এই সমাজ-তাহলে '৭১-এর কী প্রয়োজন ছিল? by এএন রাশেদা
বিএনপি ও জামায়াত-শিবির গণতন্ত্রে নয়, খুনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে_ তাই ১৫ আগস্ট মহাধুমধামে কেক কেটে জন্মদিনের উৎসব করে; কিন্তু গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করতে চায় ও করে। এখন কথা হলো, সুপ্রিম কোর্ট দুই সামরিক শাসকের শাসনকাল এবং তাদের দ্বারা সব ফরমান অবৈধ করার ফলে ১৯৭২-এর সংবিধানের ৪ মূলনীতি অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসবে বলে ধারণা করা হয়েছিল
১৯৭১ সালে ইসলামী রিপাবলিক অব পাকিস্তান থেকে আমরা তো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম, যার মূলকথা জনগণই সর্বময় ক্ষমতার মালিক। কিন্তু ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী এবং সগোত্রীয়রা তা মেনে নিতে পারেনি। তারা দেশব্যাপী হত্যা, খুন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, আগুনে পুড়িয়ে মারা, মানুষকে গাছের সঙ্গে পেরেক মেরে হত্যা, গায়ের চামড়া তুলে লবণ দিয়ে হত্যা, জবাই করে হত্যা, ক্রমেই দিনের পর দিন চরম নির্যাতন করে হত্যা, গুলি করে হত্যা, বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা, ব্রাশফায়ারে হত্যা ইত্যাদি কাজ অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে করেছিল। সে সময়কার বীভৎসতা স্মরণ করে আজও শিহরিত হতে হয়। জামায়াতে ইসলামী গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তাই অধিকাংশের মতামতকে মেনে না নিয়ে তাণ্ডব চালায়; কিন্তু গণতন্ত্রের সুবিধা ভোগ করতে চায়।
১৯৭১ সালে 'ইসলাম ইসলাম' করেই আমাদের দেশের মেয়েদের গণিমতের মাল বলা হয়েছিল এবং বর্বরোচিতভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল, ওই ইসলাম ধর্মের নামেই_ এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা কি তা ভুলে গেছে? বহু জীবনের বিনিময়ে ইসলামকে ধর্ম ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা করেই তো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র করা হয়েছিল। আর মানুষকে যে কোনো ধর্ম পালনের অধিকার দেওয়া হয়েছিল। অথচ বঙ্গবন্ধুকে নিরস্ত্র অবস্থায় হত্যার পর প্রথম অবৈধ সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমানবলে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বিসর্জন, সমাজতন্ত্রের নীতি পরিত্যাগ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশি করেছিলেন। পরে আরেক অবৈধ সামরিক শাসক স্বৈরাচারী এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করলেন।
যখন আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বলবৎ রাখা হচ্ছে, তখন ইসলাম ধর্ম পুঁজি সম্পর্কে কী বলছে একটু দেখা যাক; 'ইসলামী জীবন ব্যবস্থার বিধান হচ্ছে এই যে, যেসব ব্যবস্থায় সমগ্র জাতির সম্পদ মুষ্টিমেয় কয়েক ব্যক্তির হাতে জমা হওয়ার পথ খোলে, সেসব পন্থাই হারাম'। সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাও সে কথাই বলে। এ প্রসঙ্গে কোরআন ঘোষণা করছে : 'সম্পদ বণ্টন করার যে নিয়ম কোরআন নির্ধারণ করেছে তার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, ধন-দৌলত যেন কয়েকজন ব্যক্তির হাতে পুঞ্জীভূত হয়ে না পড়ে।' রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের দেশে আমরা কি তা পালন করছি? আমাদের দেশের নেতারা বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করছে, সুটকেস ভর্তি করে বিদেশে অর্থ নেওয়ার অভিযোগের কাহিনী দলের প্রধান নেত্রীর বিরুদ্ধেও আছে_ সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা নেই বলে যারা বলছেন।
