জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর উপায়-১-জীবন চলে না শহরে by টিটু দত্ত গুপ্ত
খাদ্যের উচ্চমূল্য তো আছেই, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের খরচও আর সাধ্যের মধ্যে নেই। গ্রামের চেয়ে শহরে এ সমস্যা বেশি প্রকট। এখানে খাদ্যপণ্যের তুলনায় বেশি খরচ হচ্ছে বসবাস, যাতায়াত, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে। এর সব খাতেই সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে।
কিন্তু সেবার মান না বাড়ায় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক খরচও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি সংকট তৈরি হয়েছে পরিকল্পিত আবাসন ও গণপরিবহন ব্যবস্থা না থাকায়। সমাজ ও উন্নয়ন গবেষকদের মতে, বাজেটে বছর বছর বরাদ্দ বাড়িয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না। বাজেটে উপযুক্ত আর্থিক ও রাজস্ব নীতির মাধ্যমে বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে আবাসন ও গণপরিবহন সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সেবার মান বাড়ানোর জন্য কঠোর তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই জীবনযাত্রার ব্যয় কমবে।
পাঁচ বছরে জাতীয় পর্যায়ে পারিবারিক আয় বেড়েছে ৫৯ শতাংশ, আর খরচ বেড়েছে ৮৪.৫ শতাংশ। পারিবারিক ভোগ-ব্যয়ের অর্ধেকেরও বেশি (প্রায় ৫৫ শতাংশ)জুড়ে রয়েছে খাদ্য। সবচেয়ে কম আয়ের পরিবারে খাদ্যের পেছনে খরচ হয় ৭২ শতাংশ, সবচেয়ে বেশি আয়ের পরিবারে খাদ্যবহির্ভূত খাতে খরচ ৫৯ শতাংশ। যেসব পরিবারের আয় মাঝামাঝি পর্যায়ে, খাদ্যের পেছনে মোট সংসার খরচের ৬১ থেকে ৬৫ শতাংশ ব্যয় হয় তাদের। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা আয়-ব্যয় জরিপ (হাউস হোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে-এইচআইইএস) ২০১০-এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০০৫ সালে গড় জাতীয় পারিবারিক আয় ছিল সাত হাজার ২০৩ টাকা। ২০১০ সালে তা দাঁড়ায় ১১ হাজার ৪৭৯ টাকায়। বৃদ্ধির হার ৫৯ শতাংশ। শহুরে পরিবারগুলোর গড় মাসিক আয় ১৬ হাজার ৪৭৫ টাকা, গ্রামে ৯ হাজার ৬৪৮ টাকা। সবচেয়ে বেশি দরিদ্র পরিবারের সঙ্গে সমাজের উঁচু স্তরের মানুষের আয়ের বৈষম্য বেড়েছে। তবে পাঁচ বছরে দরিদ্র পরিবারের আয় খানিকটা বাড়লেও ধনীদের আয় কমেছে বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মধ্য পর্যায়ের পরিবারে আয় বেড়েছে বলে খানা জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্যয়ের হিসাবে দেখানো হয়েছে, পরিবারপ্রতি গড় মাসিক খরচ ২০০৫ সালের তুলনায় বেড়েছে ৮৪.৫ শতাংশ। ৫ বছর আগে মাসিক আয় পাঁচ হাজার ৯৬৪ টাকা হলে একটি পরিবারের চলে যেত। এখন সেখানে লাগছে ১১ হাজার ৩ টাকা। শহরে একটি পরিবারের গড় মাসিক আয় ১৬ হাজার ৪৭৫ টাকা, আর ব্যয় ১৫ হাজার ২৭৬ টাকা।
বিবিএসের সর্বশেষ হিসাবে, এপ্রিল মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি খানিকটা কমেছে। বিবিএস মহাপরিচালক শাহজাহান আলী মোল্লা জানান, মূলত চালের দাম কমার কারণেই মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী হয়েছে। এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার কমে ৯.৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মার্চে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.১০ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে গড় মূল্যস্ফীতি কমেছে শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ। মার্চের তুলনায় এপ্রিলে খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। এপ্রিলে এ হার ৮.১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মার্চে এ হার ছিল ৮.২৮ শতাংশ।
