শিক্ষাঙ্গন-চট্টগ্রামে হিযবুত তাহ্রীরের তৎপরতা by নুরুল ইসলাম বিএসসি

গত ছয় মাস ধরে হিযবুত তাহ্রীর নামক নিষিদ্ধ সংগঠন চট্টগ্রামে অস্বাভাবিক তৎপরতায় লিপ্ত। তাদের সংবিধান বিতরণ, ১০ জানুয়ারি সংখ্যা ম্যাগাজিন বিতরণ, লিফলেট বিলি, পোস্টার লাগানো_ এসব কাজ অবিরাম চলছেই। এরা খামের ওপর ব্যক্তির নাম লিখে দারোয়ান বা ছোট বাচ্চার মাধ্যমে ঘরের কর্তার কাছে বইগুলো পাঠাচ্ছে।


আমিও এ পর্যন্ত সংবিধানসহ একটি ম্যাগাজিন পেয়েছি


গত ছয় মাস ধরে হিযবুত তাহ্রীর নামক নিষিদ্ধ সংগঠন চট্টগ্রামে অস্বাভাবিক তৎপরতায় লিপ্ত। তাদের সংবিধান বিতরণ, ১০ জানুয়ারি সংখ্যা ম্যাগাজিন বিতরণ, লিফলেট বিলি, পোস্টার লাগানো_ এসব কাজ অবিরাম চলছেই। এরা খামের ওপর ব্যক্তির নাম লিখে দারোয়ান বা ছোট বাচ্চার মাধ্যমে ঘরের কর্তার কাছে বইগুলো পাঠাচ্ছে। আমিও এ পর্যন্ত সংবিধানসহ একটি ম্যাগাজিন পেয়েছি। মোটরসাইকেলে করে এরা আসে, বইগুলো দিয়ে দ্রুত চলে যায়।
কথা হলো, এ বইগুলো ছাপানো, বিতরণসহ অনেক কাজ করতে হয়। ঝকঝকে ছাপা, মলাট দেখে মনে হয় কোনো ভালো মুদ্রণ কারখানা ছাড়া নির্ভুল বইগুলো ছাপানো সম্ভব নয়। আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত গোয়েন্দা বাহিনীর নাকের ডগায় গত ছয় মাস এ কাজগুলো বিনা বাধায় এরা চালিয়ে যাচ্ছে। মনে প্রশ্ন জাগে, এদের কেউ কি ভেতরে ভেতরে সাহায্য করে যাচ্ছে?
হিযবুত তাহ্রীর এ দেশে খেলাফত কায়েম করতে চায়। তারা কী চায়, এদের সংবিধানে পরিষ্কার বর্ণনা রয়েছে। এদের ম্যাগাজিন পড়লে মনে হয় এগুলো কোনো কাঁচা হাতের লেখা নয়। যারা বিশ্বের নানা ঘটনা প্রতিদিন অবলোকন করছে, এই ইভিল জিনিয়াসরাই এদের পেছনে কাজ করছে। এদের ধারণা ভারত, আমেরিকা, ব্রিটেন ইসলামের বিরুদ্ধে উদ্যত ত্রুক্রসেড নিয়ে এগিয়ে আসছে। বিকৃত মস্তিষ্কের এ লোকগুলো পৃথিবীতে যেখানে যত অনাচার হচ্ছে, ওখানেই ভারত, আমেরিকাকে আবিষ্কার করছে। এদের একমাত্র উদ্দেশ্য ভারত, ব্রিটেন ও আমেরিকাকে যত বেশি আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে ততই শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন করে বিধায় শেখ হাসিনাকেও সাধারণ মানুষের বিপরীতে দাঁড় করাতে পারবে। এ ধূর্ত উগ্রবাদী জঙ্গিরা শেখ হাসিনাকে মূল টার্গেট হিসেবে ধরে নিয়ে নানা কৌশলের অংশ হিসেবে ম্যাগাজিন ও লিফলেট বিতরণ করছে। এদের ধারণা, শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে থাকবেন এ উগ্রবাদীদের সব প্রচেষ্টা নস্যাৎ হবে। শেখ হাসিনাই গণতন্ত্রের একমাত্র প্রতীক। তাকে শেষ করতে পারলে এদের পথ পরিষ্কার হয় এবং ধর্মের নামে এ দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে ক্ষমতা দখল সহজ হয়।
হিযবুত তাহ্রীর এ দেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। পৃথিবীর কোনো অঞ্চলে খেলাফত রাজ্য না থাকলেও, এমনকি খোদ সৌদি আরবে বাদশাহী রাজ্য থাকলেও, এ মূর্খরা বাংলাদেশকে কেন খেলাফত আন্দোলনের স্থান হিসেবে বিবেচনা করল, কোনো অঙ্কের হিসাবেও মিলে না। এরা ইন্দোনেশিয়ার কথাও বলে, কিন্তু আমরা জানি, জামায়াত ইন্দোনেশিয়ায় এখন প্রায় নিঃশেষ। মালয়েশিয়াতেও এদের স্থান নেই। বাংলাদেশেও এদের স্থান হওয়ার নয় জেনে খামাখা সময় ও অর্থ নষ্ট করছে কেন, খতিয়ে দেখা দরকার।
