জনপ্রতিধিদের দাবিগুলো বিবেচনা করুন-উপজেলা পরিষদ

স্থানীয় সরকার-ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ উপজেলা পরিষদ-ব্যবস্থাটিকে কার্যকর করার পক্ষে শক্তিশালী জনমত থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। এটা শুধু নাগরিক সমাজের বক্তব্য নয়, খোদ উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যানদের আন্দোলনের মধ্য দিয়েও এ বিষয়ে হতাশাই ব্যক্ত হচ্ছে।


২০০৯ সালের জানুয়ারিতে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। সরকার একটি পরিপত্রও জারি করেছিল; কিন্তু ১৪ মাসেও সে পরিপত্র কার্যকর হয়নি। উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা হিসেবে সংসদ সদস্যদের কর্তৃত্ব নিয়ে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যানদের প্রবল আপত্তি রয়েছে; কিন্তু সে-আপত্তিকে আমলে নেওয়া হচ্ছে না। একদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের আমলা, অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট এলাকার সাংসদ—এই দ্বিমুখী কর্তৃত্বের ফলে উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে বেশ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং তা ক্রমাগত বাড়ছে। তাঁদের এই ক্ষোভ আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।
উপজেলা পরিষদ কার্যকর করা, উপজেলা পরিষদে ন্যস্ত মন্ত্রণালয়ের দপ্তরগুলোর কর্মকর্তাদের গোপন প্রতিবেদন লেখার ক্ষমতা উপজেলা চেয়ারম্যানদের দেওয়া, একটি শক্তিশালী স্থানীয় সরকার কমিশন গঠনসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যানদের ঐক্য পরিষদ। দাবি মেনে নেওয়ার জন্য তাঁরা সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন ৩০ মার্চ পর্যন্ত। দাবি না মানায় ওই দিন তাঁরা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন: আগামী ১৫ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁরা সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ করবেন। জনসাধারণের ভোগান্তি সৃষ্টি হয় এমন কর্মসূচি সমর্থনযোগ্য নয়; তবে আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি সরকারের মনোযোগ আকর্ষণও গুরুত্বহীন বিষয় নয়। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা যদি স্থানীয় সরকার-ব্যবস্থার প্রতি তাঁদের অঙ্গীকারের বিষয়টি স্মরণ করেন, তাহলে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ঐক্য পরিষদের ১০ দফা দাবিকে অগ্রাহ্য করতে পারেন না। তাঁরা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি, তাঁদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ থেকে গেলে উপজেলা-ব্যবস্থাটি মোটেও ফলপ্রসূ হতে পারবে না। বরং তাঁদের আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে এই ক্ষেত্রে যে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা চলবে, তা কারোর জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।
উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে তাঁদের দাবিদাওয়া-সংবলিত স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছেছে। আমরা আশা করব, বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব পাবে। উপজেলা পরিষদকে ন্যূনতম মাত্রায় কার্যকর করতে হলে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যানদের বক্তব্য সরকারের শোনা উচিত। তাঁদের ১০ দফা দাবির মধ্যে একটি শক্তিশালী স্থানীয় সরকার কমিশন গঠনের দাবিও রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আমলাতন্ত্র ও নির্বাচিত সাংসদদের সঙ্গে উপজেলা পরিষদের সম্পর্ক, নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব-কর্তব্য ও কাজের এখতিয়ার ইত্যাদি বিষয়ে মতবিরোধ বা জটিলতা নিসরনসহ সামগ্রিকভাবে স্থানীয় সরকার-ব্যবস্থার অধিকতর দক্ষতা, জবাবদিহি ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার কমিশন গঠনের বিষয়টি নিশ্চয়ই বিবেচনাযোগ্য।

No comments

Powered by Blogger.