হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘দেয়াল’ প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা
বঙ্গবন্ধুর হত্যা সম্পর্কিত ভুল তথ্য সংশোধনী না করা পর্যন্ত জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’ উপন্যাস প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে ভুল সংশোধনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে বিচারপতি বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।
আদালত বলেছেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ একজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। তিনি বর্তমানে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। তার ওপরে আদেশ দিয়ে তাকে আমরা বিব্রত করতে চাই না। আবার নতুন প্রজন্ম ভুল ইতিহাস জানুক সেটাও চাই না। যেমন বিষাদ সিন্ধু যেভাবে আছে জনগণ সেটাই জানে।’
এ কারণে আদালত শিক্ষা, তথ্য ও সংস্কৃতি সচিবকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ও সাক্ষ্য বিবরণ হুমায়ূন আহমেদের কাছে সরবরাহ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে তিনি ভুল সংশোধনের সুযোগ পান।
১২ দিনের মধ্যে তথ্য সচিব, শিক্ষা সচিব ও সংস্কৃতি সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যা সম্পর্কিত ভুল তথ্য সংশোধনী না করা পর্যন্ত জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের “দেয়াল” উপন্যাস প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত।’
প্রসঙ্গত, হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশিতব্য রাজনৈতিক উপন্যাস ‘দেয়াল’-এর দুটি অধ্যায় গত ১১ মে দৈনিক প্রথম আলোর সাহিত্য সাময়িকীতে ছাপা হয়। এতে ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের একটি বিবরণ রয়েছে।
সোমবার হুমায়ূন আহমেদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগ তোলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আদালত মঙ্গলবার এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন।
সোমবার আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের ওই উপন্যাসে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ যথাযথভাবে প্রকাশ পায়নি। এক জায়গায় তিনি লিখেছেন “বঙ্গবন্ধুর দুই পুত্রবধূ তাদের মাঝখানে রাসেলকে নিয়ে বিছানায় জড়াজড়ি করে শুয়ে থরথর করে কাঁপছিলেন। ঘাতক বাহিনী দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকল। ছোট্ট রাসেল দৌড়ে আশ্রয় নিল আলনার পেছনে। সেখান থেকে শিশু করুণ গলায় বললো, তোমরা আমাকে গুলি করো না। শিশুটিকে তার লুকানো জায়গা থেকে ধরে এনে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয়া হলো।”
কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ঘটনার একটি স্বীকৃত বিবরণ রয়েছে। তাতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর বাড়ির কাজের ছেলে রমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে রাসেলকে হত্যা করা হয়।
মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্ধৃতি দিয়ে আলতাফ হোসেন বলেন, ‘হুমায়ূন আহেমেদের একটি অপ্রকাশিত বইয়ের পত্রিকায় প্রকাশিত অংশে ভুল তথ্য রয়েছে। প্রকৃত সত্য হলো বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে মায়ের কাছে যেতে চাইলে তাকে হত্যা করা হয়। সেই দৃশ্যের বর্ণনার কাছে বিষাদ সিন্ধুও হার মানায় । এই ভুল সংশোধন করা না হলে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। শুনানি শেষে তিন সচিবকে ভুল সংশোধনের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’
আদালত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে সঠিক ইতিহাস জানতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পেপারবুক দিয়ে হুমায়ূন আহমেদকে সহায়তা করতে বলেছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার উপন্যাসে শেখ রাসেলের হত্যা করার বিষয়টি যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয়নি।’
প্রথম আলোর ১১ মে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দেয়াল হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশিতব্য রাজনৈতিক উপন্যাস। এ উপন্যাসের পটভূমি ১৯৭৫ সালে ঘটে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য রাজনৈতিক ঘটনা। সাময়িকীর পাঠকের জন্য সুবিশাল এ উপন্যাসের দুটি অধ্যায় এখানে ছাপা হলো’
এর একটি অংশে বলা হয়, ‘ঢাকা মসজিদের শহর। সব মসজিদেই ফজরের আজান হয়। শহরের দিন শুরু হয় মধুর আজানের ধ্বনিতে। আজান হচ্ছে। আজানের ধ্বনির সঙ্গে নিতান্তই বেমানান কিছু কথা বঙ্গবন্ধুকে বলছে এক মেজর, তার নাম মহিউদ্দিন। এই মেজরের হাতে স্টেনগান। শেখ মুজিবের হাতে পাইপ। তাঁর পরনে সাদা পাঞ্জাবি এবং ধূসর চেক লুঙ্গি।
শেখ মুজিব বললেন, তোমরা কী চাও? মেজর বিব্রত ভঙ্গিতে আমতা-আমতা করতে লাগল। শেখ মুজিবের কঠিন ব্যক্তিত্বের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। শেখ মুজিব আবার বললেন, তোমরা চাও কী?