গত সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলনে বিবিএসের মহাপরিচালক শাহজাহান আলী মোল্লা জানান, এপ্রিলে খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও কমেছে। গত মার্চে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১৩.৯৬ ভাগ। এপ্রিলে তা কমে ১৩.৭৭ ভাগে নেমেছে। এসব পরিসংখ্যানের অর্থ সামষ্টিক অর্থনীতিবিদ ও সরকারের আর্থিক নীতিনির্ধারকদের কাছে থাকলেও থাকতে পারে। তবে বিবিএসের এসব সূচক কমা ও নামার দৃশ্যমান কোনো প্রভাব জনজীবনে পড়েছে বলে মনে করেন না শহরের নাগরিক, ভোক্তা অধিকার কর্মী ও উন্নয়ন গবেষকরা।
অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও ভোক্তা অধিকারকর্মীদের মতে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমার কথা বিবিএস বললেও বাজারে চাল ছাড়া অন্য কোনো খাদ্যপণ্যের দাম কমেনি। খাদ্যপণ্যের বাজারে তবু সরকারের কিছুটা নিয়ন্ত্রণের প্রয়াস আছে, কিন্তু খাদ্যবহির্ভূত পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি নেই। যে কারণে খাদ্যবহির্ভূত খাতে ব্যয় বাড়ছে লাগামহীন। ফলে সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি কমায় কিছুটা স্বস্তি বোধ করলেও বিবিএসের মহাপরিচালক নিজেই বলেন, জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হার তেমন কমছে না। এ ছাড়া বাড়িভাড়া, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন খরচ, আসবাব, গৃহস্থালি পরিধেয় বস্ত্র, ও লন্ড্রি সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণেও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমছে না।
সবচেয়ে বেশি চাপের মধ্যে রয়েছেন মধ্য আয়ের শহুরে মানুষ, যাঁদের পারিবারিক বাজেটের বড় অংশ চলে যাচ্ছে বাড়িভাড়া, পরিবহন, শিক্ষা, চিকিৎসার পেছনে। সংবিধানে নাগরিকদের যে পাঁচটি মৌলিক অধিকার সরকারের নিশ্চিত করার কথা তার মধ্যে এ চারটিও রয়েছে। অথচ এ খাতগুলোর কোনোটিতে সরকারের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। কোনোটি থেকে সরকার হাত গুটিয়ে নিচ্ছে, কোনোটিতে অংশগ্রহণ থাকলেও তদারকি নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছে পুরনো ঘরানার মধ্যবিত্ত শ্রেণী, যাঁদের আত্মমর্যাদা বোধ আছে, যাঁরা তাঁদের নির্দিষ্ট আয় দিয়ে সৎভাবে জীবনযাপন করতে চান। এমন অনেকে আছেন তিনটা চাকরি করেও যাঁদের দিন চলে না।
নিম্ন আয়ের মানুষ, যাঁরা রিকশা বা অটোরিকশা চালান, তাঁরা তাদের মতো করে আয় বাড়িয়ে নিচ্ছেন। উচ্চ আয়ের মানুষদেরও সমস্যা হচ্ছে না। বিপদে রয়েছেন শুধু সনাতনি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ, যাদের জীবনবোধ ভিন্ন।
এ সমাজবিজ্ঞানীর মতে, প্রতিবছর বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে বরাদ্দ বাড়লেও সেবার মান বাড়ছে না। কারণ বরাদ্দের টাকা খরচ হচ্ছে ভবন নির্মাণে, মানোন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ছে না। তদারকির জন্য উপজেলা পর্যায়েও রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা। তবু সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার থাকেন না, বেসরকারি ক্লিনিকেও ভালো সেবা পাওয়া যায় না, স্কুলগুলোতে পড়াশোনা হয় না। তদারকিটাও যদি ঠিকমতো সরকার করতে পারত, তা হলেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ত, এসব খাতে পারিবারিক খরচ কমত।