এবার দেখা যাক ইসলাম ধর্ম জুয়া সম্পর্কে কী বলছে : এক তফসিরে বর্ণনা করা হয়েছে_ 'জুয়া খেলা একজনের লাভ অপরজনের ক্ষতি। জয়লাভকারীর শুধুই লাভ আর পরাজিত ব্যক্তির ক্ষতিই ক্ষতি। এ খেলায় একজনের মাল অন্যজনের হাতে চলে যায়। এ জন্য জুয়া সামগ্রিকভাবে জাতি ধ্বংস এবং মানবচরিত্রের অধঃপতন ঘটায়। যে ব্যক্তি লাভবান হয়, সে পরোপকারের ব্রত থেকে দূরে সরে রক্তপিপাসুতে পরিণত হয়ে পড়ে। ... ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য এর বিপরীত।' এই তফসিরে জুয়ার নতুন পদ্ধতি সম্পর্কেও বলা হয়েছে_ জুয়ার এ নতুন পদ্ধতি প্রাচীন পদ্ধতির জুয়া অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর এবং এর প্রতিক্রিয়া সুদূরপ্রসারী ও সমগ্র জাতির পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এর ফলে জাতির সাধারণ মানুষের সম্পদ দিন দিন কমতে থাকে; আর কয়েকজন পুঁজিপতির মাল বাড়তে থাকে। এতে সমগ্র জাতির সম্পদ কয়েক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ার পথ খুলে যায়। তাই প্রশ্ন করতেই হয়_ দেশে রাষ্ট্রধর্ম যখন ইসলাম তাহলে শেয়ারবাজারের ব্যবসা এখানে চলছে কী করে? আর এতদিন পর্যন্ত এসব ধর্ম ব্যবসায়ী কোরআনের এ বিধান সমুন্নত রাখতে লাঠি নিয়ে নামেনি কেন? কোরআনের এ ব্যাখ্যায় লটারিকেও জুয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে আর হাউজির বিরুদ্ধেই বা ইসলামী দলের এবং সাথীদের কর্মসূচি কী?
অথচ বাউল সাধকদের চুল-দাড়ি কেটে নিতে তারা ঠিক জোটবদ্ধভাবে নামে, কাদিয়ানিদের বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে নামে, উদীচীকে ধ্বংস করতে নামে। তাহলে যারা ইসলাম রক্ষার জন্য লাঠি নিয়ে মিছিল বের করল আর তাদের যারা লাঠি নিয়ে প্রতিহত করতে বের হলো_ তখন আমাদের ইসলাম পছন্দ বুদ্ধিজীবীরা কেন এতে অশনিসংকেত দেখতে পাচ্ছেন? রাত ১১টায় একমাত্র একুশে টেলিভিশন দেখিয়েছে যারা লাঠি হাতে প্রতিহত করছে তারা ট্রাক শ্রমিক এবং শ্রমিক। তাদের ট্রাক লুটপাট এবং ভাংচুর করবে আর তারা পালিয়ে বেড়াবে? ঠিক কাজটি তো 'ধর্মমতেই' হয়েছে_ এতে ছি ছি করার কী আছে? ইসলাম ধর্মে আছে_ খুনের বদলে খুন, নাকের বদলে নাক, চোখের বদলে চোখ ইত্যাদি।
এসব ধর্ম ব্যবসায়ী ইসলামের জিকির তুলে সাধারণ মানুষকে নিঃস্ব করতে চায়। সেদিন আরটিভিতে মৌলানা জিয়াউল হাসান আলাপচারিতায় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সম্পর্কে যা বলছিলেন তা উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। তিনি বলছিলেন, পবিত্র কোরআন শরিফে আছে_ এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে কোনো জাতি বা সম্প্রদায়ের কোনো অসুবিধার সৃষ্টি হয়। তাই ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করলে অন্য ধর্মের প্রতি অবিচার করা হয়। এ কারণেই 'রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম' বিষয়টি ইসলাম ধর্মেরই বিরোধী। আর সংবিধানের ২৭, ২৮ অনুচ্ছেদে সব ধর্মের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। তাই তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাহলে একটি ধর্মকে কী করে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়? তিনি আরও বলেছিলেন, কোরআন শরিফ পাঠ করতে হলে বিসমিল্লাহ পড়া আল্লাহ তায়ালা বাধ্যতামূলক করেননি। সেখানে সংবিধান পাঠ করতে অন্য ধর্মের লোকদেরও 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' বলা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে কেন? আর সংবিধানের প্রথমেই যখন আল্লাহর নামে শুরু করলাম আছে, তখন তা আবার ভেতরে রাখার যৌক্তিকতা কোথায়? তিনি আরও বলেন, 'সুরা মায়দার ৪৫নং আয়াতে আছে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখমসমূহের বিনিময়ে সমান জখম।' অথচ ইসলাম রক্ষার নামে যারা চিৎকার করছে তারা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ মানুষের হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছিল তাদের বিচার চায় না, তাদের ফাঁসি চায় না। অথচ তাদের শাস্তি তো একমাত্র মৃত্যুদণ্ড। এসব লোক এবং খতিবের মধ্যে কোনো মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে পাওয়া যায় না। জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে বিএনপি দাবি করেছে। অথচ তারা স্বাধীনতাবিরোধী তথাকথিত ইসলামী দলগুলোকে সমর্থন করছে। তিনি বলেন, একাত্তরে খালেদা জিয়া পাকিস্তানিদের সঙ্গেই ছিলেন, আজও তিনি পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের সঙ্গেই আছেন। ১৯৭১-এ যারা পাকিস্তান রক্ষার জন্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করেছে আজও তারা তা-ই করছে।
বিএনপি ও জামায়াত-শিবির গণতন্ত্রে নয়, খুনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে_ তাই ১৫ আগস্ট মহাধুমধামে কেক কেটে জন্মদিনের উৎসব করে; কিন্তু গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করতে চায় ও করে। এখন কথা হলো, সুপ্রিম কোর্ট দুই সামরিক শাসকের শাসনকাল এবং তাদের দ্বারা সব ফরমান অবৈধ করার ফলে ১৯৭২-এর সংবিধানের ৪ মূলনীতি অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সংসদ ৫১টি সংশোধনীসহ পঞ্চদশ সংশোধনী 'হ্যাঁ' ভোটে জয়যুক্ত করার ফলে চার মূলনীতির মূল স্পিরিট কি অক্ষত থাকল? শেষ করতে হচ্ছে প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসার বক্তব্য দিয়ে। সম্প্রতি ছাত্রলীগের সম্মেলন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য_ 'সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের মধ্যে ওনারা আল্লাহকে খুঁজে পান না, তাহলে আমার প্রশ্ন_ হরতালে পেয়েছেন কী'_ এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এবিএম মূসার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, 'সংবিধানে আল্লাহকে খুঁজতে হবে কেন? তিনি তো সবার উপরে? আর সংবিধানে লিখে আল্লাহর ওপর আস্থা আনতে হবে কেন?'
অথচ দেখা যাচ্ছে, সংবিধান সংশোধন করা হলো পাকিস্তানি চেতনা প্রতিষ্ঠার জন্য। পরবর্তী সময়ে কি ইসলামী দেশ? শেষ কথা হলো_ মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদের প্রতি সম্মান রেখে রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতাকেই যে গ্রহণ করতে হবে_ এর বিকল্প কিছু নেই।
এএন রাশেদা :শিক্ষক