মেজর মহিউদ্দিন বলল, ‘স্যার, একটু আসুন।’
‘কোথায় আসব?’
মেজর আবারও আমতা-আমতা করে বলল, ‘স্যার, একটু আসুন।’
শেখ মুজিব বললেন, ‘তোমরা কি আমাকে খুন করতে চাও। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে কাজ করতে পারেনি, সে কাজ তোমরা করবে?’
‘এই সময় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে ছুটে এল মেজর নূর। শেখ মুজিব তার দিকে ফিরে তাকানোর আগেই সে ব্রাশফায়ার করল। সময় ভোর পাঁচটা চল্লিশ। বঙ্গপিতা মহামানব শেখ মুজিব সিঁড়িতে লুটিয়ে পড়লেন। তখনো বঙ্গবন্ধুর হাতে তাঁর প্রিয় পাইপ।
বত্রিশ নম্বর বাড়িটিতে কিছুক্ষণের জন্য নরকের দরজা খুলে গেল। একের পর এক রক্তভেজা মানুষ মেঝেতে লুটিয়ে পড়তে লাগল।’
‘বঙ্গবন্ধুর দুই পুত্রবধূ তাঁদের মাঝখানে রাসেলকে নিয়ে বিছানায় জড়াজড়ি করে শুয়ে থরথর করে কাঁপছিল। ঘাতক বাহিনী দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকল। ছোট্ট রাসেল দৌড়ে আশ্রয় নিল আলনার পেছনে। সেখান থেকে শিশু করুণ গলায় বলল, তোমরা আমাকে গুলি কোরো না।’
‘শিশুটিকে তার লুকানো জায়গা থেকে ধরে এনে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হলো। এরপর শেখ জামাল ও শেখ কামালের মাত্র কিছুদিন আগে বিয়ে হওয়া দুই তরুণী বধূকে হত্যার পালা।’
‘বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি মন্ত্রী সেরনিয়াবাত এবং ভাগনে শেখ মণির বাড়িও একই সঙ্গে আক্রান্ত হলো। সেখানেও রক্তগঙ্গা। শেখ মণি মারা গেলেন তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে। পিতামাতার মৃত্যুদৃশ্য শিশু তাপস দেখল খাটের নিচে বসে। এই শিশুটি তখন কী ভাবছিল? কেবিনেট মন্ত্রী সেরনিয়াবাত মারা গেলেন তাঁর দশ-পনেরো বছরের দুই কন্যা, এগারো বছর বয়সী এক পুত্র এবং মাত্র পাঁচ বছর বয়সী এক নাতির সঙ্গে।’
উল্লেখ্য, উপন্যাসটির ওপর প্রশস্তিমূলক একটি নিবন্ধও প্রকাশ করেছে প্রথম আলো হয়েছে যা লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
উপন্যাসটির দুটি অধ্যায় প্রকাশিত হওয়ার পর ফেসবুক-টুইটার-ব্লগসহ স্যোসাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। তাদের অভিমত একটি দৈনিক সংবাদপত্র ঐতিহাসিক তথ্যের বিকৃতি ঘটিয়ে লেখা এমন একটি উপন্যাস প্রকাশ করে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়ই দিয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে বিচারপতি বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।
আদালত বলেছেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ একজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। তিনি বর্তমানে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। তার ওপরে আদেশ দিয়ে তাকে আমরা বিব্রত করতে চাই না। আবার নতুন প্রজন্ম ভুল ইতিহাস জানুক সেটাও চাই না। যেমন বিষাদ সিন্ধু যেভাবে আছে জনগণ সেটাই জানে।’
এ কারণে আদালত শিক্ষা, তথ্য ও সংস্কৃতি সচিবকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ও সাক্ষ্য বিবরণ হুমায়ূন আহমেদের কাছে সরবরাহ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে তিনি ভুল সংশোধনের সুযোগ পান।
১২ দিনের মধ্যে তথ্য সচিব, শিক্ষা সচিব ও সংস্কৃতি সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যা সম্পর্কিত ভুল তথ্য সংশোধনী না করা পর্যন্ত জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের “দেয়াল” উপন্যাস প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত।’