ড. মাহবুব উদ্দিন বলেন, সেবা খাত থেকে সরকার এক রকম উঠেই এসেছে। কারণ সেবা দেওয়ার সৎ উদ্দেশ্য সরকারের নেই।
বিবিএসের খানা জরিপেই উল্লেখ রয়েছে, গড়পড়তার চেয়ে বেশি আয়ের পরিবারে খাদ্যের চেয়ে খাদ্যবহির্ভূত খাতে খরচ বেশি হয়। বাড়িভাড়া, পরিবহন, শিক্ষা, চিকিৎসা ও গৃহস্থালি নানা সেবার পেছনে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে চাল ছাড়া অন্য উপাদান কমিয়ে বাজার খরচ কিছুটা সামাল দেওয়া গেলেও খাদ্যবহির্ভূত খাতে খরচ কমানো সম্ভব হয় না। মাসের শুরুতেই বাড়িভাড়ার টাকা আলাদা করে রাখতে হয়। সন্তানের স্কুলের বেতনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় হয় কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনির পেছনে। জরুরি চিকিৎসা খরচ সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা করা যায় না। কর্মস্থল ও স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসার ঝক্কি ও খরচ দুই বেশি। কয়েক মাস আগেও এক হাজার টাকায় সপ্তাহের বাজার চলে যেত, এখন ১৩-১৪ শ টাকা লাগছে। চাকরিতে বছরে যে ইনক্রিমেন্ট হয়, বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়ান তার চেয়ে বেশি। যত বড় ডাক্তারই হোন, আগে পাঁচ শ টাকার বেশি ভিজিট ছিল না। এখন বাড়তি ডিগ্রি আছে, ভালো কোনো জায়গায় বসেন এমন ডাক্তারও সাত শ টাকা নেন।'
খরচ বাড়ার খাতগুলো এভাবে বর্ণনা করলেন বেসরকারি খাতের মধ্য আয়ের একজন চাকুরে পীযূষ কান্তি দে। তিনি বলেন, আরাম-আয়েশে নয়, পরিবারের স্বাভাবিক চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা শহরে থাকা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
তাঁর মাসিক আয়ের ৬০ ভাগ চলে যায় বাড়িভাড়া, আর ২০ ভাগ খাবারে। দুই বাচ্চার পড়াশোনা আর স্কুলে যাতায়াতে খরচ হয় আয়ের ১০-১৫ ভাগ। তারপর রয়েছে চিকিৎসা। 'বাচ্চাদের নিয়ে ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে ইচ্ছে করলেও উপায় নেই। নেহায়েত বাধ্য না হলে জামা-কাপড় কেনা হয় না।'
পীযূষের মতে, খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়লে হৈচৈ বেশি হয়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণে। সরকারের উচিত কঠোর আইন করে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ করা। প্লট না বিক্রি করে ফ্ল্যাট বানিয়ে সহজ শর্তে বিক্রির উদ্যোগ নিতে পারে রাজউক। স্কুলগুলোতে ভালোভাবে পড়ানো হলে বাচ্চাদের শিক্ষার পেছনে পরিবারের ব্যয় বাড়ত না।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভুঁইয়া বলেন, চাল ছাড়া অন্য কোনো খাদ্যপণ্যেরই দাম কমেনি। গত কয়েক মাসে সয়াবিন তেলের দামই বেড়েছে অন্তত ছয়বার। লবণের দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। সাবানসহ খাদ্যের বাইরে গৃহস্থালি ব্যবহারের সব জিনিসের দামও বেড়েছে। বাড়িভাড়ার কথা বলে লাভ নেই। আইন থাকলেও কখনো এর প্রয়োগ হয়নি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, সব পণ্য ও সেবার দাম বাড়ছে। তেলের দাম বাড়ার একটা পরোক্ষ প্রভাবও রয়েছে। শহরে সবাই ক্রেতা, তাই সবার ওপরই তার প্রভাব পড়ছে। তবে চালসহ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে সবাই যে রকম সোচ্চার হয়, অন্য ক্ষেত্রে তা হয় না। কারণ, ৯৫ শতাংশ বা তারও বেশি মানুষকে খাদ্য কিনে খেতে হয়। আবাসনের ক্ষেত্রে যাঁরা ভাড়া থাকেন তাঁদের কষ্ট বাড়ছে, কিন্তু বাড়িওয়ালাদের লাভ হচ্ছে।
