প্রতিবাদের নামে রাস্তায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না-আবার গাড়ি ভাঙচুর

মহানগরে যেকোনো গোলযোগ বা হাঙ্গামা হলেই তার রোষ গিয়ে পড়ে যানবাহনের ওপর। সেই রোষ থেকে যাত্রীবাহী বাস, মিনিবাস, বেবিট্যাক্সি এমনকি রিকশাও বাদ যায় না। গত সোমবার রিকশাচালকদের প্রতিবাদের সময় বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষুব্ধ রিকশাচালকেরা রাস্তায় যাকেই পেয়েছেন, তার ওপর চড়াও হয়েছেন।


গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। এমনকি আক্রান্ত যানবাহন থেকে নামতে গিয়ে কয়েকজন যাত্রীও আহত হয়েছেন। প্রথম আলোয় প্রকাশিত ছবিতে এক স্কুলছাত্রীকে কাঁদতে দেখা গেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে শিশুদের মানসিক অবস্থা কী হয়, তা সহজেই অনুমেয়। অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ যাত্রী ও দোকানিদের হাতেও কয়েকজন রিকশাচালক প্রহূত হয়েছেন। এ ঘটনা কেবল অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, নিন্দনীয়ও।
যেকোনো পেশাজীবী জনগোষ্ঠী নিজেদের বঞ্চিত মনে করলে প্রতিবাদ জানাতে পারে, তবে সেই কর্মসূচি হতে হবে শান্তিপূর্ণ। কারও জানমালের ক্ষতি করা বা আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।
প্রশ্ন হলো, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দায়িত্ব কার? নিশ্চয়ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। তারা সেই দায়িত্ব পালন করেনি। কেউ লোকবলের অভাবের অজুহাত তুলেছেন, কেউ অন্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। মাঝখানে যে অনেকগুলো যানবাহন ভাঙচুর ও সম্পদের ক্ষতি হলো, তার দায় কে নেবে?
কয়েক ঘণ্টা ধরে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকায় এ ধরনের নৈরাজ্যকর ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিষ্ক্রিয় ছিল। যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ধরে আনতে বললে বেঁধে আনেন, সেখানে তাঁদের এই নিষ্ক্রিয়তা রহস্যজনক। মুক্তাঙ্গনে প্রতিবাদ সমাবেশের পর রিকশাচালকেরা যখন বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিলেন, তখন পুলিশ তাঁদের সঙ্গে যায়নি কেন? বাংলাদেশের পুলিশ আকাশ থেকে পড়েনি, বিদেশ থেকেও আসেনি। রিকশাচালকদের বিক্ষোভ কী মাত্রায় পৌঁছাতে পারে, তাদের তা অজানা থাকার কথা নয়। এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) জবাব কী? তারা কি কাকরাইল থেকে মগবাজার পর্যন্ত রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছিল? সেই পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া যেত। বিকল্প ব্যবস্থা না হলে রিকশা বন্ধ করলে এলাকার লোকজনও বেকায়দায় পড়বে, বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা। এর আগেও যতগুলো সড়ক থেকে রিকশা তুলে দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিবাদ হয়েছে, রিকশাচালকেরা রাস্তায় নেমেছেন। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেও কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। তবে ব্যবস্থা নেওয়া মানে কারও প্রতি জুলুম করা নয়, জনজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেই কাজটি করতে ডিএমপি ব্যর্থ হয়েছে।
রাজধানীর যানজট সমস্যা ভয়াবহ। এর মোকাবিলায় সার্বিক পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রয়োজন। একটি-দুটি সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। রিকশাচালকদেরও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতি সবল করতে পারলে এবং গ্রামে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা গেলে দরিদ্র মানুষ দলে দলে শহরে এসে ভিড় জমাবে না। সর্বোপরি রাজধানীতে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে হবে ডিএমপিকেই।

No comments

Powered by Blogger.