এনএসইউ চেয়ারম্যানের কীর্তি-প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন থাকুক

অবশেষে দেশের অন্যতম মানসম্পন্ন ও ঐতিহ্যবাহী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখার উদ্যোগ নিতে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এই আন্তর্জাতিক মানের বিদ্যাপীঠের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি, অনিয়ম ও শ্লীলতাহানির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত


কমিটি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কমিশন ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি পরিচালনার জন্য গঠিত ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পাঁচ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠনের কাজ আগামী সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হবে। উল্লেখ্য, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে অনয়িম, দুর্নীতি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠলে এবং তা দেশের প্রথম শ্রেণীর পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পেলে গত ২৭ জানুয়ারি ইউজিসি পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই কমিটি সম্প্রতি ২৭১ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এতে আর্থিক গরমিল ও অনিয়ম থাকার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, কমিটির পক্ষে স্বল্প সময়ের কারণে পুরোপুরি আর্থিক অনিয়ম তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। তাই এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে আরো বেশি তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে ওই কমিটি মনে করে। তবে কমিটি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনা একজন শিক্ষিকার শ্লীলতাহানির অভিযোগ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করতে অপারগতা প্রকাশ করে মন্তব্য করেছে যে এ ধরনের অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এর আগেও চেয়ারম্যানের দ্বারা কয়েকজন শিক্ষিকা এবং মহিলা স্টাফ লাঞ্ছিত হয়েছেন এবং কেউ কেউ চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য হয়েছেন। কমিটির এ ধরনের মন্তব্য ঘটনার সত্যতারই এক ধরনের বহিঃপ্রকাশ। অনুমেয়, এটি এমনই একটি ফৌজদারি মামলাযোগ্য অপরাধ, যা নিয়ে সাধারণত বাংলাদেশের নারীরা নানা সামাজিক জটিলতার কারণে আদালতের দ্বারস্থ হন না। তবে একটি প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি এ ধরনের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকলে প্রতিষ্ঠান এতটাই ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে, যা অপূরণীয়।
আমরা আগেও বলেছি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির মতো একটি পুরনো ও সমৃদ্ধ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ করে তোলা দেশ ও জাতির স্বার্থেই একান্ত প্রয়োজন। এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় তদন্ত কমিটি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ধন্যবাদার্হ। তবে লক্ষ রাখতে হবে, আবার গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন কমিটিতে যেন এমন কোনো ব্যক্তির অন্তর্ভুক্তি না হয়, যাঁরা প্রশ্নবিদ্ধ অথবা পূর্বতন অভিযুক্ত ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের সহযোগী হিসেবে বিবেচিত। এতে জটিলতাই শুধু বাড়বে না, বিশ্ববিদ্যালয়টির পরবর্তী কর্মকাণ্ডে মো. শাহজাহানের পরোক্ষ প্রভাব থেকে যাবে। দেশ ও দেশের বাইরের শিক্ষার্থীদের এ প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে এ দেশের শিক্ষার মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা ভরসা রাখি।

No comments

Powered by Blogger.