জোগান বাড়িয়ে, পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ সরবরাহ ব্যবস্থার নানা বাধা দূর করে পণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখা যায়। তবে সেবা খাতে মানুষের ব্যয় কমানোর জন্য সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন এ উন্নয়ন গবেষক। তিনি বলেন, এসব উদ্যোগ যতটা না বাজেটভিত্তিক, তার চেয়ে বেশি প্রশাসনিক। বছর বছর বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর হিসাব দেখিয়ে লাভ হবে না, প্রশাসনিক ত্রুটি দূর করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। স্কুলে যদি ভালো পড়াশোনা হয় তাহলে কোচিংয়ের দরকার হবে না। স্বাভাবিকভাবেই তখন পরিবারের শিক্ষা ব্যয় কমে আসবে। তদারকি জোরদার করে স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানো ও মূল্য কমানো যায়।
ড. মুজেরি বলেন, বাড়িভাড়া আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করে ভাড়াটের দুর্ভোগ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। ঢাকা শহরের কোন এলাকায় কত ভাড়া হবে, কতদিন পর শতকরা কত বাড়ানো যাবে, আইনে এসব বলা আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। একই কথা বলেন উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন ড. রাশেদ আল-মাহমুদ তিতুমীরও। তিনি বলেন, রেন্ট কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্সে জোন অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু ঢাকা সিটি করপোরেশন কখনো তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম বলেন, প্রবৃদ্ধি একটি দেশের একমাত্র কল্যাণকর নয়। বেসরকারি বিনিয়োগ ও সরকারি নীতির মধ্যে সমন্বয় নেই। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি-বেসরকারি যে বিনিয়োগ হচ্ছে, তদারকির অভাবে তার সুফল মানুষ পাচ্ছে না। সরকারের তদারকির কাঠামো আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। আবাসন ও পরিবহন খাতে কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বেশ টানাপড়েনে আছে শহুরে মধ্যবিত্তদের একটি অংশ।
এ সমাজবিজ্ঞানীর মতে, পুঞ্জীভূত এসব সমস্যা রাতারাতি দূর করা সম্ভব নয়। শুরুটা অন্তত মানুষ দেখতে চান। তাহলে তাঁরা আস্থা পেতেন যে সরকার তাঁদের কথা ভাবছে।
পরিকল্পনা আর তদারকির অভাবই
বাড়িয়ে দিচ্ছে জীবনযাপনের খরচ
পাঁচ বছরে জাতীয় পর্যায়ে পারিবারিক আয় বেড়েছে ৫৯ শতাংশ, আর খরচ বেড়েছে ৮৪.৫ শতাংশ। পারিবারিক ভোগ-ব্যয়ের অর্ধেকেরও বেশি (প্রায় ৫৫ শতাংশ)জুড়ে রয়েছে খাদ্য। সবচেয়ে কম আয়ের পরিবারে খাদ্যের পেছনে খরচ হয় ৭২ শতাংশ, সবচেয়ে বেশি আয়ের পরিবারে খাদ্যবহির্ভূত খাতে খরচ ৫৯ শতাংশ। যেসব পরিবারের আয় মাঝামাঝি পর্যায়ে, খাদ্যের পেছনে মোট সংসার খরচের ৬১ থেকে ৬৫ শতাংশ ব্যয় হয় তাদের। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা আয়-ব্যয় জরিপ (হাউস হোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে-এইচআইইএস) ২০১০-এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০০৫ সালে গড় জাতীয় পারিবারিক আয় ছিল সাত হাজার ২০৩ টাকা। ২০১০ সালে তা দাঁড়ায় ১১ হাজার ৪৭৯ টাকায়। বৃদ্ধির হার ৫৯ শতাংশ। শহুরে পরিবারগুলোর গড় মাসিক আয় ১৬ হাজার ৪৭৫ টাকা, গ্রামে ৯ হাজার ৬৪৮ টাকা। সবচেয়ে বেশি দরিদ্র পরিবারের সঙ্গে সমাজের উঁচু স্তরের মানুষের আয়ের বৈষম্য বেড়েছে। তবে পাঁচ বছরে দরিদ্র পরিবারের আয় খানিকটা বাড়লেও ধনীদের আয় কমেছে বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মধ্য পর্যায়ের পরিবারে আয় বেড়েছে বলে খানা জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্যয়ের হিসাবে দেখানো হয়েছে, পরিবারপ্রতি গড় মাসিক খরচ ২০০৫ সালের তুলনায় বেড়েছে ৮৪.৫ শতাংশ। ৫ বছর আগে মাসিক আয় পাঁচ হাজার ৯৬৪ টাকা হলে একটি পরিবারের চলে যেত। এখন সেখানে লাগছে ১১ হাজার ৩ টাকা। শহরে একটি পরিবারের গড় মাসিক আয় ১৬ হাজার ৪৭৫ টাকা, আর ব্যয় ১৫ হাজার ২৭৬ টাকা।