প্রসঙ্গত, হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশিতব্য রাজনৈতিক উপন্যাস ‘দেয়াল’-এর দুটি অধ্যায় গত ১১ মে দৈনিক প্রথম আলোর সাহিত্য সাময়িকীতে ছাপা হয়। এতে ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের একটি বিবরণ রয়েছে।
সোমবার হুমায়ূন আহমেদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগ তোলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আদালত মঙ্গলবার এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন।
সোমবার আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের ওই উপন্যাসে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ যথাযথভাবে প্রকাশ পায়নি। এক জায়গায় তিনি লিখেছেন “বঙ্গবন্ধুর দুই পুত্রবধূ তাদের মাঝখানে রাসেলকে নিয়ে বিছানায় জড়াজড়ি করে শুয়ে থরথর করে কাঁপছিলেন। ঘাতক বাহিনী দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকল। ছোট্ট রাসেল দৌড়ে আশ্রয় নিল আলনার পেছনে। সেখান থেকে শিশু করুণ গলায় বললো, তোমরা আমাকে গুলি করো না। শিশুটিকে তার লুকানো জায়গা থেকে ধরে এনে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয়া হলো।”
কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ঘটনার একটি স্বীকৃত বিবরণ রয়েছে। তাতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর বাড়ির কাজের ছেলে রমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে রাসেলকে হত্যা করা হয়।
মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্ধৃতি দিয়ে আলতাফ হোসেন বলেন, ‘হুমায়ূন আহেমেদের একটি অপ্রকাশিত বইয়ের পত্রিকায় প্রকাশিত অংশে ভুল তথ্য রয়েছে। প্রকৃত সত্য হলো বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে মায়ের কাছে যেতে চাইলে তাকে হত্যা করা হয়। সেই দৃশ্যের বর্ণনার কাছে বিষাদ সিন্ধুও হার মানায় । এই ভুল সংশোধন করা না হলে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। শুনানি শেষে তিন সচিবকে ভুল সংশোধনের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’
আদালত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে সঠিক ইতিহাস জানতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পেপারবুক দিয়ে হুমায়ূন আহমেদকে সহায়তা করতে বলেছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার উপন্যাসে শেখ রাসেলের হত্যা করার বিষয়টি যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয়নি।’
প্রথম আলোর ১১ মে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দেয়াল হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশিতব্য রাজনৈতিক উপন্যাস। এ উপন্যাসের পটভূমি ১৯৭৫ সালে ঘটে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য রাজনৈতিক ঘটনা। সাময়িকীর পাঠকের জন্য সুবিশাল এ উপন্যাসের দুটি অধ্যায় এখানে ছাপা হলো’
এর একটি অংশে বলা হয়, ‘ঢাকা মসজিদের শহর। সব মসজিদেই ফজরের আজান হয়। শহরের দিন শুরু হয় মধুর আজানের ধ্বনিতে। আজান হচ্ছে। আজানের ধ্বনির সঙ্গে নিতান্তই বেমানান কিছু কথা বঙ্গবন্ধুকে বলছে এক মেজর, তার নাম মহিউদ্দিন। এই মেজরের হাতে স্টেনগান। শেখ মুজিবের হাতে পাইপ। তাঁর পরনে সাদা পাঞ্জাবি এবং ধূসর চেক লুঙ্গি।
শেখ মুজিব বললেন, তোমরা কী চাও? মেজর বিব্রত ভঙ্গিতে আমতা-আমতা করতে লাগল। শেখ মুজিবের কঠিন ব্যক্তিত্বের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। শেখ মুজিব আবার বললেন, তোমরা চাও কী?
