শিক্ষার প্রসার-চাতাল শ্রমিকের অনন্য কীর্তি
লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের কুলাঘাট ইউনিয়নের পশ্চিম বরুয়া গ্রামের দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। গ্রামটিতে প্রায় আড়াই হাজার লোকের বাস। শিশুদের দুই কিলোমিটার হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতে হতো। ফলে অধিকাংশ শিশুকেই শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকতে হতো।
বঞ্চিত শিশুদের জন্য আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়েছেন ধানের চাতালের দিনমজুর সোনাতন চন্দ্র বর্মণ। নিজে জীবিকা নির্বাহ করেন চাতালে দিনমজুরি করে। গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠায় নিজের শেষ সম্বল ৩৩ শতাংশ জমি দান করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। পশ্চিমপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামের সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫৬। গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এই শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের। গত চার বছর ধরে এ স্কুলের শিক্ষকরা বিনাবেতনে শিশুদের পড়ালেখা করিয়ে আসছেন। শনিবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, বর্তমানে স্কুলটি নিয়ে এলাকার একটি প্রভাবশালী পরিবার নানা ষড়যন্ত্র করছে। বিষয়টি আমাদের মর্মাহত করেছে। চাতালের দিনমজুরি করা একজন শ্রমিক যেখানে নিজের শেষ সম্বল দান করে দিয়েছেন স্কুলের জন্য, সেখানে তা নিয়ে ষড়যন্ত্র করা দুঃখজনক। এ ব্যাপারে আশু পদক্ষেপ না নিলে চাতাল শ্রমিক সোনাতন চন্দ্র বর্মণের স্বপ্ন সত্যি হবে না। পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রামটিতেও শিক্ষার প্রসার ঘটবে না। আমরা আশা করব, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে দৃষ্টি দেবেন। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টি শিক্ষা কার্যক্রম চালালেও এখনও রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হয়নি। ফলে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকদেরও বেতন ছাড়াই পড়াতে হচ্ছে। সোনাতন চন্দ্র বর্মণের মতো গ্রামবাসীও আশা করছে বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে আমরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। চাতালের শ্রমিক যে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তা ছড়িয়ে পড়ূক বাংলাদেশের অন্যান্য শিক্ষাবঞ্চিত এলাকাতেও।
No comments