বিবিএসের সর্বশেষ হিসাবে, এপ্রিল মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি খানিকটা কমেছে। বিবিএস মহাপরিচালক শাহজাহান আলী মোল্লা জানান, মূলত চালের দাম কমার কারণেই মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী হয়েছে। এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার কমে ৯.৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মার্চে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.১০ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে গড় মূল্যস্ফীতি কমেছে শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ। মার্চের তুলনায় এপ্রিলে খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। এপ্রিলে এ হার ৮.১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মার্চে এ হার ছিল ৮.২৮ শতাংশ।
গত সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলনে বিবিএসের মহাপরিচালক শাহজাহান আলী মোল্লা জানান, এপ্রিলে খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও কমেছে। গত মার্চে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১৩.৯৬ ভাগ। এপ্রিলে তা কমে ১৩.৭৭ ভাগে নেমেছে। এসব পরিসংখ্যানের অর্থ সামষ্টিক অর্থনীতিবিদ ও সরকারের আর্থিক নীতিনির্ধারকদের কাছে থাকলেও থাকতে পারে। তবে বিবিএসের এসব সূচক কমা ও নামার দৃশ্যমান কোনো প্রভাব জনজীবনে পড়েছে বলে মনে করেন না শহরের নাগরিক, ভোক্তা অধিকার কর্মী ও উন্নয়ন গবেষকরা।
অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও ভোক্তা অধিকারকর্মীদের মতে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমার কথা বিবিএস বললেও বাজারে চাল ছাড়া অন্য কোনো খাদ্যপণ্যের দাম কমেনি। খাদ্যপণ্যের বাজারে তবু সরকারের কিছুটা নিয়ন্ত্রণের প্রয়াস আছে, কিন্তু খাদ্যবহির্ভূত পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি নেই। যে কারণে খাদ্যবহির্ভূত খাতে ব্যয় বাড়ছে লাগামহীন। ফলে সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি কমায় কিছুটা স্বস্তি বোধ করলেও বিবিএসের মহাপরিচালক নিজেই বলেন, জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হার তেমন কমছে না। এ ছাড়া বাড়িভাড়া, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন খরচ, আসবাব, গৃহস্থালি পরিধেয় বস্ত্র, ও লন্ড্রি সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণেও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমছে না।
সবচেয়ে বেশি চাপের মধ্যে রয়েছেন মধ্য আয়ের শহুরে মানুষ, যাঁদের পারিবারিক বাজেটের বড় অংশ চলে যাচ্ছে বাড়িভাড়া, পরিবহন, শিক্ষা, চিকিৎসার পেছনে। সংবিধানে নাগরিকদের যে পাঁচটি মৌলিক অধিকার সরকারের নিশ্চিত করার কথা তার মধ্যে এ চারটিও রয়েছে। অথচ এ খাতগুলোর কোনোটিতে সরকারের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। কোনোটি থেকে সরকার হাত গুটিয়ে নিচ্ছে, কোনোটিতে অংশগ্রহণ থাকলেও তদারকি নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছে পুরনো ঘরানার মধ্যবিত্ত শ্রেণী, যাঁদের আত্মমর্যাদা বোধ আছে, যাঁরা তাঁদের নির্দিষ্ট আয় দিয়ে সৎভাবে জীবনযাপন করতে চান। এমন অনেকে আছেন তিনটা চাকরি করেও যাঁদের দিন চলে না।
