দেশের দালালচক্রের ফাঁদে পড়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। মালের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সামান্যই সহায়তা মিলছে_ এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী অনেকেরই। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এবং মালয়েশিয়ার দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সম্পর্কেও অভিযোগ একই ধরনের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি এ বিষয়ে কার্যকর কিছু করবে না? আমরা আশা করব যে, সরকার মালদ্বীপ এবং অন্য দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হবে। একই সঙ্গে কাজ হবে অসাধু প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ। জনশক্তি রফতানি খাতে ধস নামলে সার্বিক অর্থনীতিতে কী ভয়ানক প্রতিক্রিয়া পড়বে সেটা নিশ্চয়ই সরকার অনুধাবন করতে পারে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সচল রাখছেন প্রবাসে কর্মরত সাধারণ শ্রমিকরা। তাদের কাজের জন্য যাওয়ার ব্যয় কমাতে পারলে এবং সেখানে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ ও বেতন-ভাতা মিললে তারা আরও বেশি অর্থ পাঠাতে পারবেন। মুষ্টিমেয় অসাধু ব্যক্তির কারণে কেন এ সোনার ডিম দেওয়া হাঁসকে মেরে ফেলতে দেওয়া!
No comments