১৯৭১ সালে 'ইসলাম ইসলাম' করেই আমাদের দেশের মেয়েদের গণিমতের মাল বলা হয়েছিল এবং বর্বরোচিতভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল, ওই ইসলাম ধর্মের নামেই_ এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা কি তা ভুলে গেছে? বহু জীবনের বিনিময়ে ইসলামকে ধর্ম ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা করেই তো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র করা হয়েছিল। আর মানুষকে যে কোনো ধর্ম পালনের অধিকার দেওয়া হয়েছিল। অথচ বঙ্গবন্ধুকে নিরস্ত্র অবস্থায় হত্যার পর প্রথম অবৈধ সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমানবলে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বিসর্জন, সমাজতন্ত্রের নীতি পরিত্যাগ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশি করেছিলেন। পরে আরেক অবৈধ সামরিক শাসক স্বৈরাচারী এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করলেন।
যখন আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বলবৎ রাখা হচ্ছে, তখন ইসলাম ধর্ম পুঁজি সম্পর্কে কী বলছে একটু দেখা যাক; 'ইসলামী জীবন ব্যবস্থার বিধান হচ্ছে এই যে, যেসব ব্যবস্থায় সমগ্র জাতির সম্পদ মুষ্টিমেয় কয়েক ব্যক্তির হাতে জমা হওয়ার পথ খোলে, সেসব পন্থাই হারাম'। সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাও সে কথাই বলে। এ প্রসঙ্গে কোরআন ঘোষণা করছে : 'সম্পদ বণ্টন করার যে নিয়ম কোরআন নির্ধারণ করেছে তার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, ধন-দৌলত যেন কয়েকজন ব্যক্তির হাতে পুঞ্জীভূত হয়ে না পড়ে।' রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের দেশে আমরা কি তা পালন করছি? আমাদের দেশের নেতারা বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করছে, সুটকেস ভর্তি করে বিদেশে অর্থ নেওয়ার অভিযোগের কাহিনী দলের প্রধান নেত্রীর বিরুদ্ধেও আছে_ সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা নেই বলে যারা বলছেন।
এবার দেখা যাক ইসলাম ধর্ম জুয়া সম্পর্কে কী বলছে : এক তফসিরে বর্ণনা করা হয়েছে_ 'জুয়া খেলা একজনের লাভ অপরজনের ক্ষতি। জয়লাভকারীর শুধুই লাভ আর পরাজিত ব্যক্তির ক্ষতিই ক্ষতি। এ খেলায় একজনের মাল অন্যজনের হাতে চলে যায়। এ জন্য জুয়া সামগ্রিকভাবে জাতি ধ্বংস এবং মানবচরিত্রের অধঃপতন ঘটায়। যে ব্যক্তি লাভবান হয়, সে পরোপকারের ব্রত থেকে দূরে সরে রক্তপিপাসুতে পরিণত হয়ে পড়ে। ... ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য এর বিপরীত।' এই তফসিরে জুয়ার নতুন পদ্ধতি সম্পর্কেও বলা হয়েছে_ জুয়ার এ নতুন পদ্ধতি প্রাচীন পদ্ধতির জুয়া অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর এবং এর প্রতিক্রিয়া সুদূরপ্রসারী ও সমগ্র জাতির পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এর ফলে জাতির সাধারণ মানুষের সম্পদ দিন দিন কমতে থাকে; আর কয়েকজন পুঁজিপতির মাল বাড়তে থাকে। এতে সমগ্র জাতির সম্পদ কয়েক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ার পথ খুলে যায়। তাই প্রশ্ন করতেই হয়_ দেশে রাষ্ট্রধর্ম যখন ইসলাম তাহলে শেয়ারবাজারের ব্যবসা এখানে চলছে কী করে? আর এতদিন পর্যন্ত এসব ধর্ম ব্যবসায়ী কোরআনের এ বিধান সমুন্নত রাখতে লাঠি নিয়ে নামেনি কেন? কোরআনের এ ব্যাখ্যায় লটারিকেও জুয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে আর হাউজির বিরুদ্ধেই বা ইসলামী দলের এবং সাথীদের কর্মসূচি কী?
