সহিংসতা ও সংঘর্ষ-কাম্য নয় এ রাজনৈতিক পরিবেশ

রাজনৈতিক পরিবেশ কি দিন দিন সাংঘর্ষিক হয়ে উঠছে? সাম্প্রতিক কিছু সহিংস ঘটনা থেকে এ প্রশ্নটাই এখন প্রবল হয়ে উঠছে। রবিবার চট্টগ্রামসহ সারা দেশে পুলিশের সঙ্গে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। শুধু চট্টগ্রামেই পুলিশসহ শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে গাড়িতে।


যানবাহন ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। রবিবারের চট্টগ্রাম যেন পরিণত হয়েছিল রণক্ষেত্রে। এ ঘটনায় চট্টগ্রামে ৪৭ জনকে আটক করা হয়।
রাজনীতিতে এমন সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে কেন? বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে জীবিত ফেরত, কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারসহ প্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে গত রবিবার সারা দেশে বিএনপিসহ ১৮ দলের বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। ছিল সমাবেশ। চট্টগ্রামের সেই সমাবেশে যোগ দিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে সমাবেশস্থলের দিকে আসতে থাকা মিছিলের সঙ্গে প্রথম পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের খবর জানাজানি হলে নগরীর সর্বত্র সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তা মারাত্মক রূপ নেয়। চট্টগ্রামে যে সংঘর্ষ হয়েছে, তার সঙ্গে কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া ঢাকার সংঘর্ষের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। রাজধানীতেও কিছুদিন আগে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছিল। চট্টগ্রামের সংঘর্ষের ব্যাপারে পুলিশ ও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে, বিরোধী দলের কর্মীরাই প্রথম পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান অভিযোগ করেন, পুলিশ পরিকল্পিতভাবে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তিনি এটিকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বলে উল্লেখ করেছেন। বিরোধী দলের এ অভিযোগ খণ্ডন করে পুলিশ বলেছে, ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ ও গণমিছিল উপলক্ষে বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন চত্বরে জোটের নেতা-কর্মীরা জড়ো হচ্ছিলেন। এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা সার্কিট হাউসের সামনে জড়ো হন। বিকেল ৪টার দিকে তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে নাসিমন ভবনের দিকে অগ্রসর হন। মিছিলটি কাজীর দেউড়ি মোড় পার হওয়ার সময় পুলিশ বাধা দেয়। প্রথমে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা হয় এবং পরে তাঁরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা পুলিশের দিকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছুড়ছিলেন। এ সময় তাঁরা লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশকে ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে পুলিশ পিছু হটে আসে। কাজীর দেউড়িতে জামায়াত-শিবিরের মিছিলের পর একই পথ দিয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির একটি মিছিলও নাসিমন ভবনের দিকে যাচ্ছিল। তারাও সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যায়। সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়লে নাসিমন ভবন চত্বরে আগে থেকে জড়ো হওয়া নেতা-কর্মীরাও রাস্তায় এসে পুলিশি বাধার প্রতিবাদ জানান। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের ধাওয়া করে। এরপর তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। চট্টগ্রামের বাইরে দেশের অন্যান্য জেলায়ও পুলিশের সঙ্গে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের খবর এসেছে।
রাজনীতিতে মতভেদ থাকবে। বিরুদ্ধ মত থাকবে। যেকোনো কারণে বিক্ষুব্ধ হওয়ারও অধিকার সবার আছে। আছে ক্ষোভ প্রকাশের অধিকার। কিন্তু ক্ষোভের প্রকাশটা কেন সহিংস হবে? কেন একটি সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির উদ্ভব হবে? সরকার, বিরোধী দল ও পুলিশ কেন সংযমের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হবে? সামান্য সংযমের পরিচয় দিলে চট্টগ্রামের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হতো। পুলিশকে যেমন সংযমী হতে হবে, তেমনি বিরোধী দলকেও মনে রাখতে হবে, সহিংসতা ও সংঘর্ষ কোনো রাজনৈতিক সমাধানের পথ নয়।
সহিংস রাজনৈতিক পরিবেশ দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে পারে, এগিয়ে নেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। এ অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোকে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, বিশেষ করে পুলিশকে হতে হবে আরো সংযমী।

No comments

Powered by Blogger.