ঋণ করে পড়াশোনা by আসিফ আহমেদ

মেয়েটির বয়স ২৩ বছর। নাম কেলসি গ্রিফিত। স্বপ্ন অনেক। বাবা প্যারামেডিক চিকিৎসক। মা স্কুলশিক্ষক। তারা পাঁচ বোন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা কেলসি। চাকরিও পেয়ে গেল। একটি নয়, দুটি রেস্তোরাঁয়। তাকে দুটি চাকরিই নিতে হলো। কেন?


যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী এ তরুণী ১৮ বছর বয়সে ভর্তি হতে গিয়েছিল ওহাই নর্দার্ন ইউনিভার্সিটিতে। তার বা-মায়ের যা আয়, তাতে বছরে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়_ এমন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া সম্ভব। কিন্তু মার্কেটিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করা কেলসি জানায়, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি তাকে যেন জাদু করে ফেলল। কিন্তু কেউই জানায়নি যে, পাস করার সনদ হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে মাসে ৯০০ ডলার (বাংলাদেশের টাকায় প্রায় ৭৫ হাজার টাকা) পরিশোধ করতে হবে। পড়াশোনার জন্য সে মোট ঋণ নিয়েছিল ১ লাখ ২০ হাজার ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল বা রাজ্য সরকার কিংবা ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষাজীবন শেষে এ অর্থ পরিশোধ করতে হয়। বর্তমানে ছাত্রছাত্রীদের নেওয়া ঋণের পরিমাণ এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি (এক লাখ কোটি ডলারের বেশি)। অনেকে বলেন, যারা স্নাতক ডিগ্রি পেতে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের প্রায় সবাই ঋণী। ডিগ্রি পাওয়ার জন্য তারা ঋণ করে এবং এটাকে খুব ভালো বিনিয়োগ মনে করা হয়। কিন্তু এভাবে যে ঋণের বোঝা চেপে বসবে অনেক অনেক বছরের জন্য, সেটা কলেজে ভর্তির সময় বুঝে উঠতে পারে না। কেলসিও পারেনি। এ ঋণের দায় থেকে মুক্তিলাভ করার উপায় নেই_ পরিশোধ করতেই হবে। এমনকি দেশের প্রেসিডেন্টেরও তা মওকুফ করার ক্ষমতা নেই। এ কারণেই কেলসিকে ২৩ বছর বয়সেই প্রতিদিন দুটি চাকরিতে হাজির দিতে হয়। পাস করেই চাকরি পাওয়ার আনন্দ দ্রুতই নিরানন্দে পরিণত হয়ে গেছে। চাকরিজীবনে স্বাধীনভাবে থাকার স্বপ্নও উবে গেছে। পড়াশোনার সময় থাকত পৃথক অ্যাপার্টমেন্টে। কিন্তু এখন থাকছে বাবা-মায়ের সঙ্গে।
যারা শিক্ষা ঋণ নিয়েছে তাদের গড় ঋণের পরিমাণ ২০১১ সালে ছিল ২৩ হাজার ৩০০ ডলার। ১০ শতাংশের গড় ঋণ ৫৪ হাজার এবং ৩ শতাংশের এক লাখ ডলারের বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া কোনো এনটাইটেলমেন্ট নয়_ এটা সব শিক্ষার্থীকে বলা হয়। পড়াশোনা করার জন্য তাদের পরিবার অর্থ দেয় কিংবা ঋণ করে সেটা মেটানো হয়। ক্রিশ্চিনা হাগান নামে আরেকটি মেয়ের ঋণ ৬৫ হাজার ডলার। তবে এ নিয়ে তার ক্ষোভ নেই। কারণ সে জানে, কোনো কিছুই ফ্রি পাওয়া যায় না।
ছাত্র ঋণ পড়াশোনার জন্য সহায়ক। শিক্ষাজীবন শেষে যারা ভালো চাকরি পায় তাদের জন্য সমস্যা হয় না। কিন্তু আয় যাদের কম, তারা বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে।
বাংলাদেশে এ সমস্যা এখনও দেখা দেয়নি। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে। এগুলোতে পড়াশোনার ব্যয় প্রচুর। অনেক ছাত্রছাত্রী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হতে না পেরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যায় এবং বছরে ১ লাখ টাকা কিংবা তারও বেশি ফি-চার্জ দিয়ে ভর্তি হয়। যাদের পরিবারের সঙ্গতি রয়েছে, তাদের সমস্যা হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় টিউশনি করে মেটানো যায়, বেসরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটা সম্ভব নয়। তাহলে কি শিক্ষা ঋণই সমস্যার সমাধান? যারা ঋণ নেবে তাদের অবশ্যই এর দায়দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। তবে এটা নিশ্চিত যে, কাউকে কেলসির মতো মাসে ৭৫ হাজার টাকা ঋণের কিস্তি দিতে হবে না। কারণ এ অর্থ পরিশোধ করতে হলে অন্তত এর দ্বিগুণ আয় করতে হবে তাকে। কিন্তু তেমন চাকরি বাংলাদেশে মিলবে কি কারও? আর পড়াশোনার জন্য
যার মিলবে, তার কি ঋণ করার দরকার পড়ে?
 

No comments

Powered by Blogger.