নিম্ন আয়ের মানুষ, যাঁরা রিকশা বা অটোরিকশা চালান, তাঁরা তাদের মতো করে আয় বাড়িয়ে নিচ্ছেন। উচ্চ আয়ের মানুষদেরও সমস্যা হচ্ছে না। বিপদে রয়েছেন শুধু সনাতনি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ, যাদের জীবনবোধ ভিন্ন।
এ সমাজবিজ্ঞানীর মতে, প্রতিবছর বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে বরাদ্দ বাড়লেও সেবার মান বাড়ছে না। কারণ বরাদ্দের টাকা খরচ হচ্ছে ভবন নির্মাণে, মানোন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ছে না। তদারকির জন্য উপজেলা পর্যায়েও রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা। তবু সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার থাকেন না, বেসরকারি ক্লিনিকেও ভালো সেবা পাওয়া যায় না, স্কুলগুলোতে পড়াশোনা হয় না। তদারকিটাও যদি ঠিকমতো সরকার করতে পারত, তা হলেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ত, এসব খাতে পারিবারিক খরচ কমত।
ড. মাহবুব উদ্দিন বলেন, সেবা খাত থেকে সরকার এক রকম উঠেই এসেছে। কারণ সেবা দেওয়ার সৎ উদ্দেশ্য সরকারের নেই।
বিবিএসের খানা জরিপেই উল্লেখ রয়েছে, গড়পড়তার চেয়ে বেশি আয়ের পরিবারে খাদ্যের চেয়ে খাদ্যবহির্ভূত খাতে খরচ বেশি হয়। বাড়িভাড়া, পরিবহন, শিক্ষা, চিকিৎসা ও গৃহস্থালি নানা সেবার পেছনে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে চাল ছাড়া অন্য উপাদান কমিয়ে বাজার খরচ কিছুটা সামাল দেওয়া গেলেও খাদ্যবহির্ভূত খাতে খরচ কমানো সম্ভব হয় না। মাসের শুরুতেই বাড়িভাড়ার টাকা আলাদা করে রাখতে হয়। সন্তানের স্কুলের বেতনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় হয় কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনির পেছনে। জরুরি চিকিৎসা খরচ সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা করা যায় না। কর্মস্থল ও স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসার ঝক্কি ও খরচ দুই বেশি। কয়েক মাস আগেও এক হাজার টাকায় সপ্তাহের বাজার চলে যেত, এখন ১৩-১৪ শ টাকা লাগছে। চাকরিতে বছরে যে ইনক্রিমেন্ট হয়, বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়ান তার চেয়ে বেশি। যত বড় ডাক্তারই হোন, আগে পাঁচ শ টাকার বেশি ভিজিট ছিল না। এখন বাড়তি ডিগ্রি আছে, ভালো কোনো জায়গায় বসেন এমন ডাক্তারও সাত শ টাকা নেন।'
খরচ বাড়ার খাতগুলো এভাবে বর্ণনা করলেন বেসরকারি খাতের মধ্য আয়ের একজন চাকুরে পীযূষ কান্তি দে। তিনি বলেন, আরাম-আয়েশে নয়, পরিবারের স্বাভাবিক চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা শহরে থাকা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
তাঁর মাসিক আয়ের ৬০ ভাগ চলে যায় বাড়িভাড়া, আর ২০ ভাগ খাবারে। দুই বাচ্চার পড়াশোনা আর স্কুলে যাতায়াতে খরচ হয় আয়ের ১০-১৫ ভাগ। তারপর রয়েছে চিকিৎসা। 'বাচ্চাদের নিয়ে ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে ইচ্ছে করলেও উপায় নেই। নেহায়েত বাধ্য না হলে জামা-কাপড় কেনা হয় না।'