অথচ বাউল সাধকদের চুল-দাড়ি কেটে নিতে তারা ঠিক জোটবদ্ধভাবে নামে, কাদিয়ানিদের বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে নামে, উদীচীকে ধ্বংস করতে নামে। তাহলে যারা ইসলাম রক্ষার জন্য লাঠি নিয়ে মিছিল বের করল আর তাদের যারা লাঠি নিয়ে প্রতিহত করতে বের হলো_ তখন আমাদের ইসলাম পছন্দ বুদ্ধিজীবীরা কেন এতে অশনিসংকেত দেখতে পাচ্ছেন? রাত ১১টায় একমাত্র একুশে টেলিভিশন দেখিয়েছে যারা লাঠি হাতে প্রতিহত করছে তারা ট্রাক শ্রমিক এবং শ্রমিক। তাদের ট্রাক লুটপাট এবং ভাংচুর করবে আর তারা পালিয়ে বেড়াবে? ঠিক কাজটি তো 'ধর্মমতেই' হয়েছে_ এতে ছি ছি করার কী আছে? ইসলাম ধর্মে আছে_ খুনের বদলে খুন, নাকের বদলে নাক, চোখের বদলে চোখ ইত্যাদি।
এসব ধর্ম ব্যবসায়ী ইসলামের জিকির তুলে সাধারণ মানুষকে নিঃস্ব করতে চায়। সেদিন আরটিভিতে মৌলানা জিয়াউল হাসান আলাপচারিতায় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সম্পর্কে যা বলছিলেন তা উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। তিনি বলছিলেন, পবিত্র কোরআন শরিফে আছে_ এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে কোনো জাতি বা সম্প্রদায়ের কোনো অসুবিধার সৃষ্টি হয়। তাই ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করলে অন্য ধর্মের প্রতি অবিচার করা হয়। এ কারণেই 'রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম' বিষয়টি ইসলাম ধর্মেরই বিরোধী। আর সংবিধানের ২৭, ২৮ অনুচ্ছেদে সব ধর্মের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। তাই তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাহলে একটি ধর্মকে কী করে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়? তিনি আরও বলেছিলেন, কোরআন শরিফ পাঠ করতে হলে বিসমিল্লাহ পড়া আল্লাহ তায়ালা বাধ্যতামূলক করেননি। সেখানে সংবিধান পাঠ করতে অন্য ধর্মের লোকদেরও 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' বলা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে কেন? আর সংবিধানের প্রথমেই যখন আল্লাহর নামে শুরু করলাম আছে, তখন তা আবার ভেতরে রাখার যৌক্তিকতা কোথায়? তিনি আরও বলেন, 'সুরা মায়দার ৪৫নং আয়াতে আছে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখমসমূহের বিনিময়ে সমান জখম।' অথচ ইসলাম রক্ষার নামে যারা চিৎকার করছে তারা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ মানুষের হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছিল তাদের বিচার চায় না, তাদের ফাঁসি চায় না। অথচ তাদের শাস্তি তো একমাত্র মৃত্যুদণ্ড। এসব লোক এবং খতিবের মধ্যে কোনো মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে পাওয়া যায় না। জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে বিএনপি দাবি করেছে। অথচ তারা স্বাধীনতাবিরোধী তথাকথিত ইসলামী দলগুলোকে সমর্থন করছে। তিনি বলেন, একাত্তরে খালেদা জিয়া পাকিস্তানিদের সঙ্গেই ছিলেন, আজও তিনি পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের সঙ্গেই আছেন। ১৯৭১-এ যারা পাকিস্তান রক্ষার জন্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করেছে আজও তারা তা-ই করছে।
বিএনপি ও জামায়াত-শিবির গণতন্ত্রে নয়, খুনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে_ তাই ১৫ আগস্ট মহাধুমধামে কেক কেটে জন্মদিনের উৎসব করে; কিন্তু গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করতে চায় ও করে। এখন কথা হলো, সুপ্রিম কোর্ট দুই সামরিক শাসকের শাসনকাল এবং তাদের দ্বারা সব ফরমান অবৈধ করার ফলে ১৯৭২-এর সংবিধানের ৪ মূলনীতি অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সংসদ ৫১টি সংশোধনীসহ পঞ্চদশ সংশোধনী 'হ্যাঁ' ভোটে জয়যুক্ত করার ফলে চার মূলনীতির মূল স্পিরিট কি অক্ষত থাকল? শেষ করতে হচ্ছে প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসার বক্তব্য দিয়ে। সম্প্রতি ছাত্রলীগের সম্মেলন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য_ 'সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের মধ্যে ওনারা আল্লাহকে খুঁজে পান না, তাহলে আমার প্রশ্ন_ হরতালে পেয়েছেন কী'_ এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এবিএম মূসার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, 'সংবিধানে আল্লাহকে খুঁজতে হবে কেন? তিনি তো সবার উপরে? আর সংবিধানে লিখে আল্লাহর ওপর আস্থা আনতে হবে কেন?'
অথচ দেখা যাচ্ছে, সংবিধান সংশোধন করা হলো পাকিস্তানি চেতনা প্রতিষ্ঠার জন্য। পরবর্তী সময়ে কি ইসলামী দেশ? শেষ কথা হলো_ মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদের প্রতি সম্মান রেখে রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতাকেই যে গ্রহণ করতে হবে_ এর বিকল্প কিছু নেই।
এএন রাশেদা :শিক্ষক
No comments