ইসলামের ইতিহাসের আদি যুগের দিকে লক্ষ্য করলে, খোলাফায়ে রাশেদিনের পর কারবালা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে খেলাফত আন্দোলনে ভাটা পড়ে। খেলাফত আন্দোলন ও প্রতিষ্ঠা ওই যুগের জন্য প্রযোজ্য ছিল। গণতন্ত্রের উত্তরণে এর প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে খেলাফত রাজ্যের অবসান খোদ মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু হয় এবং পৃথিবীতে এর অস্তিত্ব বিলীন। হিযবুতওয়ালারা কেন দেশটাকে মধ্যযুগে নিয়ে যেতে চায় বোঝা মুশকিল। এদের ধ্যান-ধারণা কেন এখনও মধ্যযুগে রয়ে গেল, আধুনিক সভ্য সমাজে প্রবেশ না করে এরা কেন মধ্যযুগে থাকতে চায়_ এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে। হয়তো নারী সমাজকে বঞ্চিত করে, এদের বোরখার মধ্যে বেঁধে রেখে, দেশ ও সমাজটাকে একচ্ছত্র ভোগ করার অভিপ্রায়ে একটা মিশন নিয়ে কাজ করছে, যা বাস্তবায়ন করা মোটেও সম্ভব নয়। এর চেয়ে বরং তারা যদি সময়টা নিজের জন্য, পরিবারের জন্য ব্যয় করত, অনেক মঙ্গল হতো। একটা কথা পরিষ্কার করা প্রয়োজন যে, এ দেশে কোনোকালেও খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে না। এ দেশের মানুষকে জঙ্গিরা যত বোকা ভাবে তত বোকা নয় এ দেশের মানুষ।
চট্টগ্রাম কলেজ হোস্টেল, মুহসীন কলেজ হোস্টেল এখন এদের অভয়ারণ্য। এখানে বসেই এরা সব কাজ চালায়। আমি আগেও একবার বলেছি, জামায়াত-শিবির, হিযবুতওয়ালারা চট্টগ্রাম থেকেই এদের আন্দোলনের সূচনা করতে চায়। গত ছয় মাস ধরে এরা এখানে এত বেশি তৎপর যে, রাস্তায় রাস্তায় পোস্টার দেখলে বিশেষ করে চট্টগ্রাম কলেজ, মুহসীন কলেজে ব্যানার, ফেস্টুন দেখলে এদের তৎপরতার ঘটনা যে কারও কাছে পরিষ্কার। এদের সাহায্য ও সহযোগিতা করছে এখানে নিয়োজিত প্রিন্সিপাল এবং শিক্ষকরা। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও কী কারণে ওই প্রিন্সিপালদের শিবির অধ্যুষিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাখা হয়েছে, আল্লাহই জানেন।
শিবিরের সভাপতি না আসা পর্যন্ত কোনো অনুষ্ঠান শুরু হয় না। অধ্যক্ষের কক্ষে শিবিরের সভাপতি প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে একজন অধ্যক্ষ তারই ছাত্রকে অভ্যর্থনা দেন, অন্যরা শিবির করার জন্য উৎসাহ বোধ করবেই। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার দুই বছর পার হয়ে গেলেও, চট্টগ্রাম কলেজ ও মুহসীন কলেজে সরকারদলীয় মন্ত্রী-এমপি কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াতই পাননি। শিবির যেদিকে চালায়, অধ্যক্ষরা ওই দিকে চলেন। এদের তোয়াজ-খাতির করে চলেন বলেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ওই দুই কলেজে শিবিরের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। একথা পরিষ্কার যে, এই দু'জন অধ্যক্ষের কারণে শিবির হিযবুত তাহ্রীরের কর্মকাণ্ড চট্টগ্রামে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি এদিকে পড়ূক_ এটাই আশা করছি।
শেষ করার আগে বলতে চাই, হিযবুত তাহ্রীর তৎপরতা বন্ধ করা না গেলে কী অঘটন যে এরা ভবিষ্যতে ঘটাবে, মহাকালই বলতে পারে। তবে এ মুহূর্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও এ বিষয়ে ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।

নুরুল ইসলাম বিএসসি : সংসদ সদস্য
 

No comments

Powered by Blogger.