মেজর মহিউদ্দিন বলল, ‘স্যার, একটু আসুন।’
‘কোথায় আসব?’
মেজর আবারও আমতা-আমতা করে বলল, ‘স্যার, একটু আসুন।’
শেখ মুজিব বললেন, ‘তোমরা কি আমাকে খুন করতে চাও। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে কাজ করতে পারেনি, সে কাজ তোমরা করবে?’
‘এই সময় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে ছুটে এল মেজর নূর। শেখ মুজিব তার দিকে ফিরে তাকানোর আগেই সে ব্রাশফায়ার করল। সময় ভোর পাঁচটা চল্লিশ। বঙ্গপিতা মহামানব শেখ মুজিব সিঁড়িতে লুটিয়ে পড়লেন। তখনো বঙ্গবন্ধুর হাতে তাঁর প্রিয় পাইপ।
বত্রিশ নম্বর বাড়িটিতে কিছুক্ষণের জন্য নরকের দরজা খুলে গেল। একের পর এক রক্তভেজা মানুষ মেঝেতে লুটিয়ে পড়তে লাগল।’
‘বঙ্গবন্ধুর দুই পুত্রবধূ তাঁদের মাঝখানে রাসেলকে নিয়ে বিছানায় জড়াজড়ি করে শুয়ে থরথর করে কাঁপছিল। ঘাতক বাহিনী দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকল। ছোট্ট রাসেল দৌড়ে আশ্রয় নিল আলনার পেছনে। সেখান থেকে শিশু করুণ গলায় বলল, তোমরা আমাকে গুলি কোরো না।’
‘শিশুটিকে তার লুকানো জায়গা থেকে ধরে এনে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হলো। এরপর শেখ জামাল ও শেখ কামালের মাত্র কিছুদিন আগে বিয়ে হওয়া দুই তরুণী বধূকে হত্যার পালা।’
‘বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি মন্ত্রী সেরনিয়াবাত এবং ভাগনে শেখ মণির বাড়িও একই সঙ্গে আক্রান্ত হলো। সেখানেও রক্তগঙ্গা। শেখ মণি মারা গেলেন তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে। পিতামাতার মৃত্যুদৃশ্য শিশু তাপস দেখল খাটের নিচে বসে। এই শিশুটি তখন কী ভাবছিল? কেবিনেট মন্ত্রী সেরনিয়াবাত মারা গেলেন তাঁর দশ-পনেরো বছরের দুই কন্যা, এগারো বছর বয়সী এক পুত্র এবং মাত্র পাঁচ বছর বয়সী এক নাতির সঙ্গে।’
উল্লেখ্য, উপন্যাসটির ওপর প্রশস্তিমূলক একটি নিবন্ধও প্রকাশ করেছে প্রথম আলো হয়েছে যা লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
উপন্যাসটির দুটি অধ্যায় প্রকাশিত হওয়ার পর ফেসবুক-টুইটার-ব্লগসহ স্যোসাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। তাদের অভিমত একটি দৈনিক সংবাদপত্র ঐতিহাসিক তথ্যের বিকৃতি ঘটিয়ে লেখা এমন একটি উপন্যাস প্রকাশ করে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়ই দিয়েছে।
No comments