পীযূষের মতে, খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়লে হৈচৈ বেশি হয়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণে। সরকারের উচিত কঠোর আইন করে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ করা। প্লট না বিক্রি করে ফ্ল্যাট বানিয়ে সহজ শর্তে বিক্রির উদ্যোগ নিতে পারে রাজউক। স্কুলগুলোতে ভালোভাবে পড়ানো হলে বাচ্চাদের শিক্ষার পেছনে পরিবারের ব্যয় বাড়ত না।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভুঁইয়া বলেন, চাল ছাড়া অন্য কোনো খাদ্যপণ্যেরই দাম কমেনি। গত কয়েক মাসে সয়াবিন তেলের দামই বেড়েছে অন্তত ছয়বার। লবণের দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। সাবানসহ খাদ্যের বাইরে গৃহস্থালি ব্যবহারের সব জিনিসের দামও বেড়েছে। বাড়িভাড়ার কথা বলে লাভ নেই। আইন থাকলেও কখনো এর প্রয়োগ হয়নি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, সব পণ্য ও সেবার দাম বাড়ছে। তেলের দাম বাড়ার একটা পরোক্ষ প্রভাবও রয়েছে। শহরে সবাই ক্রেতা, তাই সবার ওপরই তার প্রভাব পড়ছে। তবে চালসহ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে সবাই যে রকম সোচ্চার হয়, অন্য ক্ষেত্রে তা হয় না। কারণ, ৯৫ শতাংশ বা তারও বেশি মানুষকে খাদ্য কিনে খেতে হয়। আবাসনের ক্ষেত্রে যাঁরা ভাড়া থাকেন তাঁদের কষ্ট বাড়ছে, কিন্তু বাড়িওয়ালাদের লাভ হচ্ছে।
জোগান বাড়িয়ে, পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ সরবরাহ ব্যবস্থার নানা বাধা দূর করে পণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখা যায়। তবে সেবা খাতে মানুষের ব্যয় কমানোর জন্য সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন এ উন্নয়ন গবেষক। তিনি বলেন, এসব উদ্যোগ যতটা না বাজেটভিত্তিক, তার চেয়ে বেশি প্রশাসনিক। বছর বছর বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর হিসাব দেখিয়ে লাভ হবে না, প্রশাসনিক ত্রুটি দূর করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। স্কুলে যদি ভালো পড়াশোনা হয় তাহলে কোচিংয়ের দরকার হবে না। স্বাভাবিকভাবেই তখন পরিবারের শিক্ষা ব্যয় কমে আসবে। তদারকি জোরদার করে স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানো ও মূল্য কমানো যায়।
ড. মুজেরি বলেন, বাড়িভাড়া আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করে ভাড়াটের দুর্ভোগ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। ঢাকা শহরের কোন এলাকায় কত ভাড়া হবে, কতদিন পর শতকরা কত বাড়ানো যাবে, আইনে এসব বলা আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। একই কথা বলেন উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন ড. রাশেদ আল-মাহমুদ তিতুমীরও। তিনি বলেন, রেন্ট কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্সে জোন অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু ঢাকা সিটি করপোরেশন কখনো তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম বলেন, প্রবৃদ্ধি একটি দেশের একমাত্র কল্যাণকর নয়। বেসরকারি বিনিয়োগ ও সরকারি নীতির মধ্যে সমন্বয় নেই। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি-বেসরকারি যে বিনিয়োগ হচ্ছে, তদারকির অভাবে তার সুফল মানুষ পাচ্ছে না। সরকারের তদারকির কাঠামো আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। আবাসন ও পরিবহন খাতে কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বেশ টানাপড়েনে আছে শহুরে মধ্যবিত্তদের একটি অংশ।
এ সমাজবিজ্ঞানীর মতে, পুঞ্জীভূত এসব সমস্যা রাতারাতি দূর করা সম্ভব নয়। শুরুটা অন্তত মানুষ দেখতে চান। তাহলে তাঁরা আস্থা পেতেন যে সরকার তাঁদের কথা ভাবছে।
পরিকল্পনা আর তদারকির অভাবই
বাড়িয়ে দিচ্ছে জীবনযাপনের খরচ
No comments